রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত বনাম
প্রচলিত ছালাত
–আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ
(পর্ব-৩০)
কোনো কারণে জুম‘আর ছালাত ছুটে গেলে কাফফারা দিতে হবে না :
ইচ্ছা করে জুম‘আর ছালাত ছেড়ে দিলে মানুষ বড় গুনাহগার হবে। কোনো কারণ ছাড়াই কেউ যদি জুম‘আ ত্যাগ করে, তাহলে তাকে মুনাফিক্বদের তালিকাভুক্ত করা হয়। তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেওয়া হয়।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ وَأَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُمَا قَالَا: سَمِعْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ عَلَى أَعْوَادِ مِنْبَرِهِ: «لِيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِينَ» .
ইবনে ওমর এবং আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি কাঠের মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘মানুষ হয়ত জুম‘আর ছালাত ত্যাগ করা হতে বিরত থাকবে, না হলে আল্লাহ তাদের অন্তরের উপর মোহর মেরে দিবেন। তারপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’।[1] আবু জা‘দ যামরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ تَرَكَ ثَلَاثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে পরপর তিন জুম‘আ ত্যাগ করবে, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন’।[2]
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِقَوْمٍ يَتَخَلَّفُونَ عَنِ الْجُمُعَةِ: «لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِالنَّاسِ ثُمَّ أُحْرِقَ عَلَى رِجَالٍ يَتَخَلَّفُونَ عَنِ الْجُمُعَةِ بُيُوتهم» .
ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) একদল লোক সম্পর্কে বলেছেন, ‘যারা জুম‘আর ছালাত হতে বিরত থাকে, তাদের ব্যাপারে আমি ইচ্ছা করেছি যে, আমার স্থানে কাউকে ইমামতি করতে বলব আর আমি গিয়ে তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিব। যারা জুম‘আর ছালাত হতে পিছে থাকে’।[3] আবু জা‘দ যামরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়াই পরপর তিন জুম‘আ ত্যাগ করবে, সে মুনাফিক্ব’।[4] আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো যরূরী কারণ ছাড়াই পরপর তিন জুম‘আ ত্যাগ করবে, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন’।[5] ওসামা (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি পরপর তিন জুম‘আ ত্যাগ করবে তার নাম মুনাফিক্বের তালিকায় লিখা হবে।[6] জুম‘আর ছালাত ত্যাগ করলে কাফফারা দিতে হবে মর্মে হাদীছগুলো জাল ও যঈফ।
জুম‘আর দিন ফযীলতের আশায় জুম‘আর পাগড়ী পরিধান করা যাবে না :
নেকী বেশী পাবে মনে করে জুম‘আর দিন অনেকেই পাগড়ী পরিধান করে থাকে। এ ব্যাপারে যত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সবই জাল। আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ জুম‘আর দিনে পাগড়ী পরিধানকারী ব্যক্তিদের উপর রহমত নাযিল করেন।[7] হাদীছটি জাল।[8] আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘পাগড়ী মাথায় দিয়ে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করলে পাগড়ীবিহীন ২৫ ওয়াক্ত ছালাতের সমান নেকী হয় এবং পাগড়ী পরে এক জুম‘আ পড়লে পাগড়ীবিহীন ৭০ জুম‘আর ফেরেশতারা পাগড়ী পরে জুম‘আর ছালাতে শরীক হন। তারা পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত দু‘আ করতে থাকেন’। হাদীছটি জাল।[9]
জুম‘আর দিন খাছ করে দু‘আ চাওয়া যাবে না :
জুম‘আর দিন ইমাম ও মুছল্লীর কাছে খাছ করে দু‘আ চাওয়া যাবে না। এমন কোনো পদ্ধতি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিল না। প্রায় মসজিদে দেখা যায় ফরয ছালাত কিংবা জুম‘আর ছালাতের পর পিতা-মাতা বা নিজের জন্য সবার কাছে দু‘আ চায়। অনেকেই পত্রের মাধ্যমে দু‘আ চায়। এ কাজ সাধারণত ধনীদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ আমল পরিহার করতে হবে। তবে দু‘আ চাওয়ার নিয়ম হলো কোনো সমস্যায় পড়লে বা অসুস্থ হলে কোনো জীবিত, পরহেযগার, হক্বপন্থী মানুষের কাছে গিয়ে দু‘আর জন্য আবেদন করা। তখন তিনি মুখে দু‘আ করবেন অথবা প্রয়োজনে ওযূ করে ক্বিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দু‘আ করবেন। ছাহাবীগণ এভাবে দু‘আ চাইতেন। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) পানি চাইলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর দু’হাত তুলে দু‘আ করলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আবু আমের উবাইদ (রাঃ)-কে ক্ষমা করে দাও’। (রাবী বলেন) এ সময়ে আমি তার বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাকে তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকের উপর করে দিও’।[10]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে যখন খুশী মনে দেখতাম তখন বলতাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন। তখন আল্লাহর নবী (ছাঃ) বললেন, اللهم اغفر لعائشة ما تقدم من ذنبها وما تأخر وما أسرت وما أعلنت ‘হে আল্লাহ! আয়েশার আগের ও পরের পাপ ক্ষমা করো আর যা গোপনে ও প্রকাশ্যে হয়েছে’। তখন আয়েশা (রাঃ) হাসতে লাগলেন, এমনকি তার মাথা রাসূল (ছাঃ)-এর কোলে লুটিয়ে পড়ল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আমি দু‘আ করলে তোমার ভালো লাগে? আমি বললাম, আপনার দু‘আ আমার কেন ভালো লাগবে না? তারপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আমার উম্মতের জন্য আমি প্রত্যেক ছালাতেই দু‘আ করি’।[11] এই হাদীছে দু‘আ চাওয়া এবং দু‘আ করা দুটোই রয়েছে।
সম্ভবপর সুন্নাত পড়ে চুপ থেকে খুৎবা শোনার ফযীলত :
জুম‘আর দিন সম্ভবপর ছালাত আদায় করে খুৎবার শেষ পর্যন্ত চুপ থাকার ফযীলত অনেক। আউস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করাবে এবং নিজে গোসল করবে এবং সকাল সকাল প্রস্তুতি নিবে, কোনো বাহনে না উঠে সকাল সকাল মসজিদে যাবে অতঃপর ইমামের কাছাকাছি বসবে এবং মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনবে ও অনর্থক কোনো কাজ করবে না, তার জন্য প্রত্যেক ধাপে এক বছরের নফল ছিয়াম ও এক বছরের নফল ছালাতের নেকী পাবে।[12] তবে জুম‘আর দিন চুপ থেকে খুৎবা শুনলে ১ কোটি ৭ লক্ষ ৭০ হাজার নেকী হবে মর্মে কোনো জাল হাদীছও নেই। এটা মিথ্যা কাল্পনিক কথা।
জুম‘আর দিন আছর ছালাতের পর ৮০ বার দরূদ পড়া বিদ‘আত :
জুম‘আর দিন এভাবে দরূদ পড়ার কোনো প্রমাণ নেই। ছাহাবী, তাবেঈগণ এমন আমল করতেন না। এর প্রমাণে হাদীছটি বানোয়াট। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিনে আমার উপর ৮০ বার দরূদ পড়বে, তার ৮০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করা হবে’। তখন জিজ্ঞাসা করা হলো, কীভাবে আপনার উপর ৮০ বার দরূদ পড়তে হবে? তিনি বললেন, ‘তুমি একাই বসে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (ছঅঃ)-এর উপর রহমত নাযিল করুন। যিনি আপনার দাস, আপনার নবী, আপনার রাসূল’। হাদীছটি জাল।[13]
কবর যিয়ারতের জন্য জুম‘আর দিনকে নির্দিষ্ট করে নেয়া বিদ‘আত :
কবর যিয়ারতের জন্য কোনো দিন নির্ধারণ করা যাবে না। যে কোনো দিন যে কোনো সময়ে কবর যিয়ারত করা যাবে। জুম‘আর দিন কবর যিয়ারত করতে হবে মর্মে হাদীছগুলো জাল। যেমন: মুহাম্মাদ ইবনে নু‘মান (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন তাদের পিতা-মাতার অথবা তাদের দু’জনের যে কোনো একজনের কবর যিয়ারত করবে, তাকে মাফ করে দেওয়া হবে এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী বলে লেখা হবে।[14] হাদীছটি জাল।
রামাযানের শেষ জুম‘আকে জুম‘আতুল বিদা বলা ঠিক নয়:
রামাযান মাসের শেষ জুম‘আকে জুম‘আতুল বিদা বলার কোনো প্রমাণ নেই। এ মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলো বানোয়াট। যেমন: ‘যে ব্যক্তি রামাযান মাসের শেষ জুম‘আয় ক্বাযা ছালাতগুলো আদায় করবে, তার জীবনের ৭০ বছরের ছুটে যাওয়া প্রত্যেক ছালাতের ক্ষতি পূরণের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে’।[15] এ ধরনের বিবরণে যত হাদীছ এসেছে, সব জাল ও বানোয়াট কথা।
মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে কুরআন পড়া এবং সূরা ইয়াসীন পড়া যাবে না :
মানুষ যখন মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তখন তার পাশে পুরুষ-নারী সকলেই তার চারপাশে কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকে। সমাজে ব্যাপকভাবে এ আমলের প্রচলন রয়েছে। অথচ এর প্রমাণে কোনো ছহীহ হাদীছ নেই। যা রয়েছে তা জাল ও যঈফ।
মা‘কেল ইবনে ইয়াছার ভ বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদের পাশে কুরআন তেলাওয়াত করো’।[16] হাদীছটি নিতান্তই যঈফ।[17]
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে রাযী-খুশী করার জন্য সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে এত নেকী দিবেন যেন সে দশবার কুরআন তেলাওয়াত করল। কোনো অসুস্থ ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা হলে তার উপর প্রত্যেক অক্ষরের পরিবর্তে দশজন ফেরেশতা নাযিল হয়। তারা তার সামনে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে তার জন্য দো‘আ করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। জান ক্ববয করার সময় এবং গোসল দেওয়ার সময় উপস্থিত থাকেন এবং জানাযার সাথে গমন করেন। তারা জানাযার ছালাত আদায় করেন এবং দাফন করার সময় উপস্থিত থাকেন। মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর এমন ব্যক্তির উপর যদি সূরা ইয়াসীন পাঠ করা হয়, তবে মালাকুল মাউত ততক্ষণ তার রূহ ক্ববয করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতের দায়িত্বশীল ফেরেশতা জান্নাতের পানীয় না নিয়ে আসছেন। তারপর বিছানায় থাকা অবস্থায় তাকে তার পানীয় পান করান। ঐ ব্যক্তি তখন পরিতৃপ্ত হয়। এমনকি নবীগণের হাউযের পানিরও সে প্রয়োজন মনে করবে না। অবশেষে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখনও সে পরিতৃপ্ত থাকবে’।[18] হাদীছটি জাল।
মরণের সময় তালকীন দিতে হবে :
عَنْ اَبِى سَعِيدِ الْخُدْرِىّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদেরকে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর তালকীন দাও’।[19]
তালকীন বলতে বুঝায়, মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলতে থাকা।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ
মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যার জীবনের শেষ বাক্য হবে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে যাবে’।[20]
لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، فَإِنَّ نَفْسَ الُمؤْمِنِ تَخْرُجُ رَشْحًا وَ نَفْسَ الْكَافِرِ َ تَخْرُجُ مِنْ شِدْقِهِ كَمَا تَخْرُجُ نَفْسُ الحِمَارِ.
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ভ বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিকে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-এর তালকীন দাও। নিশ্চয় মুমিনের আত্মা সহজে বের হয়। আর কাফিরের আত্মা গাধার আত্মা বের হওয়ার মতো কঠিনভাবে বের হয়’।[21]
আত্মা বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মৃতকে ক্বিবলামুখী করার ধারণা ঠিক নয় :
ক্বিবলার দিকে মুখ করাতে কোনো কল্যাণ নেই। এমর্মে বর্ণিত হাদীছ যঈফ। ইয়াহইয়া ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবী ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মদীনায় আসলেন, তখন তারা ইবনে মা‘রূর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, তারা বললেন, সে মারা গেছে এবং আমাদেরকে তিনটি অছিয়ত করে গেছে। তার মধ্যে একটি হল, যখন তার মরণ হবে তখন মুখটি ক্বিবলার দিকে করবে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, সে ঠিক বলেছে। আমি এই তিনটি বিষয় তার সন্তানদের বলে গেলাম। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন।[22] হাদীছটি যঈফ।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে দেখতে পারবে এবং গোসল দিতে পারবে :
কোনো কোনো সমাজে কুপ্রথা চালু আছে যে, স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে তাদের মধ্যে তালাক সম্পন্ন হয়ে যায়। তাই তাকে দেখতে পারবে না, গোসল দেওয়াতে পারবে না। এমনকি অনেক আলেমও এ কথায় বলে থাকেন। যা সরাসরি ছহীহ হাদীছ বিরোধী।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ رَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مِنَ الْبَقِيعِ فَوَجَدَنِى وَأَنَا أَجِدُ صُدَاعًا فِى رَأْسِى وَأَنَا أَقُولُ وَارَأْسَاهُ فَقَالَ « بَلْ أَنَا يَا عَائِشَةُ وَارَأْسَاهُ ». ثُمَّ قَالَ « مَا ضَرَّكِ لَوْ مِتِّ قَبْلِى فَقُمْتُ عَلَيْكِ فَغَسَّلْتُكِ وَكَفَّنْتُكِ وَصَلَّيْتُ عَلَيْكِ وَدَفَنْتُكِ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন বাক্বীঊল গারক্বাদ নামক কবরস্থান থেকে ফিরে এসে আমাকে মাথার যন্ত্রণা অবস্থায় পেলেন। আমি বলছিলাম, হায় আমার মাথা! তখন রাসূল (ছাঃ) বলছিলেন, আয়েশা বরং আমার মাথায় ব্যথা হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেন, ‘তোমার কী সমস্যা? তুমি যদি আমার আগে মারা যাও, তাহলে আমি তোমার পাশে থাকব। তোমাকে গোসল দিব। তোমাকে কাফন পরাব। তোমার জানাযার ছালাত আদায় করব। তোমার দাফনের কাজ সমাধা করব’।[23] এই হাদীছ প্রমাণ করে, স্ত্রী মারা গেলে স্বামী গোসল দিবে এবং বাকী কাজগুলো স্বামী সমাধা করবে।
قَالَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ : غَسَّلْتُ أَنَا وَعَلَىٌ فاطمة بنت رسول الله ﷺ.
আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) বলেন, আমি এবং আলী রাসূল (ছাঃ)-এর কন্যা ফাতিমাকে গোসল দিয়েছি।[24]
كَانَتْ عَائِشَةُ تَقُولُ لَوِ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِى مَا اسْتَدْبَرْتُ مَا غَسَّلَهُ إِلاَّ نِسَاؤُهُ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, পরে যা জানলাম তা যদি আগে জানতে পারতাম, তাহলে রাসূল (ছাঃ)-কে তাঁর স্ত্রীরা ছাড়া কেউ গোসল দিতে পারত না।[25]
উক্ত হাদীছসমূহ প্রমাণ করে যে, স্বামী-স্ত্রী কেউ একজন মারা গেলে বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয় না এবং একজন আরেক জনকে গোসল দিতে পাবে। বরং গোসল দেওয়াটাই সুন্নাত।
মাইয়্যেতের চুল, নখ ইত্যাদি কাটা ও পেটে চাপ দিয়ে মলমূত্র বের করা যাবে না :
মারা যাওয়ার পর নখ, চুল কাটা জায়েয নয়। পেট চেপে পেশাব-পায়খানা বের করা যাবে না। গোসল দেওয়ার পূর্বে উঠ-বস করানো যাবে না। এসব বিদ‘আতী কর্ম পরিহার করতে হবে। শুধুমাত্র ওযূ দিয়ে গোসল দিতে হবে। নাভির নীচের লোম কাটা যায় মর্মে হাদীছটি নিতান্তই যঈফ। সা‘দ ইবনে মালেক র বলেন, তিনি একদা এক মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিচ্ছিলেন। তখন তিনি ক্ষুর নিয়ে আসলেন এবং নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করে দিলেন।[26] হাদীছটি নিতান্তই যঈফ।[27] উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তিকে গোসলের পূর্বে কুলুখ করানো, খিলাল করা, পেটে চাপ দিয়ে ও উঠা-বসা করিয়ে মল বের করা এগুলো সব বিদ‘আত। এগুলো থেকে সাবধান থাকতে হবে।
পুরুষ-নারী সবাইকে তিন কাপড়ে কাফন দিতে হবে :
পুরুষ-নারী সবার জন্য কাফনের কাপড় তিনটি হবে। তিন কাপড়ের হাদীছ ছহীহ। সাত কিংবা পাঁচ কাপড়ে কাফন দিতে হবে মর্মে হাদীছগুলো যঈফ।
عَنْ عَائِشَةَ – رضى الله عنها أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ كُفِّنَ فِى ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ يَمَانِيَةٍ بِيضٍ سَحُولِيَّةٍ مِنْ كُرْسُفٍ ، لَيْسَ فِيهِنَّ قَمِيصٌ وَلاَ عِمَامَةٌ আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে তিন কাপড়ে কাফন দেওয়া হয়েছিল। কাপড়গুলো ছিল ইয়ামানী সাহুলী সাদা সূতি কাপড়। যাতে কামীছ (জামা) ও পাগড়ী ছিল না।[28] এই হাদীছে বুঝা যায়, পুরুষ-নারী সকল মুসলিমের জন্যই কাফনের কাপড় তিনটি হওয়াই সুন্নাত।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍوَ قَالَ يُكَفَّنُ الْمَيِّتُ فِي ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ قَمِيصٍ وَإِزَارٍ وَلِفَافَةٍ
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, মৃত ব্যক্তিকে তিন কাপড়ে কাফন দিতে হবে। কাপড়গুলো: জামা, লুঙ্গি, চাদর।[29] এই হাদীছে মৃত বলা হয়েছে। পুরুষ নারী বলা হয়নি। অতএব, পুরুষ-নারী যেই হোক, তার কাফন হবে তিনটি।
عَنْ رَاشِدِ بْنِ سَعْدٍ ، قَالَ قَالَ عُمَرُ يُكَفَّنُ الرَّجُلُ فِي ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ لاَ تَعْتَدُوا إنَّ اللَّهَ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ.
রাশেদ ইবনে সা‘দ বলেন, ওমর (রাঃ) বলেছেন, ‘পুরুষ ব্যক্তিকে তিন কাপড়ে কাফন দিতে হবে। তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পসন্দ করেন না।[30]
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ كَفِّنُونِي فِي ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ لُفُّونِي فِيهَا لَفًّا.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তোমরা আমাকে তিন কাপড়ে কাফন দিও। আমার গায়ে কাপড়গুলোর জড়িয়ে দিও।[31]
আলবানী (রহিঃ) বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মহিলারাও কাফনের ব্যাপারে পুরুষদের মতোই। কারণ শরী‘আতের বিধি-বিধানে পুরুষেরাই মূল। যেমন: রাসূল (রাঃ) বলেন, মহিলারা মূলত পুরুষেরই অংশ।[32]
মুহাম্মাদ ইবনে আলী তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ)-কে সাত কাপড়ে কাফন দেওয়া হয়েছিল।[33] এই হাদীছটি যঈফ। হাদীছটি বুখারী-মুসলিমের ছহীহ হাদীছের বিপরীত, যা কখনো আমলযোগ্য হতে পারে না।
লাইলা ইবনে কানিফ ভ বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর মেয়ে উম্মে কুলছুমের মৃত্যুর পর যারা গোসল দিয়েছিল তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে প্রথমে লুঙ্গী দিলেন। তারপর জামা দিলেন, তারপর উড়না, তারপর চাদর দিলেন। অতঃপর সবশেষে একটি কাপড় দ্বারা তাকে ঢেকে দেওয়া হল। এ সময় রাসূল (ছাঃ) দরজায় বসেছিলেন। তার কাছে কাপড় ছিল, সেখান থেকে তিনি একটি একটি করে দিচ্ছিলেন।[34] এ হাদীছটিও আমলযোগ্য নয়। পুরুষ-নারী সবাইকেই তিন কাপড়েই কাফন দিতে হবে।
কালেমা পড়া ব্যক্তির জানাযা পড়তে হবে :
যে লোক দ্বীন ইসলামের আরকান-আহকাম ভালোভাবে পালন করে না, ছালাতও ঠিক মতো আদায় করে না, তবে ইসলামের কোনো বিধানকে অস্বীকার করে না, ছালাতকেও অস্বীকার করে না তার জানাযা হওয়াই উত্তম। কেননা কোনো মানুষ ইসলাম কবুল করার পর ইসলামের কোনো বিধানকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত সে মুরতাদ (ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত) হয় না। আর বড় কোনো পাপের কারণেও মানুষ মুরতাদ হয় না। তবে যদি কোনো মুসলিম ছালাত বা কোনো বিধানকে অস্বীকার করে, তবে তার জানাযা পড়া যাবে না। তখন সে কালেমা পড়েছে বলেই জানাযা হবে, এ কথা ঠিক নয়। কারণ দ্বীনের কোনো বিধানকে অস্বীকার করলে তার কালেমা কেটে যায়। কালেমা পড়ার কারণে তার জানাযা হবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ। ইবনে ওমর ভ বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে তার জানাযার ছালাত পড়ো এবং তার পিছনে ছালাতও আদায় করো’।[35] হাদীছটি যঈফ।
জানাযার ছালাতের প্রতি তাকবীরেই হাত উঠাতে হবে :
জানাযার ছালাত আদায়ের সময় প্রত্যেক তাকবীরেই হাত উঠানো ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।
عَنِ ابْنِ عُمَرَأَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عَلَى كُلِّ تَكْبِيرَةٍ مِنْ تَكْبِيرِ الْجَنَازَةِ.
ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি জানাযার প্রত্যেক তাকবীরে দুই হাত উঠাতেন।[36]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ كُلَّمَا كَبَّرَ عَلَى الْجَنَازَةِ.
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি জানাযার ছালাতে যতবার তাকবীর দিতেন, ততবার তিনি তার দুই হাত উঠাতেন।[37]
জানাযার ছালাতে শুধু প্রথমবার হাত উঠাতে হবে মর্মে হাদীছটি যঈফ। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (রাঃ) একদা জানাযার ছালাত পড়ালেন। তিনি প্রথম তাকবীরে হাত তুললেন এবং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।[38] এই হাদীছটিকে ইমাম তিরমিযী (রহিঃ) নিজেই যঈফ বলেছেন।
মৃত ব্যক্তির কোনো অঙ্গের উপর জানাযা পড়ার কোনো ছহীহ প্রমাণ নেই :
পূর্ণ লাশের উপর জানাযা হওয়া উত্তম। কোনো অঙ্গ পাওয়া গেলে তার উপর জানাযা না করে মাটিতে পুঁতে দেওয়াই ভালো। কারণ অঙ্গের উপর জানাযা করার প্রমাণে হাদীছগুলো যঈফ।
بَعَثَ عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ مَرْوَانَ بِرَأْسِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ إِلَى ابْنِ حَازِمٍ بِخُرَاسَانَ فَكَفَّنَهُ وَصَلَّى عَلَيْهِ» قَالَ: فَقَالَ الشَّعْبِيُّ: «أَخْطَأَ، لَا يُصَلِّي عَلَى الرَّأْسِ».
শা‘বী (রহিঃ) বলেন, আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ)-এর মাথা পাঠান খোরাসানে ইবনে হাযমের কাছে। তিনি তাতে কাফন পরান এবং জানাযা করেন। ইমাম শা‘বী (রহিঃ) বলেন, মাথার উপর জানাযা পড়েছেন কথাটি ভুল।[39] হাদীছটি যঈফ।
আবু আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি পায়ের উপর জানাযা করে ছিলেন।[40] হাদীছটি যঈফ।
ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি সিরিয়ায় হাড়ের উপর জানাযা পড়িয়েছিলেন।[41] হাদীছটি যঈফ।
মসজিদে জানাযা পড়া যাবে :
ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রয়োজনে মসজিদে জানাযা পড়া যায়। মসজিদে জানাযা পড়া যায় না মর্মে হাদীছগুলো যঈফ। আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত, যখন সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ মারা গেলেন। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, তোমরা তার লাশ মসজিদে নিয়ে আসো। যাতে আমি জানাযা পড়তে পারি। এতে তার কথা গ্রহণ করা হল না। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় রাসূল (ছাঃ) বায়যার দুই সন্তান সুহাইল ও তার ভাইয়ের জানাযা মসজিদে পড়েছিলেন।[42] এই ছহীহ হাদীছ দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হয় যে, মসজিদে জানাযা পড়া যায়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে জানাযা পড়বে তার জন্য কোনো (গুনাহ) নেই’।[43] এই হাদীছও প্রমাণ করে মসজিদে জানাযা পড়া যায়।
জানাযার সময় মৃত ব্যক্তি ভালো ছিলেন এমন স্বীকারোক্তি নেওয়া যাবে না :
মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জনগণের কাছে স্বীকারোক্তি নেওয়া যাবে না। লাশ সামনে রেখে নবী করীম (ছাঃ) এমন কথা বলেছেন তার ছহীহ কোনো প্রমাণ নেই। তবে তিনি মাঝেমধ্যে যা বলেছেন, তা হচ্ছে আনাস (রাঃ) বলেন, লোকদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা গেল এবং তারা তার ভালো প্রশংসা করল। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, তার জন্য অবধারিত হয়ে গেল। তারপর তাদের পাশ দিয়ে আরেকটি জানাযা গেল এবং তারা তার বদনাম করল। তখনও নবী (ছাঃ) বললেন, তার জন্য অবধারিত হয়ে গেল। এসব শুনে ওমর (ছাঃ) বললেন, তাদের জন্য কী অবধারিত হয়ে গেল? তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যার তোমরা প্রশংসা করলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে গেল। আর যার তোমরা নিন্দা করলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেল। তোমরা যারা মুমিন তারা দুনিয়াতে আল্লাহর সাক্ষী।[44]
৪২. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৯৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৫৬৭।
৪৩. আবু দাঊদ, হা/৩১৯১; ইবনে মাজাহ, হা/১৫১৭, হাদীছ হাসান; সিলসিলা ছহীহাহ।
৪৪. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৬৭; মিশকাত, হা/১৬৬২।
এই হাদীছে লাশকে সামনে রেখে স্বীকারোক্তি নেওয়ার কোন প্রমাণ নেই। ওমর ভ বলেন, রাসূল ফ বলেছেন, যে কোন মুসলিমের পক্ষে চারজন মুসলিম ভাল বলে সাক্ষ্য দিলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ওমর (রাঃ) বললেন, আমরা বললাম তিন জন সাক্ষ্য দিলে? তখন নবী (ছাঃ) বললেন, তিন জন্য সাক্ষ্য দিলেও জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমরা বললাম দুইজন সাক্ষ্য দিলে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, দুইজন সাক্ষ্য দিলেও জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ওমর (রাঃ) বলেন, তবে আমরা একজনের সাক্ষীর কথা বলিনি।[45] এই হাদীছেও জনগণ হতে স্বীকারোক্তি নেওয়ার প্রমাণ নেই।
উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমরা কোনো রোগীর নিকট অথবা মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হবে, তখন সেখানে উত্তম কথা বলবে। কেননা তোমরা যা বলো ফেরেশতাগণ তার উপর আমীন বলেন। এই হাদীছেও প্রমাণ হয় না যে, লাশকে সামনে রেখে জনগণের নিকট হতে স্বীকারোক্তি নিতে হবে। এই হাদীছসমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে, তাদের ব্যাপারে সবসময় ভালোটা বলতে হবে। মন্দ বলা হতে বিরত থাকতে হবে।
জানাযার ছালাতে ছানা পড়তে হবে না :
জানাযার ছালাতে রাসূল ফ ছানা পড়েছেন তার কোনো প্রমাণ নেই। এমনকি ছাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ থেকেও ছানা পড়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব জানাযার ছালাতে ছানা পড়তে হবে না। তাকবীরে তাহরীমার পর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। তারপর অন্য একটি সূরা পড়তে হবে।
(চলবে)
[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬৫; মিশকাত, হা/১৩৭০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১২৯০।
[2]. আবুদাঊদ, হা/১০৫২; মিশকাত, হা/১৩৭১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১২৯১।
[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৫২; মিশকাত, হা/১৩৭৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১২৯৬।
[4]. ছহীহ ইবনে হিব্বান, তারগীব, হা/১০৩৮।
[5]. আহমাদ, তারগীব, হা/১০৩৯।
[6]. তাবারানী, তারগীব, হা/১০৪০।
[7]. হিলইয়া, ৫/১৮৯।
[8]. সিলসিলা যঈফাহ, হা/১৫৯।
[9]. সিলসিলা যঈফাহ, হা/১২৭।
[10]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩২৩।
[11]. সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২২৫৪।
[12]. আবুদাঊদ, হা/৩৪৫; তিরমিযী, হা/৪৯৬।
[13]. সিলসিলা যঈফাহ, হা/২১৫।
[14]. সিলসিলা যঈফা, হা/৪৫০৫।
[15]. আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ১৪৩৪।
[16]. আবুদাঊদ, হা/৩১২১।
[17]. সিলসিলা যঈফাহ, হা/৫৮৬১।
[18]. সিলসিলা যঈফা, হা/৪৬৩৬।
[19]. ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৫২৮।
[20]. আবু দাঊদ, হা/৩১১৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৫৩৩।
[21]. সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২১৫১।
[22]. ইরওয়া, হা/৬৮৯।
[23]. ইবনে মাজাহ, হা/১৪৬৫।
[24]. হাকেম, হা/৪৭৬৯।
[25]. আবু দাঊদ, হা/৩১৪১।
[26]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ৩/২৪৭ পৃঃ; মুছান্নাফ আব্দির রাযযাক, হা/৪২৩৫।
[27]. প্রাগুক্ত।
[28]. ছহীহ বুখারী, হা/১২৬৪।
[29]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হা/১১১৬৮, হাদীছ ছহীহ।
[30]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হা/১১১৬৪, হাদীছ ছহীহ।
[31]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হা/১১১৬৫, হাদীছ ছহীহ।।
[32]. তিরমিযী, হা/১১৩; মিশকাত, হা/৪৪১।
[33]. সিলসিলা যঈফা, হা/৫৮৪৪।
[34]. যঈফ আবু দাঊদ, হা/৩১৫৭।
[35]. ইরওয়া, হা/৫২৭।
[36]. বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা, হা/৭২৪৩; ছহীহ বুখারী, হা/১৩২২-এর আলোচনা ‘জানাযা’ অধ্যায় ৫৬ নং অনুচ্ছেদ।
[37]. বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা, হা/৭২৪৩; ছহীহ বুখারী, হা/১৩২২-এর আলোচনা ‘জানাযা’ অধ্যায় ৫৬ নং অনুচ্ছেদ।
[38]. তিরমিযী, হা/১০৭৭।
[39]. হাকেম, হা/৬৩৪১।
[40]. তানকীহুল কালাম, হা/৪৯০।|
[41]. তানকীহুল কালাম, পৃঃ ৪৯০।