কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

মাসিক আল-ইতিছাম: শততম সংখ্যার গৌরব ও অগ্রযাত্রার অঙ্গীকার

ভূমিকা:

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে মাসিক আল-ইতিছাম পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি মহৎ স্বপ্ন নিয়ে—ইসলামের শাশ্বত চেতনাকে মানুষের সামনে তুলে ধরা এবং সমাজের বিভ্রান্তি ও অপসংস্কৃতির মাঝেও আলোর দিশারী হয়ে ওঠা। এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ইসলামের সঠিক বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি আদর্শিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। আল-ইতিছাম তার গবেষণাধর্মী লেখনী, যুগোপযোগী ফিচার এবং সত্যনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে পাঠকসমাজে অনন্য স্থান দখল করেছে। আজ এই পত্রিকার ১০০তম সংখ্যা প্রকাশের মাইলফলক নিঃসন্দেহে একটি গৌরবময় অধ্যায়। এটি ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞানের বিস্তারে একটি আলোকবর্তিকা।

মাসিক আল-ইতিছাম-এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য:

‘আল-ইতিছাম’ শব্দের অর্থ হলো— শক্ত করে আঁকড়ে ধরা, যা মূলত ‘আল-ইতিছাম বিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ’ অর্থাৎ ‘কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। মাসিক আল-ইতিছাম পত্রিকার স্লোগান— ‘কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা’। এই পত্রিকা পরিচালিত হয় ‘নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর অধীনে এবং এটি আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ-এর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত।

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে পত্রিকাটির যাত্রা শুরু হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশুদ্ধ তাওহীদ, ইসলামী আক্বীদা এবং সালাফে ছালেহীনের আদর্শ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। পত্রিকাটি তার গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ, ঐতিহাসিক নিবন্ধ এবং সমসাময়িক সমস্যার সমাধানে দলীলভিত্তিক দিকনির্দেশনার জন্য পাঠকসমাজে প্রশংসিত। এছাড়াও সমাজে প্রচলিত শিরক-বিদআত, সুসংস্কার ও বিভ্রান্তিকর কাজগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে ইসলামের বিশুদ্ধ বার্তা মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পত্রিকাটির অন্যতম আকর্ষণীয় বিভাগ হলো— ‘সওয়াল-জওয়াব’ (প্রশ্নোত্তর) বিভাগ, যেখানে প্রতি মাসে দলীলভিত্তিক ৫০টি প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হয়। শিশু, তরুণ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নৈতিক শিক্ষা, আত্মগঠন এবং ইসলামের জ্ঞানের ওপর রচিত প্রবন্ধগুলোও এই পত্রিকার বিশেষত্বকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সহজবোধ্য ভাষা এবং বাস্তব জীবনের উদাহরণ দিয়ে রচিত পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যা পাঠকদের মধ্যে ইসলামের প্রতি গভীর আগ্রহ ও ভালোবাসা জাগ্রত করে।

মাসিক আল-ইতিছাম-এর প্রতিষ্ঠা ও লক্ষ্য:

মাসিক আল-ইতিছাম পত্রিকার প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিল একটি মহান উদ্দেশ্য—ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞান, নৈতিক শিক্ষা এবং আক্বীদার সঠিক বার্তা সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দেওয়া। নির্ভেজাল তাওহীদ ও বিশুদ্ধ আক্বীদার প্রচার এবং সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি ও আদর্শ প্রতিষ্ঠা ছিল এই পত্রিকার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ লক্ষ করেছিলেন যে, বিশ্বজুড়ে ভ্রান্ত মতবাদ, অপসংস্কৃতি এবং নৈতিক অবক্ষয় দিন দিন মানুষকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই আল-ইতিছাম যাত্রা শুরু করে।

পত্রিকাটি তার প্রতিটি সংখ্যার মাধ্যমে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবনের জটিল প্রশ্নের সমাধান এবং সমসাময়িক সমস্যার দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এর লক্ষ্য শুধু একটি প্রকাশনা হওয়া নয়; বরং এটি একটি আদর্শিক আন্দোলন, যা মানুষকে ইসলামের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য কাজ করে। মাসিক আল-ইতিছাম তার নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশুদ্ধ ইসলামী জ্ঞান সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য অর্জনে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। ফালিল্লাহিল হামদ।

প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা:

শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন প্রধান সম্পাদক হিসেবে মাসিক আল-ইতিছাম পত্রিকার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার গভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং ইসলামের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এই পত্রিকাটির ভিত্তি মজবুত করতে সহায়ক হয়েছে। তার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি ও নেতৃত্ব আল-ইতিছাম পত্রিকার জন্য একটি শক্তিশালী আদর্শিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।

তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অবদান শুধু একটি নামমাত্র পদে সীমাবদ্ধ নয়। পত্রিকার বিষয়বস্তু নির্ধারণ, নীতিমালা প্রণয়ন এবং মান নিয়ন্ত্রণে তার ভূমিকা অপরিসীম। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, পত্রিকাটি সবসময় কুরআন এবং ছহীহ হাদীছের আলোকে ইসলামের সঠিক বার্তা প্রচার করে। তার নেতৃত্বে পত্রিকাটি এমন একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, যা সমাজের সকল স্তরে ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে সক্ষম।

শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ পত্রিকাটির আর্থিক এবং কৌশলগত দিকগুলোতেও সরাসরি ভূমিকা পালন করেছেন। যখন পত্রিকার শুরুর দিনগুলোতে সম্পদ এবং মানবসম্পদের অভাব ছিল, তখন তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছেন। তার ব্যক্তিগত উৎসাহ এবং আত্মত্যাগ পত্রিকাটির টিকে থাকা এবং উন্নতির পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

তার নেতৃত্বে আল-ইতিছাম পত্রিকা এমন একটি আদর্শিক আন্দোলনের মশালে পরিণত হয়েছে, যা সমাজে সত্য, ন্যায় এবং নৈতিকতার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। তিনি শুধু একজন পৃষ্ঠপোষক নন; বরং পত্রিকার প্রতিটি পর্যায়ে একজন অভিভাবকের মতো ভূমিকা পালন করেছেন। আল্লাহর তাওফীক্বের পর শায়খের দিকনির্দেশনা পত্রিকাটিকে শুধু ১০০তম সংখ্যার মাইলফলকেই পৌঁছে দেয়নি, বরং ভবিষ্যতে আরও দূরবর্তী লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে।

সম্পাদকমণ্ডলী, লেখক ও পাঠকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা:

মাসিক আল-ইতিছামের সাফল্যের পেছনে সম্পাদকমণ্ডলী, লেখক, পাঠক ও গ্রাহক-এজেন্টদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পত্রিকার সাবেক সম্পাদক ড. মুযাফফর বিন মুহসিনসহ সাবেক সদস্য ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর ও আব্দুর রশীদ এবং বর্তমান সদস্য আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী তাঁদের গভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পত্রিকাটিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন। তাঁদের অমূল্য দিকনির্দেশনা এবং সম্পাদনার দক্ষতায় পত্রিকাটি পাঠকের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করেছে।

বর্তমান প্রধান সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাকসহ সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যান্য সদস্য মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল, আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী, হযরত আলী, হাসান আল-বান্না মাদানী, আব্দুল বারী বিন সোলায়মান[1] এবং বিভাগীয় সম্পাদক তরিকুল ইসলাম (সাবেক), মো. নাসির উদ্দিন, আল আমিন ও আব্দুল কাদের তাঁদের মেধা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে পত্রিকার ক্রমোন্নতিতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিশেষত, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ব্যক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন, সম্পাদনার মৌলিক শৈলী আয়ত্ত এবং কৌশলগত দিকনির্দেশনা অর্জনে সাবেক সম্পাদক ড. মুযাফফর বিন মুহসিন এবং বর্তমান নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানীর দিকনির্দেশনা আমার জন্য অপরিসীম সহায়ক হয়েছে।

যাহোক, পত্রিকার সঠিক সময়ে পাঠকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সার্কুলেশন ম্যানেজারদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। প্রথম সার্কুলেশন ম্যানেজার মাযহারুল ইসলামসহ সাবেক সার্কুলেশন ম্যানেজারগণ এবং বর্তমান সার্কুলেশন ম্যানেজার রাসেল আহমাদ ও আহমাদ অন্তর তাঁদের দায়িত্বশীলতায় পত্রিকাটির সুশৃঙ্খল বিতরণ নিশ্চিত করেছেন। প্রথম ব্যবস্থাপক ওবাইদুল্লাহসহ অন্যান্য সাবেক ব্যবস্থাপকগণ এবং বর্তমান ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদও এই ধারাবাহিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

পত্রিকার গ্রাফিক্স ও অঙ্গসজ্জা বিভাগের বিশেষ অবদানও উল্লেখযোগ্য। আসিফ আহমাদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন তাঁদের সৃজনশীলতা এবং দক্ষতার মাধ্যমে পত্রিকার চেহারা ও উপস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন, যা পাঠকদের আকৃষ্ট করতে সহায়ক হয়েছে।

লেখকরা তাঁদের জ্ঞান, চিন্তা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন শিক্ষামূলক রচনা এবং মূল্যবান শারঈ প্রবন্ধ-নিবন্ধ সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা পাঠকদের জ্ঞানার্জন ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি পাঠকবৃন্দ তাঁদের মূল্যবান মতামত, গঠনমূলক পরামর্শ ও নিরন্তর সমর্থনের মাধ্যমে পত্রিকাটির মানোন্নয়নে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।

আমরা মাসিক আল-ইতিছামের এই দীর্ঘ যাত্রায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। আল্লাহ তাঁদের এই অবদানকে কবুল করুন এবং উত্তম প্রতিদান দান করুন। ভবিষ্যতেও পাঠক, লেখক ও সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে মাসিক আল-ইতিছাম ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে অবিচল থাকবে, ইনশা-আল্লাহ।

সংগ্রাম ও সাফল্যের একশত সংখ্যা:

মাসিক আল-ইতিছাম পত্রিকার ১০০তম সংখ্যার এই দীর্ঘ যাত্রা ছিল অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগের এক অনন্য উদাহরণ। এটি কোনো সহজ পথ ছিল না। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও পত্রিকাটি প্রতিটি পর্যায়ে দৃঢ় মনোবল এবং লক্ষ্য অর্জনের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ধারাবাহিকভাবে যথাসময়ে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছে; একটি সংখ্যার জন্যও বন্ধ থাকেনি আল-হামদুলিল্লাহ। শত প্রতিকূলতার মাঝেও এই অবিচল ধারা আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ, অতঃপর সংশ্লিষ্টদের নিরলস প্রচেষ্টার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

প্রথম দিকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও পত্রিকাটি পাঠকদের কাছে তথ্যবহুল এবং মানসম্পন্ন বিষয়বস্তু উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের আস্থা অর্জন করেছে। প্রতিটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে গভীর গবেষণা এবং চিন্তাভাবনার ফলস্বরূপ। পত্রিকার প্রতিটি প্রকাশনায় সমসাময়িক সমস্যার সমাধানে ইসলামের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, যা পাঠকদের জীবনে কার্যকর প্রভাব ফেলেছে।

এই ১০০তম সংখ্যার যাত্রায় পত্রিকাটি শুধু একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করেনি; বরং এটি হয়ে উঠেছে জ্ঞানের এক শক্তিশালী মশাল, যা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। নৈতিকতা, ন্যায়বিচার এবং মানবিকতার মূর্ত প্রতীক হয়ে পত্রিকাটি সমাজে তার অবস্থান তৈরি করেছে।

প্রতিটি সংখ্যায় পত্রিকাটি এমন বিষয়বস্তু তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে, যা পাঠকদের মধ্যে ইসলামের জ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি আল-ইতিছামের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের স্টাফ ও দায়িত্বশীলদের অবদানও অনস্বীকার্য। তাদের আন্তরিকতা, দক্ষতা এবং নিষ্ঠা পত্রিকাটির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সর্বোপরি, এটি একটি আদর্শিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করে যাচ্ছে।

আল-ইতিছাম-এর প্রতিটি সংখ্যা ছিল একটি নতুন অধ্যায়, যা মানুষকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। এই যাত্রা ছিল শুধু একটি প্রকাশনার সাফল্য নয়, বরং এটি ছিল একটি দৃষ্টান্ত, যা দেখিয়েছে কীভাবে সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি উদ্যোগ সফল হতে পারে।

পত্রিকার বিশেষত্ব ও পাঠকপ্রিয়তা:

মাসিক আল-ইতিছাম-এর বহুমুখী বিষয়বস্তু এবং গভীর গবেষণার ভিত্তিতে রচিত প্রবন্ধ ও বিশ্লেষণ এটি সব বয়সের এবং শ্রেণির পাঠকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে। শিশুদের জন্য নৈতিক শিক্ষার গল্প, তরুণদের জন্য জীবন গঠনের দিকনির্দেশনা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গভীর তত্ত্বমূলক বিশ্লেষণ এই পত্রিকাটিকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। এর প্রতিটি সংখ্যাই ছিল একটি নতুন চিন্তার মশাল, যা মানুষের হৃদয় ও মস্তিষ্কে ইসলামের সঠিক জ্ঞান পৌঁছে দিয়েছে।

শুধু বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যই নয়; পত্রিকার সহজবোধ্য ভাষা, আকর্ষণীয় উপস্থাপনা এবং বাস্তব জীবনের প্রাসঙ্গিক উদাহরণ পাঠকদের কাছে এটি আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। এতে প্রতিনিয়ত সমাজের চলমান সমস্যা ও সমাধানের পাশাপাশি ইসলামের চিরন্তন শিক্ষাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা পাঠকদের দৈনন্দিন জীবনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

বর্তমান সময়ে যখন মানুষ বিভ্রান্তি এবং নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার, তখন আল-ইতিছাম পত্রিকা তার সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে পাঠকদের জন্য এক আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। এটি শুধু একটি পত্রিকা নয়, বরং এটি একটি আন্দোলন, যা সমাজে ন্যায়বিচার, নৈতিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: আরও দূরে যাওয়ার অঙ্গীকার

১০০তম সংখ্যার মাধ্যমে মাসিক আল-ইতিছাম একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। ভবিষ্যতে পত্রিকাটিকে আরও আধুনিক, সমৃদ্ধ এবং প্রাসঙ্গিক করে গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ থাকবে ইনশা-আল্লাহ। এরই ধারাবাহিকতায় পত্রিকাটিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলমান, যাতে এটি বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে পাঠযোগ্য হয়। ইতোমধ্যে আল-ইতিছামের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পত্রিকাটি পড়া এবং নতুন ও পুরাতন সংখ্যার ডাউনলোড আরও সহজ ও সুবিধাজনক করা হয়েছে। ইউটিউব চ্যানেল ‘আল-ইতিছাম টিভি’, পডকাস্ট এবং অনলাইন সেমিনারের মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষার প্রচারকে আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে। ই-বুক সংস্করণ ও বিশেষায়িত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির মাধ্যমে পাঠকদের আরও কাছে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চলছে।

তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা আল-ইতিছামের অন্যতম লক্ষ্য। তাদের মধ্যে ইসলামের জ্ঞান ও আদর্শ আরও গভীরভাবে সঞ্চারিত করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে ইনশা-আল্লাহ।

এছাড়া, আমরা পত্রিকায় নতুন লেখকদের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণা ও বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ প্রকাশে আরও মনোযোগ দিতে চাই। এর মাধ্যমে আমরা পত্রিকার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে পারব এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা সমাজের সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হব।

আমাদের লক্ষ্য শুধু একটি পত্রিকা হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকা নয়; বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী জ্ঞানের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করা। আল্লাহর সাহায্যে আমরা এই পত্রিকার মাধ্যমে সমাজে সত্য, ন্যায় এবং নৈতিকতার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিরলস কাজ করে যাব ইনশা-আল্লাহ।

সমাজের প্রতি বার্তা:

বর্তমান সমাজ নৈতিক অবক্ষয়, বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতার সম্মুখীন। মানুষের মধ্যে দিন দিন আত্মকেন্দ্রিকতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার অভাব বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে মাসিক আল-ইতিছাম পত্রিকা তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে ইসলামের চিরন্তন বার্তা পৌঁছে দিতে।

পত্রিকাটি সমাজে নৈতিকতা, মানবিকতা এবং ন্যায়বিচারের বার্তা ছড়িয়ে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ইসলামের আলোকে প্রতিটি মানুষকে তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনে সহায়ক পথ প্রদর্শনের জন্য কাজ করছে। প্রতিটি সংখ্যার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার গভীরে গিয়ে তা সমাধানের জন্য কুরআন মাজীদ ও ছহীহ হাদীছের আলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পাঠকদের মধ্যে ইসলামের সঠিক জ্ঞান ও চেতনাকে জাগ্রত করার পাশাপাশি তাদের পারিবারিক, সামাজিক এবং পেশাগত জীবনেও সঠিকভাবে পরিচালিত হতে সহায়তা করছে।

সমাজের প্রতি আমাদের ও মাসিক আল-ইতিছাম-এর বিশেষ বার্তা হলো— আল্লাহ তাআলার বাণী, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান, ৩/১০৩)। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘হে মানুষ সকল! অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি, যদি তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করে থাকো, তবে কখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো— আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ’।[2]

যদি ইসলামের উক্ত বিশেষ বার্তা বা শিক্ষাকে সত্যিকার অর্থে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে আমরা একটি ন্যায়বিচারপূর্ণ ও নৈতিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে এবং মানবিকতার আলো ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হব ইনশা-আল্লাহ।

উপসংহার:

মাসিক আল-ইতিছাম-এর ১০০তম সংখ্যা আমাদের জন্য গর্ব এবং দায়িত্বের এক অনন্য প্রতীক। এটি আমাদেরকে ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা আরও গভীরভাবে মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার প্রেরণা জোগায়। আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে আমরা আমাদের এই যাত্রায় অবিচল রয়েছি এবং থাকব ইনশা-আল্লাহ। আসুন! আমরা সবাই একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করি এবং ইসলামের চিরন্তন বার্তা সমাজে ছড়িয়ে দিতে আন্তরিকভাবে কাজ করি। আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টায় বরকত দান করুন এবং আমাদের সফল করুন—আমীন।

-মো. আকরাম হোসেন

সহকারী সম্পাদক, মাসিক আল-ইতিছাম;
শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।


[1]. প্রবন্ধটির লেখক ও প্রবন্ধকার মো. আকরাম হোসেন মাসিক আল-ইতিছামের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য হওয়ায় নিজের নামটা প্রবন্ধে উল্লেখ করেননি। নিঃসন্দেহে এটা তার পক্ষ থেকে বিনয় প্রদর্শন বৈকি। আমার জানা মতে, মহান আল্লাহর রহমত ও তাওফীক্বের পরে যারা পবিত্রকাটিকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাদের মধ্যে এর অন্যতম সহকারী সম্পাদক স্নেহেষ্পদ ছোট ভাই মো. আকরাম হোসেনের নাম সবার উপরে রয়েছে। মহান আল্লাহ তার এই খেদমতকে তার পরকালের পাথেয় হিসেবে কবুল করুন। আমীন!
-নির্বাহী সম্পাদক।

[2]. মুসতাদরাক হাকেম, হা/৩১৮।

Magazine