কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

অহির বাস্তবতা বিশ্লেষণ (৯ম পর্ব)

(মিন্নাতুল বারী- ১৬তম পর্ব)

[যে হাদীছের ব্যাখ্যা চলছে : ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমাকে হাদীছ শুনিয়েছেন ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র; তিনি বলেন, আমাকে হাদীছ শুনিয়েছেন লায়ছ; তিনি হাদীস বর্ণনা করেন উকায়ল থেকে; তিনি ইবনু শিহাব থেকে, তিনি উরওয়া ইবনু যুবায়ের থেকে, তিনি আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অহির সূচনা হয় ঘুমে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন সেটিই সকালের মতো তার সামনে সত্যরূপে উদ্ভাসিত হতো। অতঃপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে তিনি হেরা গুহায় নির্জনে সময় কাটান এবং সেখানে বেশ কয়েক রাত্রি ইবাদতে মগ্ন থাকতেন- প্রয়োজনীয় পাথেয় নেওয়ার জন্য পরিবারের কাছে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত। তারপর তিনি খাদীজা রযিয়াল্লাহু আনহা-এর নিকট ফিরে আসতেন, এবং অনুরূপভাবে পাথেয় নিয়ে যেতেন। এভাবেই একদিন তিনি হেরা গুহায় থাকা অবস্থায় তাঁর নিকট মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাসত্য (অহী) চলে আসেফেরেশতা তাঁর নিকটে এসে তাঁকে বলেন, পডুন! তিনি বলেন, আমি পড়তে জানি না। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফেরেশতা আমাকে ধরলেন এবং এমনভাবে জোরে চাপ দিলেন যে, আমার খুব কষ্ট হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, পড়ুন! আমি বললাম, আমি তো ড়তে জানি না। ফলে ফেরেশতা আমাকে দ্বিতীয়বার ধরলেন এবং এমনভাবে জোরে চাপ দিলেন যে, আমার খুব কষ্ট হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, পড়ুন! আমি বললাম, আমি তো ড়তে জানি না। তিনি আমাকে তৃতীয়বার ধরে এমনভাবে জোরে চাপ দিলেন যে আমার খুব কষ্ট হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, পড়ুন! আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি (সব কিছু) সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাটবাধা রক্ত হতে। পড়ুন! আর আপনার প্রতিপালক মহাসম্মানিত

অতঃপর আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতগুলো নিয়ে ফিরে আসেন এসময় তাঁর বুক ধড়ফড় করছিল। তিনি খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ রযিয়াল্লাহু আনহা-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও! আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও! অতঃপর তারা তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অতঃপর তাঁর ভয় কেটে গেলে তিনি খাদীজা রযিয়াল্লাহু আনহা-কে পুরো ঘটনা জানালেন এবং বললেন, আমি আমার জীবনের ভয় পাচ্ছি। তখন খাদীজা রযিয়াল্লাহু আনহা বললেন, কখনোই নয়! আল্লাহর কসম! মহান আল্লাহ আপনাকে কখনোই অপমানিত করবেন না। নিশ্চয় আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখেন, অপারগ ব্যক্তির বোঝা বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন, দুর্যোগগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা করেন। অতঃপর খাদীজা রযিয়াল্লাহু আনহাতাকে সাথে নিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাক্বা ইবনু নওফেলের কাছে নিয়ে যা, যিনি জাহেলী যুগে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি হিব্রু ভাষায় বই লিখতেন। আল্লাহ যতটুকু চেয়েছিলেন, তিনি হিব্রু ভাষায় ইঞ্জীল লিখেছিলেন। তিনি একজন বয়োঃবৃদ্ধ ছিলেন এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। খাদীজা রযিয়াল্লাহু আনহাতাঁকে বললেন, হে আমার চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কাছে শুনুন (তাঁর বৃত্তান্ত)! তখন ওয়ারাক্বা তাঁকে ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ভাতিজা, আপনি কী দেখেছেন? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছিলেন তাঁকে তা জানালেন। অতঃপর ওয়ারাক্বা তাঁকে বললেন, ইনিই সেই ‘নামূস’ (গোপন বার্তাবাহক অর্থাৎ জিবরীল) যাকে মহান আল্লাহ মূসার নিকট পাঠিয়েছিলেন। হায়! যদি আমি সে সময় যুবক থাকতাম এবং যদি আমি সেদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতাম যেদিন আপনার জাতি আপনাকে বের করে দিবে! তখন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনিবলেন, হ্যাঁ, ইতোপূর্বে যে ব্যক্তিই এই বার্তা নিয়ে এসেছে, যে বার্তা নিয়ে আপনি এসেছেন, তাঁর সাথেই শত্রুতা করা হয়েছে। আপনার সে সময় পর্যন্ত যদি আমি বেঁচে থাকি, তবে আমি আপনাকে মযবূতভাবে সহযোগিতা করব। কিন্তু কিছুদিন পর ওয়ারাক্বা রযিয়াল্লাহু আনহু ইন্তেকাল করেন। আর অহি কিছু দিনের জন্য স্থগিত হয়ে যা।]

প্রথম অবতীর্ণ পাঁচটি আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :

ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ উক্ত পাঁচ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, নিশ্চয় এই পাঁচটি আয়াত পবিত্র কুরআনের মূল উদ্দেশ্য সম্বলিত। এগুলোর মাধ্যমে অহি বা কুরআনের সূচনার শ্রেষ্ঠত্ব বস্তুত এখানেই নিহিত রয়েছে। এই পাঁচ আয়াতকে যদি কুরআনের হেডলাইন বলা হয় তবুও ভুল হবে না। এই জন্য যে, বইয়ের শিরোনাম বইয়ের পরিচিতি বহন করে। এই পাঁচটি আয়াতে উছূলুদ দ্বীন, আল্লাহর তাওহীদ ইত্যাদি বিষয়ের দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়।[1]

পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানের গুরুত্ব, আল্লাহর নামের মাধ্যমে শুরু করার আদেশ দিয়ে তার নামের মহত্ত্ব ও বড়ত্ব বুঝানো হয়েছে। ছোট থেকে ছোট ও বড় থেকে বড় কাজ মহান আল্লাহর সাহায্য নিয়ে তাঁর নামেই শুরু করা উচিত। ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন’ বলার মাধ্যমে আল্লাহর রুবূবিয়্যাত তথা তাঁর তাওহীদ ও একত্বের দিকে ইশারা। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনিই আমাদের ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। ‘রক্তপিণ্ড থেকে সৃষ্টি করেছেন’ বলার মাধ্যমে মহান আল্লাহর ক্ষমতা এবং তাঁর সৃষ্টিকর্তা হওয়ার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। রক্তপিণ্ড তো আর এমনিতেই তৈরি হতে পারে না। শুক্র থেকে কয়েক ধাপ অতিক্রম করে রক্তপিণ্ড হতে হয় আবার রক্তপিণ্ড থেকে পূর্ণ মানুষে পরিণত হওয়ার জন্য কয়েক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। মহান আল্লাহর নিপুণ সৃষ্টির ব্যতিক্রম নিদর্শন হচ্ছে মানুষ স্বয়ং নিজেই। ‘তোমার প্রতিপালক সম্মানিত’ বলার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলির দিকে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ এমন মহানুভব সম্মানিত আকরাম বা কারীম যে, তিনি কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়াই মানুষের উপর ইহসান করেন। তাঁর অন্যতম ইহসান হচ্ছে জ্ঞান। পরের আয়াতে সেই জ্ঞানের দিকে ইশারা করে তিনি বলেন, ‘আর মানুষকে মহান আল্লাহ সেই জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না’। এই আয়াত প্রমাণ করে তিনি সকল জ্ঞানের উৎস। মানুষ মূলত সর্বৈব অজ্ঞ। মহান আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান মানুষকে দিয়েছেন মানুষ ততটুকুই জানে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এত উৎকর্ষের পর কত লাখো-কোটি জিনিস আছে মানুষের অজানা। যা জ্ঞান-গবেষণার মাধ্যমে মানুষ ধীরে ধীরে জানতে পারছে। যেমন আজকের আধুনিক যুগের আগে মানুষ এই বিষয়গুলো জানত না ঠিক তেমনি অগণিত বিষয় আছে যা মানুষ এখন জানে না। পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত যদি মানুষের জ্ঞান-গবেষণা চলতে থাকে তবুও মানুষ মহান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় অতি সামান্যই জানতে পারবে। মানুষের এই জানার তুলনা মহাসাগরের বুকে এক বিন্দু পানির মতো। শুক্রকীট থেকে সৃষ্টি করে মহান আল্লাহর অজ্ঞ সৃষ্টিজীবকে তাঁরই জ্ঞানের মহাসমুদ্র থেকে বিন্দু পরিমাণ জ্ঞান শিখানোর মধ্যে যেমন মহান আল্লাহর অসীম সত্তার সীমাহীন বড়ত্ব রয়েছে, তেমনি মানুষের নত হয়ে, নিরহংকারী হয়ে তাঁরই সিজদায় অবনত হওয়ার শিক্ষা নিহিত রয়েছে।

হাদীছের শিক্ষা বা উপকারিতা :

(১) রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে অহির শুরু হয়েছে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। সত্য স্বপ্ন অহির অংশ। আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنْ النُّبُوَّةِ ‘সত্য স্বপ্ন নবুঅতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ। অনেক মুহাদ্দিছ এই হাদীছের গাণিতিক দিক থেকে ব্যাখ্যা করেছেন যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সত্য স্বপ্ন অহির শুরুর দিকে ছয় মাস যাবৎ এসেছে। তার পরবর্তী ২৩ বছর নবুঅত জীবনকে মাসের হিসেবে নিয়ে গেলে তিনি ২৭৬ মাস সরাসরি নবুঅতী অহি পেয়েছেন। আর ২৭৬ মাসকে ছয় মাস দিয়ে ভাগ দিলে ৪৬ হয়। তথা তার সত্য স্বপ্নময় প্রথম ছয় মাস তার নবুঅতী জীবনের ৪৬ ভাগের এক ভাগ। আল্লাহর রাসূলের জীবনের হিসাবগতভাবেও সত্য স্বপ্ন অহির ৪৬ ভাগের এক ভাগ। যদিও আমি মনে করি, এই ধরনের হিসাবের কোনো প্রয়োজন নাই। কেননা আরো বিভিন্ন বর্ণনায় সত্য স্বপ্নকে নবুঅতের ভাগ বলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন কিছু বর্ণনায় ৭০ ভাগের এক ভাগও বলা হয়েছে।[2] ওয়াল্লাহু আ‘লাম বিস সওয়াব।

(২) রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হেরা গুহায় যাওয়ার সময় কয়েক দিনের খাদ্য সাথে নেওয়া প্রমাণ করে সফরের জন্য পাথেয় গ্রহণ করা আল্লাহ ভরসার পরিপন্থী নয়। বরং মানুষ যে রিযিক্বের মুখাপেক্ষী তার প্রমাণ বহন করে।

(৩) রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণের নিকট প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করে, ইসলামে সন্ন্যাসবাদ সমর্থন করে না। স্বাভাবিক জীবনযাপনের পাশাপাশি মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং তাঁর সাধ্য অনুযায়ী ইবাদত করাই ইসলাম।

(৪) একজনের আনীত সংবাদ গ্রহণযোগ্য। সংবাদের সত্যতার মাপকাঠি সংখ্যার উপর নয়; ব্যক্তির সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরায়ণতার উপর। যেমনটা জিবরীলকে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বাস করেছেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খাদীজা ও ওয়ারাকা বিশ্বাস করেছেন এবং সত্যায়ন করেছেন।

(৫) মানবসেবা আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার মাধ্যম, বিপদ থেকে উদ্ধারের মাধ্যম।

(৬) একাকিত্ব শরীর ও মনের জন্য অনেক উপকারী। জ্ঞান-গবেষণার নিয়ামক। উন্নত ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়ক।

(৭) খাদীজা রযিয়াল্লাহু আনহা-এর মতো বিপদে সাহস প্রদানকারী স্ত্রীরাই আদর্শ স্ত্রী।

(৮) যারা দ্বীনের দাওয়াতী কাজ করেন, তাঁরা বহুলাংশে স্বজাতি কর্তৃক যুলমের স্বীকার হন।

(৯) মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনবার্তা পূর্বের কিতাবগুলোতে বর্ণিত ছিল।

অন্য সনদে বর্ণিত অতিরিক্ত অংশ :

উক্ত হাদীছের শেষে ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ ভিন্ন সনদে অন্য একটি হাদীছের খণ্ডিত অংশ উল্লেখ করেছেন। নিম্নে উক্ত খণ্ডিত অংশের অনুবাদসহ ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।

قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَأَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيَّ قَالَ وَهُوَ يُحَدِّثُ عَنْ فَتْرَةِ الوَحْيِ فَقَالَ فِي حَدِيثِهِ بَيْنَا أَنَا أَمْشِي إِذْ سَمِعْتُ صَوْتًا مِنَ السَّمَاءِ، فَرَفَعْتُ بَصَرِي فَإِذَا المَلَكُ الَّذِي جَاءَنِي بِحِرَاءٍ جَالِسٌ عَلَى كُرْسِيٍّ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ فَرُعِبْتُ مِنْهُ فَرَجَعْتُ فَقُلْتُ زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى {يَا أَيُّهَا المُدَّثِّرُ. قُمْ فَأَنْذِرْ} إِلىَ قَوْلِهِ {وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ} ]المدثر: 1-5] فَحَمِيَ الوَحْيُ وَتَتَابَعَ تَابَعَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ وَأَبُو صَالِحٍ وَتَابَعَهُ هِلاَلُ بْنُ رَدَّادٍ عَنِ الزُّهْرِيِّ وَقَالَ يُونُسُ وَمَعْمَرٌ بَوَادِرُهُ..

ইবনু শিহাব যুহরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমাকে আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান হাদীছ বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ আল-আনছারী রযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাময়িকভাবে অহি স্থগিত হওয়ার হাদীছ বর্ণনা করছিলেন, সেই হাদীছে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদা আমি হাঁটছিলাম, হঠাৎ আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি উপরে চোখ তুলে তাকালাম। দেখলাম, সেই ফেরেশতা, যিনি হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিলেন; তিনি আসমান ও যমীনের মাঝখানে একটি কুরসীতে বসে আছেন। এতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তৎক্ষণাৎ আমি ফিরে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত করো, আমাকে বস্ত্রাবৃত করো। তারপর আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করলেন, ‘হে বস্ত্রাবৃত ব্যক্তি! উঠুন, (মানুষকে) সতর্ক করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন। অপবিত্রতা (অর্থাৎ মূর্তি-প্রতিমা) পরিত্যাগ করুন’ (আল-মুদ্দাছছির, ৭৪/১-৪)। এরপর নিয়মিত ও ব্যাপকভাবে অহি নাযিল হতে থাকে।

আব্দুল্লাহ ইবনু ইউসুফ রহিমাহুল্লাহ ও আবূ ছালেহ রহিমাহুল্লাহ অনুরূপ (অর্থাৎ فؤاده শব্দ) বর্ণনা করেছেন। হেলাল ইবনু রাদদাদ রহিমাহুল্লাহ যুহরী রহিমাহুল্লাহ থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম যুহরী থেকে ইউনুস ও মা‘মার রহিমাহুমাল্লাহ فؤاده এর স্থলে بَوَادِرُهُ শব্দ উল্লেখ করেছেন।

রাবী পরিচিতি :

আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান :

নাম : আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান ইবনু আওফ। তিনি মহান ছাহাবী জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত আব্দুর রহমান ইবনু আওফের সন্তান। তাঁর নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তাঁর নামের বিষয়ে যে মতগুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আব্দুল্লাহ ও ইসমাঈল। আবার কেউ বলেছেন, তাঁর কুনিয়াত (উপনাম) তথা আবূ সালামাই তাঁর নাম।

বংশ : কুরাশী, মাদানী, যুহরী।

মর্যাদা : তিনি মদীনার সাত জন বিখ্যাত ফক্বীহের একজন। দুধমায়ের দিকদিয়ে আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা তাঁর খালা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন মদীনার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইমাম যুহরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, কুরাইশ বংশ থেকে যারা বড় ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

শিক্ষকবৃন্দ : (১) উসামা ইবনু যায়েদ (২) আনাস ইবনু মালেক (৩) জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ আল-আনছারী (৪) হাসসান ইবনু ছাবেত (৪) যায়েদ ইবনু ছাবেত (৫) তালহা ইবনু আব্দুল্লাহ (৬) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (৭) উবাদা ইবনু ছমেত (৮) আব্দুর রহমান ইবনু আওফ।

ছাত্রবৃন্দ : (১) জা‘ফর ইবনু রাবীআ (২) উরওয়া ইবনুল যুবায়ের (৩) আমর ইবনু দীনার (৪) উমার ইবনু আব্দুল আযীয (৫) মূসা ইবনু উক্ববা (৬) হিশাম ইবনু উরওয়া (৭) ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাছীর।

মৃত্যু : মদীনায় ৯৪ মতান্তরে ১০৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ আল-আনছারী :

নাম : জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু হারাম আল-আনছারী।

কুনিয়াত : আবূ আব্দুল্লাহ। তাঁকে আবূ আব্দুর রহমানও বলা হয়ে থাকে।

বংশ : খাযরাজী, আনছারী, সুলামী, মাদানী।

সম্মান : তাঁর বাবা আব্দুল্লাহ উহুদের যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন। তিনি তাঁর বাবার রেখে যাওয়া কর্য পরিশোধ ও নয় জন বোনের লালনপালন নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। এই ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সেই সমস্ত ছাহাবীর অন্তর্ভুক্ত যারা প্রচুর পরিমাণে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তাঁর বাবার জীবদ্দশায় বোনদের দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর প্রায় সকল যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সিরিয়া বিজয়ে তিনি খালেদ ইবনু ওয়ালিদের সেনাপতিত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর করা প্রশ্নের ভিত্তিতেই কালালার আয়াত অবতীর্ণ হয় (আন-নিসা, ৪/১৭৬)। সিফফীনের যুদ্ধের পর তিনি নিজেকে হাদীছশাস্ত্রের জন্য নিবেদিত করেন। শুধু একটি হাদীছ শ্রবণ করার জন্য তিনি মিশর সফর করেন। মসজিদে নববীতে হাদীছের দারসের জন্য তাঁর স্থায়ী হালাকা ছিল।

শিক্ষকবৃন্দ : (১) আলী ইবনু আবী তালেব (২) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (৩) মুআয ইবনু জাবাল (৪) আবূ বকর ছিদ্দীক্ব (৫) তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (৬) আবূ সাঈদ খুদরী (৭) আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ (৮) আবূ হুরায়রা প্রমুখ ছাহাবীবৃন্দ।

ছাত্রবৃন্দ : (১) আল-হাসান আল-বাছরী (২) সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (৩) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (৪) সুলায়মান ইবনু আতীক্ব (৫) উরওয়া ইবনুল জুবায়ের (৬) আতা ইবনু ইয়াসার (৭) আতা ইবনু আবী রাবাহ (৮) আমর ইবনু দীনার।

মৃত্যু : মদীনায় ৭০ হিজরীর পরে মৃত্যুবরণ করেন।

সনদের সূক্ষ্মতা :

وَهُوَ يُحَدِّثُ عَنْ فَتْرَةِ الوَحْيِ فَقَالَ فِي حَدِيثِهِ.

উক্ত বাক্যে ইউহাদ্দিছু এর ফায়েল নির্ধারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে, এখানে ঘটনা বর্ণনাকারী জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ। আর কারো মতে, এখানে ঘটনা বর্ণনাকারী স্বয়ং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দ্বিতীয় মতটিই বেশি বিশুদ্ধ কেননা মুসলিমের বর্ণনায় সেটি স্পষ্ট হয়েছে।

أَنَّ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيَّ وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُحَدِّثُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُحَدِّثُ عَنْ فَتْرَةِ الْوَحْيِ قَالَ فِي حَدِيثِهِ.

আল্লাহর রাসূলের ছাহাবী জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু একদিন হাদীছ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহি স্থগিত হওয়ার বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন।

সুতরাং প্রমাণিত হলো উক্ত ঘটনার বর্ণনাকারী স্বয়ং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যা ছহীহ বুখারীর অন্য বর্ণনায় আরো স্পষ্টভাবে আছে।

ثُمَّ فَتَرَ عَنِّي الوَحْيُ فَبيْنَا أنَا أمْشِي.

তথা স্বয়ং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তারপর আমার উপর অহি আসা বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর একদিন আমি হাঁটছিলাম।[3]

অপরিচিত শব্দ :

فَحَمِيَ الوَحْيُ ‘অতঃপর অহি গরম হয়ে যায়’। আমরা বর্তমানে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে কোনো একটা ইস্যু নিয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হলে বলে থাকি, উমুক বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক খুব গরম হয়ে আছে। আবার যখন আলোচনা-সমালোচনা কমে যায় তখন বলি, বিষয়টি নিয়ে এখন সবাই ঠান্ডা; কেউ কিছু বলছে না। ঠিক আমরা যেমন গরম ও ঠান্ডা শব্দটি কোনো কিছুর চালু থাকা ও থেমে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি তেমনি আরবীতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুতরাং এখানে অহি গরম হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো অহি চলতে থাকে।

উক্ত অংশটি তাহবীল না তা‘লীক্ব?

আমরা বাংলা অনুবাদে দেখেছি আলোচিত হাদীছটি ইবনু শিহাব যুহরী দিয়ে শুরু হয়েছে। ইমাম বুখারী থেকে ইবনু শিহাব যুহরী পর্যন্ত কোনো সনদ উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং সনদবিহীন ইবনু শিহাব যুহরীর উক্ত বর্ণনা কি তা‘লীক্ব বা বিচ্ছিন্ন সানাদ সংবলিত হাদীসের মধ্যে গণ্য হবে? উল্লেখ্য যে, আমরা মিন্নাতুল বারীর ভূমিকায় ছহীহ বুখারীর তা‘লীক্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আজকের আলোচনায় প্রথমত আমরা দেখে নেই তাহবীলের পরিচয়।

তাহবীলের সংজ্ঞা : হাদীছ বর্ণনার মধ্যে এক সনদ থেকে অন্য সনদে যাওয়াকে তাহবীল বলা হয়। বিভিন্ন হাদীছগ্রন্থে তাহবীলের চিহ্ন হিসেবে আরবী (ح) হা বর্ণটি ব্যবহার করা হয়। যেমন—

সনদ নং ১ : ইমাম বুখারী ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়ের থেকে তিনি লায়ছ ইবনু সা‘দ থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন।

সনদ নং ২ : ইমাম বুখারী হাদীছটি আরো শুনেছেন আব্দুল্লাহ ইবনু ইউসুফ থেকে, তিনি ইমাম মালেক থেকে।

উভয় সনদের ইমাম মালেক ও লায়ছ ইবনু সা‘দ হাদীছটি শুনেছেন হিশাম থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে। এই উদাহরণে আমরা দেখেছি ইমাম বুখারী লায়ছ ইবনু সা‘দ পর্যন্ত সনদ বর্ণনা করার পর আবার আরেকটি নতুন সনদ তার সাথে যুক্ত করার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু ইউসুফের নাম নিয়ে প্রথম থেকে শুরু করেছেন। এভাবে নতুন একটি সনদের জন্য মধ্যখান থেকে পুনরায় শুরুতে ফিরে আসাকেই তাহবীল বলা হয়।

তাহবীল মূলত দুই প্রকার হয়ে থাকে—

(ক) সনদের প্রথমে তাহবীল : তথা হাদীছের সংকলক মুহাদ্দিছ হাদীছটি প্রথম থেকেই আলাদা আলাদা কয়েকটি সনদে বর্ণনা করেন যে, আলাদা আলাদা সনদগুলো নির্দিষ্ট একজন শায়খ যাকে (مدار) মাদার বা আবর্তনস্থল বলা হয়, সেখানে এসে একত্রিত হয় এবং সনদগুলোর মিলনস্থল থেকে ছাহাবী পর্যন্ত পরবর্তী সনদ একটিই হয়।

(খ) সনদের মধ্যে তাহবীল : সংকলকের নিকট থেকে নির্দিষ্ট একজন শায়খ বা (مدار) মাদার বা আবর্তনস্থল পর্যন্ত সনদ একটাই কিন্তু আবর্তনস্থল থেকে ছাহাবী পর্যন্ত সনদ আলাদা। তখন সনদের মধ্যখানে সংকলককে তাহবীল করতে হয়।

অন্যদিকে তা‘লীক্বে আগের কোনো সনদের পরিবর্তন থাকে না, বরং সম্পূর্ণ আলাদা হাদীছ সনদবিহীনভাবে বর্ণনা করাকে তা‘লীক্ব বলা হয়।

যাহোক, আমাদের আলোচ্য বর্ণনাটি আল্লামা কিরমানীর মতে, তা‘লীক্ব বা বিচ্ছিন্ন সানাদ সংবলিত হাদীছের অন্তর্ভুক্ত।[4] কিন্তু হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ-এর মতে, উক্ত বর্ণনা তাহবীলের অন্তর্ভুক্ত।[5] তথা আমাদের আলোচিত হাদীছের মূল সনদ পূর্বের হাদীছের সনদ। সনদের আবর্তনস্থল যুহরী থেকে এক সনদে পূর্বের হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে আর আরেক সনদে এই হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে আরো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হলো—

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়ের-লায়ছ-উক্বায়েল-যুহরী।

উভয় হাদীছের মূল সনদ এটিই। সনদের মিলনস্থল যুহরী। যুহরী থেকে দুটি আলাদা সনদ রয়েছে। প্রথম সনদটি হচ্ছে যুহরী-উরওয়া-আয়েশা। আর এই সনদেই পূর্বের লম্বা হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। পরবর্তী সনদটি হচ্ছে যুহরী-আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান-জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ। এই সনদে আমাদের আলোচ্য হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে।

তাহবীল হওয়ার দলীল :

قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَأَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ.

এখানে ‘ইবনু শিহাব যুহরী বলেছেন’ বলার পর ‘ওয়া আখবারানী’ যুক্ত করা হয়েছে। ‘ওয়া আখবারানী’ এর ওয়াও আতেফা প্রমাণ করে এটি পূর্বের কোনো সনদের সাথে যুক্ত।

সুতরাং উক্ত হাদীছটি মুআল্লাক্ব নয় এবং ইমাম বুখারী ইমাম যুহরী পর্যন্ত সনদ বিলুপ্তও করেননি। বরং পূর্বের হাদীছের সনদেই ইমাম যুহরী পর্যন্ত যাওয়ার পর সেখান থেকে অন্য সনদে অতিরিক্ত কিছু তথ্য যোগ করা হয়েছে। সুতরাং এটি আলাদা হাদীছ নয়, বরং পূর্বের হাদীছের অন্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত কিছু অতিরিক্ত বাক্য। পূর্বের হাদীছ শেষ করা হয়েছে অহি স্থগিত হওয়া কথার মাধ্যমে। আর একই হাদীছের ভিন্ন সনদে এখানে অহি স্থগিত হওয়ার পর পুনরায় অহি কখন চালু হলো তার আলোচনা করা হয়েছে।

(চলবে)

আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক

ফাযেল, দারুল উলূম দেওবান্দ, ভারত; এম. এ. (অধ্যয়নরত), উলূমুল হাদীছ বিভাগ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।


[1]. ফাতহুল বারী, ৮/৭১৮।

[2]. তাফসীরে কুরতুবী, সূরা ইউসুফ, ১২/৫।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৬২১৪।

[4]. কিরমানী, আল-কাওয়াকিবুদ দুরারী, ১/৪১।

[5]. ফাতহুল বারী, ১/২৮।

সাওয়াল জওয়াব

প্রশ্ন (১৩) : মাঝে মধ্যে কোনো কারণে মসজিদে জামাআতে ছালাত আদায় করা হয় না। আর বাড়িতে ছালাত আদায় করার সময় আমার স্ত্রী চায় যে, আমরা দুজনে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করি। এখন প্রশ্ন হলো, স্বামী-স্ত্রী জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করতে পারবে কি?

প্রশ্ন (১৪) : কোনো ব্যক্তি যদি চার ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে কিন্তু এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে না তাহলে কি সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে?

প্রশ্ন (১৫) : সমাজে প্রচলিত আছে যে, যদি দুই রাকআত ছালাত আদায় করে সহবাস করা হয় এবং তাতে যদি সন্তান হয়, তাহলে সেই সন্তান সৎ হয়। এটি কথা কি সঠিক?

প্রশ্ন (১৬) : রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে এবং বাড়িতে সর্বদাই ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত ও বিতরের ছালাত আদায় করতেন। এখন প্রশ্ন হলো, কেউ যদি সেই ছালাত ছেড়ে দেয় তাহলে কি তার গুনাহ হবে?

প্রশ্ন (১৮) : জনৈক ব্যক্তি তিন ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে। তার যুক্তি হলো, কুরআনে তিন ওয়াক্ত ছালাতের কথা আছে। সুতরাং তিন ওয়াক্ত ছালাতই আদায় করতে হবে। এখন এই ব্যক্তি মুসলিম নাকি কাফের?

প্রশ্ন (১৯) : দাঁড়াতে সক্ষম ব্যক্তি যদি নফল ছালাত বসে আদায় করে, তাহলে তার ছালাত কি কবুল হবে?

প্রশ্ন (২০) : একই মসজিদে একাধিকবার জুমআর জামাআত করা যাবে কি?

প্রশ্ন (২১) : ছালাতের সময় সামনে কোন স্বচ্ছ কাঁচ থাকলে তাতে যদি ছায়া দেখা যায়, তাহলে সেই কাঁচের সামনে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

প্রশ্ন (২২) : জনৈক আলেম বলেন, মসজিদে প্রবেশ করে ইচ্ছা করে দুই রাকআত ছালাত আদায় না করে বসে পড়লে কোনো গুনাহ হবে না, কারণ এটা নফল ছালাত৷ তার এ বক্তব্য সঠিক কি-না?

প্রশ্ন (২৩) : শিক্ষার্থীদের যদি ছালাতের জন্য পরীক্ষার হল থেকে বের হতে না দেওয়া হয় আর পরীক্ষা শেষ করার আগেই ছালাতের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করে এমন অবস্থায় একজন শিক্ষার্থীর করণীয় কী?

প্রশ্ন (২৪) : আমি ঢাকায় থাকি, বছরে ৩ থেকে ৪ বার গ্রামের বাড়িতে আসি। আমার প্রশ্ন হলো গ্রামে থাকা অবস্থায়আমি কি কছর ছালাত আদায় করব?

প্রশ্ন (২৫) : জামাআতে ছালাত আদায় করার সময় ইমাম দুইদিকে সালাম ফিরানোর পর মুছল্লী সালাম ফিরাবে নাকি ইমাম একদিকে সালাম ফিরানোর পর মুছল্লীও একদিকে সালাম ফিরাবে?

প্রশ্ন (২৭) : যাকাতের টাকা দিয়ে ইসলামী বইপত্র কিনে মসজিদে দান করা যাবে কি?

প্রশ্ন (২৮) : আমি অল্প কিছু ধান করেছি লিজ হিসাবে, আমার প্রশ্ন হলো, কতটুকু পরিমাণ ধানহলে আমাকে উশর দিতে হবে, আর আমি কি লিজের ধান বাদ দিয়ে উশরবেরকরব নাকিপুরো ধান মেপে উশর বের করব?

প্রশ্ন (২৯) : উশরের ধান গরীব হিন্দুদেরকে দেওয়া যাবে কি?

প্রশ্ন (৩০) : সেচ্ছায় যদি কোনো হিন্দু মসজিদে দান করে তাহলে কি তা গ্রহণ করা যাবে ?

প্রশ্ন (৩১) : তালাক দেয়ার জন্য মানুষকে সাক্ষী রেখে তাদের সামনে তালাক দিতে হবে নাকি মনে মনে তালাক দিলে তালাক হবে, কোনটি সটিক?

প্রশ্ন (৩২) : আমি একজন মুসলিম ঘরের সন্তান। আমি এক হিন্দু মেয়েকে বিবাহ করে ইসলামের পথে আনতে চাই। সেক্ষেত্র আমি কি হিন্দু মেয়েকে বিবাহ করতে পারব?

প্রশ্ন (৩৩) : এক বিবাহিতা মহিলা এক পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাকেই বিবাহ করে। কিন্তু তার আগের স্বামী তাকে তালাক দেয়নি। এখন তার পরের স্বামীর ঘরে দুইটি সন্তানও হয়েছে। এমতাবস্থায় কী করণীয়?

অহির বাস্তবতা বিশ্লেষণ (৯ম পর্ব)

প্রশ্ন (৩৪) : সালাবা রযিয়াল্লাহু আনহু-এর সম্পর্কে একটা কাহিনি শুনি যে, এক বেগানা নারীর দিকে অনিচ্ছাকৃতভাবে তার চোখ পড়ে যায়। এর ফলে তিনি নিজের পাপের কথা ভেবে কাঁদতে কাঁদতে পাহাড়ে চলে যান। অনেক দিন পরে মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খুজতে যান। পরে তাকে খুজে পান এবং সে রাসূলের কোলে মাথা রেখে মারা যান।এই ঘটনা কি সত্য?

প্রশ্ন (৩৫) : শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী রহিমাহুল্লাহ তাঁর 'তামামুল মিন্নাহ' কিতাবে নাকি ৩টি শর্তে যঈফ হাদীছের উপর আমল করা বৈধ বলেছেন, কথাটি কতটুকু সত্য? এবং ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীছ মানা প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ-এর মতামত জানতে চাই।

প্রশ্ন (৩৭) : আমার জন্মগতভাবে ডান হাতে সমস্যা থাকায় আমি সকল কাজে বাম হাত ব্যবহার করি যেমন খাওয়া, পানি পান করা, লেখা ইত্যাদি।এক্ষেত্রে বাম হাতে খাদ্যগ্রহণ ও পানি পান করলে আমার গুনাহ হবে কি?

প্রশ্ন (৩৮) : টেলিভিশন ঠিক করে যে টাকা নেয় সেটা কি হালাল নাকি হারাম। কারণ সেই টেলিভিশন দিয়ে হয়তো অনেকে খারাপ ভিডিও দেখে।

প্রশ্ন (৩৯) : জাত উন্নয়নের জন্য গরু, ছাগল এরকৃত্রিম প্রজনন কি জায়েজ ?

প্রশ্ন (৪০) : আল-মুক্বীত নাম রাখে যাবে কি? যদি না রাখা যায় তাহলে এমতাবস্থায় কী করণীয়? কারণ আমার সার্টিফিকেটে আল-মুক্বীত নাম লেখা আছে।

প্রশ্ন (৪১) : ইসলামী শরীআতে সাবান, শ্যাম্পুব্যবহারের বিধান কী? বিশেষ করে অমুসলিমদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ব্যাপারে।

প্রশ্ন (৪২) : আমার বন্ধু একটা সূদী ব্যাংক থেকে শিক্ষাবৃত্তি পায়। বৃত্তির টাকাটা হালাল হবে কিনা?

প্রশ্ন (৪৩) : মোবাইলে টাকা রিচার্জ করলে ক্যাশব্যাক পাওয়া যায় তা কি জায়েজ না হারাম?

প্রশ্ন (৪৪) : কোনো মুসলিম যদি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করে তাহলে তার ইনকাম কি হালাল হবে?

প্রশ্ন (৪৫) : ইসলামে সন্তান দত্তক নেয়ার বিধান কী?

প্রশ্ন (৪৬) : আমাদের সমাজে দেখা যায় যে, অনেকেই সার্টিফিকেটে তাদের বয়স কমিয়ে নেয় যাতে তারা সরকারি চাকরীর জন্য বেশী বয়স পায়। এখন প্রশ্ন হলো, ইচ্ছা করে এমন কাজ করলে সেটি কি বৈধ হবে?

প্রশ্ন (৪৭) : স্বামী মারা গেলে স্ত্রী কোথায় ইদ্দত পালন করবে?

প্রশ্ন (৪৮) : আমার বড় বোন দুইটি মেয়ে রেখে অনেক বছর আগে মারা গেছে। বোনের মেয়ে এখন সাবালিকা এবং দুই জনই বিবাহিতা। ওদের বাবা আবার বিবাহ করেছে। এখনওই বোনের মেয়েরা কি ওদের নানা বাড়ির সম্পত্তি পাবে?

প্রশ্ন (৫০) : মুহাররমের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ছিয়াম পালন করলে ৫০ বছরের নফল ছিয়ামের নেকী লেখা হয়। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?

Magazine