কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করা ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হওয়া

post title will place here

[যুলহিজ্জাহ, ১৪৪৪ হি. মোতাবেক ২৭ জুন, ২০২৩। আরাফার মাঠে অবস্থিত ‘মসজিদে নামিরা’ই আরাফার খুৎবা প্রদান করেন শায়খ ইউসুফ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু সাঈদ হাফিযাহুল্লাহ। উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মহাপরাক্রমশালী ও মহান দাতা। যিনি আমাদের জামাআতবদ্ধ জীবনযাপনকে নাজাত এবং বিভক্ত হয়ে থাকাকে আযাবের কারণ করেছেন; যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সম্প্রীতি ও ভালোবাসার সাথে দলবদ্ধ জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং মতানৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টিকারী সকল বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। আমরা যার কাছে আশা রাখি, যাকে ভালোবাসি এবং যার অসন্তুষ্টি ও আযাব থেকে আমরা ভয় পাই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন এক আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই। তিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু’ (আল-বাক্বারা, ২/১৬৩)। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। যিনি পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্মিলিতভাবে সমাজবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং পারস্পরিক সংঘাত ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে নিষেধ করেছেন। ফলে তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা হৃদয়সমূহকে একত্রিত করেছেন এবং তাঁর দ্বারা অবস্থাসমূহ সংশোধন করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁকে রিসালাতের পয়গাম পৌঁছাতে এবং আমানত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলো, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল, (সেই আল্লাহর) যিনি আকাশসমূহ আর পৃথিবীর রাজত্বের মালিক, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই, তিনিই জীবিত করেন আর মৃত্যু আনেন’ (আল-আ‘রাফ, ৭/১৫৮)। আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন, ছাহাবীগণ ও তাঁর অনুসারীগণের উপরে রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।

অতঃপর, হে মুসলিমগণ! আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর শরীআতের পূর্ণ অনুসরণ ও তাঁর সীমারেখা রক্ষার মাধ্যমে আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন। যাতে আপনারা দুনিয়া ও আখেরাতে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত ও বিজয়ী হতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা’ (আন-নিসা, ৪/১৩)। আল্লাহর সীমারেখার হেফাযতের বিষয়সমূহের অন্যতম হলো, গায়রুল্লাহর জন্য কোনো ইবাদাত না করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করো না’। এটিই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না’ (ইউসুফ, ১২/৪০)। সুতরাং যে ব্যক্তি তাওহীদের অনুসারী, সেই কেবল হেদায়াতের অনুসারী। তার জন্যই রয়েছে নাজাত এবং প্রশংসনীয় পরিণাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রাসূল পাঠিয়েছি (এ সংবাদ দিয়ে) যে, আল্লাহর ইবাদাত করো আর ত্বাগূতকে বর্জন করো। অতঃপর আল্লাহ তাদের মধ্যে কতককে সৎপথ দেখিয়েছেন, আর কতকের উপর অবধারিত হয়েছে গোমরাহি, অতএব যমীনে ভ্রমণ করে দেখো, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি কী ঘটেছিল!’ (আন-নাহল, ১৬/৩৬)

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই। তাওহীদের এই সাক্ষ্যের নির্দেশ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তাঁর চেহারা (সত্তা) ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল, সিদ্ধান্ত তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/৮৮)

এভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিছালাত প্রাপ্তির স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ (আল-ফাতহ, ৪৮/২৯)। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মধ্যেকার কোনো পুরুষের পিতা নয়, কিন্তু (সে) আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞাতা’ (আল-আহযাব, ৩৩/৪০)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা ছালাত ক্বায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো’ (আল-বাক্বারা, ২/৪৩)। আল্লাহ তাআলার নির্দেশসমূহের মধ্যে আরো রয়েছে, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসে (নিজ আবাসে) উপস্থিত থাকে সে যেন ছিয়াম পালন করে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৫)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আর সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী’ (আলে ইমরান, ৩/৯৭)। এগুলো প্রত্যেকটিই ইসলামের রুকন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। ছালাত ক্বায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রামাযানের ছিয়াম পালন করবে এবং বায়তুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হাজ্জ পালন করবে’। ‘ঈমান হলো, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং আখেরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাক্বদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান রাখবে’। ‘ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে ভাববে তিনি তোমাকে দেখছেন’।[1]

হে মুমিনগণ! হে পবিত্র বায়তুল্লাহর হাজীগণ! বিদায় হজ্জে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐতিহাসিক খুৎবাহর অংশ বিশেষ হলো, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে লোক সকল! শোনো, তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। শোনো, আরবীর উপর অনারবীর এবং অনারবীর উপর আরবীর, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নির্ধারিত হয় কেবল তাক্বওয়ার কারণেই’।[2] নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন, এ মাসে, এ শহরে, এ দিনটি তোমাদের জন্য যেমন সম্মানিত, তেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জান, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের ইযযত-আবরুকে তোমাদের পরস্পরের জন্য সম্মানিত করে দিয়েছেন।[3] অতএব, ভাষা, বর্ণ, জাতিগত পার্থক্য কখনোই মতভেদ ও দ্বন্দ-বিবাদের জন্যে যুক্তিযুক্ত কারণ নয়। বরং এগুলো হলো মহাবিশ্বে আল্লাহ তাআলার নির্দশনসমূহের অন্যতম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’ (আর-রূম, ৩০/২২)। এছাড়াও আরো কিছু দলীল রয়েছে যা উক্ত বিষয়ের গুরুত্বকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। যেমন আল্লাহ তাআলার জামাআতবদ্ধ থাকার নির্দেশ, পরস্পর সহযোগিতা ও ভালোবাসা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নেয়ামতকে স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেলে’ (আলে ইমরান, ৩/১০৩)। আর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য তিনটি কাজ পছন্দ করেন, তা হলো— (১) তোমরা তাঁরই ইবাদাত করবে, (২) তাঁর সঙ্গে কিছুই শারীক করবে না এবং (৩) তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু মযবূতভাবে ধারণ করবে ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।[4] এজন্য আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীবকে একতাবদ্ধ সঙ্গীসাথী দিয়ে অনুরূপ অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই তোমাকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা। আর তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করেছেন। যদি তুমি যমীনে যা আছে, তার সবকিছু ব্যয় করতে, তবুও তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন, নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান’ (আল-আনফাল, ৮/৬২-৬৩)। আল্লাহ তাআলা বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতার ব্যাপারে নিষেধ বাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘নিশ্চয় যারা তাদের দ্বীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোনো ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি তো আল্লাহর নিকট। অতঃপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন’ (আল-আনআম, ৬/১৫৯)

যখনই সমাজে অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি হয় তখন মানুষের অন্তরে খারাপ প্রবৃত্তি, হিংসা বিদ্বেষ ও ভিন্ন ভিন্ন ইচ্ছা-অভিলাষের সৃষ্টি হয়। যার ফলে রক্তপাত ও অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ লুণ্ঠনের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। আর তা উম্মাহর উন্নতি ও অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর বিধান পালনে বিঘ্নতার সৃষ্টির করে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায় যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্ৰা’।[5] তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘একজন মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিনের জন্য একটি অট্টালিকা সদৃশ, যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে’।[6]

আর আল্লাহর সাহায্য কেবল ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন যাপনকারীদের সাথেই। আর যে ব্যক্তি জামাআতবদ্ধ জীবন থেকে বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শয়তান তার সঙ্গী হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘আর যারা কিতাব সম্বন্ধে মতভেদ করেছে তারা চরম মতভেদে পড়ে আছে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৭৬)। আর এ লক্ষ্যেই আল্লাহ তাআলা মতভেদ ও মতবিরোধের সময়ে কুরআন ও সুন্নাহর কাছে ফিরে যাওয়ার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও আনুগত্য করো রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও— যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর’ (আন-নিসা, ৪/৫৯)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আর যে কোনো বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই’ (আশ-শূরা, ৪২/১০)। অন্যত্রে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি কিতাব এজন্য নাযিল করেছি যাতে তুমি সে সকল বিষয় স্পষ্ট করে দিতে পার যে বিষয়ে তারা মতভেদ করেছিল, আর (এ কিতাব) বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথপ্রদর্শক ও রহমতস্বরূপ’ (আন-নাহল, ১৬/৬৪)। অনুরূপভাবে তিনি উত্তম চরিত্র ধারণ, অতি সুন্দর ব্যবহার ও পারস্পরিক দয়া অনুগ্রহের পরিচয় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। আর কাজেকর্মে তাদের সাথে পরার্মশ করো’ (আলে ইমরান, ৩/১৫৯)। এছাড়া তিনি তাদেরকে ধৈর্যধারণ, মানুষের ভুলত্রুটি ক্ষমা করার গুণে অলংকৃত হতেও উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধরো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (আল-আনফাল, ৮/৪৬)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফেরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাক্বীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন’ (আলে ইমরান, ৩/১৩৩-১৩৪)। ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ইসলাম পারিবারিক ও সামাজিক ঈমানী বন্ধনকে মযবূত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। সেজন্য আল্লাহ তাআলা নিকটাত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন এবং স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, সন্তানসন্ততি প্রভৃতির পারস্পরিক হক্ব সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা ইবাদাত করো আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহংকারী’ (আন-নিসা, ৪/৩৬)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান এবং সকল মানুষ অপেক্ষা প্রিয়তম হয়েছি’।[7]

সম্মানিত হাজীগণ! আপনারা রবের নিকটে দু‘আ অব্যাহত রাখুন। নিজের জন্য দু‘আ করুন, প্রিয়জনদের জন্যে এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য দু‘আ করুন, যাতে আল্লাহ তাদের অবস্থার পরিবর্তন করে দেন এবং সত্যের উপরে সকলকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন। আর তাদেরকেও দু‘আই ভুলবেন না যারা আপনাদের প্রতি ইহসান করেছেন।

হে আল্লাহ! হাজীগণের হজ্জকে কবুল করুন। তাদের জন্য সকল বিষয়সমূহ সহজ করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি মুসলিম নর-নারীদেরকে ক্ষমা করে দিন। তাদের পরস্পরের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করে দিন। তাদের অন্তরে ইছলাহ দান করুন।

سبحان ربك رب العزة عما يصفون. وسلام على المرسلين. والحمد لله رب العالمين.


 [1]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮।

 [2]. আহমাদ, হা/২৩৪৮৯।

 [3]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৪২।

 [4]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৫।

 [5]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৬।

 [6]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৫।

 [7]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৮।

Magazine