[১ শাওয়াল, ১৪৪২ হি. মোতাবেক ১৪ এপ্রিল, ২০২১। পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারার (মসজিদে নববী) ঈদুল ফিতরের খুৎবা প্রদান করেন শায়খ ড. আহমাদ ইবনু হুমাইদ (হাফি.)। উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহীর সম্মানিত সিনিয়র শিক্ষক ও ‘আল-ইতিছাম গবেষণা পর্ষদ’-এর গবেষণা সহকারী শায়খ আব্দুল কাদের বিন রইসুদ্দীন। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]
প্রথম খুৎবা
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার কাবীরা ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাছীরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আছীলা। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার কাবীরা।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রকৃত উপাস্য নাই, যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। তিনি রাজাধিরাজ। তিনি মহাপবিত্র। তিনি শান্তি। তিনি বিশ্বাসী। তিনি সর্বনিয়ন্তা। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমতাধর, অহংকারী। তিনি নিখুঁত স্রষ্টা ও রূপদানকারী। সুন্দর নামসমূহ ও অনন্য দৃষ্টান্তসমূহ তাঁরই জন্য। তিনি সত্য বলেন। তিনি সুউচ্চ, সুমহান।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা, ইমাম, আদর্শ ও নয়নের মণি নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল। সৃষ্টিজগতের মধ্যে তিনি তাঁর মনোনীত ব্যক্তি ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। তিনি পৌত্তলিকতার নির্মূলকারী। শান্তির ছায়াতলে একত্রকারী। তিনি তওবা ও দয়ার নবী। তিনি পরম বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী। তিনি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শনকারী। তিনি আল্লাহর পথে তাঁর হুকুমে আহ্বানকারী। তিনি ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জবানীতে আহমাদ। তিনি মূসা আলাইহিস সালাম-এর তাওরাতে মুতাওয়াক্কিল নামে খ্যাত। ছিলেন না তিনি কঠিন হৃদয়ের কর্কষভাষী। বাজারে দিতেন না আড্ডা। মন্দ আচরণের বদলায় মন্দ আচরণ করতেন না; বরং মানুষকে ক্ষমা করে দিতেন। আল্লাহ তাআলা তার মাধ্যমে ঘুমন্ত হৃদয়গুলো জাগ্রত করেছেন, অন্ধ চক্ষুগুলো আলোকিত করেছেন। তার প্রতিপালক তাঁর মাধ্যমে বাঁকা জাতিকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ে সোজা পথে পরিচালিত করার পরই তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। তিনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব মানুষের মাঝে সঠিকভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। মানুষকে কল্যাণের উপদেশ দিয়েছেন। সত্য প্রতিষ্ঠায় ও মিথ্যার মূলৎপাটনে জীবনবাজি রেখে আমরণ আল্লাহর পথে জিহাদ করেছেন। অতএব, হে আল্লাহ! আমাদের নেতা, আলোর পথের রাহবার, রাহমাতুল লিল আলামীনের উপর অগণিত, অফুরন্ত, চিরস্থায়ী রহমত এবং শান্তির ফল্গুধারা বর্ষণ করুন। যার কোনো শেষ নেই। অনুরূপ তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সঙ্গি-সাথির উপর রহমত এবং শান্তি বর্ষণ করুন।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবার কাবীরা ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাছীরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আছীলা। ‘যিনি ফুরক্বান নাযিল করেছেন তাঁর বান্দার উপর, যাতে তিনি বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেন। যাঁর জন্য আসমান ও যমীনের রাজত্ব। যিনি সন্তান গ্রহণ করেননি। রাজত্বে যার কোনো অংশীদার নাই। যিনি সবকিছু সৃষ্টি করে ভাগ্যলিপি নির্ধারণ করেছেন’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/১-২)। তিনি আপনাদের উপর ছিয়াম ফরয করেছেন যেন আপনারা মুত্তাক্বী হতে পারেন। নিজ অনুগ্রহে আপনাদেরকে কল্যাণের মাসে পৌঁছে দিয়েছেন, আপনাদের জন্য রহমতের ঝরনা বইয়ে দিয়েছেন। সহজসাধ্য করেছেন আনুগত্যের কাজকে এবং কুরআন নাযিল করেছেন যেন আপনারা রহমতপ্রাপ্ত হন। ধারাবাহিকভাবে তিনি আপনাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যা তিনি আপনাদের প্রতিদান দিবসে দেখাবেন। তিনি বলেন,
وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ * وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
‘আর যেন তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ কর যেভাবে তিনি তোমাদের শিখিয়েছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আর যখন আমার কোনো বান্দা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (তখন তাদের বলে দিন), নিশ্চয় আমি তার অতি নিকটে আছি। আমি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে আহ্বান করে। অতএব, তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়, আমার প্রতি ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথ পায়’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৫-১৮৬)।
(আল্লাহু আকবার…) হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহর দেওয়া রিযিক্ব থেকে খরচ করুন। আল্লাহ বলেছেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لَا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا شَفَاعَةٌ ‘হে ঈমানদারগণ! আমার দেওয়া রিযিক্ব থেকে খরচ করো ঐ দিন আসার পূর্বেই, যেদিনে কোনো ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং কারো সুপারিশ চলবে না’ (আল-বাক্বারা, ২/২৫৪)। আর জেনে রাখুন, আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর বা যব কিংবা দেশের প্রধান খাদ্যদ্রব্য এক ছা‘ পরিমাণ ফরয করেছেন প্রত্যেক স্বাধীন, গোলাম, নারী, পুরুষ, ছোট ও বড় মুসলিমের উপর যারা ঈদের রাত পাবে এবং যার নিকটে তার এবং তার পরিবারের একদিনের খাবারের অতিরিক্ত খাবার মজুদ আছে। এটা করা হয়েছে ছিয়াম পালনকারীকে অনর্থক কথা, কর্ম ও অশ্লীলতার গুনাহ থেকে পবিত্রকরণার্থে এবং মিসকীন-অসহায়, হতদরিদ্রদের খাদ্যদানের নিমিত্তে। অতএব, যে ব্যক্তি তা ঈদের ছালাতের পূর্বে আদায় করবে, সেটা হবে গ্রহণযোগ্য যাকাতুল ফিতর। আর যে তা ছালাতের পরে আদায় করবে, সেটা হবে সাধারণ দান। মুসলিমের জন্য যাকাতুল ফিতর বের করা জরুরী।
(আল্লাহু আকবার…) আল্লাহর বান্দাগণ! জেনে রাখুন, আমলের গ্রহেণযোগ্যতা ও পূর্ণতা পুরোপুরি নির্ভর করে নিয়্যতের উপর। প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়্যত করেছে। আমলের বিশুদ্ধতার মানদণ্ড হলো সেটাই যার বাতলিয়েছেন নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জেনে রাখুন, আপনাদের ধর্মের স্বরূপ হলো- বাহ্যিক আত্মসমর্পন, অভ্যন্তরীন বিশ্বাস এবং নিষ্ঠার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা। আর শেষোক্ত এই নিষ্ঠাই হলো দ্বীনের সর্বোচ্চ চূড়া। নিষ্ঠা (ইহসান) বলতে বুঝায় ‘এমনভাবে তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন আল্লাহকে তুমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছ। যদি মনের মধ্যে এমন ভাব সৃষ্টি না হয়, তাহলে মনে করবে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন’।
(আল্লাহু আকবার…) আল্লাহর বান্দাগণ! জেনে রাখুন, দ্বীন মানে হলো স্রষ্টা এবং সৃষ্টির অধিকারগুলো আদায় করা। আর ইসলাম গ্রহণ করলেই মানুষের জীবন সুরক্ষিত হয়ে গেল। তার হিসাব-নিকাশ হবে আল্লাহর কাছে। মনে রাখুন! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না।
(আল্লাহু আকবার…) হে মুসলিম জাতি! সন্দেহপূর্ণ বিষয়গুলো বর্জন করুন। রাগ থেকে বিরত থাকুন। ইহকালে কিংবা পরকালে উপকারে আসবে না এমন কথা ও কর্ম পরিহার করুন। সর্বক্ষেত্রে নিষ্ঠার পরিচয় দিন এবং যেখানেই থাকুন আল্লাহকে ভয় করুন।
(আল্লাহু আকবার…) আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা আল্লাহকে স্মরণ রাখুন, তিনিও আপনাদের স্মরণ রাখবেন। তাঁর কাছে দু‘আ করুন, তিনি দু‘আ কবুল করবেন। মহাক্ষমতাধর সুমহান রবের কাছে সাহায্য চান। জেনে রাখুন, দুনিয়ার সব দুর্ঘটনা পূর্বনির্ধারিত। আর ধৈর্যের পর আসে সাহায্য। বিপদের পরই মুক্তি আসে। কষ্টের পরে সুখ আসে। আর যে ব্যক্তি যা মন চাই তাই করে, তার মধ্য লজ্জার ‘ল’ও থাকে না।
(আল্লাহু আকবার…) হে বিশ্বাসীগণ! ইসলামে ঐ লোকই সুদৃঢ় ও সুপ্রতিষ্ঠিত বলে বিবেচিত, যে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে ঈমানের উপর অটল থাকে। নিজকে অপকর্ম থেকে পবিত্র রাখে এবং আল্লাহকে স্মরণে রাখে। ছালাত আদায় করে, দান-ছাদাক্বা করে এবং ধৈর্যধারণ করে। কুরআন তেলাওয়াত করে, কুরআন মেনে চলে এবং কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করে। এভাবে সে ঈমানকে পরিপূর্ণ করে, আমলের পাল্লা নেকী দিয়ে ভরে তোলে এবং দলীল ক্বায়েম করে। নিজের অন্তরকে আলোকিত করে, চলার পথ আলোকিত করে, নিজকে মুক্ত করে এবং তার প্রতিপালাককে সন্তুষ্ট করে। এগুলো কিন্তু অতি সামান্যই কাজ, কিন্তু প্রতিদান তার অনেক বড়। সেই সাথে সুস্পষ্ট সুন্নাতসমূহের উপর আমল করুন। বিদআত থেকে বেঁচে থাকুন। জেনে রাখুন! কিন্তু জাহান্নামের নাটাই হলো জিহ্বার কর্ম। তাই সকলেই ভাই ভাই হয়ে যান।
(আল্লাহু আকবার…) আল্লাহর বান্দা! জেনে রাখো, বেলায়াতের বার্তা হলো আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়া এবং মহান সত্তার দৃষ্টিতে থাকা। অতএব তুমি আল্লাহর প্রিয় হওয়ার জন্য প্রয়োজনে দেশত্যাগ করো, তাহলেই তুমি আল্লাহর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে চলো এবং দ্বীন মেনে চলো। পাশাপাশি ‘দ্বীনের উপর অটল থাকা’টাই কারামতের মূল। পথ চলুন সহনশীল আল্লাহর দিকে। জেনে রাখো, হাদীছে কুদুসীতে মহান আল্লাহ বলেন,
«يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي، غَفَرْتُ لَكَ وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ لَقِيتَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا، ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا، لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً».
‘হে বনী আদম! যদি তুমি আমাকে ডাক এবং আমার কাছে ক্ষমার আশা কর, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব তোমার থেকে যত গুনাহ হোক না কেন, এতে আমি কারো পরওয়া করি না। হে বনী আদম! তোমার গুনাহ যদি আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। বনী আদম! তুমি যদি শিরক না করে যমীনপূর্ণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও, তাহলে আমি তোমার কাছে যমীনপূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব’।
(আল্লাহু আকবার…) আপনারা আপনাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চান, তাঁর কাছে তওবা করুন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক চরম দয়ালু, পরম বন্ধু।
দ্বিতীয় খুৎবা
(আল্লাহু আকবার…) হে ঈমানদারগণ! ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গি হও’ (আত-তাওবা, ৯/১১৯)। আপনারা সর্বাত্মকভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করুন। যার কাছে শরীআতের বিধান পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে সে যেন তা ভালোভাবে আঁকড়ে ধরে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমার জিহ্বা যেন সর্বদা আল্লাহর যিকিরে ভিজে থাকে’।
আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা ঐ মহামানবের উপর দরূদ পাঠ করুন যার সম্মানে গাছ ছুটে এসেছিল, যার হস্তদ্বয়ে কঙ্কর তাসবীহ পাঠ করেছিল, যাকে সালাম জানিয়েছিল পাথর, যার হাতের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল, যার বক্তব্যে খেজুর গাছের গুঁড়ি হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল, যাকে আল্লাহ আসমান থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছিলেন, যার অন্তর পবিত্র করেছেন, যাকে তিনি তাঁর পছন্দনীয় ক্বিবলার দিকে নিযুক্ত করেছেন। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তার উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য দু‘আ করে ভূষিত হয়েছেন। অতএব, আপনারা আল্লাহর আদেশ পালন করে আলোকিত হোন, ফেরেশেতাদের সাজে সজ্জিত হোন। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ‘নিশ্চয় আল্লাহ নবীর উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা দু‘আ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরা তাঁর উপর রহমত এবং শান্তি বর্ষণ করো’ (আল-আহযাব, ২৫/৫৬)। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নেতা মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর রহমহত বর্ষণ করুন যেভাবে আপনি ইবরাহীম এবং তাঁর পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। আপনি তো প্রশংসিত, মর্যাদাবান। আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন আমাদের নেতা মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর যেভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর। আল্লাহ! আমাদের নেতা ও নবীর উপর রহমত নাযিল করুন প্রথমে, শেষে, সর্ব সময়ে, রাতে— যখন রাত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়, দিনে— যখন দিন আলোকিত হয়, ইহকালে ও পরকালে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত। আল্লাহ! আপানি মুসলিম জাহানের ইমাম খুলাফায়ে রাশেদা আবূ বকর, উমার, উছমান ও আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুম-এর উপর, সমস্ত ছাহাবীগণের উপর, উম্মাহাতুল মুমিনীনের উপর, নবী পরিবারের উপর এবং যারা তাদের অনুসরণ করে তাদের উপর কিয়ামত দিবস পর্যন্ত রাজী-খুশী থাকুন। তাদের সাথে সাথে আমাদেরকেও ক্ষমা করুন। আল্লাহ! আমাদের আগে ও পরের, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আপনি আমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত। আপনি শুরু, আপনি শেষ। আপনি সবকিছু করতে সক্ষম। আপনি ছাড়া কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই। আপনি পবিত্র। আমরা তো যালেম। আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি শ্রেষ্ঠ দয়ালু। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
আল্লাহ! আপনি আমাদের দুর্বল মুসলিম ভাইদের সব জায়গায় সাহায্য করুন। আল্লাহ! বায়তুল মুক্বাদ্দাস এবং তার আশপাশে বসবাসরত আমাদের মুসলিম ভাইদের কাছে সাহায্য পাঠান। আল্লাহ! তাদের কদমগুলো যুদ্ধে অটল রাখুন, তাদের রকেট আর মিসাইলগুলো লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে দেন। আল্লাহ! আপনি মাসজিদে আক্বছাকে অপবিত্র ইয়াহূদীদের থেকে পবিত্র করেন। আল্লাহ! আপনি দখলদার ইয়াহূদীদের পাকড়াও করুন। কারণ তারা আপনাকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়ায় এবং পরকালে কল্যাণ দান করুন। আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবার কাবীরা ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাছীরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আছীলা।