[১ শাওয়াল, ১৪৪৪ হি. মোতাবেক ২২ এপ্রিল, ২০২৩। পবিত্র হারামে মাক্বীতে (কা‘বা) ঈদুল ফিতরের খুৎবা প্রদান করেন শায়খড. ছালেহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হুমাইদ হাফিযাহুল্লাহ। উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]
প্রথমখুৎবা
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই। যাবতীয় প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি আপন মহিমা ও মর্যাদার একচ্ছত্র অধিপতি। তিনিই একমাত্র চিরস্থায়ী। তিনিই মহান আল্লাহ, যার পরিচয় লাভের মাধ্যমে সৎব্যক্তিদের অন্তর তাঁর নৈকট্য লাভ করে। আর যিকিরকারীদের নাফস তার উত্তম প্রশংসার মাধ্যমে পবিত্রতা লাভ করে। আরো প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি শঙ্কিতদের আশা দেওয়ার মাধ্যমে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এমন প্রশংসা যা অফুরন্ত, পবিত্র ও কল্যাণময়।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। তিনি জিন ও ইনসানকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে স্বীয় নেয়ামত দান করেছেন, যাতে তারা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক ও তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবার কাবীরা ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাছীরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আছীলা।
অতঃপর, হে মানুষ সকল! আমি প্রথমে নিজেকে, অতঃপর আপনাদেরকে আল্লাহভীতির অছিয়ত করছি। আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলুন। এই জীবনে অনেক কর্মই তো সম্পাদন করলেন, কত সঙ্গী-সাথীকেই তো বিদায় জানালেন? কালের প্রবাহে কত ঘটনারই তো সাক্ষী আপনি, জীবনে অনেক ঋতু ও অবকাশকালীন সময়-ই তো অতিবাহিত করলেন? অতএব, এখন নিজেকে তাক্বওয়াশীল ও একনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত করে ইখলাছের উপর অটল রাখুন। আপনারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর পসন্দমূলক কাজের দিকে নিজেকে অগ্রগামী করুন। আর প্রতিটি মানুষ তার কর্মফলের সাথে সংযুক্ত থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ ‘সেদিন মানুষ প্রত্যক্ষ করবে যা সে সামনে প্রেরণ করেছে’ (আন-নাবা, ৭৮/৪০)।
হে মুসলিমগণ! আপনাদের প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের পক্ষ থেকে সৎআমলগুলো কবুল করুন। আল্লাহ আপনাদের ছিয়ামকে কবুল করুন। তিনি আপনাদের ক্বিয়ামকে কবুল করুন। তিনি আপনাদের তেলাওয়াতকে কবুল করুন। তিনি আপনাদের ছাদাক্বাকে কবুল করুন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। অতঃপর সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই। এখানে মাসজিদে হারাম, মাসজিদে নববীসহ সকল পবিত্র স্থানসমূহ আজ উমরাকারী, যিয়ারতকারী, ছালাত আদায়কারী, তাকবীর পাঠকারী, ই‘তিকাফকারী ও রুকূ-সিজদাকারীদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। উদ্ভাসিত হয়েছে এই বরকতপূর্ণ দেশ সঊদী আরব। সে তার ভূখণ্ডে অবস্থিত সকলকে স্বাগত ও সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এর সরকারপ্রধান তাদের অভ্যর্থনা জানাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
আপনাদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদুল ফিতরের মধ্যে আল্লাহ তাআলার অনুমতিক্রমে আপনাদের জন্য দুটি খুশির সময় রয়েছে। (১) ঈদুল ফিতরের খুশি এবং (২) মহান রবের সাথে সাক্ষাতের খুশি। এটি ছিয়াম, ঈদুল ফিতর, ইসলামী বিভিন্ন রীতি-নীতি পালনের মধ্য দিয়ে ইসলামী ভাতৃত্বের মহান দৃশ্য অবলোকনের আনন্দ, যার মাধ্যমে মহা সফলতা লাভের আশা করা হয়। এই ভূখণ্ডে যেন কল্যাণ ও সম্মানিত জীবিকা ছড়িয়ে পড়ে, কুচক্রীদের চক্রান্ত ও অবাধ্যদের শত্রুতা থেকে আল্লাহ তাকে হেফাযত করেন। হে আমাদের রব! আমরা একমাত্র আপনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি। মহিমান্বিত প্রশংসা আপনার জন্যই এবং আপনার নামের দ্বারা পবিত্রতা ঘোষণা করছি।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ভাই এবং এই বরকতপূর্ণ নগরী ফিলিস্তীন ও মাসজিদে আক্বছার অধিবাসীদের সাহায্য করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাদের জন্য পৃষ্টপোষক ও সাহায্যকারী হয়ে যান। হে আল্লাহ! আপনি দখলদারদের অপবিত্রতা থেকে মাসজিদে আক্বছাকে পবিত্র করুন। হে আল্লাহ! আপনি বায়তুল আক্বছার সম্মান ও গৌরবকে সমুন্নত করুন। হে বিশ্বজগতের রব! আপনি বায়তুল মাক্বদিসকে বিরুদ্ধবাদীদের শত্রুতা থেকে হেফাযত করুন। তারা পবিত্র স্থানসমূহের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছে এবং হারাম বিষয়সমূহকে নিজেদের উপর বৈধ করে নিয়েছে। তারা মসজিদ ও বরকতপূর্ণ জায়গাসমূহকে অপবিত্র করেছে। হে আল্লাহ! আপনি তাদের খারাপী ও ক্ষতিকে প্রতিরোধ করুন এবং তাদের কূটকৌশল ধূলিসাৎ করে দিন। আর সর্বোপরি আপনার কাছে তাদের খারাপী থেকে আশ্রয় কামনা করছি।
হে মুসলিমগণ! মানুষের অন্তরে আনন্দ প্রবেশ করানো ও তাদের অন্তরকে সৌভাগ্যময় করা এবং তাদের মুখে হাসির ঝিলিক অঙ্কিত করা আর সর্বোপরি তাদের অন্তরকে খুশি করা এমন একটি মহৎ কাজ যা কেবল পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র আত্মার অধিকারী ব্যক্তিরাই গ্রহণ করে থাকে। মানুষের অন্তরে আনন্দ-উল্লাসের অনুপ্রবেশ ঘটানো দ্বীনের মূল্যবান বিষয়সমূহের অন্তর্গত। হাদীছে এসেছে, আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ لَقِيَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ بِمَا يُحِبُّ لِيُسِرَّهُ سَرَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তাকে আনন্দিত করাকে পসন্দ করে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন খুশী করবেন’।[1]
হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা অর্জন ও সজ্জিত হওয়াকে হালাল করার ন্যায় রসিকতা করাকেও হালাল করেছেন। আর কৌতুক-রসিকতা করার পদ্ধতি হলো, কাউকে কষ্ট দেওয়া ব্যতীত কোমল আচরণের সাথে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করা। রসিকতার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ হয়, রূহ ঘনিষ্ট হয়। এর দ্বারা অন্তর পরিপূর্ণতা লাভ করে, কষ্ট লাঘব হয় এবং দূরের লোকজন ঘনিষ্ট হয়। রসিকতার মাধ্যমে নিঃসঙ্গ ব্যক্তিও ঘনিষ্ট হয়। হে মুসলিমগণ! নিশ্চয় রসিকতা করা শরীআতসম্মত ও সুন্নাহ। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে রসিকতা করতেন এবং তাঁর তিরোধানের পরে তাঁর ছাহাবীগণ রসিকতা করেছেন। তাদের পরে তাবেঈন ও উম্মাহর সর্বোত্তম মর্যাদাবান ব্যক্তিরাও রসিকতা করেছেন। আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের সাথে কৌতুকও করেন? রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, إني لا أقول إلا حقًّا ‘তবে আমি সত্য ব্যতীত কিছু বলি না’।[2] আব্দুল্লাহ ইবনে হারেছ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে আর কাউকে বেশি মুচকি হাসতে দেখিনি’।[3]
হে প্রিয় বন্ধুগণ! ছাহাবায়ে কেরাম রযিয়াল্লাহু আনহুম এবং তাদের পরবর্তী সালাফগণ রহিমাহুমুল্লাহ উম্মাহর সর্বোত্তম ও সর্বাধিক জ্ঞানী এবং অধিক আল্লাহ ভীতি অর্জনকারী ছিলেন। তদুপরি তাদের সত্যনিষ্ঠ অবস্থাও তাদেরকে রসিকতা করা থেকে বিরত রাখেনি। তবে এই রসিকতা তাদের দানশীলতা, উত্তম জীবনাচারণ ও দ্বীনের উপরে অটল থাকার ব্যাপারে প্রভাব ফেলত। আবূ বকর ইবনে আব্দুল্লাহ আল-মুযানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছাহাবীগণ একে অপরের প্রতি তরমুজ নিক্ষেপ করেও রসিকতা করতেন। কিন্তু তারা কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হলে যোগ্য পুরুষই প্রতিপন্ন হতেন।[4]
ছাহাবায়ে কেরাম তাদের পরিবার-পরিজনের সাথে হাসি-রসিকতা করতেন। বিশেষত তারা নিজ পরিবারের সাথে বেশি বেশি রসিকতা করতেন। তবে তাদের রসিকতার মধ্যে নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু থাকত না। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলতেন, ‘একজন পুরুষের জন্য উচিত হলো, স্বীয় পরিবারের সাথে শিশুসুলভ আচরণ করা। কিন্তু তাদের কাছে কোনো কিছু চাওয়া হলে তাদেরকে যোগ্য পুরুষ হিসাবেই পাওয়া যাবে’।
অতঃপর, আল্লাহ আপনাদেরকে হেফাযত করুন। আপনাদের প্রতি রহম করুন। আমি আবারো আপনাদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি। আর নিশ্চয় কৌতুক-রসিকতা স্বভাবগতভাবেই মানুষ পসন্দ করে থাকে। কেননা হাসি-কৌতুক অন্তরের বিনোদনের খোরাক ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার মাধ্যম। সর্বোপরি, আমরা অভিশপ্ত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
باَرك اللهُ لي ولكم في القرآن العظيم…
দ্বিতীয় খুৎবা
সমস্ত প্রশংসা আল্লার জন্য যিনি একচ্ছত্র মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। আল্লাহ মহান, যিনি স্বীয় হুকুম বাস্তবায়নকারী। তাঁর ইহসান ও ন্যায়পরায়ণতা সর্বদা বিদ্যমান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আবশ্যক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি সুউচ্চ, মহান। তিনি মানুষকে হাসান ও কাঁদান। তিনি মৃত্যু দেন ও আবার জীবিত করেন। একমাত্র তাঁরই রয়েছে অসংখ্য সুন্দর নাম। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। তিনি হেদায়াতপ্রদর্শনকারী নবী। জাহান্নামের আগুন থেকে সতর্ককারী। তিনি পবিত্র জীবন-চরিতের অধিকারী। তিনি মোহনিয়া চরিত্রের অধিকারী। এছাড়াও তিনি উজ্জ্বল মু‘জিযার অধিকারী। আল্লাহ তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীগণের উপর শান্তি বর্ষণ করুন— যারা চরিত্র, সহনশীলতা ও দয়া প্রদর্শনের দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ছিলেন। আর তাঁর পদাঙ্ক ও সুন্নাহর অনুসরণকারী সকলের প্রতি অবারিত ধারায় শান্তি অবতীর্ণ হোক।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।লা ইলাহা ইল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
হে মুসলিমগণ! আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলুন। আর জেনে রাখুন! নিশ্চয় ঈদের সাথে আনন্দ-উৎসব, আত্মার পরিশুদ্ধতা ও আত্মার ন্যায়পরায়ণ হওয়ার এক মহান সম্পর্ক রয়েছে। সাথে সাথে হিংসা-বিদ্বেষের পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে মুক্ত করা। নিজের থেকে শত্রুতা ও ঘৃণার কারণগুলো দূরীভূত করা। আনন্দের অনুপ্রবেশ করানো খুবই সহজ কাজ। আপনি উত্তম কথা ও হাসিমাখা চেহারা দিয়ে আপনার ভাইকে খুশি করুন। অথবা আপনার সাধ্যের মধ্যে হাদিয়া কিংবা দান করার মাধ্যমে খুশি করুন। আপনি আপনার ভাইয়ের দাওয়াত কবুল করা অথবা তার সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে তাকে আনন্দিত করতে পারেন। সেই ব্যক্তি কোথায়, যার ভাগ্য হ্রাস পেয়েছে, স্বভাব রূঢ় হয়েছে। যার পোশাক বৃদ্ধি পেয়েছে আর নেকী হ্রাস পেয়েছে? যার শরীর সুঠাম, কিন্তু অন্তর শূন্য। পকেট (অর্থ দিয়ে) ভর্তি, কিন্তু ছহীফা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। যে যমীনে খুবই আলোচিত ব্যক্তি, কিন্তু আসমানে পরিত্যাজ্য। এমন অবস্থা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি। আপনারা আনন্দ ও উল্লাস প্রকাশ করুন এবং আপনাদের নিকটতম সকলের মাঝে আনন্দকে ছড়িয়ে দিন। অতঃপর আনন্দিত হওয়া অন্তরের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভের উঁচু স্তর। আপনারা রবের সন্তুষ্টি লাভ, নিজেকে পাপ থেকে মুক্তকরণ ও আপনাদের সৎআমলগুলোকে বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ উৎযাপন করুন।
পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জন, ভ্রাতৃত্ব বন্ধন দৃঢ়করণ, আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষা করা, মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করা, ভীত-সন্ত্রস্ত ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেওয়া, যুলমকে প্রতিরোধ করা, ইয়াতীমের দায়িত্ব নেওয়া ও রুগীর সেবা-শুশ্রূষা করার মধ্য দিয়েই ঈদের প্রকৃত আনন্দ প্রকাশ পায়। আপনারা আপনাদের দূরতম আত্মীয়দের অভিভাদন জ্ঞাপন করুন— আল্লাহ আপনাদের প্রতি দয়া করবেন। আপনারা আপনাদের রবের সীমারেখাকে আঁকড়ে ধরুন। আপনারা দীর্ঘ জীবনে হারাম কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
জেনে রাখুন! নিশ্চয় রামাযান পরবর্তী সময়ে ইহসানের বাহ্যিক নিদর্শন হলো, বান্দার আনুগত্যের উপরে অটল থাকা এবং কল্যাণের দ্বারা কল্যাণের অনুসরণ করা। আপনাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাদেরকে রামাযান মাসের পরে শাওয়ালের ছয়টি ছিয়াম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এই ছয়টি ছিয়াম রাখল, সে যেন সারা বছর ছিয়াম রাখল। আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের পক্ষ থেকে এই ছিয়ামকে কবুল করুন। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর যিকির, শুকর আদায় ও উত্তম ইবাদত করার জন্য সাহায্য করুন।
আল্লাহ মহান, তিনি সবকিছু নতুনভাবে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ মহান, তিনি প্রতিটি জিনিস প্রথম সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمَا تَحْتَ الثَّرَى ‘নভোমণ্ডলে, ভূমণ্ডলে, এতদুভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে এবং সিক্ত ভূগর্ভে যা আছে, তা তাঁরই’ (ত্বো-হা, ২০/৬)। আল্লাহ মহান, আমাদের রব কতইনা অনুগ্রহ ও কল্যাণ দান করেছেন। আল্লাহর জন্যেই বড়ত্ব, আর তিনি তার নেয়ামত ও বরকত থেকে বান্দাদের যা দান করেছেন।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার সৃষ্টিসমূহের মধ্যকার সৃষ্টি। আমরা আপনার দান থেকে অমুখাপেক্ষী নই। হে আল্লাহ! আমাদের পাপের কারণে আমাদের থেকে আপনার অনুগ্রহ উঠিয়ে নিয়েন না। আমরা একমাত্র আল্লাহর উপরেই ভরসা করছি। কুরআনে বর্ণিত আছে,رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে যালেম ক্বওমের ফেতনার পাত্র বানাবেন না’ (ইউনুস, ১০/৮৫)। অন্য আয়াতে এসেছে,رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দান করুন ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে আমাদেরকে রক্ষা করুন’ (আল-বাক্বারা, ২/২০১)।
অনুবাদক : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
[1]. ত্বাবারানী, মু‘জামুছ ছাগীর, হা/১১৭৮; সনদ হাসান।
[2]. তিরমিযী, হা/১৯১৩; আহমাদ, হা/৮৩৬৬; সনদ হাসান।
[3]. তিরমিযী, হা/২৮৮০, হাদীছ ছহীহ।
[4]. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হা/২৬৫।