কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (৪) : ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদীছের কোনো রাবীকে কাযযাব বা মিথ্যুক বললে তার শাস্তি কী?

উত্তরছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদীছের কোনো রাবীকে কাযযাব বা মিথ্যুক বললে মূলত তা সংশ্লিষ্ট হাদীছের রাবীসহ ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ-এর মতো একজন সম্মানিত মুহাদ্দিছকে অপমান করা হবে। কেননা তিনি প্রত্যেকটি হাদীছের সনদ, মতন, রাবী ইত্যাদির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আল্লাহর তরফ থেকে নিশ্চয়তা লাভ করার পরে সেটাকে তার কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। এ মর্মে তিনি বলেন, আমি আমার এই কিতাব মসজিদুল হারামে বসে সংকলন করেছি এবং আমি সেখানে কোনো হাদীছ প্রবেশ করাইনি যতক্ষণ না আমি ইস্তিখারার দু’রাকআত নফল ছালাত আদায় করেছি এবং হাদীছটি বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা লাভ করেছি (ফাতহুল বারীর ‘ভূমিকা’ খণ্ড, কায়রো : দারুর রাইয়ান ২য় সংস্করণ ১৪০৭/১৯৮৭, পৃ. ৫১৩-১৪)। তবে প্রথম যুগের বেশ কিছু মুহাদ্দিছ ছহীহ বুখারীর কতিপয় হাদীছ সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। তাদের মধ্যে সর্বাধিক ইমাম দারাকুত্বনী (৩০৬-৩৮৫ হি.) ছহীহ বুখারীর ৭৮টি এবং বুখারী ও মুসলিমের মিলিতভাবে ৩২টি হাদীছের উপর সমালোচনা করেছেন। এসব সমালোচনার উত্তরে বিভিন্ন গ্রন্থ লিপিবদ্ধ হয়েছে। ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকারগণের প্রত্যেকেই সংক্ষেপে বা বিস্তারিতভাবে এসব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। তবে সর্বশেষ ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হি.) ফাতহুল বারীর ভূমিকা ‘হাদীয়ুস সারী’-তে এসব সমালোচনার একটি একটি করে বিস্তারিতভাবে জবাব দিয়েছেন (হাদীয়ুস সারী মুক্বাদ্দামা ফাতহুল বারী, ৮ম অনুচ্ছেদ, পৃ. ৩৬৪-৪০২)।

আলোচনার শেষে উপসংহারে তিনি বলেন, সমালোচিত প্রত্যেকটি হাদীছই দোষযুক্ত নয়। বরং অধিকাংশের জওয়াব পরিষ্কার ও দোষমুক্ত। কোনো কোনোটির জওয়াব গ্রহণযোগ্য এবং খুবই সামান্য কিছু রয়েছে, যা না বুঝে তাঁর উপর চাপানো হয়েছে। আমি প্রত্যেকটি হাদীছের শেষে এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেশ করেছি’ (মুক্বাদ্দামা, পৃ. ৪০২)।

তিরমিযীর ভাষ্যকার শায়খ আহমাদ মুহাম্মাদ শাকের বলেন, ‘ছহীহ বুখারীর যেসব হাদীছ সমালোচিত হয়েছে তার অর্থ হলো সেগুলো ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ-এর শর্তানুযায়ী বিশুদ্ধতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেনি। তবে হাদীছটি স্বীয় অবস্থানে ছহীহ। তিনি বলেন, মুহাক্কিক্ব ওলামায়ে হাদীছ-এর নিকটে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের প্রতিটি হাদীছই ছহীহ। এ দু’টি গ্রন্থের কোনো একটি হাদীছ দুর্বলতা বা ত্রুটিযুক্ত নয়। ইমাম দারাকুত্বনীসহ মুহাদ্দিছগণের কেউ কেউ যে সমালোচনা করেছেন তার অর্থ হলো তাঁদের নিকট সমালোচিত হাদীছসমূহ ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী বিশুদ্ধতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারেনি। তবে সাধারণভাবে হাদীছগুলোর বিশুদ্ধতা নিয়ে কেউই মতভেদ করেননি (আল-বা‘এছুল হাছীছ, তাহক্বীক্ব : আহমাদ মুহাম্মাদ শাকের, পৃ. ৩৩-৩৪)।

শায়খ আলবানী রহিমাহুল্লাহও উছূলে হাদীছের আলোকে ছহীহ বুখারীর ১৫টি হাদীছের সমালোচনা করেছেন তাঁর ‘সিলসিলা যঈফা’ গ্রন্থে। উক্ত সমালোচনা হাদীছবিরোধী বা হাদীছে সন্দেহবাদীদের মতো নয়, বরং একজন সূক্ষ্মদর্শী মুহাদ্দিছ বিদ্বান হিসাবে। যেমন ইতোপূর্বে অনেক মুহাদ্দিছ করেছেন। যদি এতে তিনি ভুল করে থাকেন তাহলেও নেকী পাবেন। আর ঠিক করে থাকলে দ্বিগুণ নেকী পাবেন। তবে তিনি যেসব হাদীছকে যঈফ বলেছেন, সে ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ-এর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কেননা দুর্বল রাবীদের বর্ণনা গ্রহণ করার ব্যাপারে তাঁর কতগুলো স্পষ্ট নীতি ছিল। যেমন : (১) দুর্বল রাবীদের সকল বর্ণনাই দুর্বল নয়। (২) উক্ত বিষয়ে অন্য কোনো হাদীছ না পাওয়া এবং হাদীছটি বিধানগত ও আক্বীদা বিষয়ক না হওয়া। বরং হৃদয় গলানো ও ফযীলত বিষয়ে হওয়া। (৩) সনদে বা মতনের কোনো ত্রুটি দূর করার জন্য বা কোনো বক্তব্যের অধিক ব্যাখ্যা দানের জন্য কিংবা শ্রুত বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য সহযোগী হিসাবে (من المتابعات) কোনো হাদীছ আনা’ (ড. মুহাম্মাদ হামদী আবু আবদাহ, জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীআ অনুষদ কর্তৃক আয়োজিত সম্মেলনে পেশকৃত গবেষণাপত্র, পৃ. ৩৪)।

আলবানী ও দারাকুত্বনী রহিমাহুমুল্লাহ বুখারী গ্রন্থের যে সকল হাদীছের উপর মন্তব্য করেছেন তা ঠিক নয় জানতে দেখুন- (মিন্নাতুল বারী, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক, পৃ. ১৮২-২৩১) অতএব, ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদীছের কোনো রাবীকে কাযযাব বা মিথ্যুক বলা মূলত তার প্রতি মিথ্যারোপ করা, যা যুলুমের অন্তর্ভুক্ত মহাপাপ এবং তা স্পষ্ট হারাম। আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের (দ্বীনী) ভাই। মুসলিম ব্যক্তি অপর মুসলিমের উপর অবিচার করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না এবং অবজ্ঞা করবে না। আল্লাহভীতি এখানে! এ কথা বলে তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের বক্ষের দিকে তিনবার ইঙ্গিত করে বললেন, ‘একজন মানুষের জন্য এতটুকু অন্যায়ই যথেষ্ট যে, সে নিজের মুসলিম ভাইকে হেয় জ্ঞান করবে। মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের রক্ত, ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান হারাম (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৯৫৮; মিশকাত, হা/৪৯৫৯)।

প্রশ্নকারী : চঞ্চল চৌধুরী

নারায়ণগঞ্জ সদর।


সাওয়াল জওয়াব

প্রশ্ন (১৭) : মাঠের একপাশে মসজিদ এবং অপর পাশে মাদরাসা। জুমআর দিনে কি মহিলারা ঐ মাদরাসায় অবস্থান করে মসজিদের জুমআর অনুসরণ করে ছালাত আদায় করতে পারে?

প্রশ্ন (১৮) : কাউকে মসজিদ কমিটির সদস্য করার জন্য কী কী যোগ্যতা লাগবে?

প্রশ্ন (২০) : ইমাম নিয়োগ দেওয়ার জন্য কী কী শর্ত বা যোগ্যতা জরুরী?

প্রশ্ন (২১) : যোহর ছালাতের পূর্বে চার রাকআত সুন্নাতের প্রতি রাকআতেই কি সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে?

প্রশ্ন (২২) : ইসলামের দৃষ্টিতে সূর্য গ্রহণের কারণ কী?

প্রশ্ন (২৩) : চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের ছালাত আদায়ের পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন?

প্রশ্ন (২৪) : মহিলাদের জামাআতে মহিলারা ইমামতি করতে পারবে কি?

প্রশ্ন (২৫) : কিছু গেঞ্জি/শার্ট/পাঞ্জাবি এমন যে, কিছু অংশ গলা পর্যন্ত বের হয়ে থাকে। এমন পোশাকে ছালাত হবে কি?

প্রশ্ন (২৬) : অফিসিয়াল ট্রেনিং-এ আমাকে মাঝে মাঝে দেশের বাইরে যেতে হয়। ট্রেনিং সেন্টারে ছালাতের কোনো পরিবেশ থাকে না। এমতাবস্থায় আমি কি যোহর, আছর, মাগরিব ও এশার ছালাত একসাথে রাতে আদায় করতে পারি?

প্রশ্ন (২৮) : ছালাত শেষে একবার সূরা ফাতিহা, ৩ বার সূরা আল-ইখলাছ এবং ১১ বার দরূদ পড়ার শারঈ কোনো ভিত্তি আছে কি?

প্রশ্ন (৩৪) : দাদার পূর্বেই আমার পিতা মারা গেছেন। দাদার সমস্ত সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করে এক ভাগ চাচাকে ও আরেক ভাগ আমার মাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফুফুরা উক্ত সম্পদ দিতে নারায। দাদার সম্পদ আমাদের বা আমার মায়ের ব্যবহার করা বৈধ হবে কি?

প্রশ্ন (৩৫) : মাহরামের অন্তর্ভুক্ত কারা?

প্রশ্ন (৩৭) : মেয়ে ‘খোলা’ করার এক মাস পরে আবার ঐ স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করতে চাইলে করণীয় কী?

প্রশ্ন (৩৬) : স্বামী প্রতিনিয়ত পরকীয়ায় লিপ্ত থাকে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর করণীয় কী?

প্রশ্ন (৩৮) : ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স আছে কি?

প্রশ্ন (৩৯) : বিভিন্ন নাটক-নাটিকা ও সিনেমায় অভিনয়ের সময় ছেলে-মেয়েদেরকে বিবাহ দেওয়া হয়। এ বিবাহ কি কার্যকর হবে?

প্রশ্ন (৪০) : সাময়িকভাবে জন্ম নিয়ত্রণের জন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করলে পাপ হবে কি?

প্রশ্ন (৪১) : বিড়ি বা তামাক কারখানায় কাজ করলে ছালাত হবে কি?

প্রশ্ন (৫) : ‘আমার পরে যদি কেউ নবী হতো, তাহলে সে হতো উমার’-এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?

প্রশ্ন (৬) : বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠানে নেতা-নেত্রীর ছবি টাঙানোসহ সরাকরি বিভিন্ন দিবস, অনুষ্ঠান ও নিয়ম-কানুন মানতে ছাত্র-ছাত্রী ওশিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাধ্য করা হচ্ছে? এমতাবস্থায় সেখানে চাকরি করা বা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানো যাবে কি?

প্রশ্ন (৮) : আমার এলাকায় পীরের প্রাদুর্ভাব এত বেশি যে, দুই ঈদ ও জুমআর দিন তাদের সম্পর্কে প্রশংসামূলক বাক্য বলে খুৎবা শুরু করতে হয়। তারা পীরের পায়ে সিজদা করে এবং মসজিদ বাদ দিয়ে পীরের আস্তানায় আযান দিয়ে ৫ ওয়াক্ত ছালাত পড়ে। এদের পিছনে কি ছালাত হবে?

প্রশ্ন (৯) : একজন ইমাম যদি আল্লাহর কাছে দু‘আ করে বলে যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসীলায় আমাদের ছালাত কবুল করে নিন। তাহলে কি তা জায়েয হবে?

প্রশ্ন (১০) : বিনোদনের উদ্দেশ্যে জাদু শেখা বা প্রদর্শন করা যাবে কি?

প্রশ্ন (১১) : জুমআর খুৎবা দেওয়ার আগে খত্বীবের ছবি মসজিদের গেটে লাগানো যাবে কি?

প্রশ্ন (১২) : কথা শেষে ‘ভালো থাকেন’ বলা শিরক হবে কি?

প্রশ্ন (১৩) : মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্যান্য নবী-রাসূলগণের নাম শুনে বলতে হয় ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। কিন্তু তাঁর নাম শুনলে বলতে হয় ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। এর কোনো কারণ আছে কি?

প্রশ্ন (১৪) : ছাহাবী ও নবী-রাসূলগণের নামের পূর্বে ‘হযরত’ লেখা যাবে কি? কখন থেকে এর ব্যবহার চালু হয়?

Magazine