উত্তর: প্রয়োজন অনুযায়ী আয়না দেখা জায়েয। নাফে‘ ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বলেন, তিনি মুহরিম অবস্থায় আয়না দেখতেন (সুনানে কুবরা লিল বায়হাক্বী, হা/৯১৪৪)। বিজোড় সংখ্যায় সুরমা দেওয়া, মাঝে মাঝে তেল দেওয়া, আয়না দেখা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম কাজ (মুগনী, ১/১২৮; শারহুল উমদা, পৃ. ২৩২)। তবে এক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করা উচিত না। আর আয়নায় দেখে যদি ভালো লাগে তাহলে আল্লাহর শুকর ও বরকতের দু‘আ করা উচিত। কেননা বদনযর সত্য। নিজের ক্ষেত্রেও বদনযর লাগতে পারে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বদনযর লাগা সত্য’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৪০)। আমের বিন রাবিয়া বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যদি তোমাদের কারো নিজেকে বা তার সম্পদ বা অন্য ভাইয়ের কোনো কিছু ভালো লাগে, তাহলে সে যেন তার জন্য বরকতের দু‘আ করে। কেননা নযর লাগা সত্য’ (ছহীহুল জামে, হা/৫৫৭)। আর আয়না দেখার কোনো দু‘আ নির্দিষ্ট নেই। যেগুলো বর্ণনা এসেছে সেগুলো মাওযূ (জাল)। তবে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দু‘আ সবসময় করতেন। এটা আয়না দেখার সাথে নির্দিষ্ট না। ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,اللهُمَّ حَسَّنْتَ خَلْقِي، فَحَسِّنْ خُلُقِي ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার গঠন ও আকৃতি যে রকম সুন্দর করেছ, আমার চরিত্রকেও অনুরূপ সুন্দর করো’ (ছহীহুল জামে, হা/১৩০৭)। বদনযর থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত দু‘আগুলো পড়া যেতে পারে- أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ ‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ঠ হতে পানাহ চাচ্ছি’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৭১)। আরও বলা যেতে পারে- بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ‘আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও যমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’। উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে, সকাল হওয়া পর্যন্ত তার উপর হঠাৎ কোনো বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার উপর হঠাৎ কোনো বিপদ আসবে না’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৫২৮)। আর বদনযর লাগলে দু‘আ হলো, আবূ সাঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার কোনো এক রোগে আক্রান্ত হলেন। তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম নবীজি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। জিবরীল আলাইহিস সালাম তখন এ দু‘আটি পড়লেন, بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ. ‘আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁক দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদনযর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁক দিচ্ছি’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২১৮৬)।
প্রশ্নকারী : মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান
সরকারি হাসপাতাল রোড, দাগনভূঞা, ফেনী।