কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

বাংলাদেশে আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীর

প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে পাকিস্তানের ইতিহাসের যে যোগসূত্র, সেটিই মূলত আমাকে পাকিস্তান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে তুলে। পাকিস্তান সম্পর্কে অতীতে আমার কয়েকটি লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমাদের একটি গ্রুপ ছিল ‘উর্দূ যাবান হামারি পেহচান’। এই গ্রুপের একমাত্র বাংলাদেশী সদস্য ছিলাম আমি; বাকীরা সবাই ভারতীয় ও পাকিস্তানী। আমাদের এই গ্রুপ থেকে প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। সেই সুবাদে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত ভারত ও পাকিস্তানের ছাত্রদের একটা বিরাট অংশের সাথে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। তন্মধ্যে আমার অন্যতম এক পাকিস্তানী ক্লাসমেট ফাওযান, যার কথা আমি আমার ফেসবুকের কিছু পোস্টেও উল্লেখ করেছি। তার সহযোগিতায় পাকিস্তানের বিভিন্ন আলেম-উলামার সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠে। তার সহযোগিতায় বহুবার আমি পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন বই-পুস্তক অর্ডার করেছি। তার মাধ্যমেই ২০২২ সালে রাজশাহীর সালাফী কনফারেন্সে আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীর হাফিযাহুল্লাহ অনলাইন আলোচনা পেশ করেছিলেন।

আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীর হাফিযাহুল্লাহ-কে আমরা তার পিতা আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর রাহিমাহুল্লাহ-এর সূত্র ধরে চিনলেও করোনার সময়ে তার শক্ত ও মযবূত ফতওয়া আমার আব্বুকে অত্যন্ত হিম্মত ও সাহস যুগিয়েছিল। করোনার সেই কঠিন লকডাউনের সময়েও তিনি মীনারে পাকিস্তান, লাহোরে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে পায়ে পা মিলিয়ে জামাআতে ঈদের ছালাত আদায় করেছেন। করোনার সময় সমগ্র বাংলাদেশে একমাত্র আমার পিতা শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ পায়ে পায়ে মিলানো, জামাআতে ছালাত আদায়, মসজিদ খোলা রাখা ইত্যাদি বিষয়ে শক্ত অবস্থানে ছিলেন। এই রকম ভয়াবহ ফেতনার সময় তার ইস্তিক্বামাতের জন্য শায়খ ইবতিসাম ইলাহী যহীরের ফতওয়া তার অবস্থানকে মযবূত করতে সহযোগিতা করেছিল। সেই সুবাদে তখন থেকে তিনি আমাদের নিকট আরও বেশি পরিচিত ছিলেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই আমি তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলাম। প্রথমত আমরা ভেবেছিলাম তাকে রাজশাহীর সালাফী কনফারেন্সে দাওয়াত দিব। পরে দেখলাম রাজশাহীর সালাফী কনফারেন্সে অলরেডি সঊদী আরব থেকে চারজন বিদেশী মেহমান উপস্থিত হচ্ছেন, সেহেতু আল্লামা ইবহিসাম ইলাহী যহীরকে রূপগঞ্জ সালাফী কনফারেন্সে দাওয়াত দিলে তা বেশি ফলপ্রসূ হবে।

এদিকে বাংলাদেশে অবস্থানরত একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম, যারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন—ডা. যাকির নায়েককে বাংলাদেশে নিয়ে আসার একটি পরামর্শ অনুষ্ঠানে আমি তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। তাদের সহযোগিতায় ও তাদের পাকিস্তান প্রতিনিধির মাধ্যমে আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীরের সকল ভিসা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। পাকিস্তানে অবস্থানরত বাংলাদেশী অ্যাম্বাসি থেকে সরাসরি ‘নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর সম্মানিত সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ মুস্তফা কামালের সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

এদিকে প্রতিনিয়ত যোগাযোগের এক পর্যায়ে একদিন আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীর হাফিযাহুল্লাহ জানালেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় জমঈয়তে আহলেহাদীছের মাধ্যমে বাংলাদেশের জমঈয়তে আহলে হাদীসের একটি অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তার কিছুদিন পর তিনি আবার জানালেন আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও তাদের সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার দাওয়াত প্রদান করা হয়েছে। আমি উত্তরে শায়খকে বললাম, আপনার পিতাকে সমগ্র বাংলাদেশের সকল আহলেহাদীছ ভালোবাসে আর আপনি প্রথমবার বাংলাদেশে আসছেন, সেহেতু সকল আহলেহাদীছের আপনার উপর হক্ব আছে। আপনি একটু বেশি দিন সময় হাতে নিয়ে আসেন, যাতে সকলের কাছে আপনি যেতে পারেন। তিনি সেভাবেই আমাকে টিকেট কাটার জন্য বললেন। আমি সেভাবেই তার টিকেট কেটে দিলাম, যাতে তিনি জমঈয়তের প্রোগ্রাম ও আন্দোলনের প্রোগ্রামে উপস্থিত হতে পারেন।

যেহেতু বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পাকিস্তানের কোনো ফ্লাইট নেই, এজন্য শায়খের সাথে পরামর্শক্রমে শ্রীলংকায় ট্রানজিট দিয়ে শায়খের টিকেট কাটা হলো। শায়খ চাচ্ছিলেন যাতে সঊদী আরবে ট্রানজিট দেওয়া হয়, তিনি উমরা করে পাকিস্তান ফিরতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু সেভাবে টিকেট মিলানো সম্ভব হয়নি। রওয়ানা দেওয়ার দিন শায়খ আমাকে মেসেজ করে জানান, শ্রীলংকায় ট্রানজিট মোটামুটি ১০ ঘণ্টার বেশি, তাই সেখানে কোনো হোটেল বুকিং দেওয়া যায় কি-না। আমি সাথে সাথে এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে শায়খের জন্য শ্রীলংকায় হোটেল বুকিংয়ের ব্যবস্থা করি।

বাংলাদেশে আগমন ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ:

৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার: এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় তিনি বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। আমাদের এক পরিচিত দ্বীনী ভাইয়ের সহযোগিতায় আমরা শায়খের জন্য ভিআইপি ইমিগ্রেশন ও ভিআইপি লাউঞ্জের ব্যবস্থা করি। বিমান থেকে অবতরণের পরপরই সরাসরি শায়খকে ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে আসা হয়। কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই ভিআইপি লাউঞ্জে বসে শায়খের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয়, আল-হামদুলিল্লাহ!

উল্লেখ্য, আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীর হাফিযাহুল্লাহ যেহেতু সর্বপ্রথম জমঈয়তে আহলে হাদীসের প্রোগ্রামে যাবেন, সেহেতু আমি নিজে থেকেই সম্মানিত জমঈয়ত সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফী হাফিযাহুল্লাহ-এর সাথে যোগাযোগ করি, যাতে করে উনাকে আনা-নেওয়া ও থাকা-খাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে সমন্বয় করা যায়। উনি আমার প্রস্তাবে খুব ভালোভাবে সাড়া দিয়েছেন। বিমানবন্দরে শায়খকে রিসিভ করার পরপরই আমি জমঈয়ত সভাপতির সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে শায়খ আব্দুর রব আফফানের নাম্বার দেন, যিনি জমঈয়তের পক্ষ থেকে শায়খের দায়িত্ব পালন করবেন। আমি শায়খ আব্দুর রব আফফানের সাথে যোগাযোগ করে শায়খকে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে নিয়ে যাই। সেখানে জমঈয়ত নেতৃবৃন্দ শায়খকে স্বাগত জানান। উল্লেখ্য, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সম্মানিত আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব হাফিযাহুল্লাহ-এর সুযোগ্য পুত্র ‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন শিক্ষাবোর্ড’-এর সম্মানিত চেয়ারম্যান বড় ভাই ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব হাফিযাহুল্লাহ-এর সাথেও আমার নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিল শায়খকে তাবলীগী ইজতেমায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে। যেহেতু সকলেই আমার চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন, সেহেতু আমি হয়তো খুব একটা ভালো সমন্বয় করতে পারিনি। তারপরও আমার সাধ্যের জায়গা থেকে ইনছাফ বজায় রেখে সকলের সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করেছি। সমন্বয় সাধনে আমার দিক থেকে কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

নিম্নে প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী শায়খের বাংলাদেশ সফরের সংক্ষিপ্ত সফরনামা তুলে ধরা হলো—

৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার: বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস আয়োজিত মহাসম্মেলনে ২য় দিন তিনি আলোচনা রাখেন। সেদিন উত্তরার মাদরাসাতুন নাসীহাতে পূর্ব নির্ধারিত একটি প্রোগ্রাম ও মিরপুর দাওয়া সেন্টারে আমার সাপ্তাহিক দারস থাকায় আমি শায়খের সফরসঙ্গী হতে পারিনি।

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার: শায়খ সর্বপ্রথম বংশাল বড় মসজিদে যান। সেখানে ছালাত শেষে অন্যান্য পাকিস্তানী মেহমানদের সামনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করেন। সেখানে পাকিস্তানের মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছের সম্মানিত আমীর প্রফেসর সিনেটর সাজিদ মিরসহ অন্যান্য মেহমানগণ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আওলাদ হাজী সাহেবের বাসায় দুপুরের লাঞ্চ শেষে জমঈয়তে আহলে হাদীসের যাত্রাবাড়ীস্থ অফিস দেখার জন্য যান। জমঈয়ত নেতৃবৃন্দ সেখানে জমঈয়তে আহলে হাদীসের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। সেখানে বিকেলের নাস্তা সেরে তিনি হোটেলে ফিরে আসেন।

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার: আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর রাহিমাহুল্লাহ ১৯৮৫ সালে যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন তিনি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী রাহিমাহুল্লাহ-এর দাওয়াতে শরীফবাগ কামিল মাদরাসা ধামরাইয়েও এসেছিলেন এবং বক্তব্যও দিয়েছিলেন। আজ দীর্ঘ ৪০ বছর পর সেখানে তার ছেলে আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীরও হাফিযাহুল্লাহ আলোচনা করেন। মাদরাসার অনেক শিক্ষক আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর রাহিমাহুল্লাহ-এর বাংলাদেশ সফরের স্মৃতিচারণ করেন।

এই দিন রাতেই আমার আম্মা আমাকে কল দিয়ে আমার ছোট ভাই আব্দুর রহীমের মেয়ে আয়েশার অসুস্থতার কথা জানান। পরদিন সকালে হঠাৎ তার মৃত্যুর খবর শুনে আমি শায়খদের হোটেলে রেখে সপরিবার রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। রাজশাহীতে জানাযা শেষে পুনরায় ঢাকা ফিরে এসে শায়খদের সাথে একসাথে রাতের খাবার গ্রহণ করি।

১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার ও বুধবার: এই দুই দিন শায়খগণ বিশ্রাম গ্রহণ করেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার: বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস পরিচালিত আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান পাঁচরুখী মাদরাসায় বাদ আছর একটি প্রোগ্রাম রাখা হয়। সেখানে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও জমঈয়ত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে জমঈয়তে আহলে হাদীসের সম্মানিত উপদেষ্টা জনাব এম এ সবুর সাহেবের নরসিংসীর বাসায় যান। সেখানে নাস্তা শেষে তার অধীনে নবনির্মিত মসজিদ আব্দুল আযীয প্রাঙ্গণে আয়োজিত একটি ইসলামী সম্মেলনে শায়খ আলোচনা পেশ করেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার: আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ কর্তৃক আয়োজিত সালাফী কনফারেন্সে তিনি জুমআর ছালাতে উপস্থিত হন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাননীয় ধর্ম ‍উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত সাবেক প্রফেসর শায়খ ড. যায়েদ আল-জুহানী ও শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ হাফিযাহুমুল্লাহ। উপস্থিত জনতাকে দেখে নিজ আগ্রহে আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীর হাফিযাহুল্লাহ এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। অতঃপর ছাত্রদের সুন্দর গ্যালারি পরিদর্শন করেন। ছাত্রদের গ্যালারিতে তার বাবা আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর রাহিমাহুল্লাহ-এর জীবনী উর্দূ ভাষায় লিখে একটি দেয়ালিকা রাখা ছিল, যা দেখে তিনি যারপর নেই খুশি হন। উপদেষ্টা মহোদয়ও ছাত্রদের গ্যালারির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ঐদিন রাতে পুনরায় তিনি শ্রোতাদের সামনে তার আলোচনা পেশ করেন। রাতের আলোচনায় তার পিতার জীবনী ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার: ঢাকা থেকে বিকেলের ফ্লাইটে একসাথে আমরা রাজশাহীতে গমন করি। সেখানে আমাদের বিদেশী মেহমানদের স্থায়ী মেহমানখানায় শায়খ বিশ্রাম গ্রহণ করেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার: সকালে তিনি আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী পরিদর্শন করেন এবং বায়তুল হামদ জামে মসজিদে ছাত্রদের সামনে ‘জ্ঞানার্জন’-এর উপর এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন। সেখানে সম্মানিত মুহাদ্দিছ শায়খ আব্দুল খালেক সালাফীর সাথে তার হৃদ্যতাপূর্ণ সাক্ষাৎ হয়। তার নানা হাফিয মুহাম্মাদ গোন্দলবীর অন্যতম একজন ছাত্র হচ্ছেন শায়খ আব্দুল খালেখ সালাফী হাফিযাহুল্লাহ। এছাড়া ভারতের শিক্ষকমণ্ডলী বিশেষ করে জামি‘আহ সালাফিয়া বানারাসের সাবেক শায়খুল হাদীছ মুফতী ইউসুফ মাদানীসহ অন্যান্য শিক্ষকগণের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল অ্যাকাডেমিক ভবন ও মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী আবাসিক ভবন, মাসিক আল-ইতিছাম অফিস, আরবী পত্রিকা মাজাল্লাতুস সালাফ অফিস, আল-ইতিছাম প্রিন্টিং প্রেস ইত্যাদি কার্যক্রম দেখে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ-কে একটি সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্তব্য করেন।

বিকেলে শায়খ ‘নিবরাস মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়’-এর জায়গা পরিদর্শন করেন। সেখানে তাজা মাছের বারবিকিউ করা হয় এবং বিভিন্ন রকমের দেশী ফলমূল ও পিঠার ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষ করে খেজুরের রস পান করে শায়খ খুবই খুশি হন। বাংলাদেশের মাছের স্বাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার: ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব ভাইয়ের সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতে আমরা বিকেল ৫টার দিকে আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর উদ্দেশ্যে বের হই। মারকাযে প্রবেশের পর ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজিব ভাইসহ আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ শায়খকে রিসিভ করেন। আন্দোলন অফিসে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর সম্মানিত আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব হাফিযাহুল্লাহ-এর সাথে আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীর হাফিযাহুল্লাহ-এর সাক্ষাৎ হয়। আন্দোলন নেতৃবৃন্দ সেখানে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরেন। বিশেষ করে বড় ভাই মারকাযের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলামের লেখা আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর রাহিমাহুল্লাহ-এর জীবনী এবং আরেক বড় ভাই ড. মুখতার আহমাদের আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর রাহিমাহুল্লাহ-এর জীবনীর উপর কৃত পিএইচডি থিসিসের বিষয়টি জেনে শায়খ প্রচণ্ড খুশি হন।

মাগরিবের ছালাতের পর মারকাযের কেন্দ্রীয় মসজিদে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে শায়খ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন। সমাপনী বক্তব্যে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব হাফিযাহুল্লাহ উর্দূ ভাষায় আবেগঘন এক বক্তৃতা পেশ করেন। বক্তৃতার শেষের দিকে তিনি বান্দা নাচিজকে ফারযান্দ সম্বোধন করে শুকরিয়া আদায় করেন। আমি নিজেকে যে শুকরিয়ার কখনোই যোগ্য মনে করি না। তার মতো বড় মানুষ তার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের উদার মন ও তাওয়াযু প্রদর্শন করেছেন। হাফিযাহুল্লাহ!

আলোচনা শেষে আন্দোলন অফিসে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে আল্লামা ইবতিসাম ইলাহী যহীর হাফিযাহুল্লাহ-এর রাজশাহী সফর শেষ হয়।


(ইনশা-আল্লাহ আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

* ফাযেল, দারুল উলূম দেওবান্দ, ভারত; বিএ (অনার্স), মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; এমএসসি, ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডি, যুক্তরাজ্য।

Magazine