জন্মের পর থেকে পৃথিবীর বৈচিত্র্যতার সাথে চলতে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের খাদ্যাভ্যাসের বিভিন্ন পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক সময় আমাদের শরীর মানিয়ে নিতে পারে না। তখন বিভিন্ন অসুখবিসুখের সম্মুখীন হতে হয়। তেমনি একটি অসুখ হচ্ছে— অটোইমিউন ডিজিজ। আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার জন্য আমাদেরকে শারীরিক সুস্থতার দিকে নযর রাখতে হবে।
রোগটি নিয়ে আলোচনা— (১) অটোইমিউন ডিজিজ কী? (২) উপসর্গ (৩) অটোইমিউন ডিজিজ হওয়ার কারণ? (৪) প্রতিকার (৫) প্রতিরোধ (৬) ভয়াবহতা বা পরিণতি।
(১) অটোইমিউন ডিজিজ কী: প্রত্যেক মানুষের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে কিছু সিস্টেম দিয়েছেন, যাকে ইমিউন সিস্টেম বলা হয়। ইমিউন সিস্টেমের কাজ হলো অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করে বাইরের শত্রুকে ভেতরে প্রবেশে বাধা দেওয়া। শরীরে কোনো ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বা ক্ষতিকর রোগজীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটলে সেই ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে তাদের প্রবেশে বাধা দিয়ে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। কিন্তু শরীর যখন অটোইমিউন ডিজিজে আক্রান্ত হয়, তখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম সুস্থ কোষ ও অসুস্থ কোষকে চিহ্নিত করতে পারে না। তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্টো শরীরের সুস্থ কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে। বিশ্বে প্রায় ২০০ এর মতো অটোইমিউন ডিজিজ রয়েছে।
(২) উপসর্গ: অটোইমিউন ডিজিজের বৈচিত্র্যতার কারণে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। রোগের ধরন, বয়স, লিঙ্গ, হরমোনের অবস্থা এবং পরিবেশগত কারণে এটি বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন: ক্লান্তি, জ্বর, অস্বস্তি, পেশি ব্যথা এবং প্রদাহ, জয়েন্টে ব্যথা, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘুমের সমস্যা, ডায়রিয়া, অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস, ত্বকের ফুসকুড়ি ও খসখসে ত্বক।
(৩) অটোইমিউন ডিজিজ হওয়ার কারণ: অটোইমিউন ডিজিজের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু কারণে এই রোগ হতে পারে। যেমন: ১. পরিবেশগত কারণ ২. বংশগত ৩. দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ৪. ধূমপান ৫. হরমোনাল ৬. বয়স ও লিঙ্গ ৭. দীর্ঘদিন পুষ্টির ঘাটতি ৮. অতিরিক্ত চিন্তা ৯. প্রদাহ ১০. ভিটামিন-ডি এবং ওমেগা-৩ ঘাটতি।
কেমিক্যাল, কীটনাশক, রাসায়নিক সার, বিভিন্ন ধরনের স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক।
(৪+৫) প্রতিকার এবং প্রতিরোধ: অটোইমিউন ডিজিজ থেকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হওয়ার কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে অর্থাৎ প্রাকৃতিক ও কেমিক্যালমুক্ত খাবার গ্রহণ করলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায় এবং প্রতিরোধ করা যায়। যেমন:
১ সঠিকভাবে ডাইজেশন (হজম)। খাবার সঠিকভাবে হজম না হলে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দূর হয় না ফলে কোলন পরিষ্কার থাকে না। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে কোলনে সংক্রমণ ঘটে ফলে নানারকম অটোইমিউন ডিজিজে মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
২. ছিয়াম রাখা। ছিয়াম রাখলে আমাদের শরীর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য সচল হয়। ছিয়াম রাখলে আমাদের দেহ থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, চর্বি ইত্যাদি দূর হয়।
৩. প্রসেসড ফুড পরিহার করা। শরীরের হজমক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হওয়ার জন্য এনজাইম দরকার হয়। আমাদের দেহে যে এনজাইম উৎপন্ন হয়, তা প্রাকৃতিক খাবার হজম করার জন্য যথেষ্ট কিন্তু আমরা যখন প্রসেসড খাবার খায়, তখন সেটা হজমের জন্য প্রসেস এনজাইম প্রয়োজন পড়ে, যা দেহ সরবরাহ করতে পারে না। এর ফলে খাদ্য সঠিকভাবে হজম হয় না এবং কোলন পরিষ্কার থাকে না ফলে রোগজীবাণু বাসা বাঁধে।
৪. খাবার খাওয়ার সময় পানি পান না করে খাওয়ার আধাঘণ্টা আগে এবং পরে পান করা উচিত। কারণ খাবার খাওয়ার সময় পানি পান করলে পাকস্থলীতে খাদ্য হজমের জন্য থাকা অ্যাসিড প্রয়োজনের চাইতে বেশি পাতলা হয়ে যায়। যার ফলে খাদ্য সঠিকভাবে দেহ শোষণ করতে পারে না।
৫. খাবার থেকে চিনি পরিহার করা।
৬. ব্যায়াম করা।
৭. স্ট্রেস বা চিন্তা না করা।
৮. কাঁচা শাকসবজি খাওয়া।
৯. ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ খাওয়া।
১০. গাট পরিষ্কার রাখা।
১১. ভিটামিন-ডি এর ব্যালেন্স ঠিক রাখা।
(৬) ভয়াবহতা বা পরিণতি: অটোইমিউন ডিজিজ এমন এক ধরনের রোগ, যা থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া যায় না। একবার হয়ে গেলে সেটা থেকে নতুন নতুন অটোইমিউন ডিজিজ হতে থাকে। তাই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে উপরিউক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত।
তথ্যসূত্র :
www.bbc.com; Wikipedia; www.britannica.com; www.medicoverhospitals; wikipedia, Dr. Mujibul Haque (সাক্ষাৎকার NTV); Dr. A. R. M. Jamil (functional medicine).
মোছা. রহিমা খাতুন
বিএসসি, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।