কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

গরমে বাড়ছে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি: প্রয়োজন জনসচেতনতা

post title will place here

ভূমিকা:

গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এ সময় ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত গরমে হতে পারে হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতার মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই তীব্র গরমে কিছু নিয়ম মেনে চললে নিজের ও পরিবারের সকলের সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

সাধারণত, দেহের তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে হিটস্ট্রোক হয়। হিটস্ট্রোক হলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা ১০৬° ফারেনহাইট বা তার বেশি পৌঁছাতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রায় থাকলে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। এই অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনি ও পেশিতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এটি যদি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়, তবে হিটস্ট্রোক হতে পারে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপমাত্রা ও প্রকটতা বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো হিটস্ট্রোক। এটি একটি চিকিৎসাগত জরুরী অবস্থা। তবে এই গরমে সামান্য সতর্কতার মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি।

হিটস্ট্রোক কী?

অতিরিক্ত গরমে বাইরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের শরীর নিজের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তখন ত্বকের শিরাগুলো প্রসারিত হয়ে অতিরিক্ত তাপ বাইরে বের করে দেয় এবং ঘামের মাধ্যমে শরীর শীতল হয়। কিন্তু অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে লবণ ও পানি কমে যায়। ফলে দেখা দেয় দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম, বমি বমি ভাব, পেশিতে ব্যথা, তীব্র পিপাসা ইত্যাদি। এ অবস্থার নাম ‘হিট ক্র্যাম্প’ বা ‘হিট এক্সহসশন’। অতিরিক্ত গরমে বা আর্দ্র পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকলে বা কঠিন শারীরিক পরিশ্রম করলে শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তখনই ঘটে হিটস্ট্রোক।

হিটস্ট্রোক হলে আমাদের করণীয়:

১. হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে।

২. আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান। ফ্যান বা এসি চালিয়ে দিন।

৩. ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিন। কাঁধ, বগল ও কুঁচকিতে বরফ দিন তাপমাত্রা কমাতে।

৪. হিটস্ট্রোক হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে কিছু পরামর্শ:

১. প্রচুর পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।

২. শরীরকে ডিহাইড্রেটেড হওয়া থেকে রক্ষা করে এমন খাবার খান।

উপকারী পানীয়:

১. কাঁচা আমের শরবত: শরীর ঠাণ্ডা রাখে ও পুষ্টিকর।

২. তেঁতুলের শরবত: শরীর ঠাণ্ডা করে, পানিস্বল্পতা রোধ করে।

৩. ডাবের পানি: প্রাকৃতিকভাবে শরীর ঠাণ্ডা করে ও খনিজ সরবরাহ করে।

৪. আখের শরবত: পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।

৫. লেবুর শরবত: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, শরীর সতেজ রাখে।

৬. মাঠা: প্রোবায়োটিক্স সমৃদ্ধ, হজমে সহায়ক।

৭. অ্যালোভেরার শরবত: হজম, পেটের সমস্যা ও গরমজনিত সমস্যা কমায়।

৮. পেঁয়াজের রস: গরমে উপকারী ও ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ।

যা পরিত্যাগ করা উচিত:

১. সফট ও হার্ড ড্রিঙ্কস: শরীরকে ডিহাইড্রেট করে।

২. অশুদ্ধ পানি: পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. ফাস্টফুড ও তেলচর্বিযুক্ত খাবার: হজমে সমস্যা ও শরীরে উত্তাপ বাড়ায়।

৪. স্যালাইন সঠিকভাবে গ্রহণ করুন: নির্দেশিত পরিমাণ পানির চেয়ে কম পানি দিয়ে খেলে ক্ষতিকর হতে পারে।

উপসংহার:

এই গরমে নিজের পাশাপাশি পরিবারের যত্ন নিন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, ছাতা ব্যবহার করুন। গরমের সময় বয়স্ক ও শিশুদের বিশেষভাবে নজরে রাখুন। হিটস্ট্রোক একটি মারাত্মক সমস্যা হলেও সচেতনতা ও সতর্কতা থাকলে সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

 চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক; প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

Magazine