কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

যেমন ছিল সালাফদের রামাযান

post title will place here

ভূমিকা :

রামাযান মাস কল্যাণের মাস। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত যাবতীয় কল্যাণের সমাহার নিয়ে বছর ঘুরে আমাদের সামনে রামাযান উপস্থিত হয়। রহমত, বরকত আর মাগফেরাতের সামষ্টিক রূপ রামাযান। সত্যিকারার্থে ওই ব্যক্তি ব্যর্থ, বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্ৰস্ত, যে এই মহান মাস পেল অথচ ছিয়াম রাখতে পারল না। এটা একটি সুবর্ণ আয়োজন, যেখানে ইসলামের বিভিন্ন ইবাদতের সমাবেশ ঘটে, যেই ইবাদতের একেকটি মহা মূল্যবান, ফলাফল কাঙ্ক্ষিত জান্নাত। ছিয়াম এমন একটি ইবাদত, যার ছওয়াব রয়েছে অসংখ্য এবং পুরস্কার‌ও মহান রবের হাত থেকে পাওয়া যায়। সুবহানআল্লাহ! কত‌ই না সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তির জীবন, যে এমন প্রভূত কল্যাণের মালিক হতে পারে। তাই তো আমরা দেখি ছাহাবায়ে কেরাম ও আমাদের পূর্বসূরি সালাফে ছালেহীন রামাযানের ছিয়ামকে পাওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই দু‘আ ও প্রস্তুতি গ্ৰহণ করতেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, দারস-তাদরীস, দায়বদ্ধতা, সফর ছাড়াও সকল কিছু থেকে মুক্ত থাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাতেন। বক্ষমান প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করা এবং তাঁদের রামাযানের ছিয়াম সাধনা, পরিশ্রম ও লৌকিকতাহীন ইবাদত করে ছিয়ামের যথার্থ হক্ব আদায় করে উভয় জীবনে সফলতার পথে চলা। তাই আমরাও তাঁদের মতো আলোকজ্জ্বল জীবন গড়তে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জান্নাত কামনা করতে চাই। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন।

যেভাবে ছাহাবী ও সালাফগণ রামাযানের প্রস্তুতি গ্ৰহণ করতেন :

ছাহাবী ও সালাফগণ রামাযান আসার পূর্বে নানারকম প্রস্তুতি গ্ৰহণ করতেন। তাঁরা রামাযানকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করতেন। তাঁরা রহমত, বরকত ও মাগফেরাত পাওয়ার জন্য ছিলেন সদা উদগ্ৰীব। ইবাদতের মৌসুম এই রামাযানকে উপলক্ষ্য করে তাঁদের চেহারায় আনন্দের ছাপ ভাসত। সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকত, পরিস্ফুটিত চেহারা জ্বলজ্বল করত। তাঁদের রামাযানের প্রস্তুতি হতো দু‘আ করার মাধ্যমে। কেননা রামাযান মাসে যাবতীয় কল্যাণের দরজা উন্মুক্ত করা হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়, যে মাস হলো কুরআনের মাস। সেই কারণে তাঁরা আনন্দে আবেগাপ্লুত হতেন। আনন্দ ও খুশীর বহিঃপ্রকাশ করতেন। তাঁরা রামাযানের আগমনে যাবতীয় দায়বদ্ধতা, কর্মব্যস্ততা থেকে মুক্ত থাকার প্রস্তুতি নিতেন। উদ্দেশ্য হলো যেন রামাযান মাসের ইবাদত হাতছাড়া না হয়। যথাযথভাবে প্রত্যেক সময়কে মূল্যায়ন করতে তাঁরা বিভিন্ন পথ ও পন্থা অবলম্বন করতেন।

কোনো কোনো সালাফ থেকে বর্ণিত, তাঁরা আল্লাহর কাছে ছয় মাস দু‘আ করতেন এই মর্মে যে, যেন আল্লাহ তাআলা তাদের রামাযানে পৌঁছান (তথা তাঁরা ছিয়াম রাখতে পারেন)। অতঃপর রামাযান পরবর্তী পাঁচ মাস তাঁরা দু‘আ করতেন যেন তাদের ছিয়াম আল্লাহ কবুল করেন। অতঃপর তাঁরা আল্লাহর কাছে দু‘আ করতেন যেন আল্লাহ তাদের রামাযানে উপনীত করে দ্বীন ও শারীরিক কল্যাণের উপর। আর তাঁরা আল্লাহকে ডাকতেন যেন তিনি তাঁদের তাঁর আনুগত্যের উপর সাহায্য করেন। তাঁরা দু‘আ করতেন যেন আল্লাহ তাআলা আমলসমূহ কবুল করেন।[1]

রামাযানের ছিয়ামের সাথে অন্যান্য ইবাদত পালনে কোনোরকম ঘাটতির সম্ভাবনা এড়াতে ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফগণ শা‘বান মাসে বেশি করে ছিয়াম রাখার অনুশীলন করতেন।

রামাযান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে‌‌। এজন্য বলা হয়, রামাযান কুরআনের মাস। কুরআন তেলাওয়াত, উপলদ্ধি, অনুধাবন ও তাঁর বাস্তব চিত্র জীবনে ধারণ করার সুবর্ণ সুযোগ হলো রামাযান মাস। এজন্য লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফগণ শা‘বান মাসেই কুরআন তেলাওয়াতের পরিবেশ তৈরি করতেন। ছাহাবী আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘মুসলিমদের কাছে যখন শা‘বান মাস উপনীত হয়, তখন তাঁরা কুরআনের মুছহাফের উপর উপুড় হয়ে পড়তেন’।[2] সালামা ইবনু কাহেল রহিমাহুল্লাহ বলেন, শা‘বান মাস হলো কুরআন তেলাওয়াতের মাস। ক্বারীদের মাস।[3] ইমাম মালেক ইবনু আনাস রহিমাহুল্লাহ যখন রামাযান মাস প্রবেশ করত, তখন তিনি হাদীছের দারস ও আহলুল ইলমের মজলিস থেকে সরে যেতেন। শুধু কুরআন গ্ৰহণ করতেন তেল‌াওয়াতের জন্য।[4]

যেমন ছিল সালাফদের রামাযানের দিনাতিপাত :

রামাযানের ছিয়াম মানেই হলো আত্মসংযম, যাবতীয় অন্যায়, অশালীন, মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকা। গীবত, তোহমত, সূদ, ঘুষ, মিথ্যাচার ছাড়াও সকল প্রকারের পাপ থেকে বিরত থাকা। যেহেতু ছিয়াম মানুষকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার পাপের পথকে নিষেধ করে, তাই একজন ছিয়াম পালনকারীর জীবন হয় পরিমার্জিত, সুসজ্জিত ও সুগঠিত। পাপের কোনো প্রকার গন্ধ তাঁর শরীরে পাওয়া যাবে না বলেই ছিয়াম নিয়ে আসে বড় আত্মসংযমী শিক্ষা।

সুধী পাঠক! লক্ষ্য করুন, ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফগণ রামাযানের ছিয়াম থাকা অবস্থায় কীভাবে দিনাতিপাত করতেন। তাদের চিত্র আর আমাদের জীবনযাত্রার চলমান চিত্রকে তুলনা করুন। দেখুন আমাদের কত করুণ অবস্থা! ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফগণ রামাযান মাসে খেতেন হিসাব করে; কম খেতেন, কম ঘুমাতেন, কম কথা বলতেন এবং ঘোরাফেরা খুবই কম করতেন। সব সময় ইবাদতে মশগূল থাকতেন। সব ধরনের পাপ থেকে বিরত থাকার জন্য তাঁরা ইবাদতবিমুখ চিন্তা-চেতনায় লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতেন। তাঁরা পরস্পর সৎকাজের প্রতিযোগিতা করতেন। প্রতিটি সময়ের মূল্যায়ন করতেন। ইবনুল ক্বাইয়িম রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘সময় নষ্ট করা মৃত্যুর চেয়েও বেশি কঠিন। কেননা সময় নষ্ট করা আল্লাহ ও পরকাল থেকে বিচ্ছিন্ন করে আর মৃত্যু তোমাকে দুনিয়া ও দুনিয়াবাসী থেকে বিচ্ছিন্ন করে’।[5]

ছিয়াম শুধুই অনাহারে থেকে দিন যাপনের নাম নয়; বরং ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত এক ব্যাপক পরিবর্তনের কর্মসূচির নাম। ছিয়াম যেমন ছিয়াম পালনকারীর জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হয়ে থাকে যা আল্লাহর অবশ্যকরণীয় হক্ব, ঠিক তেমনি ছিয়াম শিক্ষা দেয় ছিয়াম থাকা অবস্থায় কীভাবে শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও জিহ্বাকে হেফাযত করা যায়। ছাহাবী জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘যখন তুমি ছিয়াম রাখবে তখন তুমি তোমার শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির ছিয়াম রাখো। তোমার জিহ্বাকে যাবতীয় মিথ্যাচার ও হারাম থেকে বিরত থাকার ছিয়াম রাখো এবং প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকো। তোমার উপর আবশ্যক হলো ছিয়াম থাকা অবস্থায় নম্র, বিনয়ী ও ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা। খবরদার! ছিয়ামের দিন আর অন্যান্য দিন এক‌ই মনে করিয়ো না’।[6]

ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফগণ রামাযানে ছিয়াম থাকা অবস্থায় গীবত, মিথ্যাচার, মূর্খতামূলক আচরণ থেকে বিরত থাকতেন, যাতে করে ছিয়ামের উপর প্রভাব না পড়ে‌। কতিপয় সালাফ থেকে বর্ণিত, গীবত ছিয়ামকে ছিদ্র করে (নষ্ট করে) আর ইস্তেগফার তা জোড়াতালি দেয় (ঠিক করে)।[7] ইবনুল মুনকাদির রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘ছিয়াম পালনকারী ব্যক্তি যখন গীবত করে, তখন সে ছিয়ামকে ছিদ্র করে। আর যখন ইস্তেগফার করে, তখন তা জোড়াতালি লাগে‌’।[8]

তাঁরা ছিয়াম থাকা অবস্থায় ছালাত ও ছিয়ামের পাশাপাশি দান-ছাদাক্বা, কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযকার ও মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন।

ছিয়ামকে কেন ঢালস্বরূপ বলা হলো :

যুদ্ধের মাঠে বিরোধী দল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় প্রতিপক্ষকে হেনস্তা ও পরাজয় করার জন্য। এমন সংকটময় মুহূর্তে যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষের তির-তরবারি ও অস্ত্রশস্ত্র থেকে নিজেকে সুরক্ষা, হেফাযত রাখার জন্য যে বস্তু ব্যবহার করে সেনাবাহিনীগণ তাঁকে ঢাল বলে। ছিয়ামকে ঢাল বলা হয়েছে এজন্য যে, ঢাল যেমন ব্যক্তিকে যুদ্ধের ময়দানে তীরসহ যাবতীয় অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা করে ঠিক তেমনি ছিয়াম বান্দাকে দুনিয়ার জীবনে যাবতীয় পাপাচার, অবাধ্যতা থেকে রক্ষা করে। মনে রাখবেন! যদি ছিয়াম দুনিয়ার জীবনে যাবতীয় পাপাচার অবাধ্যতা থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরূপ হয়, তাহলে সেই ছিয়াম তার জন্য পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করবে। আর যদি দুনিয়ার জীবনে ছিয়াম যাবতীয় পাপাচার অবাধ্যতা থেকে বাঁচার জন্য ঢাল হিসেবে কাজ না করে, তাহলে পরকালেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করবে না। এজন্য ছিয়ামকে ঢালের সাথে তুলনা করা হয়েছে।[9]

সালাফদের ক্বিয়ামুল লায়ল :

(১) ইবনুল মুনকাদির রহিমাহুল্লাহ বলেন, তিনটি জিনিস ছাড়া দুনিয়ার কোনো স্থায়ী স্বাদ নেই— (ক) ক্বিয়ামুল লায়ল (তারাবীহ/তাহাজ্জুদ), (খ) মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ ও (গ) জামাআতের সাথে ছালাত আদায়।

(২) আবূ সুলাইমান রহিমাহুল্লাহ বলেন, খেল-তামাশায় মত্ত প্রেমিকদের চেয়ে ইবাদতগুযার ব্যক্তির রাত জেগে ইবাদতে মশগূল থাকাতে রয়েছে অনেক স্বাদ ও মিষ্টতা। যদি রাত না থাকত, তাহলে দুনিয়াতে বেঁচে থাকার ব্যাপারে আমার কোনো ইচ্ছাই থাকত না।

(৩) কেউ কেউ বলেন, যদি রাজা-বাদশারা জানত আমরা রাতে কী নেয়ামত পাই, তাহলে তাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র দ্বারা লড়াই করত।

(৪) ফুযাইল ইবনু আয়ায রহিমাহুল্লাহ বলেন, যখন সূর্য অস্ত যায় তখন আমি আনন্দিত হ‌ই এজন্য যে, রাত্রির অন্ধকারাচ্ছনে আমার রবের সান্নিধ্যে একাকিত্বের জন্য। আর যখন সূর্য উদিত হয় মানুষের সামনে তখন আমি চিন্তাগ্ৰস্ত হ‌ই।[10]

সালাফদের ঈদ উদযাপন :

ইবনু রজব হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য নয় যে নতুন পোশাক পরিধান করে; বরং ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য যে তার আনুগত্য বৃদ্ধি করে। ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য নয় যে নতুন পোশাকের সাজসজ্জা ও গাড়ি বহর প্রদর্শন করে; বরং ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য যার পাপ মোচন করা হয়েছে’।[11]

একদিন এক ব্যক্তি ঈদুল ফিত্বরের দিন আমীরুল মুমিনীন আলী রযিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে প্রবেশ করে তাঁর কাছে একটি শুকনো রুটি পান। লোকটি শুকনো রুটি দেখে বলে, হে আমীরুল মুমিনীন! আজকে ঈদের দিন অথচ শক্ত শুকনো রুটি! আলী রযিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বলেন, আজকে ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য যার ছিয়াম, ক্বিয়াম কবুল করা হয়েছে। ঈদ ওই ব্যক্তির জন্য যার পাপ ক্ষমা করা হয়েছে এবং আমল কবুল করা হয়েছে। আজকে আমাদের জন্য ঈদ; আগামীকাল‌ও আমাদের জন্য ঈদ। প্রত্যেক এমন দিন যে দিনে আল্লাহর অবাধ্যতা করা হয় না সেই দিনেই আমাদের জন্য ঈদ।[12] সুফিয়ান ছাওরী রহিমাহুল্লাহ-এর কতিপয় সাথী বলেন, আমি ঈদের দিন তাঁর সাথে বের হয়েছিলাম। অতঃপর তিনি বলেন, আমরা এই দিন (ঈদের) সর্বপ্রথম শুরু করব চোখ নিম্নগামী করার মাধ্যমে।[13]

কতিপয় সালাফের মুখে হতাশা-দুশ্চিন্তার ছাপ প্রকাশ পায় ঈদের দিনে। ঈদের দিন আনন্দ-খুশীর বদলে এমন মলিন চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করা হলো, আজকের দিন হলো খুশীর ও আনন্দের। অতঃপর তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, তোমরা সত্য বলেছ। কিন্তু আমি এমন একজন বান্দা যে, আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন তাঁর জন্য এমন আমল করার অথচ আমি জানি না যে, তিনি আমার পক্ষ থেকে আমল গ্রহণ করেছেন কিনা?[14]

রামাযান ও রামাযান পরবর্তী সালাফদের কুরআন খতম :

সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ দুই মাসে এক বার কুরআন খতম করতেন। আর কেউ কেউ এক মাসে এক বার কুরআন খতম করতেন। আর কেউ কেউ ১০ দিনে এক বার কুরআন খতম করতেন। আর কেউ কেউ ৮ দিনে এক বার কুরআন খতম করতেন। আর তাদের মধ্যে অধিকাংশই ৭ দিনে এক বার কুরআন খতম করতেন। আর কেউ কেউ ছয় দিনে করতেন। কেউ কেউ ৫ দিনে, কেউ কেউ ৪ দিনে। কেউ কেউ ৩ দিনে, কেউ কেউ ২ দিনে আর কেউ কেউ দিনে-রাতে এক বার কুরআন খতম করতেন। আর কেউ কেউ দিনে এক বার রাতে এক বার কুরআন খতম করতেন। আর কেউ কেউ তিন বার করতেন। আর কেউ দিনে চার বার রাতে চার বার মোট আট বার কুরআন খতম করতেন।[15]

যেহেতু রামাযান মাস কুরআনের মাস, বরকতপূর্ণ মাস এবং মাসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফযীলতপূর্ণ মাস, তাই তাঁরা এই সুবর্ণ সুযোগ লুফে নিতে কোনো রকম পিছপা হননি। মুস্তাহাব হলো বেশি করে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং গনীমত হিসেবে এই ফযীলতপূর্ণ সময় ও মাসকে গ্ৰহণ করা।

রামাযানের শেষে সালাফদের অবস্থা :

রামাযানের শেষে সালাফদের বিষণ্ন-বিবর্ণ চেহারা হতো। ভারাক্রান্ত মনে তাঁরা রামাযানের প্রাপ্তি নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন যেন আল্লাহ তাআলা তাদের এই দীর্ঘ সাধনা কবুল করেন। বিশর আল-হাফী রহিমাহুল্লাহ-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, এমন ক্ব‌ওম আছে যারা রামাযানে ইবাদতগুযার হয় ও আমলের অনেক পরিশ্রম করে। অতঃপর রামাযান শেষ হলে তা পরিত্যাগ করে। তিনি একথা শুনে বলেন, ওই ক্ব‌ওম কত‌ই না নিকৃষ্ট যারা রামাযান ছাড়া আল্লাহকে চিনে না।[16]

খলীফা উমার ইবনু আব্দিল আযীয রহিমাহুল্লাহ ঈদুল ফিত্বরের দিন বের হলেন। অতঃপর তিনি খুৎবায় বলেন, হে মানুষ সকল! নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহর জন্য ৩০ দিন ছিয়াম রেখেছ; ৩০ দিন ক্বিয়াম করেছ। আর আজকে তোমরা বের হয়েছ আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করার জন্য যে, যেন আল্লাহ তোমাদের থেকে রামাযানের ছিয়াম ও ক্বিয়াম কবুল করেন।[17] প্রখ্যাত তাবেঈ ক্বাতাদা রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘যাকে রামাযান মাসে ক্ষমা করা হয়নি, তাকে রামাযান ছাড়া অন্য কোনো মাসে ক্ষমা করা হবে না’।[18]

পরিশেষে বলতে চাই, সালাফরা আমাদের প্রেরণার বাতিঘর। তাঁদের অনুপ্রেরণা আমাদের চলার পথকে গতিময় করে‌। তাদের ইবাদতগুযারি, পরহেযগারিতা ও দুনিয়াবিমুখতা আমাদের আবার নতুন করে ভাবতে শেখায় ইবাদত এভাবেই করতে হয়, যার ফরে উভয় জাহানের প্রভূত কল্যাণের মালিক হ‌ওয়া যায়। আল্লাহ আমাদের সালাফে ছালেহীনের পথ অনুসরণ করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

মাযহারুল ইসলাম

দাওরায়ে হাদীছ (শেষ বর্ষ), মাদরাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকা।


[1]. ইবনে রজব হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ, লাত্বায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ১৪৮।

[2]. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৮।

[3]. প্রাগুক্ত।

[4]. প্রাগুক্ত।

[5]. ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযী রহিমাহুল্লাহ, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ৪৫৮।

[6]. ইবনু আবী শায়বা, হা/৮৮৮০।

[7]. ইবনে রজব হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ, জামেউল উলূম ওয়াল হেকাম, পৃ. ২৪২।

[8]. প্রাগুক্ত।

[9]. প্রাগুক্ত।

[10]. গৃহীত : ড. মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম সুলাইমান আর-রূমী, ক্বিয়ামুল লায়ল, পৃ. ৭০-৮০।

[11]. ইবনে রজব হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ, লাত্বায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ২৭৭।

[12]. গৃহীত : মাওকেয়ুল মিম্বার থেকে, খুৎবার বিষয় : ঈদুল আযহা আল-মুবারক, ইসলাম ওয়ে সূত্র।

[13]. ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযী রহিমাহুল্লাহ, আত্ব-তাবছিরা, পৃ. ১০৬।

[14]. ইবনে রজব হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ, লাত্বায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ২০৯।

[15]. ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ, আত-তিব‌ইয়ান ফী আদাবি হামলাতিল কুরআন, পৃ. ১২০-১৫০।

[16]. মিফতাহুল আফকার লিল ত্বায়াহুব লি-দারিল ফেরার, ২/২৮৩।

[17]. ইবনে রজব হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ, লাত্বায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ২০৯।

[18]. প্রাগুক্ত, পৃ. ২১১।

সাওয়াল জওয়াব

প্রশ্ন (১) : ইবনুসাইয়্যেদ কি দাজ্জাল? আর দাজ্জাল না হলে সে আসলে কে বিস্তারিত জানতে চাই?

প্রশ্ন (২) : জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি সা‘দ ইবনু মু‘আয রযিয়াল্লাহু আনহু-এর মৃত্যুতে আল্লাহ তাআলার আরশ কেঁপে উঠেছিল। এখানে আরশ কাঁপা বলতে কি বুঝানো হয়েছে?

প্রশ্ন (৩) : যে ব্যক্তি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গালি দেয় তার বিধান কি? আর তাকে আয়ত্তে আনার আগেই যদি সে তওবা করে, তাহলে তার সেই তওবা গ্রহণ করা হবে কি?

প্রশ্ন (৪) : আমার প্রশ্ন হল নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজে গিয়ে সকল নবী আলাইহিস সালাম-কে নিয়ে ছালাতের ইমামতি করে ছিলেন। তাহলে কি সকল নবী আলাইহিস সালাম কি আসমানে জীবিত আছেন?

প্রশ্ন (৫) :মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি গায়েব নাই জানতেন, তাহলে তিনি কীভাবে বদরের যুদ্ধের ফলাফল, আবূ-জাহেলের মৃত শরীর পতিত হওয়ার স্থান আগে থেকেই চিহ্নিত করেছিলেন?

প্রশ্ন (৬) : কোনো দিবস পালন করা বা এ উপলক্ষে বৈধ কোনো আয়োজন করা যাবে কি?

প্রশ্ন (৭) : আদম আলাইহিস সালাম ভারত থেকে ষাট হাজার বার হজ্জ্ব করতে গিয়েছিলেন। এই ঘটনা কি সত্য?

এপ্রিল ফুল : মুসলিম নিধনের করুণ ইতিহাস

পহেলা বৈশাখ : ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

প্রশ্ন (৮) : আমার বড় ভাই গত ১০ বছর যাবত অসুস্থ। তার সুস্থতার জন্য আমার বাবা-মা ডাক্তার ও জীন ছাড়ানোর কবিরাজ দেখিয়েছে। তাদের বেশির ভাগই তাবিজ ও তেল পড়া দিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে কিছুদিন ভালো থাকে।প্রশ্ন হলো, জীন ছাড়ানোর জন্য কবিরাজ দেখানোর ইসলামিক বিধান কী?

প্রশ্ন (৯) : মানুষ মারা গেলে তার কবরের উপর চার পাঁচ দিন রাতে পানি ঢালে। আর তারা বলে যে, এটা ভালো কাজ। এখন প্রশ্ন হলো, এমন কাজ করা কি শরী‘আতসম্মত?

প্রশ্ন (১০) : রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরে যাওয়া ও যিয়ারত করা হজ্জ্বের অংশ মনে করলেকি বিদআত হবে?

প্রশ্ন (১১) : ছালাতে মহিলাদের সতর কতটুকু? জনৈক আলেম বলেন, মহিলাদের সতর হচ্ছে— ‘দুই হাত ও মুখমণ্ডল ব্যতীত পুরো শরীর, এমনকি দুই পায়ের পাতাও’। তিনি আরও বলেন, ‘কোনো মহিলা যদি অন্ধকার ঘরে একাকী ছালাত আদায়ের সময় তার হাত এবং মুখমণ্ডলের বাইরে অন্যকিছু অনাবৃত হয়ে যায়, তাহলে তার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে’।উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?

প্রশ্ন (১২) : ইমাম যদি রাফঊল ইয়াদাইন না করে,তাহলে মুক্তাদী কি রাফঊল ইয়াদাইন করতে পারবে?

প্রশ্ন (১৩) : ছালাতের প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মাঊন পড়ে দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ফীল পড়লাম। আমার জিজ্ঞাসা হলো, সূরার ধারাবাহিকতা ঠিক না থাকলে সাহু সিজদা দিতে হবে কী?

প্রশ্ন (১৪) : এশার ছালাতের পর বিতর ছালাত আদায় করলে, রাতে কি আবার তাহাজ্জুদ আদায় করা যাবে?

প্রশ্ন (১৫) : ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরও বিতর ছালাত পড়া যাবে কী?

প্রশ্ন (১৬) : আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি, অফিস চলাকালিন সময়ে আমরা অফিসেআযান দিয়ে সবাই একসাথে জামাতে ছালাত আদায় করি। আমার প্রশ্ন হলো মসজিদে আদায় করতে না পারায় আমাদের ছালাত হবে কি?

প্রশ্ন (১৭) : ছালাতে একাধিক ছানা একসাথে পড়া যাবে কি? যেমন- (সুবহানাকা আল্লাহুমা...) পড়ে এরপর (আল্লাহুম্মা বাইদ বাইনি...) পড়া।

তবু যারা ক্ষমা পেল না...

রামাযান এবং আমাদের প্রচলিত ভুলত্রুটি

যেমন ছিল সালাফদের রামাযান

লায়লাতুল ক্বদর : গুরুত্বও ফযীলত

প্রশ্ন (২১) : ঘুমিয়ে থাকার কারণে ইফতারির সময় ৩০ মিনিট পার হয়ে গেছে। এখন করণীয় কী?

উত্তর: প্রশ্ন (২২) :অসুস্থতার কারণে গত বছর সব ছিয়াম রাখতে পারিনি। বর্তমানেও শারীরিকভাবে অসুস্থ। এখন করণীয় কী?

প্রশ্ন (২৩) : মানুষকে সাহারীর সময় জাগানোর জন্য মাইকে আযান দেওয়া, গজল গাওয়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, বক্তব্য দেওয়া ও সাইরেন বাজানো যাবে কি?

প্রশ্ন (২৪) : কোনো ব্যক্তি যদি রামাযানের রাত্রিতে স্ত্রী সহবাস করে ঘুমিয়ে যায় এবং অপবিত্র অবস্থায় সাহারী খেয়ে ছিয়াম রাখে, তাহলে উক্ত ছিয়াম শুদ্ধ হবে কি?

প্রশ্ন (২৫) : ক্বদরের রাতে সারা রাত ছালাত আদায় করা যাবে কি?

প্রশ্ন (২৬) : ছিয়াম অবস্থায় মুখের লালা খাওয়া যাবে কি?

প্রশ্ন (২৭) : যারা বাচ্চাকে দুধ পান করাবে এবং যারা গর্ভবতী তাদের ছিয়ামের হুকুম কী?

প্রশ্ন (২৮) : রামাযান মাসে নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করায় শারঈ কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি?

প্রশ্ন (২৯) : সাহারীর পূর্বে জাগতে পারেনি। এমতাবস্থায় না খেয়েই ছিয়াম রাখতে হবে? না-কি তার ক্বাযা আদায় করতে হবে?

প্রশ্ন (৩০) : ছিয়াম অবস্থায় দিনের বেলা স্বপ্নদোষ হলে ছিয়াম ভঙ্গ হবে কি?

প্রশ্ন (৩১) : পরীক্ষার কারণে উক্ত দিনে ছিয়াম না রেখে তার ক্বাযা আদায় করা যাবে কি?

প্রশ্ন (৩২) : ই‘তিকাফে বসার সময় কখন? মহিলারাকিবাড়িতেই‘তিকাফকরতেপারে?

প্রশ্ন (৩৩) : রামাযান মাসে দিনের বেলা সহবাসের কাফফারা হিসেবে ৬০ দিন ছিয়াম পালন না করে ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়ানো যাবে কি? নাকিএক্ষেত্রে একটানা ৬০টি ছিয়াম রাখতেই হবে?

প্রশ্ন (৩৪) : মৃত্যু ব্যক্তির নামে রামাযান মাসে ইফতারের দাওয়াতে সকলের অংশ গ্রহণ করা যাবে কি ?

প্রশ্ন (৩৫) : জনৈক আলেম বলেন, আরাফার দিন ছিয়াম রাখলে ১০০০০দিন ছিয়ামের সমান নেকী পাওয়া যাবে। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?

প্রশ্ন (৩৭) : শাওয়াল মাসের ছয়টি ছিয়াম কি একা ধারে আদায় করতে হবে, না-কিবিচ্ছিন্নভাবে ও আদায় করা যাবে? আর এই দুটির মধ্যে কোনটি করা উত্তম।

প্রশ্ন (৩৬) : শাওয়ালের ছয়টি ছিয়ামের ফযীলত কি?

প্রশ্ন (৩৮) : আমি একজন প্রবাসী। আমার কাজ খুব কঠিন হওয়ার জন্য অনেক সময় ছিয়াম থাকতে পারি না। যদি আমি দেশে ৩০ জন ছিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাই তাহলে কি আমার ছিয়ামের নেকী হবে ?

প্রশ্ন (৪১): যমযমের পানি সুস্থতার আশায় মুখে মাথায় মাসাহ করা যাবে কি?

প্রশ্ন (৪২): আমি বিকাশের এজেন্ট। বিকাশের মাধ্যমে অনেক কাস্টমার আসে এনজিও কিস্তি দেওয়ার জন্য। ইসলামিক দৃষ্টিতে এভাবে কিস্তি প্রদান করা যাবে কি?

প্রশ্ন (৪৩): সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দূর্গাপূজায় যদি কোনো মুসলিম তাদের সহযোগিতা করে, তাদের পূজা উপলক্ষে যদি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে,জামা কাপড়ের জন্য ও খাবারের জন্য টাকা দেয়, তাহলে কি সেটা পাপ বলে গণ্য হবে?

প্রশ্ন (৪৪): যে সব প্রতিষ্ঠানে নিজেকে সূদের হিসাব করতে হয়, সে সব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে উপার্জিত অর্থ হালাল হবে কি?

প্রশ্ন (৪৫): ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দালালকে ঘুষ দেওয়া ছাড়া কোনোভাবেই লাইসেন্স করা যাচ্ছে না। যারা দালাল ধরে ঘুষ দিচ্ছে শুধু তাদেরই লাইসেন্স করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের ঘুষ দেওয়া জায়েয হবে কি না?

প্রশ্ন (৪৬): নিকটাত্মীয় কেউ যদি কোনো উপহার (টাকা, পোশাক, খাবার) দেয় এবং তার উপার্জনে যদি হারামের মিশ্রণ থাকতে পারে বলে সন্দেহ থাকে, তবে সেটা কি গ্রহণ করা যাবে?

প্রশ্ন (৪৭): আমি চীনে থাকি। চীন থেকে আমি প্রোডাক্ট কিনে বাংলাদেশে পাঠিয়ে লাভ করি। এরূপ ব্যবসা কি জায়েয?

Magazine