মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষের নাফস বা আত্মা। এটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন: ভালো-মন্দ কাজ করা, এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য করা এবং প্রত্যেকের জন্য আলাদা প্রস্তুতি নেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا - فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا ‘শপথ আত্মার এবং যিনি তাকে সুঠাম বানিয়েছেন। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন’ (আশ-শামস, ৯১/৭-৮)।
এখানে নাফসের দুয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো। যেমন- যখন নাফস কোনো বিষয়ে বিচলিত হয়, তখন তার স্বাভাবিক গতি বৃদ্ধি পায়। আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ভয় পাওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন,قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ‘বলুন, তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন করো সে মৃত্যু তোমাদের সাথে অবশ্যই সাক্ষাৎ করবে’ (আল-জুমুআ, ৬২/৮)।
এছাড়া ভয় সম্পর্কে অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ ‘আর তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্র্য-ভয়ে হত্যা করো না’ (আল-ইসরা, ১৭/৩১)।
উভয় আয়াতে মানুষের নাফস যে ভয় করে, সে বিষয়টিকে স্পষ্ট করা হয়েছে। আর এসব প্রতিক্রিয়ার ফলে মানুষের যেমন অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ঘটে, তেমনি শারীরিক পরিবর্তনও ঘটে। যেমন- অন্তরে প্রচুর পরিমাণ কম্পন সৃষ্টি হয় এবং রক্ত দ্রুত সঞ্চালন শুরু করে। এছাড়াও আত্মার পরিধিও বৃদ্ধি পায় ও অন্তর ফুলে যাওয়ার উপক্রম হয়। মনে হয় যেন আত্মা শ্বাসনালির কাছাকাছি চলে এসেছে। ফলে ভীত ব্যক্তিরা মনে করে আত্মা তার গলার কাছাকাছি চলে এসেছে। সেজন্য তারা বলে থাকে ‘ভয়ে আমার জান বের হয়ে যাচ্ছিল’।
তার চোখগুলো বড় বড় হয়ে যাওয়া বা তার শরীরের পশমগুলো খাড়া হয়ে যাওয়া।
আর সত্যিই মানুষ এসব বিষয় উপলব্ধি করার পর এগুলো থেকে বিরত থাকতে চায়। কেননা সে এমনিতেই কখনও ভয় পেতে চায় না, বিচলিত হতে চায় না বা তার হৃৎকম্পনও বৃদ্ধি করতে চায় না। ফলে মানুষ এই বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকে এবং যে-কোনো ভয়ংকর বা অস্থির অবস্থায় পতিত হওয়াকে ভয় করে। আর সে এরকম অবস্থার পরিণতি থেকেও সর্বদা রক্ষা পেতে চায়।
আর ঠিক তেমনিভাবে মানুষ যখন আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে এবং তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তখনই সে পাপ থেকে বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়। তাইতো আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন, يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا ‘তারা ভয় ও আশা সহকারে তাদের প্রতিপালককে ডাকে’ (আস-সাজদা, ৩২/১৬)।
সুতরাং আমাদের পাপ থেকে বেঁচে থাকার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে আমাদের মনে আল্লাহভীতির সঞ্চারণ ঘটানো। যখনই আমরা হৃদয়ে যথাযথ আল্লাহভীতি তৈরি করতে সক্ষম হব, তখনই আমরা পাপের পরিণাম উপলব্ধি করতে পারব এবং তা থেকে বিরত থাকার সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করতে পারব। সেজন্য আমাদের উচিত হবে আল্লাহকে যথাযথ ভয় করে তার ইবাদত করা। আমাদের হৃদয়ে তার ভয় জাগরূক রেখে তার কাছে দু‘আ করা। আল্লাহ আমাদের তাঁকে যথাযথ ভয়কারী মুত্তাক্বী বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পাপ থেকে যথাসাধ্য বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
শিক্ষার্থী, কুল্লিয়া ২য় বর্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।