কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

জীবন এত তিতা কেন?

post title will place here

জীবন নিয়ে আমরা সকলেই কমবেশি চিন্তিত। বর্তমান সমাজে হাজারো বেকার যুবক বলছে, আমি আজ বেকার কেন? আমার চাকরি মিলছে না কেন?

একসময় যে বাবা-মা নিজেদের চিন্তা না করে আমাকে ভালো ব্যবস্থাপনা দিতেন, ভালো ভালো খাবার খাওয়াতেন, সুন্দর পোশাক পরিধান করাতেন, আমার সকল ধরনের আবদার পূরণ করতেন আর আজ যখন লেখাপড়া শেষে চাকরি মিলছে না, পথে পথে বেকার হয়ে ঘুরতে হচ্ছে, এমন সময় সেই আদরের বাবা-মাও আমার দিকে অনীহার চোখে তাকান। এমনকি কখনো কখনো আবার বাবা-মা বলেই ফেলেন, সারাজীবন কি বাড়িতেই বসে থাকবি? কোনো চাকরি-বাকরি করতে হবে না?

যখন বাবা-মায়ের মতো আপনজনের মুখে এমন কথা শুনি, তখন নিজেকে বড় অসহায় লাগে। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার এই অসহায় হওয়ার কারণ কী?

আপনার এই অসহায় হওয়ার কারণ আপনি নিজেই! আপনি একটু পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখেন। আপনার পেছনের সেই মূল্যবান সময়গুলো কীভাবে আপনি অতিবাহিত করেছেন। আপনি আপনার পেছনে ফেলে আসা সময়গুলো যেভাবে অতিবাহিত করেছেন, আজ তারই ফল ভোগ করছেন। কেননা আপনি যদি আমগাছ রোপণ করেন, তাহলে আমগাছ থেকে আপনি আম-ই পাবেন। সেখানে কাঁঠালের আশা করা যায় না।

সুতরাং আপনি শিক্ষাজীবন যেভাবে অবহেলায় কাটিয়ে দিয়েছেন, আজ তারই ফল ভোগ করছেন। আপনি সারাজীবন থেকে এসেছেন নিম গাছতলায় আর আজ বলছেন জীবন এত তিতা কেন? নিম গাছতলায় থাকলে তো জীবন তিতা হবেই।

আপনার ছাত্রজীবনে শিক্ষকগণ যখন ক্লাসে পাঠদান করতেন, তখন আপনি অন্যমনস্ক হয়ে শিক্ষকের পাঠদানকে অবহেলা করে সহপাঠীদের সাথে গল্পে মেতে থাকতেন।

ঠিক সেই সময় আপনার ক্লাসে এমন অনেক ছাত্র ছিল, যারা মনোযোগ সহকারে শিক্ষকের পাঠদান শ্রবণ করত এবং শিক্ষকের বিশেষ বিশেষ উক্তিকে নোট করে রাখত।

দিন গড়িয়ে বিকেল হলে আপনি আপনার বাবার টাকায় কতই না বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে ঘোরাঘুরি করতেন। অবহেলায় সময় কাটিয়ে দিতেন। আড্ডা, গান, গল্পে বিভোর হয়ে অবলীলায় দিনের পর দিন চলে যেত, সেদিকে আপনার কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিল না। ঠিক সেই সময় আপনার ক্লাসের এমন অনেক ছাত্র ছিল, যারা ক্লাসের পড়া তৈরি করার জন্য বিভিন্ন লাইব্রেরিতে ঘোরাঘুরি করত।

আপনার যে প্রাণাধিক প্রিয় বান্ধবীদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতেন, আজ আপনি বেকার হওয়ায়, আপনার কাছে অর্থকড়ি না থাকায় তারা আজ আপনার পাশে নেই। তারা আজ কোনো প্রতিষ্ঠিত ছেলের হাত ধরে সংসার করছে। আর আপনি মনে বিষণ্নতা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আর দুঃখ প্রকাশ করছেন, হায়! আমার ভাগ্য এত খারাপ কেন?

অবাক করা বিষয় হলো কি জানেন! আপনার ভাগ্য আপনাকে এখানে নিয়ে আসেনি বরং আপনি আপনার ভাগ্যকে এখানে নিয়ে এসেছেন। কারণ আপনার যে সহপাঠীরা শিক্ষকগণের পাঠদান মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছিল এবং ক্লাসের পর ফাঁকা সময়গুলো বিভিন্ন উপকারী বিষয়গুলো নোট করতে ব্যস্ত ছিল, তাদের দিকে তাকিয়ে দেখুন, তারা আজ আপনার মতো বেকার নয়; বরং তারা আজ প্রতিষ্ঠিত। তাদেরকে আজ চাকরি খুঁজতে হচ্ছে না। চাকরি তাদেরকে আজ খুঁজছে তাদের যোগ্যতার জন্য।

তারাও আজ রেস্টুরেন্টে খাবার খাচ্ছে। শুধু এতটুকু পার্থক্য, আপনি রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়েছিলেন আপনার বাবার টাকায়। আর আপনার সেই পরিশ্রমী সহপাঠী রেস্টুরেন্টে খাবার খাচ্ছে তার নিজের উপার্জিত টাকায়।

আপনি যদি আপনার ছাত্রজীবনের মূল্যবান সময়গুলোকে হেলায় নষ্ট না করে লেখাপড়ায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন, তাহলে হয়তো আজ আপনার জীবন এত বিস্বাদময় হতো না, এত তিক্ত হতো না। আপনিও আজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন। আপনিও আজ প্রফুল্লতা অনুভব করতে পারতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى ‘কারণ মানুষ তা-ই পায়, যা সে চেষ্টা করে’ (আন-নাজম, ৫৩/৩৯)

তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত হবে, ছাত্রজীবনকে সর্বাপেক্ষা প্রাধান্য দেওয়া। আমরা যদি ছাত্রজীবনের সময়গুলোকে প্রাধান্য দিতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের জীবন থেকে তিক্ততা কাটিয়ে নিতে পারব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের প্রত্যেককে ছাত্রজীবনকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের জীবন থেকে তিক্ততা কাটিয়ে উঠার তাওফীক্ব দান করেন- আমীন!

মো. আরিফুল ইসলাম

মা‘হাদ ২য় বর্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী।

Magazine