কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ষড়যন্ত্র: লাভ ট্র্যাপ

post title will place here

ভূমিকা:

কেবল ইসলাম মহান আল্লাহর মনোনীত জীবনব্যবস্থার নাম, যার মাধ্যমে আলোকিত হয়েছে এ বসুন্ধরা। ইসলামের সম্মোহনী শক্তিতে বিধর্মীরা ইসলাম গ্রহণ করে জন্ম দিয়েছে নজরকাড়া অনবদ্য ইতিহাস। কত তারকা, লেখক, গবেষক, কত মানুষ নিজের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ঠিক তেমনি কিছু ঘটনা ২০০৯ সালে ভারতে ঘটে। যে ঘটনাগুলোর সারমর্ম হলো ইসলামের ইলাহী সম্মোহনী শক্তির ফলে অনেক বিধর্মী রমণীরা স্বেচ্ছায় ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিল। ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ভারতীয় মুসলিম সমাজের প্রতি অভিযোগ করে বলে যে, হিন্দু মেয়েদেরকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে, ভারতের হিন্দুরা সে ধর্মের অনুসারী শূন্যের কোটায় নেমে যাবে এমন আশঙ্কায় স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাকে লাভ ট্র্যাপ বা প্রেমের ফাঁদ বলে আখ্যায়িত করে। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে লাভ ট্র্যাপ সম্পর্কে আমরা জানব।

লাভ ট্র্যাপেসংজ্ঞা:

ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ধারণা, মুসলিম ছেলে কিংবা মেয়েরা হিন্দুদের সাথে প্রেম করার পর ইসলামে ধর্মান্তরিত করাকে জিহাদ মনে করে। তারা এটাকে লাভ জিহাদ হিসেবে অভিহিত করে। তাই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বিপরীত লাভ ট্র্যাপ শুরু করে। আমাদের নিকট বিপরীত লাভ ট্র্যাপের সংজ্ঞা দাঁড়ায়, হিন্দু ধর্মের কোনো ব্যক্তি কর্তৃক মুসলিম মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে গর্ভে সন্তান দিয়ে পালিয়ে যাওয়া, মুসলিম মেয়েকে ভারতে পাচার করা কিংবা হত্যা করা কিংবা ধর্মান্তরিত করার নাম লাভ ট্র্যাপ। সংজ্ঞাটি বাস্তবতার নিকষকালো আঁধার থেকে নেওয়া।

বিবিসির তথ্যমতে, লাভ জিহাদ একটি বিতর্কিত তত্ত্ব। যে তত্ত্ব মতে মুসলিম পুরুষরা কৌশলে হিন্দু নারীদের ফাঁদে ফেলে ও তাদের ধর্মান্তরিত করে। এর পক্ষে উপযুক্ত তেমন কোনো প্রমাণ না থাকলেও বছরের পর বছর এই মতবাদ ভারতে প্রচলিত হয়ে আসছে। এটাকে বলা হয় ‘ভাগওয়া লাভ জিহাদ’। ‘ভাগওয়া’ অর্থ গেরুয়া রং, যেটি হিন্দুত্ববাদের প্রতীক বলে মনে করা হয়। সমালোচকদের মতে হিন্দুত্ববাদ এমন একটা আদর্শ, যা চরম ডানপন্থি হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রচার করে। সেদিক থেকে ‘ভাগওয়া’ হিন্দুত্ববাদের সমার্থক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।[1]

ইতিহাস:

২০০৯ সালে সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে লাভ ট্র্যাপ। তৎকালীন কেরালা ও কর্ণাটক অঞ্চলে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ঘটে। কেরালা ক্যাথলিক বিশপস কাউন্সিলের তথ্যমতে, কেরালার ৪,৫০০ মেয়েকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ‘হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি’ দাবি করে, কেবল কর্ণাটকেই ৩০,০০০ হিন্দু মেয়েকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ২০০৯ সালের শেষের দিকে পুলিশের মহাপরিচালক জ্যাকব পুন্নুস রিপোর্ট করেছেন, যদিও তদন্ত অব্যাহত থাকবে, নারীদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য ও প্রলুব্ধ করার জন্য ‘প্রেমের জাল’ ব্যবহার করে কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তি দ্বারা কোনো সংগঠিত প্রচেষ্টার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, অনেক হিন্দু মেয়ে তাদের নিজের ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে। ২০১০ সালের শুরুর দিকে, রাজ্য সরকার কর্ণাটক হাইকোর্টে রিপোর্ট করে, যদিও অনেক হিন্দু যুবতি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল; তবে তাদের তা করতে রাজি করার কোনো সংগঠিত প্রচেষ্টা ছিল না।

লাভ ট্র্যাপের কথিত ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সহযোগীরা বলেছে, তারা মুসলিম মহিলাদের সাথে হিন্দু পুরুষদের বিয়ে করার জন্য একটি বিপরীত লাভ ট্র্যাপ প্রচার শুরু করেছে। প্রচারের সাথে সম্পর্কিত মামলায় উত্তরপ্রদেশের (ইউপি) বিভিন্ন অংশ থেকে রিপোর্ট করা হয়েছে যে, সেখানে মুসলিম মহিলাদের ধর্ষণ এবং অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতরা এসব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে এবং তারা তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্টদের দ্বারা পুরস্কৃত হচ্ছে। ২০১৪ থেকে অক্টোবর ২০১৬-এর মধ্যে, কুশিনগর জেলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের নিখোঁজ বা অপহরণ করার ৩৮৯টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় উচ্চ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাসহ এলাকায় একই ধরনের প্রবণতা পাওয়া গেছে।[2]

ইসলামের দৃষ্টিতে লাভ ট্র্যাপ:

ইসলাম বিশ্ববাসীর জন্য শান্তিস্বরূপ। তাই তো আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরকে বলেছেন,قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ ‘মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত’ (আন-নূর, ২৪/৩০)

আল্লাহ তাআলা অন্যদিকে নারীদেরকে বলেছেন,يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও বিশ্বাসীদের রমণীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমণ্ডলের) উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আল-আহযাব, ৩৩/৫৯)

এমন কোনো মুসলিম পাওয়া দুষ্কর, যে জানে না ইসলামে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক হারাম (আল-বাক্বারা, ২/২২১)। যে ইসলাম নিজ ধর্মের মেয়ের সাথে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক হারাম বলে, সেই ইসলাম কীভাবে হিন্দু মেয়েকে বিবাহ করা সমর্থন করবে?

এককথায় আমরা বলতে পারি, ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো মুসলিমের হিন্দু মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয নয়। 

হিন্দু ধর্মের দৃষ্টিতে লাভ ট্র্যাপ:

ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো লাভ ট্র্যাপ-এর নামে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ায়। যার সারমর্ম দাঁড়ায়, মুসলিম পুরুষরা হিন্দু মেয়েদের সাথে প্রেম বা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করছে। অথচ আদৌ এর কোনো সত্যতা নেই।

মোদ্দাকথা, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ধর্মের আবেগকে পুঁজি বানিয়ে হিন্দু যুবসমাজের মগজের নিউরনে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, মুসলিম নারীর গর্ভে আমাদের সন্তান কিংবা তাদেরকে দাসী করাটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই ভারত, বাংলাদেশসহ যুক্তরাজ্যে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা অহরহ ঘটছে। যে ঘটনা সংঘটিত হওয়াকে হিন্দু সমাজ ধর্মীয় আন্দোলন ভাবে। যে ধর্মীয় আন্দোলনের নাম দিয়েছে লাভ ট্র্যাপ। 

লাভ ট্র্যাপের কবলে বাংলাদেশ:

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক এর এক ভিডিও[3] সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যে ভিডিওতে দেখা যায়, গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক-সহ তার ভক্ত সকলে দাঁড়িয়ে অখণ্ড ভারত তথা বাংলাদেশকে ভারতের রাজ্য করার জন্য প্রতিজ্ঞা করছে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি গ্রুপের সন্ধান মিলে। প্রথম গ্রুপটির নাম ‘বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট’ (BHJ) যে গ্রুপটির কভার ফটোতে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক-এর ছবিসহ নেতৃস্থানীয় হিন্দু ব্যক্তিদের ছবি ছিল। দ্বিতীয় গ্রুপটির নাম ‘লাভ জিহাদ প্রতিরোধ কমিটি’। 

এই দুটি গ্রুপে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রশ্নগুলোর উত্তর একজন হিন্দুই দিতে পারবে। কেননা এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে উত্তরদাতাকে জানতে হবে, হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থের নাম, তন্ত্র-মন্ত্রসহ ধর্মীয় বিষয়াদি। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর আপনার মেসেঞ্জারে চাওয়া হবে ভোটার আইডি কার্ডসহ আপনার ছবি। ছবি আর ভোটার আইডি কার্ড সত্যায়িত হওয়ার পর এই দুই গ্রুপের এডমিন প্যানেল থেকে কেউ ভিডিও কল দিয়ে দেখবে আপনার ঘরে হিন্দুদের কোনো মূর্তি আছে কি-না! তারপর আপনাকে এ দুটি গ্রুপে সংযুক্ত করা হবে।

এত আয়োজন করে দুটি গ্রুপ কেন হিন্দুদের শুধু সংযুক্ত করছে? কেননা হিন্দুদের মুসলিম নারীদের প্রেমের ফাঁদ কিংবা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বানানো গোপন ভিডিও এ গ্রুপগুলোতে ছাড়া হতো। উগ্র হিন্দু যুবসমাজ মনে করে মুসলিম নারীদের গর্ভে সন্তান দেওয়া কিংবা শারীরিক সম্পর্ক করে পালিয়ে যাওয়ার নাম লাভ ট্র্যাপ। তাই হিন্দু যুবসমাজকে লাভ ট্র্যাপের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য এ দুটি গ্রুপ খোলা হয়।

উদ্বুদ্ধকরণের দিক দিয়ে হিন্দু শিবসেনারা তাদের এই গ্রুপগুলোতে বিভিন্ন যৌন মিলনের ভিডিওসহ নানা অশালীন ভিডিও পোস্ট দেয়। যে ভিডিও দেখে অন্য হিন্দুরা উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে লাভ ট্র্যাপের সূচনালগ্ন কখন তা সঠিক জানা নেই। তবে এই দুটি গ্রুপের কথা বেরিয়ে আসে জনপ্রিয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ভিডিওতে।[4]

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সাংবাদিক ইলিয়াসের অনুসন্ধানী ভিডিও প্রকাশের ২ মাস পর হিন্দুরা অনলাইনে বেশি গ্রুপ তৈরি করে। তবে আগের মতো ভোটার আইডি কার্ড, ভিডিও কলে আসা এ বিষয়গুলো বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে যে গ্রুপগুলো এখনো সচল, সে গ্রুপগুলোর একটি হলো ‘লাভ জিহাদ প্রতিরোধ কমিটি’।[5]

বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল জায়গায় হিন্দুরা প্রেমের ফাঁদ পেতে পরিচয় গোপন করে মুসলিম মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করছে কিংবা ভারতে পাচার করছে। হিন্দু যুবসমাজকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বলছে, মুসলিমদের গর্ভে আমাদের সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে এটা সনাতনী লাভ ট্র্যাপ৷ 

লাভ ট্র্যাপের বিরুদ্ধে কাজ করা একটি টিম এর ভাষ্যমতে, প্রতি ৩ দিনে ১ জন করে বাংলাদেশী নারী লাভ ট্র্যাপের কবলে পড়ছে। হিন্দুত্ববাদীরা ইসলাম গ্রহণ করার নামে নারীর আবেগ নিয়ে ভালোবাসার নামে মিলিত হয়। গোপনে ভিডিও করে। তারপর ব্ল্যাকমেইল করে ভারতে পাচার কিংবা নিজের মনমতো দাসী বানানোই হিন্দুত্ববাদীদের কাজ। 

লাভ ট্র্যাপ নিয়ে সবাই চুপ কেন?

লাভ ট্র্যাপ নিয়ে চুপ থাকার অন্যতম কারণ সমাজ। যে সমাজে নারীর ক্ষতি হওয়াকে লজ্জাজনক ভাবা হয়, সে সমাজে কীভাবে একটি মেয়ে কিংবা তার পরিবার মুখ ফুটে সত্য কথা বলবে? সমাজের প্রতিটি সদস্য যেখানে ডিভোর্সি মেয়েদের প্রতি বৈষম্যের দৃষ্টিতে তাকায়, সেখানে যারা এমন হিন্দুদের দ্বারা লাঞ্ছিত তারা কীভাবে বলবে, আমি লাঞ্ছিত!

শত চেষ্টা করেও কোনো তথ্যের সন্ধান না মিললে এবং অনলাইন এক্টিভিটিজ-সহ বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বাংলাদেশের অফিস যেটা পূর্ণ ভারত নিয়ন্ত্রিত। ভারত নিয়ন্ত্রিত না হলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় কাজ করছে Protect Our Sisters Official নামে একটি গ্রুপ, যারা লাভ ট্র্যাপের বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে কাজ করছে।[6]

এই গ্রুপগুলো যারা পরিচালনা করছেন তাদের দাবি হলো, আমাদের বিভিন্ন পোস্ট ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যান করে দেয়। আমরা আমাদের নিজেদের ফেসবুক আইডি দিয়ে কাজ করাকে জীবনের ঝুঁকি মনে করি। আমরা যে আইডি, পেইজ দিয়ে কাজ করি তা নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। আমাদের পোস্টে কোনো প্রকার রিচ থাকে না অর্থাৎ মানুষের সামনে বেশি যায় না; অথচ আমাদের ফলোয়ার, লাইক যথেষ্ট।

তাও বিশ্বাস হচ্ছে না যে, বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক ভারত নিয়ন্ত্রণ করছে? এটিএন বাংলার প্রতিবাদী সাংবাদিক আলী আসগর ইমনের একটি প্রতিবেদন এটিএন বাংলায় প্রকাশ পায়। যে প্রতিবেদনটির সারমর্ম হলো, সাংবাদিক প্রথমে একটি মেয়ের সাক্ষাৎকার নেয়। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্ত করে বললে বলা যায়, মেয়েটির দাবি সজীব নামে একটি ছেলে তার সাথে দুবছর প্রেমের সম্পর্ক করে। সজীব বিবাহ করার আশা দিয়ে মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে। সাংবাদিক সেই প্রেমিকের কাছে যাওয়ার পর প্রেমিক অশালীন আচরণসহ নানান হুমকিমূলক আচরণ করে৷ এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এ বিষয়টি সত্য। ২৪ ঘণ্টা না যেতেই এটিএন বাংলার সেই প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলা হয়। এ বিষয়ে এটিএন বাংলা থেকে কিছু বলা হয়নি। তবে আমি খুব কষ্ট করে এ ভিডিওটি সংগ্রহ করেছি। 

যমুনা টিভিতে একটি অনুসন্ধানমূলক ভিডিও প্রকাশ হয়। ভিডিওটি ৫ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের। পুরো ভিডিও নয়, আমি এ ভিডিওর শেষ ৩০ সেকেন্ডের কথা উল্লেখ করছি। সাংবাদিকরা ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী উপজেলা মহেশপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যায়। সাংবাদিকরা তথ্য পায়, একটা বাড়িতে বেশ কয়েকজন ধুড়[7] আছে।

যে ধুড়রা ইন্ডিয়া চলে যাবে, সাংবাদিকরা সে বাড়িতে গিয়ে একজনকে প্রশ্ন করে। প্রশ্নের উত্তরে মহিলাটি বলল, ঠিক-বেঠিক বুঝি না; এখন আমরা নিরুপায়, আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

ইন্ডিয়া যেতে টাকা লাগছে কি-না জানতে চাইলে বলা হয়, আমাদের টাকা লাগছে না। সর্বশেষ প্রশ্ন করা হয়, কারা আপনাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে? জড়োসড়ো হয়ে উত্তর আসে, উপর থেকে বলা নিষেধ আছে। পরিচয় বললে আপনারাও বিপদে পড়বেন।

যমুনা টিভির এই ভিডিওটি আমি খোঁজ করেছি। আমার চোখে আর ভিডিওটির দেখা মিলেনি। যমুনা টিভির চ্যানেল থেকে ভিডিওটি ডিলেট করা হয়েছে কি-না আমার জানা নেই। তবে এটিএন বাংলার ভিডিওটি ডিলেট করা হয়েছে।[8]

লাভ ট্র্যাপ নিয়ে চুপ থাকার ব্যাপারে সারকথা হলো, পরিবার থেকে সম্মানের ভয়ে সবাই চুপ থাকে। কিছু মিডিয়া এ বিষয়ে কথা বললে এদেরকে শায়েস্তা করা হচ্ছে। এক কথায়, এমন ঘটনাগুলো বাস্তবে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাই কেউ বিশ্বাস করছে না। এ বিষয়ে সবাই চুপ। আলেম, লেখক, কবি, ইসলামী চিন্তাবিদ সকলে এ বিষয়টি অবগত নন। যার ফলে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না। 

লাভ ট্র্যাপ এর সত্যতা কী?

গত কয়েক বছর ধরে এমন মর্মান্তিক ঘটনাগুলো ঘটছে। সমাজ, মিডিয়া চুপ থাকার ফলে সবার চোখের সামনে ঘটনাগুলো আসছে না। যখন এ বিষয়ে লিখতে বসেছি, তখন ভাবলাম সকলকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। অন্যথা অনেকে আবার প্রশ্ন করবে, লাভ ট্র্যাপের সত্যতা কী? নিচে কিছু ঘটনা পত্রিকার রেফারেন্সসহ উল্লেখ করা হলো—

ঘটনা: ১

২০২৩ সালের ৩০ জুলাই রাজশাহীর পুঠিয়ায় সুব্রত ঘোষ নামে এক যুবক প্রতারণা করে মুসলিম তরুণীকে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। বিয়ের কয়েক দিন না যেতেই তিনি পালিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।[9]

ঘটনা: ২

কালিহাতীতে পরিচয় গোপন করে এক মুসলিম তরুণীকে বিয়ে করে সুভাষ বিশ্বাস নামের এক হিন্দু যুবক। নড়াইলের মূলধারাইল গ্রামের সুশীল বিশ্বাসের ছেলে সুভাষ বিশ্বাস ফেসবুকে প্রেম করে নিজের পরিচয় গোপন করে কালিহাতি উপজেলার সহদেবপুর গ্রামের হুমায়ূন কবিরের কলেজপড়ুয়া মেয়ে হোছনে আরাকে বিয়ে করে।[10]

ঘটনা: ৩

ভোলায় মুসলিম পরিবারের কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রীকে হিন্দু সনাতন ধর্মের ছেলে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে করার খবর পাওয়া গেছে। বিয়ের পর ওই কলেজছাত্রীর বাসায় সাত মাস সংসার করার পর ইতালি যাওয়ার কথা বলে স্ত্রীর বাবার কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় প্রতারক স্বামী।[11]

ঘটনা: ৪

কুমিল্লার দেবিদ্বারে বাসা থেকে তুলে নিয়ে এক মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৬ জানুয়ারি, ২০২২) সাগর ভৌমিক (১৯) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর মা। এরই মধ্যে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এসআই নাজমুল হাসানসহ একদল পুলিশ সদস্য অভিযুক্ত সাগর ভৌমিককে গ্রেফতার করেছে।[12]

ঘটনা: ৫

রাজশাহীতে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে বিয়ে করেছেন চিকিৎসক অর্জুন চন্দ্র চৌধুরি। বিয়ের পর সাত বছর ঘর-সংসার এবং ছয় বছরের কন্যা সন্তান ফেলে আত্মগোপনে যাওয়ার অভিযোগে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। গত রবিবার (১৯ জুলাই, ২০২০) রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে ভুক্তভোগী নারীর মা নগরীর শিরোইল মাস্টারপাড়ার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেহানা বেগম মামলা করেন।[13]

প্রিয় পাঠক! আমার সংগ্রহে থাকা নিউজের একাংশ দিলাম। তথ্যসূত্রে নিউজের লিংক দেওয়া আছে। আপনি চাইলে প্রত্যেকটি নিউজ ব্রাউজ করে দেখতে পারেন।

সচেতনতা:

উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ষড়যন্ত্র লাভ ট্র্যাপ থেকে আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব? সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য নিচে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হলো—

(১) একজন মুসলিম হিসেবে কুরআন ও হাদীছ অনুযায়ী জীবনযাপন করা। কেননা প্রকৃতপক্ষে যারা মুত্তাক্বী, তারা লাভ ট্র্যাপে পড়বে না ইনশা-আল্লাহ। 

(২) নারীর মন অত্যন্ত কোমল। যেকোনো সময় আপনার আদরের বোন কিংবা মেয়ে হিন্দুদের পাতানো ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। তাই আপনার আদরের বোন কিংবা মেয়েকে বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখুন। কারণ এই ডিভাইসের মাধ্যমেই সকল যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

(৩) ধর্ম প্রতিটি মানুষের গভীর বিশ্বাসের জায়গা। সে বিশ্বাসকে নিয়ে হিন্দু যুবকরা ছিনিমিনি খেলছে। যেমন- প্রথমে সে একজন মুসলিম মেয়েকে বলবে, আমি আমার সনাতনী ধর্ম ত্যাগ করব শুধু তোমার জন্য! তখন মুসলিম মেয়েরাও ভাবে, আমার জন্য একটি ছেলে মুসলিম হবে এটা তো ভালো কথা। তখন আবেগের তাড়নায় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরক্ষণে বাস্তবতা হয় ভিন্ন। বিভিন্ন সংবাদে দেখা যায়, ধর্মান্তরিত হয়ে তথা প্রেমিক মুসলিম হওয়ার ভান করে বিয়ে করার পর পালিয়ে যায়। 

(৪) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কারো সাথে পরিচিত না হওয়া ভালো। কেননা হিন্দু ছেলেরা ভুয়া ফেসবুক আইডি দিয়ে মুসলিম পরিচয়ে বন্ধুত্ব করে। তারপর সম্পর্ক গড়ায় ছলচাতুরীর বিয়ে কিংবা অশালীন ভিডিও এর নগ্ন দৃশ্যপট। যে দৃশ্যপটের কারণে ব্ল্যাকমেইল করে ভারতে পাচারও করা হয়।

(৫) হিন্দু ছেলেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টার্গেট করে থাকে। তাই সকলেই সতর্ক থাকুন। আপনার আশেপাশে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অভিভাবক কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করুন।

(৬) সচেতন হওয়ার জন্য অনেক পরামর্শ আপনাকে দেওয়া যাবে। সকল পরামর্শ যেখানে এসে থমকে দাঁড়ায়, সেটা হলো ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা। সকল মা ও বোনেরা ইসলাম অনুযায়ী জীবনযাপন করুন। এটাই লাভ ট্র্যাপ থেকে বেঁচে থাকার বড় পরামর্শ।

উপসংহার:

উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের এই কালো ষড়যন্ত্র তথা লাভ ট্র্যাপ থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র ওষুধ হলো ইসলাম। সকলে ইসলামের ছায়াতলে আসুন।

উল্লেখ্য, বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে উল্লিখিত হিন্দু বলতে সকল হিন্দুদের বুঝানো হয়নি। ভারতশাসিত উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ষড়যন্ত্রমূলক সংগঠনের সদস্যরাই কেবল লাভ ট্র্যাপে জড়িত। আল্লাহ সকল মুসলিম মা-বোনদের রক্ষা করুন- আমীন!

ইবনু মাসউদ

প্রাক্তন শিক্ষার্থী, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


[1]. https://www.bbc.com/bengali/articles/cxx1y3x64g7o.amp

[2]https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%AE_%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A6

[3]. https://youtu.be/T19hnz40Nfg?si=LoC6z2ebuXEbdPsj

[4]. https://youtu.be/5ma3og7yCnk?si=Gjjsl0t2jOThEH2I

[5]. https://facebook.com/groups/784639533015331/

[6]. https://facebook.com/groups/protectoursisters.bd/

[7]. যে নারীদেরকে ভারতে পাচার করা হয়, তাদের ধুড় বলে।

[8]https://drive.google.com/drive/folders/1B24GwjtccUbMl4ee6m5Di0WLygCxxuo9

[9]. https://dailyinqilab.com/bangladesh/news/591404

[10]. https://www.jaijaidinbd.com/wholecountry/232641#google_vignette

[11]. https://dailyamadermatribhumi.com/?p=48847

[12] .https://jamuna.tv/news/313698?fbclid=IwAR0SsYISbsRJeaYM0e_KNX3B5KLFncFpDgiYjUnMVUfCoRjqpdRLI86mfkc

[13]. https://www.ittefaq.com.bd/168642/

Magazine