কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্লাজমা টেকনোলজি উদ্ভাবন করল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

post title will place here

আমাদের চারপাশের বস্তুগুলো সাধারণত কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। প্লাজমাকে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বলা হয়। এ অবস্থায় সাধারণত প্রায় সমানসংখ্যক ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন ও ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন থাকে। দেশের প্রধান কৃষিজ শস্য যেমন ধান, গম, আলু, বেগুন ও পালংশাকে প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগের ফলে বীজের অঙ্কুরোদ্গম, ফসলের উৎপাদন হার বৃদ্ধি, উৎপাদন সময় হ্রাস এবং রোগবালাই দমনে ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে অবস্থিত প্লাজমা সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ল্যাবের গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে। অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ তালুকদার প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগ পদ্ধতির উদ্ভাবক। প্লাজমা টেকনোলজি সম্পর্কে ড. মামুনুর রশিদ তালুকদার বলেন, ‘প্লাজমা পদার্থের চতুর্থ অবস্থা— এ কথা সহজভাবে বোঝার জন্য আমরা এক টুকরো বরফ দিয়ে উদাহরণ দিতে পারি। বরফ পানির কঠিন অবস্থা বা প্রথম অবস্থা। বরফকে যদি আমরা তাপ শক্তি দিতে থাকি তাহলে বরফের অণুগুলোর মধ্যে যে বন্ধন রয়েছে তা দুর্বল হয়ে যাবে এবং একসময় বরফ গলে পানিতে পরিণত হবে। এখানে স্বাভাবিক পানি হলো দ্বিতীয় অবস্থা বা তরল অবস্থা। পানিকে যদি আবার তাপ শক্তি প্রয়োগ করা হয় তাহলে পানি বাষ্পে পরিণত হবে। বাষ্প হলো পানির তৃতীয় অবস্থা বা গ্যাসীয় অবস্থা। এখন যদি আমরা আবার বাষ্পকে আরো উত্তপ্ত করতে থাকি তাহলে বাষ্পে যে নিরপেক্ষ পানির অণু রয়েছে তা আর নিরপেক্ষ অবস্থায় থাকবে না। অণুর ভেতর যে পরমাণু থাকে, সেই পরমাণুর ভেতরে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা যে ইলেকট্রন রয়েছে, তা যথেষ্ট উত্তাপের কারণে কক্ষপথ থেকে বের হয়ে আসবে। ফলে ইলেকট্রন, আয়ন ও নিরপেক্ষ অণু (বা পরমাণু) সংমিশ্রিত একটি গ্যাস তৈরি হবে। অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষে এ আয়নিত গ্যাসকেই প্লাজমা স্টেট বা পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বলা হয়ে থাকে’।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান বীজের অঙ্কুরোদ্গম হার ৭৫ শতাংশ। সেখানে প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগের ফলে ২১ শতাংশ বেড়ে অঙ্কুরোদ্গম হয় ৯৬ শতাংশ। একইভাবে গম ৭৫ থেকে বেড়ে ৯৫ শতাংশ, বেগুন ৫০ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশ এবং পালংশাকের অঙ্কুরোদ্গম হার বাড়ে ৭০ থেকে ৯২ শতাংশ পর্যন্ত। এ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে বীজের পরিমাণ কম লাগে, উৎপাদনও বেশি হয় এবং উৎপাদন সময়ও ১০-২০ শতাংশ কম লাগে।

ড. মামুনুর দাবি করেন, বিশ্বে আমাদের ল্যাবই সর্বপ্রথম, যেখানে কৃষি ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে শস্যের উৎপাদন হার বাড়ানো নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এর আগে একটা বা দুইটা কাজ হয়েছিল, সেটি ল্যাবভিত্তিক ছিল। এ গবেষণায় গ্লাইডিং আর্ক ডিসচার্জ প্লাজমা সোর্সের মাধ্যমে ইলেকট্রোডদ্বয়ের মাঝে হাইভোল্টেজ প্রয়োগ করে প্লাজমা তৈরি করা হয়। এতে গম বীজ ট্রিটমেন্ট করে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ৯৫-১০০ ও উৎপাদন ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ডাইইলেকট্রিক ব্যারিয়ার ডিসচার্জ প্লাজমা সোর্সের মাধ্যমে কৃষিজ পণ্য যেমন মাষকলাই বীজ ট্রিটমেন্ট করে অঙ্কুরোদ্গম ৮৫-৯০, উৎপাদন ৩৭ শতাংশ এবং ক্লোরোফিল, প্রোটিন ও সুগারের মাত্রা বৃদ্ধিতে সফলভাবে কাজ করেছে। গ্লো ডিসচার্জ প্লাজমা সোর্সের মাধ্যমে কৃষিজ ফসল যেমন ধান ট্রিটমেন্ট করে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ৯৫-১০০, ফসলের বিকাশ ও উৎপাদন হার ১৭ শতাংশ বৃদ্ধিতে সফলভাবে থেকে।

Magazine