কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থে গরু ও প্রাণীর মাংস খাওয়ার বিধান

ইসলামে পশু-পাখির অধিকার : 

শিরোনামটি অনেককে অবাক করবে। অনেকের ঠোঁট প্রসারিত হয়ে মুখে একটা মুচকি হাসি খেলে যাবে। হুহ! যে ধর্মে কুরবানী নামের ‘পশুবলি উৎসব’ আছে, সে ধর্মে আবার পশু অধিকার! আমাদের সমাজে এমন লোকের মোটেও অভাব নেই। কুরবানীর কারণে অনেকেই মনে করেন, ইসলাম একটা হিংস্র ধর্ম। অথচ সত্যটা একেবারেই উল্টো। ইসলাম পশু-পাখিদের যে অধিকার চৌদ্দশ’ বছর আগে দিয়েছে, সেগুলোর জন্য মাত্র কিছু বছর থেকে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইসলামে জীবজন্তুদের অধিকার জানার আগে আমাদের একটা কথা জেনে নেওয়া উচিত। আল্লাহ পশু-পাখি এবং পৃথিবীর সবকিছু অর্থাৎ গাছ, পানি, আকাশ, সূর্য শুধু মানুষদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ (আল-বাক্বারা, ২/২৯)

ইসলামে বৈধ পশু-পাখি খাওয়া জায়েয। ইসলাম এমন অযৌক্তিক কথা বলে না যে, সকলে নিরামিষাশী হও অথবা প্রাণ খেয়ো না। এটা একেবারেই অবৈজ্ঞানিক ও যুক্তিহীন কথা। সকলে নিরামিষাশী হলে পৃথিবী টিকেই থাকত না। তাছাড়া উদ্ভিদেরও তো প্রাণ আছে, তাহলে মানুষ খাবে কী?

ইসলাম পশু-পাখি খাওয়ার অনুমতিও দিয়েছে আবার সেই সাথে কিছু সাবধানবাণীও দিয়েছে। ইসলাম পশু-পাখির ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। অকারণে তাদের মেরা ফেলা, খাওয়ার জন্য ছাড়া হত্যা করা, তাদের উপর বেশি বোঝা চাপানো, নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য তাদের কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ সেই ব্যক্তির উপর, যে (অকারণে) পশুর অঙ্গহানি ঘটায়’।[1] অর্থাৎ শুধু মজা করার জন্য কোনো পশুর অঙ্গহানি করা যাবে না। তাকে কোনোভাবেই অকারণে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেনে একটি সংগঠন প্রাণীদের অধিকার বিষয়ে সোচ্চার হয়। ধীরে ধীরে তাদের চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশে দেশে। বলা যায়, তখন থেকেই সভ্য দুনিয়া পশু-পাখির প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শনে মনোযোগী হয়েছে। পরে আরও কিছু সংগঠন প্রাণিজগতের অধিকার আন্দোলনে যোগ দেয়। তবে তাদের কার্যক্রম ছিল সচেতনতামূলক।

এর জন্য কারও ওপর আইনকানুন ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। অথচ আমরা পবিত্র কুরআন ও হাদীছে দেখতে পাই, প্রকৃতি ও প্রাণিজগৎ নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা অত্যন্ত সুবিন্যস্ত। ১৪০০ বছর পূর্বে পশু-পাখির অধিকার রক্ষায় ইসলাম নির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। প্রাণীদের অধিকার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি শারঈ (ইসলামী) বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

পশু-পাখি মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত। আল্লাহ তাআলা এগুলোকে মানুষের করায়ত্ত করেছেন। এরা অবশ্যই করুণার পাত্র। ইসলাম ধর্ম মতে, পশু-পাখির সঙ্গে যথাসম্ভব দয়াশীল আচরণ করতে হবে। এদের সঙ্গে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না।

প্রাণিজগৎকে পৃথক জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়ে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে আর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেক জাতি’ (আল-আনআম, ৬/৩৮)

নোট : পবিত্র কুরআনে বিক্ষিপ্তভাবে অসংখ্য আয়াতে প্রাণিজগতের প্রসঙ্গ এসেছে। এর বাইরেও পৃথকভাবে বিভিন্ন প্রাণীর নামে অনেকগুলো সূরার নামকরণ করা হয়েছে। যেমন ২ নং সূরা আল-বাক্বারা (গাভি), ৬ নং সূরা আল-আনআম (উট, গরু, বকরি), ১৬ নং সূরা আন-নাহল (মৌমাছি), ২৭ নং সূরা আন-নামল (পিপীলিকা), ২৯ নং সূরা আল-আনকাবূত (মাকড়সা), ১০৫ নং সূরা আল-ফীল (হাতি) ইত্যাদি। এসব নামকরণ থেকে প্রাণিজগতের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। পশু-পাখির প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি খাবারদাবার ও প্রয়োজনে ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম এগুলোকে প্রকৃতি ও পৃথিবীর সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

কুরআনের বক্তব্য দেখুন, ‘প্রাণিকুল সৃষ্টির (অন্যতম) কারণ হলো, এগুলোতে তোমরা আরোহণ করে থাকো আর এগুলো সৌন্দর্যের প্রতীক’ (আন-নাহল, ১৬/৮)। ইসলাম ধর্ম মতে, পশু-পাখির প্রতি নম্রতা প্রদর্শন ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত। পশু-পাখিকে কষ্ট দেওয়া গুনাহের কাজ।

প্রাণিজগতের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি :

একটি বিড়ালের বাচ্চাকে অনর্থক কষ্ট দেওয়ার কারণে জাহান্নাম যাওয়ার সতর্ক বাণী। এমন শিক্ষা পৃথিবীর আর কোনো মানবতাবাদী দিয়েছেন, প্রমাণ পেশ করুন।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ دَخَلَتِ امْرَأَةٌ النَّارَ فِي هِرَّةٍ رَبَطَتْهَا فَلَمْ تُطْعِمْهَا وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ قَالَ وَحَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ عَنْ سَعِيدٍ المَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ.

ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘এক নারী একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে যাবে, সে তাকে বেঁধে রেখেছিল। সে তাকে খাবারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে যমীনের পোকামাকড় খেতে পারত। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু সূত্রেও নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ হাদীছ বর্ণিত আছে।[2]

একটি কুকুরকে পানি খাওয়ানোর কারণে জান্নাতের সুসংবাদ, এমন শিক্ষা পৃথিবীর আর কনো মানবতাবাদী দিয়েছেন, প্রমাণ পেশ করুন। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে,بَيْنَمَا كَلْبٌ يُطِيفُ بِرَكِيَّةٍ كَادَ يَقْتُلُهُ العَطَشُ إِذْ رَأَتْهُ بَغِيٌّ مِنْ بَغَايَا بَنِي إِسْرَائِيلَ فَنَزَعَتْ مُوقَهَا فَسَقَتْهُ فَغُفِرَ لَهَا بِهِ ‘একবার একটি কুকুর এক কূপের চতুর্দিকে ঘুরছিল এবং অত্যন্ত পিপাসার কারণে সে মৃত্যুর কাছে পৌঁছেছিল। তখন বানী ইসরাঈলের ব্যভিচারিণীদের একজন কুকুরটির অবস্থা লক্ষ্য করল এবং তার পায়ের মোজা দিয়ে পানি সংগ্রহ করে কুকুরটিকে পান করালো। এ কাজের বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো’।[3] ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জীবজন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে? তিনি বললেন, نَعَمْ فِي كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ ‘হ্যাঁ, প্রত্যেক দয়ালু অন্তরের অধিকারীদের জন্যে প্রতিদান আছে’।[4]

পশু-পাখির যেহেতু বোধশক্তি নেই, ভালো-মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা নেই, তাই পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষ বা সম্পদের কোনো ক্ষতি হলে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। তবে এগুলোর সঙ্গে মালিক বা রাখাল থাকলে জরিমানা দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘চতুষ্পদ জন্তুর অনিষ্ট ক্ষমাযোগ্য’।[5] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা জবাই করবে, সর্বোত্তম পন্থায় করবে। জবাইয়ের অস্ত্র ভালোভাবে ধার দিয়ে নেবে আর পশুটিকে স্বাভাবিকভাবে প্রাণ বের হওয়ার সুযোগ দেবে’।[6]

নোট : এর ফলে ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেছেন, পশুদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এক পশুর সামনে অন্য পশু জবাই করা যাবে না। পরিপূর্ণ নিস্তেজ হওয়ার আগে ছুরিকাঘাত কিংবা চামড়া সরানো মাকরূহে তাহরীমী।

ইসলামে কোনো জীবন্ত পশু-পাখি আগুনে পোড়ানো নিষিদ্ধ : আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সফরসঙ্গী ছিলাম। তিনি তাঁর প্রয়োজনে অন্যত্র গেলেন। আমরা দু’টি বাচ্চাসহ একটি পাখি দেখতে পেয়ে বাচ্চা দুটোকে ধরে নিলাম। মা পাখিটা সাথে সাথে আসলো এবং পাখা ঝাঁপটিয়ে বাচ্চার জন্য অস্থিরতা প্রকাশ করতে লাগল। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে বললেন,مَنْ فَجَعَ هَذِهِ بِوَلَدِهَا رُدُّوا وَلَدَهَا إِلَيْهَا وَرَأَى قَرْيَةَ نَمْلٍ قَدْ حَرَّقْنَاهَا فَقَالَ مَنْ حَرَّقَ هَذِهِ قُلْنَا نَحْنُ قَالَ إِنَّهُ لَا يَنْبَغِي أَنْ يُعَذِّبَ بِالنَّارِ إِلَّا رَبُّ النَّارِ ‘কে এর বাচ্চা নিয়ে এসে একে অস্থিরতায় ফেলেছে? বাচ্চাগুলো এদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দাও। তিনি আমাদের পুড়িয়ে দেওয়া একটা পিঁপড়ার ঢিবি দেখতে পেয়ে বললেন, কে এগুলো পুড়িয়েছে?’ আমরা বললাম, আমরা। তিনি বললেন, ‘আগুনের রব ব্যতীত আগুন দিয়ে কিছুকে শাস্তি দেওয়ার কারও অধিকার নেই’।[7]

পশু-পাখি জীবিত থাকা অবস্থায় তার কোনো অঙ্গ কর্তন করা যাবে না : আবূ ওয়াক্বিদ আল-লায়ছী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসলেন। এখানকার জনগণ জীবিত উটের কুঁজ ও মেষের লেজের গোড়ার গোশতপিণ্ডের অংশ কেটে খেত। তিনি বলেন,مَا قُطِعَ مِنَ البَهِيمَةِ وَهِيَ حَيَّةٌ فَهِيَ مَيْتَةٌ ‘জীবিত পশুর শরীরের কোনো অংশ কেটে আলাদা করা হলে তা মৃত হিসাবেই গণ্য’।[8] সাঈদ ইবনু জুবায়ের আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা একটি মুরগী বেঁধে সেটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করছিল। তারা ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমাকে দেখে মুরগীটি ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বললেন, مَنْ فَعَلَ هَذَا إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ مَنْ فَعَلَ هَذَا ‘কে এ কাজ করল? যে এমন কাজ করে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লা‘নত করেছেন’।[9]

এছাড়াও বলা হয়েছে, একটা পশুর সামনে অন্য পশুকে যবেহ না করতে, মা পাখি থেকে তার শিশুকে আলাদা না করতে, পশু-পাখিকে খাবার না দিয়ে বেঁধে না রাখতে ইত্যাদি। এমনকি পশু-পাখিদের প্রতি দয়াপ্রদর্শনে আছে নেকী। একদা লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! জীবজন্তুর প্রতি দয়াপ্রদর্শনেও কি আমাদের ছওয়াব আছে? তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক সজীব প্রাণবিশিষ্ট জীবের (প্রতি দয়াপ্রদর্শনে) ছওয়াব বিদ্যমান’।[10]

হিন্দুদের অবতারণা :

‘গোমাংস’ শব্দটি শুনলেই আজকাল অধিকাংশ হিন্দুরা আঁতকে উঠেন। গোমাংস তাদের কাছে নিষিদ্ধ এক বস্তু। তাই গোমাংস খাওয়ার অপরাধে ভারতে চলেছে হত্যা, নির্যাতন। গরু নিয়ে ভারতের রাজনীতি এখন সরগরম। গো-রক্ষার জন্যে গঠিত হয়েছে নানান দল। ভাগ্যচক্রে পশু গরু এখন হয়ে উঠেছেন গো-মাতা!

কিন্তু ইতিহাস বলে হিন্দুরা আগে গোমাংস খেত। তাহলে কেন তারা গোমাংস খাওয়া বন্ধ করল? কীভাবে হিন্দুদের গোমাংসের জোগান দেওয়া আদিম গরু আজকের গোমাতা হয়ে উঠল? এ সবই বিস্ময়কর রহস্যে আবৃত। সেই রহস্য ভেদ করা দুরূহ, দুঃসাধ্য। তবুও সেই রহস্যের যবনিকা সরানোর অদম্য ইচ্ছাতেই এই লেখাটি লিখছি।

অন্যান্য পশুর পাশাপাশি গোহত্যা ও গোভক্ষণও বৈদিক যুগে বহুল প্রচলিত ছিল। যদিও বৈদিক মানুষদের কাছে গরু নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী বলে বিবেচিত হতো। গরু অর্থে ‘গো’ শব্দটি ঋগবেদের পারিবারিক মণ্ডলে ১৭৬ বার এসেছে[11] এবং গবাদি পশু সম্পর্কিত শব্দসমূহ মোটামুটি ৭০০ বার এসেছে।[12] বৈদিক যুগে একজন ধনী লোককে গোমত বলা হতো।[13] গোত্রের প্রধানকে বলা হতো গোপ বা গোপতি। গরুর জন্য অনেক যুদ্ধও সংঘটিত হতো। তাই গভিষ্টি,[14] গব্যু,[15] গবেষণ,[16] আভেস্তা[17]-এর মত যুদ্ধবাচক শব্দগুলো গবাদি পশু হতে এসেছে। কন্যাকে বলা হত দুহিতা (যে দুধ দোয়ায়)। এমনকি অনেক দেবতার উৎপত্তিও গরু থেকে দেখানো হয়েছে, তাদের গোজাত বলা হতো।[18] হিন্দু ধর্মগ্রন্থের অনেক শাস্ত্রে গোমাংসের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রমাণগুলো দেওয়ার আগে হিন্দু ধর্মগ্রন্থের সাথে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন।

হিন্দুধর্মীয় গ্রন্থের পরিচিতি :

হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্রকে প্রধানত ৪টি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা— শ্রুতিশাস্ত্র, স্মৃতিশাস্ত্র, পুরাণ ও ঐতিহাসিক ধর্মগ্রন্থ। নিচে এসব হিন্দুধর্মীয় গ্রন্থসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হলো-

(ক)শ্রুতিশাস্ত্র : শ্রুতিশাস্ত্রের মূল অর্থ হলো সাধন বা ধ্যানযোগে পরমেশ্বরের বাণী শ্রবণ করে গুরুশিষ্য পরম্পরায় যা ধরে রেখেছিলেন তার থেকে সৃষ্ট গ্রন্থসমূহ। এর মূল গ্রন্থসমূহ হলো— বেদ, উপনিষদ, গীতা, শ্রী শ্রী চণ্ডী ইত্যাদি।

বেদ ধাতুগত অর্থের দিক থেকে বেদ হলো জ্ঞান বা বিদ্যা। বিদ্যা দুই প্রকার। যথা— পরাবিদ্যা বা পরম ব্রহ্ম বিষয়ক জ্ঞান এবং অপরা বিদ্যা বা লৌকিক জ্ঞান। বেদের সৃষ্টিকর্তা কোনো একজন পুরুষ নন। ঋষিদের ধ্যান উপলুব্ধ জ্ঞানেই বেদের সৃষ্টি, তাই বেদ অপৌরুষেয়। পণ্ডিতদের অনেক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পণ্ডিত প্রবর তিলক ও জ্যাকবির মতে, অন্তত খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের মধ্যে বেদ রচিত হয়েছিল। মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদকে ৪ ভাগে ভাগ করেন। যথা— ঋক, সাম, যজু ও অর্থব। ঋক অর্থ মন্ত্র। তাই ঋকবেদে মন্ত্রের মাধ্যমেই দেবতাদের স্তুতি করা হয়েছে। ঋকবেদে মোট ১০টি মণ্ডল, ১০২৮টি সূক্ত এবং ১০৫৫২টি ঋক বা মন্ত্র রয়েছে। সাম অর্থ সঙ্গীত। তাই সামবেদে উল্লিখিত মন্ত্রগুলো যজ্ঞের সময় সুর করে গাওয়া হতো। সামবেদে মন্ত্র সংখ্যা ১৮১০টি। ক্রমানুযায়ী সামবেদের পরেই যজুর্বেদের অবস্থান। যজ ধাতুর অর্থ যোজন করা। তাই যজুর্বেদ অর্থে যজ্ঞ সম্বন্ধীয় বেদ বুঝায়। যজুর্বেদ দুই ভাগে বিভক্ত। যথা— শুক্লযজুর্বেদ ও কৃষ্ণযজুর্বেদ। শুক্লযজুর্বেদে ৪০টি অধ্যায়, ৩০৩টি অনুবাক ও ১৯১৫টি কণ্ডিকা বা মন্ত্র রয়েছে। কৃষ্ণযজুবেদের তৈত্তিরীয় শাখাতে মোট ৭টি কাণ্ড, ৪৪টি প্রশ্ন, ৬৪৪টি অনুবাদ ও ১৯১৫টি কণ্ডিকা বা মন্ত্র রয়েছে। সবশেষে অথর্ববেদে ভোজবিদ্যা, ব্যাধি নিরাময়, পুত্রেষ্টিক্রিয়া, অনাবৃষ্টি নিবারণ, শত্রুবধ, উচাটন ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। অথর্ববেদের শৌনিক শাখায় মোট ৫৯৭৭টি মন্ত্র সংকলিত হয়েছে।

ব্রাহ্মণ : বৈদিক সাহিত্যে ব্রাহ্মণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যে গ্রন্থে পুরোহিতগণের নেতৃত্বে যজ্ঞ ও তার বিধিবিধান আলোচিত হয়, সে গ্রন্থই ব্রাহ্মণ নামে খ্যাত। বেদশাস্ত্র সঠিকভাবে পাঠ করার জন্য ৬টি বেদাঙ্গ রয়েছ। যথা— শিক্ষা (পাণিনি), কল্প (বিভিন্ন ঋষি সম্প্রদায়), ব্যাকরণ (পাণিনি) নিরুক্ত (যাস্ক), ছন্দ (পিঙ্গলাচার্য), জ্যোতিস্ক (গর্গ)।

মূল ৪টি বেদ ছাড়াও ৪টি উপবেদ আছে। যেমন— আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গন্ধর্বেদ, অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি।

বেদেরদুটিশাখা : একটি আরণ্যক ও অপরটি উপনিষদ। অরণ্যে বসে যা রচিত তাই আরণ্যক। উল্লেখযোগ্য আরণ্যকগুলো হলো— ঐতরেয়, কৌষীতকি, শতপথ ব্রাহ্মণ, ছান্দোগ্য ইত্যাদি। উপনিষদ হলো গুরুর নিকট হতে প্রাপ্ত জ্ঞান। আচার্য শঙ্করের মতে ১০টি প্রধান উপনিষদ আছে, যার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো ব্রহ্মবিদ্যা অর্জন। ১০টি উপনিষদ হলো—বৃহদারণ্যক, ছান্দোগ্য, তৈত্তিরীয়, ঐতরেয়, ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মুণ্ডক ও মাণ্ডূক্য। উপনিষদের পাঁচটি মূলতত্ত্ব হলো—সর্বত্রই ব্রহ্ম বিরাজিত, বহুত্বের মধ্যে ব্রহ্মের একত্ব, ব্রহ্ম অন্তরস্থিত হয়েও বিশ্বনিয়ন্তা, ব্রহ্ম রসস্বরূপ ও ব্রহ্ম আনন্দস্বরূপ।

গীতা : মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের শুরুতে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যে কালজয়ী তত্ত্বজ্ঞান ও উপদেশ দিয়েছিলেন, তার সংকলনই শ্রীমদভগবত গীতা। গীতায় ১৮টি অধ্যায় ও ৭০০ শ্লোক রয়েছে। এটি একটি নিত্যপাঠ্য গ্রন্থ।

শ্রীশ্রীচণ্ডী : মার্কণ্ডেয় পুরাণের একটি অংশের নাম শ্রী শ্রী চণ্ডী। চণ্ডী শব্দের অর্থ পরম ব্রহ্মমহিষী বা ব্রহ্ম শক্তি। এতে ব্রহ্ম শক্তি দুর্গার স্তুতি রয়েছে। চণ্ডীতে ঈশ্বর মাতৃজ্ঞানে পূজিত হন। চণ্ডীতেও গীতার মত ৭০০ শ্লোক রয়েছে।

(খ) স্মৃতিশাস্ত্র : বিভিন্ন ঋষির স্মৃতি ও বাণী যে গ্রন্থে পাওয়া যায়, তাই স্মৃতিশাস্ত্র। যে কুড়িটি স্মৃতিশাস্ত্রের পরিচয় পাওয়া যায়, তা হলো— মনুসংহিতা, অত্রি, বিষ্ণু, হারিত, যাজ্ঞবাল্ক, পরাশর, ব্যাস, উশনা, অঙ্গিরা, যম, অপস্তম্ভ, সম্বর্ত, কাত্যায়ন, বৃহস্পতি, শঙ্খ, লিখিত, দক্ষ, গৌতম, শততাপ ও বশিষ্ঠ নামক স্মৃতিশান্ত্র।

(গ)পুরাণ : পুরাণ শব্দের অর্থ পুরাতন। পুরাণ বেদের পরবর্তীকালে রচিত হয়েছে। বেদে জ্ঞান ও কর্মকাণ্ডের প্রাধান্য ছিল। পুরাণের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের ভক্তিবাদ ও মূর্তিপূজার সূচনা হয়। পুরাণ অনেক, তবে মহাপুরাণ ১৮টি এবং সেগুলো হলো— ব্রহ্মা, শিব, পদ্ম, বিষ্ণু, ভাগবত, মার্কাণ্ডেয়, অগ্নি, ভবিষ্য, ব্রাহ্মবৈবর্ত, মৎস্য লিঙ্গ, বরাহ, কুর্ম, গরুড়, ব্রহ্মাণ্ড, নারদীয়, স্কন্দ ও বায়ু পুরাণ। ভাগবতে কথিত আছে যে, পুরাণের মধ্যে ভাগবত শ্রেষ্ঠ। ভাগবতে ১২টি স্কন্দ ও ৬২০০০টি শ্লোক রয়েছে। ব্যাসদেব দেবর্ষি নারদকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন এবং শ্রী হরির গুণ ও লীলার যে বর্ণনা করেছিলেন, তাই ভাগবত। ব্রহ্মজ্ঞানী শুকদেব সর্বপ্রথম পিতা ব্যাসদেবের নিকট ভাগবত শোনেন এবং তা রাজা পরীক্ষিতকে শোনান। ভাগবতের মূলতত্ত্ব হলো ভক্তি।

(ঘ)ঐতিহাসিকধর্মগ্রন্থ : মূলত রামায়ণ ও মহাভারতকেই ঐতিহাসিক ধর্মগ্রন্থ বলা হয়ে থাকে। রামের জন্মের ৫০ বছর পূর্বে ঋষি বাল্মীকি কর্তৃক রামায়ণ রচিত হয়। রামায়ণে ৭টি কাণ্ড। যথা— আদি, অযোধ্যা, অরণ্য, কিষ্কিন্ধ্যা, সুন্দরা, লঙ্কা ও উত্তরা। এতে ২৪০০০টি শ্লোক রয়েছে। মহাভারত রচনা করেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস। মহাভারতে কৌরব আর পাণ্ডবদের মধ্যে যুদ্ধ বর্ণিত আছে। যুদ্ধে সত্যধর্ম অবলম্বনকারী পাণ্ডবদের জয় হয়। মহাভারতে ১৮টি পর্ব ও ৮৫০০০টি শ্লোক রয়েছে। পর্বগুলো হলো— ১. আদি ২. সভা ৩. বন ৪. বিরাট ৫. উদ্যোগ ৬. ভীষ্ম ৭. দ্রোণ ৮. কর্ণ ৯. শৈল্য ১০. গদা ১১. সৌপ্তিক ১২. ঋষীক ১৩. স্ত্রী ১৪. শান্তি ১৫. অশ্বমেধ ১৬. আশ্রমিক ১৭. মুষল ও ১৮. স্বর্গারোহণ পর্ব।

এছাড়াও বিভিন্ন কাব্য, মহাকাব্য, পদাবলি, তন্ত্রশাস্ত্র প্রভৃতি গ্রন্থও ধর্মগ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত। হিন্দুধর্মে ষড়দর্শনও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ষড়দর্শন হলো— ১. স্যাংখ্য (কপিল) ২. যোগ (পতঞ্জলি) ৩. ন্যায় (গৌতম) ৪. বৈশেষিক (কণাদ) ৫. পূর্ব মীমাংসা (জৈমিনি) ও ৬. উত্তর মীমাংসা (বেদব্যাস)।

বেদ ৪টি, মন্ত্রসংখ্যা ২০,৪৩৪টি। যথা— ১. ঋগবেদ, মন্ত্রসংখ্যা ১০,৫৮৯টি ২. সামবেদ, মন্ত্রসংখ্যা ১,৮৯৩টি ৩. যজুর্বেদ, মন্ত্রসংখ্যা ১,৯৭৫টি ৪. অথর্ববেদ, মন্ত্রসংখ্যা ৫,৯৭৭টি।

উপবেদ ৪টি। যথা— ১. আয়ুর্বেদ ২. ধনুর্বেদ ৩. গন্ধর্ববেদ ৪. অর্থশাস্ত্র।

বেদাঙ্গ ৬টি। যথা— ১. শিক্ষা- পাণিনী ২. কল্প- বিভিন্ন ঋষি সম্প্রদায় ৩. ব্যাকরণ- পাণিনী ৪. নিরুক্ত- যাস্ক ৫. ছন্দ- পিঙ্গলাচার্য ৬. জ্যোতিষ- গর্ণ।

বেদের উপাঙ্গ ৪টি। যথা— ১. পুরাণ ২. মীমাংসা ৩. ন্যায় ৪. ধর্মশাস্ত্র।

বেদের জ্ঞানকাণ্ড ২টি। যথা— ১. আরণ্যক ২. উপনিষদ।

আরণ্যক ৪টি। যথা— ১. ঐতেরেয় ২. কৌষীতকী ৩. শতপথ ব্রহ্মণ ৪. ছান্দোগ্য।

১০৮টি উপনিষদের মধ্যে প্রধান উপনিষদ ১২টি। যথা ১. বৃহদারণ্যক মন্ত্র ৪৩৫টি, ২. ছান্দোগ মন্ত্র ৬৬৮টি, ৩. তৈত্তিরীয় মন্ত্র ৬৮টি ৪. ঐতরেয় মন্ত্র ৩৩টি ৫. ঈশোপনিষ মন্ত্র ১৮টি ৬. কেন উপনিষদ ৩৫টি ৭. কঠো উপনিষদ ১১৯টি ৮. প্রশ্ন উপনিষদ ৬৭টি ৯. মুণ্ডকোপনিষদ ৬৫টি ১০. মাণ্ডুক্য উপনিষদ ১২টি ১১. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ মন্ত্র ১১৩টি ১২. কৌষীতকী উপনিষদ মন্ত্র ৪৯টি।

ষড়দর্শন ৬টি। যথা— ১. সাংখ্য দর্শন- মহর্ষি কপিল ২. যোগ দর্শন- পাতঞ্জলি ৩. ন্যায় দর্শন- গৌতম ৪. বৈশেষিক দর্শন-কণাদ ৫. পূর্ব মীমাংসা- জৈমিনী ৬. উত্তর মীমাংসা বেদান্ত দর্শন- ব্যাসদেব।

মীমাংসা ২টি। যথা— ১. কর্ম মীমাংসা ২. ব্রহ্ম মীমাংস বা বহ্মসূত্র।

বেদাঙ্গে গৃহ্য সূত্রে : আশ্বলায়ন গৃহ্য সূত্রে, পারস্কর গৃহ্য সূত্রে, বৈখানস গৃহ্য সূত্রে, আপস্তম্ভ গৃহ্য সূত্রে, শঙ্খায়ণ গৃহ্য সূত্রে, গোভিল গৃহ্য সূত্রে, খাদির গৃহ্য সূত্রে, হিরণ্যকেশী গৃহ্য সূত্রে।

স্মৃতি সংহিতা (সমাজ ব্যবস্থাপক শাস্ত্র) ২০টি। যথা— ১. মনু সংহিতা ২. অত্রি সংহিতা ৩. বিষ্ণু সংহিতা ৪. হরিত সংহিতা ৫. যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা ৬. পরাশর সংহিতা ৭. ব্যাস সংহিতা ৮. উশনা সংহিতা ৯. অঙ্গিরা সংহিতা ১০. যম সংহিতা ১১. অপস্তম্ভ সংহিতা ১২ সম্বর্ত সংহিতা ১৩. কাত্যায়ন সংহিতা ১৪. বৃহস্পতি সংহিতা ১৫. শঙ্খ সংহিতা ১৬. লিখিত সংহিতা ১৭. দক্ষ সংহিতা ১৮. গৌতম সংহিতা ১৯ তাতপ সংহিতা ২০. বশিষ্ট সংহিতা।

পুরাণ ২টি। যথা— ১. মহাপুরাণ ২. উপপুরাণ।

মহাপুরাণ ১৮টি। যথা— ১. ব্রহ্ম পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১০,০০০টি ২. শিব পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ২৪,০০০টি ৩. পদ্ম পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ৫৫,০০০টি ৪. বিষ্ণু পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ২৩,০০০টি ৫. ভাগবত পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১৮,০০০টি ৬. মার্কণ্ডেয় পুনাণ, মন্ত্রসংখ্যা ৯,০০০টি ৭. অগ্নি পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ৫,৪০০টি ৮. ভবিষ্যত পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১৪,৫০০টি ৯. ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১৮,০০০টি ১০. মৎস পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১৪,০০০টি ১১. লিঙ্গ পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১১,০০০টি ১২. বরাহ পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ২৪,০০০টি ১৩. কুর্ম্ম পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১৭,০০০টি ১৪.গরুড় পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১৯,০০০টি ১৫. ব্রহ্মা পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১২,০০০টি ১৬. নারদীয় পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ২৫,০০০টি ১৭. স্কন্ধ পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ৮১,১০১টি ১৮. বামন পুরাণ, মন্ত্রসংখ্যা ১০,০০০।

উপপুরাণের বর্ণিত তালিকাটি পাওয়া যায় : আদি পুরাণ, আদিত্য পুরাণ, বৃহন্নারদীয় পুরাণ, নারদীয় পুরাণ, নন্দীশ্বর পুরাণ, বৃহন্নন্দীশ্বর পুরাণ, সাম্ব পুরাণ, ক্রিয়াযোগসার, কালিকা পুরাণ, ধর্ম পুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ, শিবধর্ম পুরাণ, বিষ্ণুধর্ম পুরাণ, বামন পুরাণ, বরুণ পুরাণ, নরসিংহ পুরাণ, ভার্গব পুরাণ, বৃহদ্ধর্ম পুরাণ।

মহাপুরাণগুলোর মতো অধিকাংশ উপপুরাণও উপকরণগত দিক থেকে সাম্প্রদায়িক চরিত্রের। উপপুরাণগুলোকে সম্প্রদায়ভেদে বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য ও অসাম্প্রদায়িক— এই কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়।

বৈষ্ণব উপপুরাণ সম্পাদনা : বৈষ্ণব উপপুরাণগুলোর মধ্যে প্রধান— বিষ্ণুধর্ম পুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ, নরসিংহ পুরাণ, বৃহন্নারদীয় পুরাণ ও ক্রিয়াযোগসার।

শাক্ত উপপুরাণ সম্পাদনা : শাক্ত উপপুরাণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— দেবী পুরাণ, কালিকা পুরাণ, মহাভাগবত পুরাণ, দেবীভাগবত পুরাণ, ভগবতী পুরাণ, চণ্ডী পুরাণ (বা চণ্ডিকা পুরাণ) ও সতী পুরাণ।

শৈব উপপুরাণ সম্পাদনা : শৈব উপপুরাণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— শিব পুরাণ, সৌর পুরাণ, শিবধর্ম পুরাণ, শিবধর্মোত্তর পুরাণ, শিবরহস্য পুরাণ, একাম্র পুরাণ, পরাশর পুরাণ, বশিষ্ঠলৈঙ্গ পুরাণ ও বিখ্যাদ পুরাণ।

শিবধর্ম পুরাণে শুধু ধর্মীয় ক্রিয়াকাণ্ডের উল্লেখ আছে। এটি একটি ধর্মশাস্ত্র হিসাবে উল্লিখিত হয়েছে। সৌর উপপুরাণ সম্পাদনা। সাম্ব পুরাণ হলো একমাত্র সৌর উপপুরাণ। গাণপত্য উপপুরাণ সম্পাদনা। মুদগল পুরাণ ও গণেশ পুরাণ হলো দুটি গাণপত্য উপপুরাণ। অসাম্প্রদায়িক পুরাণ সম্পাদনা। ভবিষ্যোত্তর পুরাণ, কপিল পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ কোনো বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত নয়।

ইতিহাস : রামায়ণ, মহাভারত, দেবী ভগবত (শক্ত সম্প্রদয়), শ্রীমদ্ভাগবদ (বৈষ্ণব সম্প্রদায়), চৈতন্য চরিতামৃত, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা, মন্ত্রসংখ্যা ৭০০টি, শ্রীশ্রী চণ্ডী, মন্ত্রসংখ্যা ৭০০টি।

(চলবে)

মুর্শিদাবাদ, ভারত।


[1]. সুনানে নাসাঈ, হা/৪৪৪২।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৩১৮, ২৩৬৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২১১০; সুনানে ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫৬; জামে‘ মা‘মার ইবনু রশীদ, হা/২০৫৪৯; সুনানে দারেমী, হা/২৮৫৬; মুসনাদে বাজ্জার, হা/৮৪৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৯৪; মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হা/৫৯৩৫, ৫৯৪২, ৬০৪৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৬২১; মু‘জামুল আওসাত্ব লিত তাবরানী, হা/৫৩১; মুসনাদে সামেইন লিত তাবরানী, হা/৩২৮১; শারহুস সুননা বাগাভী, ১৪/৩৮২; শুআবুল ঈমান লিল বায়হাক্কী, ২/৩৯৩।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬৭; ছহীহ মুসলিম; হা/২২৪৫।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০০৯, ১৭৩ (আধুনিক প্রকাশনী- ছহীহ বুখারী, হা/৫৫৭৫; ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ছহীহ বুখারী, হা/৫৪৭১)।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৯১২।

[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৫৫।

[7]. সুনানে আবূ দাঊদ, হা/২৬৭৫, সনদ ছহীহ।

[8]. সুনানে তিরমিযী, হা/১৪৮০; সুনানে ইবনু মাজাহ, হা/৩২১৬; গায়াতুল মারাম, হা/৪১; ছহীহ আবূ দাঊদ, হা/২৫৪৬, সনদ ছহীহ।

[9]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৫৮।

[10]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৬৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২২৪৪।

[11]. R.S. Sharma, Material Culture and Social Formations in Ancient India, Macmillan, Delhi, 1983, p. 24.

[12]Srinivasan, Concept of Cows in the Rigveda, Motilal BanarsiDass, Delhi, 1979, p, 1.

[13]. ঋগবেদ (২/৪১/৭) (৬/৪৫/১৬) (৭/২৭/৫) (৭/২৭/৫) (৭/৭৭/৫) (৭/৯৪/৯) (৯/৬১/৩)।

[14]. ঋগবেদ (৩/৪৭/৪) (৫/৬৩/৫) (৬/৩১/৩) (৬/৪৭/২০) (৬/৫৯/৭) (৮/২৪/২) (৯/৬৭/২)।

[15]. ঋগবেদ (৮/৫৩/৮) (৯/২৭/১৫)।

[16]. ঋগবেদ (৭/২৩/৩) (৮/১৭/১৫)।

[17]. ঋগবেদ (৫/২০/১১)।

[18]. ঋগবেদ (৬/৫০/১১) (৭/৩৫/১৪) (১০/৫৩/৫)।

Magazine