কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস

post title will place here

 কোনো জাতিকে যদি বলা হয় তোমরা বড় হ‌ও, তোমরা জাগো, তাতে তেমন ফলপ্রসূ হবে বলে মনে হয় না। জাতির ঘটে যাওয়া, রটে যাওয়া আবার কিছু না ঘটেও রটে যাওয়ার মতো বিষয়াদি স্থান পায় ইতিহাসের পাতায়। সমাজ বিনির্মাণে ইতিহাসের শিক্ষা নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। এজন্য বলা হয়— যার ইতিহাসের জ্ঞান নেই সে প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানী নয়। ইতিহাস মানুষের চেতনার বাতিঘরে আলোর মশাল জ্বালায়। বিশ্বাসের ভিতকে পাহাড়সম দৃঢ় করে। শত বাধা-বিপত্তি ঝড়-ঝঞ্ঝাও ঐ শক্ত বিশ্বাসের গায়ে চুল পরিমাণও আঁচড় দিতে পারে না। সেই বিশ্বাস বন্ধ হয়ে আছে হৃদয়ের গহীনে। হৃদয়ের অন্দর গহীন থেকে পাহাড়সম বিশ্বাসের বন্দরে ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল শিক্ষার কিস্তি ভিড়ানো সময়ের যথার্থ দাবি।

ইতিহাস মানুষকে অমর করে রাখে। সভ্যতার উত্থান-পতনে মানবজাতি হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। কিন্তু ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকে তার অনবদ্য কীর্তি। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় কখন হিংস্র বাঘের মতো হুংকার দিতে হয়, কখন সদ্য প্রসূত বাচ্চার মতো মৃদু আওয়াজ করতে হয়, কখন আলোর মশাল জ্বালাতে হয়, কখন অমানিশার ঘোর আঁধারকে দু’হাত দিয়ে সরাতে হয়‌, আর কখন আলোয় ভরা জোছনা রাতে জেগে থাকতে হয়। ইতিহাস‌ই একমাত্র মানবজাতিকে সভ্য, উন্নত ও অবিস্মরণীয় করে রাখার মতো বড় আয়োজন। বিশেষত আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস‌। ইতিহাস জাতিকে উন্নত চিন্তা, উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। ইতিহাস জাতিকে সৎ, নির্ভীক ও দূরদর্শী করে গড়ে তোলে। ইতিহাস বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরদের মুখোশ উন্মোচন করে জাতিকে অশনি সতর্কবাণীর সংকেত দেয়।

ইতিহাস হতাশা, হীনম্মন্যতা, দুশ্চিন্তাকে দূরীভূত করে চেতনার বাতিঘরে দীপ্ত আলোর মশাল জ্বালায়। ইতিহাস সংকটাপন্ন চরম মুহূর্তে পদযুগলকে পাহাড়সম দৃঢ় রাখার শিক্ষা দেয়। ইতিহাস কণ্টকাকীর্ণ পথের বাধা-বিপত্তির পথ মাড়িয়ে নব উদ্যমে আশার আলো দেখায়। ইতিহাস ভীতু, কাপুরুষ, হতবিহ্বল যারা অন্যায়-অবিচারের কাছে মাথা নত করে অসহনীয় নির্যাতনের জাঁতাকলে ধুঁকে ধুঁকে মরার পথ বেঁছে নেয়, তাদেরকে অদম্য সাহস, শক্তি, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে পিছপা না হ‌ওয়ার মতো জাতি গঠনে দুর্বার চেতনা জাগায়। ইতিহাসের কাণ্ডারীরা সর্বদা বীরের জাতি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে খোদিত হয়। ইতিহাসের কাণ্ডারীরা সর্বদা সতেজ মন, মগজ, প্রফুল্লতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে অগ্ৰসর হয়। জাতি তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। জাতির শিশুরা তাদেরকে মানসপটে হিরোদের কাতারে রাখে। স্বপ্ন দেখে কবে হবে সেই স্বপ্নের হিরোদের মতো। কবে বিজয়ীর ভূমিকা পালন করবে। তাই আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের আজকের আয়োজন।

সুধী পাঠক! নিঃসন্দেহে পৃথিবীর উন্নত ও মহৎ জাতি হলো মুসলিম জাতি। যত জাতির অস্তিত্ব বিদ্যমান, তন্মধ্যে মুসলিমদের ইতিহাস, ঐতিহ্য সর্বাধিক গৌরবোজ্জ্বল। কেবল মুসলিমদের বীরত্বগাঁথা কীতিত্ব স্বর্ণাক্ষরে সংরক্ষিত আছে ইতিহাসের পাতায়। নেই কোনো সন্দেহ, নেই কোনো সংশয়। প্রশান্ত ও দৃঢ় চিত্তে বিশ্বাস করার মতো অবিস্মরণীয় জীবন জাগার ইতিহাস। আশ্রয় নিতে হয় না রূপকথার রাজা-রাণীর কাল্পনিক কাহিনির অংশের। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সর্বদিক থেকে পরিপূর্ণ। জীবন জাগার গল্পে নৈপথ্যে অনবদ্য ভূমিকাই মূলত আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। হিন্দুদের রামায়ণ, মহাভারতের মিথ্যাচার কিংবা ছোট্ট শিশুর ঘুম পাড়ানোর অদ্ভুত রকমের ঘুম পাড়ানির গল্প দেশ থেকে কোনো গল্পের মৃদু আলিঙ্গন‌ও নিষ্প্রয়োজন মনে করে মুসলিম। মুসলিমদের সাহসী বীরের স্বপ্ন দেখানোর জন্য প্রয়োজন নেই শাহনামা ফৌরদৌসির ‘সোহরাব রুস্তম’। প্রয়োজন নেই শ্রেষ্ঠ দাতার গুণার্জনের জন্য ‘হাতেম ত্বাই’-এর মতো অমুসলিমদের দৃষ্টান্ত। মুসলিমদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পাতায় পাতায় হাজারো জনের দৃষ্টান্তে ভরপুর। রয়েছে শ্রেষ্ঠ বীর পাহলোয়ানের ঈমানদ্বীপ্ত জীবন জাগার মন ভুলানো গল্প। রয়েছে শ্রেষ্ঠ দাতার অজস্র জীবন সাজানোর প্রেরণাদায়ক গল্প। এজন্য‌ই তো আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভূবনবিখ্যাত।

প্রত্যেক জাতিই একবার বাঁচে আর একবার মরে। কিন্তু কেবল মুসলিম জাতিই বারবার ভূপৃষ্ঠে জন্মে আর বারবার মৃত্যুবরণ করে অমর কীর্তির স্বাক্ষর রাখে। যা পৃথিবীর ইতিহাস খুব ভালো করে জানে। এই মুসলিমরাই ধুলোর তখতে বসে অর্ধ জাহান শাসন করে গৌরব অর্জন করে পৃথিবীবাসীকে অবাক করে। এই মুসলিমরাই সৈন্য সংখ্যায় খুবই নগণ্য হ‌ওয়া সত্ত্বেও বিজয়ী বেশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ শাসন করে।

মুসলিমদের জ্ঞানের প্রত্যেক শাখা-প্রশাখায় বিচরণে পৃথিবী খুবই ঈর্ষান্বিত হয়। যে মুসলিমরা যখন উজ্জ্বল বাতির আলোয় আলোকিত ছিল ঠিক তখন ইউরোপ-আমেরিকা অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিল। যখন মুসলিমরা শিক্ষা, দীক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি সর্বদিক থেকে উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করে ঠিক তখন পাশ্চাত্য সমাজ ফকীরের মতো জ্ঞান অর্জনের জন্য দু’হাত পেতে থাকে মুসলিমদের দরবারে। যে‌ই মুসলিমরা সর্বক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে পরকালের অজানা গন্তব্যের বাসিন্দা হয়ে পৃথিবীবাসীকে অমূল্য সম্পদ দানে বাধিত করেছে, সেই মুসলিম জাতি আজ আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে গিয়ে পাশ্চাত্যের মেজাজে জীবন সাজাচ্ছে। যেই মুসলিমরা এত কিছু করে দিয়ে গেল অথচ সেই মুসলিমরা তাদের সম্মানিত উত্তরসূরীর নাম ভুলে গিয়ে সভা, সেমিনার, লেখনী ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিউটন, আইনস্টাইন, শেক্সপিয়ার কিংবা আলেকজান্ডার, নেপোলিয়নের নাম সম্মানের সাথে উচ্চারণ করে; দৃষ্টান্ত দিতে উৎসাহবোধ করে। আফসোস! আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এমন‌ই মহৎ যে, বিশ্ব দরবারে সমুন্নত হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ। যা অস্বীকার করা মোটেও সম্ভব নয়। আমাদের ইতিহাসের প্রত্যেকটি বিষয় সুন্দরভাবে সাজানো-গোছানো রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। যা অন্য ধর্মের ইতিহাস এমন সুন্দর সুনিপুণ ও সুচারুরূপে পরিপাটি নেই। কেবল মুসলিমদের ইতিহাসেই এ দৃষ্টান্ত পেশ করে।

যদি আপনার মন জানতে চায়, তাহলে মুহূর্তের মধ্যে তা জানতে পারবেন‌। আর যদি অন্য ধর্মের ইতিহাস জানতে চান, তাহলে দেখবেন কত কাল্পনিক ও শতধা বিচ্ছিন্ন ইতিহাসের জোড়াতালি। যা আপনার সত্যানুসন্ধানী চেতনার দুয়ারকে রুদ্ধ করবে। এজন্য আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মহত্তম শিক্ষা নেওয়া সময়ের যথার্থ দাবি। আমাদের ইতিহাসের ‘মুক্বাদ্দিমা ইবনে খালদুন’-এর কাছে বিশ্ববাসী এখনো চির কৃতজ্ঞ। আছে স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করার মতো সুপার হিরো ও মহাপণ্ডিত। যারা ধর্ম, সমাজ, সাহিত্য, জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসা, রাষ্ট্র ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে। যে সকল অনবদ্য অবদান হতে পাশ্চাত্য সমাজ চিরঋণী এবং দিবারাত্রি সে সকল অবদানে উপকৃত হচ্ছে। আফসোস! শুধু মুসলিমরাই পিছিয়ে আছে। এজন্য প্রয়োজন ইতিহাস পাঠ, বিশেষ করে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস পাঠ করা- জানা, বুঝা সময়ের চাহিদায় যথার্থ দাবি উপলদ্ধি করে সঠিক ভূমিকা পালন করা। তাই মুসলিমদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা, আধুনিক শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসা সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, স্থাপত্য, রাষ্ট্রনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, পররাষ্ট্র নীতি, অর্থনীতি, সমর বিদ্যাসহ জ্ঞানের সব শাখায় পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজকে অবশ্যই জাগতে হবে। সেই উজ্জ্বল বীরত্বগাথা কীর্তির গায়ে পাশ্চাত্য সমাজের মিথ্যার চাঁদোয়ায় ঢাকা সেই কলঙ্কিত চাঁদোয়া অপসারণ করে জাতিকে জানাতে হবে সত্য ইতিহাস। উদ্ভাসিত করতে হবে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বীরত্বগাথা বিজয়ের সোপান। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু মুসলিমদের বিজয়ের নিশান উড়বে। সত্যের আলোয় আলোকিত হবে পৃথিবীর প্রত্যেক পাড়া-গাঁ। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বিশ্ব মানবতাকে নতুন পথের দিশা দিবে। বিজয় হবে মুসলিমদের, বিজয় হবে বিশ্ব মানবতার।

মাযহারুল ইসলাম

অধ্যয়নরত, দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকা।

Magazine