কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

দৃষ্টির হেফাযতে আল্লাহর সন্তুষ্টি মিলে

post title will place here

দৃষ্টিশক্তি আমাদের জীবনে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত একটি বড় নেয়ামত। দৃষ্টিহীন ব্যক্তি মাত্রই অনুভব করতে পারেন দৃষ্টিশক্তির কদর। দুনিয়ার কোনো সৌন্দর্য আলো-বাতাস তারা দেখতে পায় না। আমাদের প্রতিনিয়ত উচিত আল্লাহ প্রদত্ত এই নেয়ামতের কদর করা।

পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ তাআলা দৃষ্টিশক্তির যথাযথ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ ‘(হে নবী!) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে, আল্লাহ তা অবহিত আছেন’ (আন-নূর, ২৪/৩০)। আল্লাহ তাআলা এখানে পুরুষদের নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি; নারীদেরকেও দৃষ্টি নত রাখার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ ‘আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে’ (আন-নূর, ২৪/৩১)

চক্ষুকে বলা হয়ে থাকে মনের আয়না। মানুষ প্রথমে চোখ দিয়ে দেখে তারপর হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে। পরবর্তীতে তা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে কাজে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালায়। চক্ষুর যত্রতত্র দৃষ্টিপাতে মানবহৃদয় অশান্ত অস্থির হয়। এমনও পুরুষ রয়েছে যে একজন বেগানা নারীর প্রতি মাত্র একবার দৃষ্টিনিক্ষেপ করেছে, যার ফলশ্রুতিতেই বছরের পর বছর অন্তরদহন ভোগ করেছে। যেকোনো ধরনের বড় পাপে বান্দার নিমজ্জিত হওয়ার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে দৃষ্টিপাত। পথ-ঘাটে, হাট-বাজারে, বিপণি-বিতানে বেগানা নর-নারীর উপর ভুলক্রমে আমাদের দৃষ্টি নিপতিত হতেই পারে। তখন সাথে সাথে দৃষ্টি অবনমিত করতে হবে। ইচ্ছাকৃত দৃষ্টিকে সেখানে প্রলম্বিত করা যাবে না। এ পরিস্থিতি সম্পর্কে আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুমা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, يَا عَلِيُّ لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ ‘হে আলী! অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি পড়ে গেলে পুনরায় তুমি দৃষ্টি দিয়ো না। কেননা প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য, কিন্তু পুনরায় দৃষ্টিপাত করা তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য নয়’।[1]

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে প্রতিমুহূর্তে আমাদের দৃষ্টিশক্তির খেয়ানত হচ্ছে। টেলিভিশনে পর্দা খুললেই, স্মার্টফোনে ফেসবুকে, ইউটিউবে, ইন্টারনেটে ভেসে উঠছে খোলামেলা বেপর্দা নারীর দৃশ্য। এছাড়াও বর্তমানে ব্যাপকভাবে ইভটিজিং, পরকীয়া, ধর্ষণ বৃদ্ধির কারণও চক্ষুর লাগামহীন ব্যবহার। দৃষ্টিশক্তির সামান্য একটু অপব্যবহারের ফলে বহু বছরের সুখী সংসারে ভাঙন ধরছে। দৃষ্টিশক্তির খেয়ানতের আগুনে পুড়ে সংসার জ্বলেপুড়ে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে।

ইবনুল ক্বাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ লিখেছেন, ‘দৃষ্টিই যৌন লালসার উদ্বোধক। কাজেই এ দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ মূলত যৌনাঙ্গেরই সংরক্ষণ। যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে অবাধ, উন্মুক্ত ও সর্বগামী করে, সে নিজেকে নৈতিক পতন ও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে যত বিপদ ও পদস্খলনেই নিপতিত হয়, দৃষ্টিই তার মূল কারণ। কেননা দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ জাগায়। আকর্ষণ মানুষকে চিন্তা বিভ্রমে নিমজ্জিত করে। আর এ চিন্তাই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে লালসার উত্তেজনা। এ যৌন উত্তেজনা ইচ্ছাশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে। আর ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়ে দৃঢ় সংকল্পে পরিণত হয়। এ দৃঢ় সংকল্প অধিকতর শক্তি অর্জন করে বাস্তবে ঘটনা সংঘটিত করে। বাস্তবে যখন কোনো বাধাই থাকে না, তখন এ বাস্তব অবস্থার সম্মুখীন না হয়ে কারো কোনো উপায় থাকে না’।[2]

দুনিয়ার যাবতীয় নেয়ামত উপভোগ্য হওয়ার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে চক্ষু। আমাদের দুনিয়ার জীবনকে সুখময় ও পরকালের নাজাতকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী চক্ষুকে ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর ওয়াদা, لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন’ (ইবরাহীম, ১৪/৭)। আমরা যদি দৃষ্টিশক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করি, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে তা থেকে দুনিয়া ও আখেরাতে বহুগু ণ উপকৃত হওয়ার তাওফীক্ব দিবেন। কিন্তু যদি এর অপব্যবহার করি, যেকোনো সময়ে আল্লাহ তা ছিনিয়ে নিতে পারেন। 

আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে আল্লাহনিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখব। চক্ষু দিয়ে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ হৃদয় থেকে পর্যবেক্ষণ করে ঈমান বৃদ্ধি করব। আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ত্ব কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হব। দৃষ্টি সংযত করলে ঈমান মযবূত হয়। অন্তরে ঈমানের স্বাদ লাভ হয়। চেহারায় নূর সৃষ্টি হয়। একজন বান্দা ইবাদতের প্রকৃত তৃপ্তি লাভ করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও বান্দা তার যাবতীয় জাগতিক কাজকর্মে পূর্ণরূপে মনোনিবেশ করতে পারে। অনেক সময় যারা যত্রতত্র দৃষ্টিপাত করে, তাদের কাজকর্মে বিপুল পরিমাণ মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটতে দেখা যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে সংযত রাখার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

মেহেদী হাসান সাকিফ

 দত্তপাড়া, টংগী, গাজীপুর।

[1]. তিরমিযী, হা/২৭৭৭, হাসান; মিশকাত, হা/৩১১০।

[2]. আল-জওয়াব আল-কাফী, পৃ. ২০৪।

Magazine