মহান আল্লাহ বড় মেহেরবান, দয়ালু। তিনি শেষ নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর কুরআন নাযিল করেছেন। কুরআনে কারীমের মাধ্যমে তৎকালীন অন্ধকার যুগের মানুষগুলো খুঁজে পেয়েছিল আলোর পথ। আঁধার পরিণত হয় আলোয়। মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনুল কারীম প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,﴿قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ - يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ﴾ ‘অবশ্যই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তার সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তার অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হেদায়েত দেন’ (আল-মায়েদা, ৫/১৫-১৬)।
কুরআন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। কুরআনের শিক্ষায় রয়েছে মানবতার মুক্তি। কিন্তু আমরা কুরআন শিক্ষা থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছি। শেষ নবীর উম্মত ও মুসলিম হিসেবে কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছি না। তাই তো আমাদের জীবনে দেখা দিয়েছে নানাবিধ অশান্তি। জীবনে সাফল্য পেতে হলে, দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ অর্জন লাভ করতে আমাদের প্রতিদিন কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করতে হবে। নিম্নে কুরআন তেলাওয়াতের কিছু সুফল নিয়ে আলোচনা করা হলো।
কুরআন মানবজাতির জন্য হেদায়াত : মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত হবে, তার প্রতিটি বিষয় পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,﴿وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ﴾ ‘আমি তোমার নিকট কিতাবটি নাযিল করেছি। এটি এমন যে, তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটা হেদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ’ (আন-নাহল, ১৬/৮৯)।
কুরআন তেলাওয়াত ঈমান বাড়ায় : কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের ঈমান বাড়ে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ﴾ ‘নিশ্চয় মুমিনরা এইরূপ হয় যে, যখন (তাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভীত হয়ে পড়ে, আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সেই আয়াতসমূহ ঈমানকে আরও বৃদ্ধি করে দেয়, আর তারা নিজেদের তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে’ (আল-আনফাল, ৮/২)।
কুরআন মানুষের অন্তরে প্রশান্তি দেয় : মানবজীবনে অর্থ বা অন্য কোনো কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি এবং শান্তি কুরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ﴾ ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখো, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়’ (আর-রাদ, ১৩/২৮)।
কুরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে : ক্বিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবূ উমামা আল-বাহিলী রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِهِ ‘তোমরা কুরআন পাঠ করো। কারণ ক্বিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সে শাফাআতকারী হিসেবে আসবে’।[1]
কুরআন সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস : কুরআন যে নির্দেশনা দিয়েছে তা নির্ভুলভাবে প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলার বাণী, ﴿يس - وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ﴾ ‘ইয়াসিন। (শপথ) প্রজ্ঞাময় কুরআনের’ (ইয়াসিন, ৩৬/১-২)।
জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন : প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হলো— জান্নাতে যাওয়া। তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন পড়তে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ إِنِّي مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النُّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ فَيُشَفَّعَانِ ‘ছিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফাআত করবে। ছিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব, তার ব্যাপারে এখন আমার শাফাআত কবুল করো। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে’।[2]
আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা, বুঝা ও তা থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন পরিচালনা করার তাওফীক্ব দান করেন এবং এর মাধ্যমে ইহকালে কল্যাণ ও পরকালে নাজাতের মাধ্যম করে দিন- আমীন!
হাফেয মীযানুর রহমান
ইমাম, মসজিদ আল-আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু, জিজান, সঊদী আরব।
[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৪।
[2]. মুসতাদারাক হাকেম, হা/২০৩৬; শুআবুল ঈমান, হা/১৮৩৯; ছহীহুল জামে‘, হা/৩৮৮২; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৭৩; মিশকাত, হা/১৯৬৩।