আরবী বছরের প্রথম মাস মুহাররম।*আরবরা এ মাসকে ‘ছফরুল আউয়াল’ তথা প্রথম ছফর নামকরণ করে নিজেদের ইচ্ছামতো যুদ্ধ-বিগ্রহসহ বিভিন্ন কাজকে হালাল ও হারাম করত। অবশেষে আল্লাহ তাআলা এ অবস্থাকে নিষিদ্ধ করে এ মাসের ইসলামী নামকরণ করেন ‘শাহরুল্লাহিল মুহাররম’ তথা মুহাররম আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা করেন। এ মাসের ১০ তারিখ আশূরা বলে পরিচিত। নিঃসন্দেহে আশূরার দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার দিন।
আশূরা কী?
আশূরা শব্দটির বিশ্লেষণ নিয়ে ভাষাবিদগণ বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। অধিকাংশের নিকট মুহাররম মাসের দশম তারিখই আশূরার দিন। এটা আরবী শব্দ (عشر) আশারা হতে নির্গত, যার অর্থ হলো দশ। অতএব, মুহাররম মাসের দশম তারিখে ছিয়াম রাখার নামই হলো আশূরার ছিয়াম।[1]
আশূরার ছিয়ামের প্রেক্ষাপট :
মহান আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ এই দিনে ছিয়াম রাখা হয়। কারণ, আল্লাহ পাক এই দিনে তাঁর নবী মূসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর ক্বওমকে ফেরাউন ও তার দলবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। হাদীছে এসেছে—
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ فَرَأَى اليَهُوْدَ تَصُوْمُ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ فَقَالَ مَا هَذَا؟ قَالُوْا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللهُ بَنِىْ إِسْرَائِيْلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوْسٰى قَالَ فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوْسٰى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.
ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এসে ইয়াহূদীদের দেখলেন, তারা আশূরার ছিয়াম পালন করছে। তিনি বললেন, এটা কী? তারা বলল, এটা একটা ভালো দিন, এটা এমন এক দিন, যেদিন আল্লাহ বনূ ইসরাঈলকে তাদের শত্রুদের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। সুতরাং মূসা আলাইহিস সালাম এই দিন ছিয়াম পালন করেছেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের চেয়ে মূসা আলাইহিস সালাম-এর ব্যাপারে অধিক হক্বদার। এরপর তিনি নিজে ছিয়াম পালন করলেন এবং সকলকে ছিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন।[2]
মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এ হাদীছটির বর্ধিত অংশে বলা হয়েছে যে, আশূরা এমন একটি দিন, যে দিনে নূহ আলাইহিস সালাম-এর কিশতী জুদী পর্বতে অবতরণ করে। ফলে তিনি শুকরিয়াস্বরূপ এ দিনটিতে ছিয়াম রাখেন। অতএব, প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী নবী ও উম্মতের মাঝেও আশূরায়ে মুহাররমে ছিয়াম রাখার ইবাদত চালু ছিল।
আশূরার ছিয়ামের হুকুম :
ইসলামের পূর্বযুগ হতেই এ ছিয়ামের প্রচলন রয়েছে। অতঃপর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তা উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। রামাযানের ছিয়াম ফরয হওয়ার পর এটা সকলের ঐকমত্যে সুন্নাত। কিন্তু রামাযানের ছিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে তার হুকুম সম্পর্কে বিদ্বানগণ ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেউ ওয়াজিব বলেছেন, আবার কেউ সুন্নাত বলেছেন। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এ ছিয়াম রেখেছেন এবং ছাহাবীদের রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীছে এসেছে—
عَنْ عَائِشَةَ i قَالَتْ كَانَ يَوْمُ عَاشُوْرَاءَ تَصُوْمُهُ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَكَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُوْمُهُ فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تَرَكَ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ.
আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, কুরায়শরা জাহেলী যুগে আশূরার দিন ছিয়াম পালন করত। জাহেলী যুগে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ দিনে ছিয়াম রাখতেন। তিনি যখন মদীনায় আসেন, তখনো (প্রথমত) তিনি এ ছিয়াম পালন করেছেন এবং তা রাখার হুকুমও দিয়েছেন। কিন্তু যখন রামাযানের ছিয়াম ফরয হয়, তখন তিনি আশূরার ছিয়াম ছেড়ে দেন। অতঃপর যার ইচ্ছা সে তা রাখত আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিত।[3]
আশূরার ছিয়ামের ফযীলত :
আশূরার ছিয়াম বড় ফযীলতপূর্ণ। কেননা হাদীছে এসেছে—
عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ اَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِيْ سُفْيَانَ رضي الله عنهما يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ عَامَ حَجَّ عَلَى الْمِنْبَـرِ يَقُوْلُ يَا أَهْلَ الْمَدِيْنَةِ أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ هَذَا يَوْمُ عَاشُوْرَاءَ وَلَمْ يَكْتُبْ اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامُهُ وَأَنَا صَائِمٌ فَمَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيُفْطِرْ.
মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান রাযিয়াল্লাহু আনহুমা যে বছর হজ্জ করেছিলেন, সে বছর হুমাইদ ইবনে আব্দুর রহমান তাকে আশূরার দিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, হে মদীনাবাসী! তোমাদের আলেমগণ কোথায়? আমি আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, এটি আশূরার দিন। আল্লাহ তোমাদের উপর এ দিন ছিয়াম রাখা ফরয করেননি। তবে আমি ছিয়াম রেখেছি। তাই যার ইচ্ছা, সে তা পালন করুক আর যার ইচ্ছা সে তা পালন না করুক।[4]
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي يَزِيدَ سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما وَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ فَقَالَ مَا عَلِمْتُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَ يَوْمًا يَطْلُبُ فَضْلَهُ عَلَى الأَيَّامِ إِلاَّ هَذَا الْيَوْمَ وَلاَ شَهْرًا إِلاَّ هَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي رَمَضَانَ.
উবায়দুল্লাহ ইবনে আবূ ইয়াযীদ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-কে আশূরার দিনে ছওম পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেন, এ দিন ব্যতীত রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো দিনকে অন্য দিনের তুলনায় উত্তম মনে করে সেদিনে ছওম পালন করেছেন বলে আমার জানা নেই। অনুরূপভাবে রামাযান ব্যতীত রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাসকে অন্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে ছওম পালন করেছেন বলেও আমার জানা নেই।[5]
عَنْ عَائِشَةَ i قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِصِيَامِهِ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ رَمَضَانُ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ كَانَ مَنْ شَاءَ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ.
আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রামাযানের ছিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরার দিনে ছিয়াম পালন করার নির্দেশ দিতেন। যখন রামাযানের ছিয়াম ফরয করা হলো, তখন যার ইচ্ছা সে আশূরার দিনে ছওম পালন করত, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিত।[6]
আশূরার ছিয়ামের ফযীলত সম্পর্কে আরও বর্ণিত হয়েছে—
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ رضي الله عنه قَالَ أَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مِنْ أَسْلَمَ أَنْ أَذِّنْ فِي النَّاسِ أَنَّ مَنْ كَانَ أَكَلَ فَلْيَصُمْ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ وَمَنْ لَمْ يَكُنْ أَكَلَ فَلْيَصُمْ فَإِنَّ الْيَوْمَ يَوْمُ عَاشُوْرَاءَ.
সালামা ইবনুল আকওয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম সম্প্রদায়ের এক লোককে আদেশ করেছেন, সে যেন জনগণের মধ্যে প্রচার করে দেয়, যে ব্যক্তি কিছু খেয়ে ফেলেছে, সে যেন অবশিষ্ট দিন ছিয়াম পালন করে। আর যে (এখনো) কিছু খায়নি, সে যেন ছিয়াম পালন করে। কারণ, আজ হলো আশূরার দিন।[7]
আশূরার ছিয়ামের সংখ্যা :
এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে—
عَنْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما يَقُولُ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশূরার দিন ছিয়াম পালন করেন এবং লোকদেরকে ছিয়াম পালনের নির্দেশ দেন, তখন ছাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইয়াহূদ এবং নাছারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশা-আল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও ছিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু হয়ে যায়।[8]
অতএব, দশম তারিখের আগে একদিন অথবা পরে একদিন যোগ করে দু’দিন ছিয়াম রাখা হলো উত্তম। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا ‘তোমরা আশূরার ছিয়াম রাখো, ইয়াহূদ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধাচরণ করো এবং দশম তারিখের আগে এক দিন অথবা পরে এক দিন মিলিয়ে ছিয়াম রাখো’।[9]
আশূরার ছিয়াম কোন ধরনের পাপের জন্য কাফফারা?
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আশূরার ছিয়াম সকল ছাগীরা গুনাহের কাফফারা। অর্থাৎ এ ছিয়ামের কারণে মহান আল্লাহ কাবীরা নয়, বরং (পূর্ববর্তী এক বছরের) যাবতীয় ছাগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। এরপর তিনি বলেন, আরাফার ছিয়াম দুই বছরের (গুনাহের জন্য) কাফফারা, আশূরার ছিয়াম এক বছরের জন্য কাফফারা, যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। হাদীছে বর্ণিত এসব গুনাহ মাফের অর্থ হচ্ছে, ব্যক্তির আমলনামায় যদি ছাগীরা গুনাহ থেকে থাকে, তাহলে এসব আমল তার গুনাহের কাফফারা হবে অর্থাৎ আল্লাহ তার ছাগীরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর যদি ছাগীরা-কাবীরা কোনো গুনাহই না থাকে, তাহলে এসব আমলের কারণে তাকে ছওয়াব দান করা হবে, তার মর্যাদা উচ্চ করা হবে। আর আমলনামায় যদি শুধু কাবীরা গুনাহ থাকে, ছাগীরা না থাকে, তাহলে আমরা আশা করতে পারি, এসব আমলের কারণে তার কাবীরা গুনাহসমূহ হালকা করা হবে।
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, পবিত্রতা অর্জন, ছালাত, রামাযান, আরাফা ও আশূরার ছিয়াম ইত্যাদি কেবল ছাগীরা গুনাহসমূহের কাফফারা অর্থাৎ এসব আমলের কারণে কেবল ছাগীরা গুনাহ ক্ষমা করা হয়।[10]
আশূরার ছিয়াম কি হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে কেন্দ্র করে?
আশূরা উপলক্ষ্যে যে ছিয়াম পালনের বিধান, সেটি ফেরাউনের কবল থেকে মূসা আলাইহিস সালাম-এর নাজাতের শুকরিয়া হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। এর সাথে হুসাইন ইবনু আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর জন্ম বা মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর জন্ম মদীনায় ৪র্থ হিজরীতে এবং মৃত্যু ইরাকের কূফা নগরীর নিকটবর্তী কারবালায় ৬১ হিজরীতে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর ৫০ বছর পরে। তবে ইসলামী শরীআতে কারবালার ঘটনার সাথে আশূরার ছিয়ামের কোনো সম্পর্ক নেই।
শাহাদাতে হুসাইনের নিয়্যতে ছিয়াম পালন করলে ছওয়াব পাওয়া যাবে না। কারণ, কারবালার ঘটনার ৫০ বছর পূর্বেই ইসলাম পূর্ণতা লাভ করেছে এবং অহীর আগমন বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের দেশে আশূরায়ে মুহাররমকে শোকের মাস হিসেবে পালনের রেওয়াজ রয়েছে। আর এর কারণ হলো হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণের মর্মান্তিক ঘটনা। কারবালার সেই ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক, মর্মান্তিক ও ইসলামের ইতিহাসে জঘন্যতম ঘটনার একটি। এই ঘটনা তথা ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জানা-শোনা, বর্ণনা করা ও শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারবালার ঘটনার স্মরণ করে কোনো কিছু বাড়াবাড়ি করা, শীআদের ন্যায় বুক চাপড়ানো, লাঠি-তীর-বল্লম নিয়ে যুদ্ধের মহড়া দেওয়া, শোকের মাতম করা, হক্ব ও বাতিলের লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করা, হুসাইনের নামে পাউরুটি বানিয়ে বরকতের পিঠা বলে বিক্রয় করা, কালো পোশাক পরিধান বা কালো ব্যাজ ধারণ করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ وَشَقَّ الْجُيُوبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ ‘ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি শোকে নিজ মুখে মারে, কাপড় ছিঁড়ে ও জাহেলী যুগের ন্যায় মাতম করে’।[11]
শিবগঞ্জ, বগুড়া।
[1]. মিরআতুল মাফাতীহ, ৭/৪৫।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/২০০৪।
[3]. ছহীহ বুখারী, হা/২০০২।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/২০০৩।
[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৩২।
[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১২৫।
[7]. ছহীহ বুখারী, হা/২০০৭।
[8]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৩৪।
[9]. বায়হাক্বী, সুনানে কুবরা, হা/৮৪০৬, সনদ ছহীহ।
[10]. আল-ফাতাওয়াল কুবরা, ৫/৩৪৪।
[11]. ছহীহ বুখারী, হা/১২৯৭; ছহীহ মুসিলম, হা/১০৩; মিশকাত, হা/১৭২৫।