কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

যিলহজ্জ মাসের আমল

আল্লাহ তাআলার নিকট যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণ সময়। অতএব, এ ১০ দিন বেশি বেশি করে ভালো আমল করতে হবে। যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনে যেসব নেক আমল করা যেতে পারে—

১. তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করা :

এ দিনসমূহে অন্যান্য আমলের মাঝে যিকিরের এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। যেমন হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ أَيَّامٍ أَعْظَمَ عِنْدَ اللَّهِ وَلاَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الْعَمَلِ فِيهِنَّ مِنْ هَذِهِ الأَيَّامِ الْعَشْرِ فَأَكْثِرُوا فِيهِنَّ مِنَ التَّهْلِيلِ وَالتَّكْبِيرِ وَالتَّحْمِيدِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এ ১০ দিনে (নেক) আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবীর (আল্লাহ আকবার) তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি করে আদায় করো’।[1] 

এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মহত্ত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণার উদ্দেশ্যে তাকবীর, তাহমীদ, তাহলীল ও তাসবীহ পাঠ করা সুন্নাত। এ তাকবীর প্রকাশ্যে ও উচ্চৈঃস্বরে মসজিদ, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, বাজারসহ সর্বস্থানে উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা হবে। কিন্তু মহিলারা নিচুস্বরে পাঠ করবে। আর এ তাকবীরের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত প্রচারিত হবে এবং ঘোষিত হবে তাঁর অনুপম তা‘যীম।

كَانَ ابْنُ عُمَرَ وَاَبُو هُرَيْرَةَ يَخْرُجَانِ اِلَى السُّوْقِ فِىْ اَيَّامِ الْعَشْرِ يُكَبِّرَانِ وَيُكَبِّرُ النَّاسُ بِتَكْبِيْرِهِمَا.

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা ও আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন ও (উচ্চৈঃস্বরে) তাকবীর পাঠ করতেন, লোকজনও তাঁদের অনুসরণ করে তাকবীর পাঠ করতেন।[2] 

যিলহজ্জের প্রথম দশকের দিনগুলোতে পঠনীয় তাকবীর হচ্ছে—

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ‌لَا ‌إِلَهَ ‌إِلَّا ‌اللَّهُ، ‌وَاللَّهُ ‌أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ.

এ ছাড়া অন্যান্যরূপেও তাকবীর পাঠ করার কথা জানা যায়। কিন্তু আমাদের জানা মতে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো সুনির্দিষ্টরূপ তাকবীর ছহীহভাবে বর্ণিত হয়নি। যা কিছু এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে তা সবই ছাহাবীগণের আমল।[3] 

ইমাম ছানআনী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘তাকবীরের বহু ধরন ও রূপ রয়েছে, বহু ইমামও কিছু কিছুকে উত্তম মনে করেছেন। যা থেকে বুঝা যায় যে, এ বিষয়ে প্রশস্ততা আছে। আর আয়াতের সাধারণ বর্ণনা এটাই সমর্থন করে’।[4] 

২. ছিয়াম পালন করা :

যিলহজ্জের প্রথম নয় দিনে ছিয়াম পালন করা মুসলিমের জন্য উত্তম। কারণ, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনগুলোতে নেক আমল করার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর উত্তম সব আমলের মধ্যে ছওম অন্যতম। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এই নয় দিনে ছিয়াম পালন করতেন।

৩. চুল, নখ প্রভৃতি কর্তন না করা :

যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানীদাতা চুল, নখ ইত্যাদি কাটতে পারবে না। উম্মে সালামা রযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَأَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ فَلَا يَمَسَّ مِنْ شَعْرِهِ وَبَشَرِهِ شَيْئًا وَفِي رِوَايَةٍ فَلَا يَأْخُذَنَّ شَعْرًا وَلَا يَقْلِمَنَّ ظُفْرًا وَفِي رِوَايَةٍ مَنْ رَأَى هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ فَلَا يَأْخُذْ مِنْ شَعْرِهِ وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ.

‘তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখলে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক শুরু হয়ে গেলে সে যেন নিজের চুল ও চামড়ার কোনো কিছু না ধরে অর্থাৎ না কাটে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, সে যেন কেশ স্পর্শ না করে ও নখ না কাটে। অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের নব চাঁদ দেখবে ও কুরবানী করার নিয়্যত করবে, সে যেন নিজের চুল ও নিজের নখগুলো কর্তন না করে’।[5]

৪. হজ্জ ও উমরা আদায় করা :

হজ্জ হলো ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ سْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ‘মানুষের মাঝে যাদের সেখানে (মক্কায়) যাবার সামর্থ্য রয়েছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সে ঘরের (কা‘বা) হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য এবং কেউ যদি প্রত্যাখ্যান করে সে জেনে রাখুক নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন’ (আলে ইমরান, ৩/৯৭)

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‌بُنِيَ ‌الْإِسْلَامُ ‌عَلَى ‌خَمْسٍ: ‌شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ الْبَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ‘পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। এ কথার ঘোষণা দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত আদায় করা, (মক্কা মুকাররমায় অবস্থিত কা‘বার) হজ্জ করা, রামাযানে ছিয়াম পালন করা’।[6] নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ حَجَّ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ اُمُّهُ ‘যে ব্যক্তি হজ্জ করেছে, তাতে কোনো অশ্লীল আচরণ করেনি ও কোনো পাপে লিপ্ত হয়নি, সে যেন সে দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে, যে দিন তার মা তাকে প্রসব করেছে’।[7] হাদীছে আরও এসেছে,

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا. وَالْحَجُّ ‌الْمَبْرُورُ ‌لَيْسَ ‌لَهُ جَزَاءٌ إِلَاّ الْجَنَّةُ

আবু হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এক উমরা থেকে অন্য উমরাকে তার মধ্যবর্তী পাপসমূহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আর কলুষমুক্ত (গৃহীত) হজ্জের পুরস্কার হলো জান্নাত’।[8] আর এ হজ্জ যিলহজ্জ মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে আদায় করা যায় না।

৫. আরাফার দিনে ছিয়াম পালন করা :

এ দিনে ছিয়াম পালন করা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবূ ক্বাতাদা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ ‌يُكَفِّرَ ‌السَّنَةَ ‌الَّتِي ‌قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ ‘আমি আরাফার দিনের ছওমের বিনিময় আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে বিগত ও আগত বছরের গুনাহের ক্ষমার আশা করি’।[9]

মনে রাখতে হবে, আরাফার দিনে ছওম তারাই রাখবেন যারা হজ্জ পালনরত নন। যারা হজ্জ পালনে রত, তারা আরাফার দিনে ছওম পালন করবেন না। আরাফার দিনে হজ্জ পালনরত ব্যক্তি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ অনুসরণ করেই সে দিনের ছওম পরিত্যাগ করবেন। যেন তিনি আরাফাতে অবস্থানকালীন সময় বেশি বেশি করে যিকির, দু‘আসহ অন্যান্য আমলে তৎপর থাকতে পারেন।

নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সবচেয়ে উত্তম দু‘আ হলো আরাফার দিনের দু‘আ। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা আমি বলি ও নবীগণ বলেছেন, তা হলো, لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ ‌لَهُ، ‌لَهُ ‌الْمُلْكُ، ‌وَلَهُ ‌الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বূদ নেই। তিনি একক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই আর সকল প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য এবং তিনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান’।[10] 

ইমাম খাত্ত্বাবী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, দু‘আ করার সাথে সাথে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের প্রশংসা ও তাঁর মহত্ত্বের ঘোষণা দেওয়া উচিত’।[11] 

আরাফার দিন গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দিন। আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‌مَا ‌مِنْ ‌يَوْمٍ ‌أَكْثَرَ ‌مِنْ ‌أَنْ ‌يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَإِنَّهُ لَيَدْنُو، ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمُ الْمَلَائِكَةَ، فَيَقُولُ: مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ ‘আরাফার দিন আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাগণের কাছে গর্ব করে বলেন, ‘তোমরা কি বলতে পার— আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কি চায়?’[12]

৬. ঈদের ছালাত আদায় করা :

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ছালাত গুরুত্ব দিয়ে আদায় করেছেন। কোনো ঈদে ছালাত পরিত্যাগ করেননি। বরং একে গুরুত্ব দিয়ে তিনি মহিলাদেরকেও এ ছালাতে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ মর্মে হাদীছে বলা হয়েছে—

عَنْ ‌أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ: «أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِي الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى، ‌الْعَوَاتِقَ ‌وَالْحُيَّضَ وَذَوَاتِ الْخُدُورِ. فَأَمَّا الْحُيَّضُ فَيَعْتَزِلْنَ الصَّلَاةَ وَيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُسْلِمِينَ. قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ! إِحْدَانَا لَا يَكُونُ لَهَا جِلْبَابٌ. قَالَ: لِتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا.

উম্মে আত্বিয়া রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন— আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহাতে ছালাতের জন্য বের করে দেই; পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সবাইকে। ঋতুবতী মহিলারা ছালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে কিন্তু কল্যাণ ও মুসলিমদের দু‘আ প্রত্যক্ষ করতে অংশ নেবে। তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে কারো কারো ওড়না নেই। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সে তার অন্য বোন থেকে ওড়না নিয়ে পরিধান করবে’।[13] 

৭. কুরবানী করা :

এ দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির কুরবানী করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কুরবানী করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় করুন ও কুরবানী করুন’ (আল-কাওছার, ১০৮/২)

.عَنِ ابْنِ عُمَرَ اَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْم النَّحْرِ اَىُّ يَوْمٍ هٰذَا قَالُوْا يَوْمُ النَّحْرِ. قَالَ هٰذَا يَوْمُ الْحَجِّ الْاَ كْبَرِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন জিজ্ঞেস করেন, এটা কোন দিন? ছাহাবীগণ উত্তরে বলেন, এটা ইয়াওমুন নাহার বা কুরবানীর দিন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এটা হলো ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার বা শ্রেষ্ঠ হজ্জের দিন (আবূ দাঊদ, হা/১৯৪৭)। বারা ইবনু আযেব রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,اِنَّ اَوَّلَ مَا نَبْدَاُ فِىْ يَوْمِنَا هَذَا اَنْ نُصَلِّىَ ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ اَصَابَ سُنَّتَنَا وَمَنْ نَحَرَ قَبْلَ الصَّلَاةِ فَاِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ قَدَّمَهُ لِاَهْلِهِ لَيْسَ مِنْ النُّسْكِ فِىْ شَىْءٍ ‘এ দিনটি আমরা শুরু করব ছালাত দিয়ে। এরপর ছালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানী করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করেছে। আর যে এর পূর্বে যবেহ করে, সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করবে। তাতে কুরবানীর কিছু আদায় হলো না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৯৬৫)। 

৮. আইয়ামে তাশরীক্বের দিনে ছিয়াম না রাখা :

ঈদুল আযহার পরবর্তী তিন দিন তথা ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্জ তারিখকে আইয়ামে তাশরীক্বের দিন বলা হয়। এই দিনগুলোতে ছিয়াম রাখা নিষেধ। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي مُرَّةَ مَوْلَى أُمِّ هَانِئٍ أَنَّهُ دَخَلَ مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَلَى أَبِيهِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ فَقَرَّبَ إِلَيْهِمَا طَعَامًا فَقَالَ كُلْ فَقَالَ إِنِّي صَائِمٌ فَقَالَ عَمْرٌو كُلْ فَهَذِهِ الْأَيَّامُ الَّتِي كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنَا بِإِفْطَارِهَا وَيَنْهَانَا عَنْ صِيَامِهَا قَالَ مَالِكٌ وَهِيَ أَيَّامُ التَّشْرِيقِ.

উম্মে হানী রযিয়াল্লাহু আনহা-এর মুক্ত দাস আবূ মুররাহ রহিমাহুল্লাহ সূত্রে বর্ণিত। একদা তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু আমরের সাথে তার পিতা আমর ইবনুল আছ রযিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট যান। তিনি তাদের উভয়ের সামনে খাবার এনে তা খেতে বললেন। আব্দুল্লাহ রযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি ছওমরত আছি। আমর রযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনগুলোতে আমাদেরকে ছওম ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন এবং ছওম রাখতে নিষেধ করেছেন। মালেক রহিমাহুল্লাহ বলেন, তা হলো আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলো (আবূ দাঊদ, হা/২৪১৮, সনদ ছহীহ)। অপর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, وَأَيَّامُ التَّشْرِيقِ عِيدُنَا أَهْلَ الْإِسْلَامِ وَهِيَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ ‘আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলো হচ্ছে আমাদের মুসলিমদের ঈদের দিন, এগুলো পানাহারের দিন’ (আবূ দাঊদ, হা/২৪১৯ সনদ ছহীহ)। 

মহান আল্লাহ আমাদের এ দিনগুলোতে বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

মুহাম্মাদ গিয়াসুদ্দীন

শিবগঞ্জ, বগুড়া।


[1]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৬১৫৪, সনদ ছহীহ।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৬৯।

[3]. ইরওয়াউল গালীল, ৩/১২৫।

[4]. সুবুলুস সালাম, ২/১২৫।

[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৭; নাসাঈ, হা/৪৩৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৪৯; আহমাদ, হা/২৬৪৭৪; ছহীহুল জামে, হা/৫২০।

[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২২।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/ ১৪৪৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৫০।

[8]. ছহীহ বুখারী, হা/ ১৭৭৩।

[9]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩।

[10]. তিরমিযী, হা/২৮৩৭; মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৫০০, সনদ ছহীহ।

[11]. ইমাম খাত্ত্বাবী, শান আদ-দু‘আ, পৃ. ২০৬।

[12]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৩৫৪।

[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৯৩।

Magazine