এদেশের বর্তমান সময়ের এবং সম্ভবত বিগত দুই দশকের সবচেয়ে আলোচিত ও উৎকণ্ঠার ইস্যু হচ্ছে ব্যভিচার, ধর্ষণ, ইভটিজিং, অজাচার, যৌন হয়রানি ইত্যাদি। দিনদিন এ সমস্যা বাড়ছে বৈ কমছে না। বিবেকবান সব মানুষ, শিক্ষিত-মূর্খ, তরুণ-বৃদ্ধ সবাই নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে সমাধান প্রদানেও উচ্চকিত। এক্ষেত্রে ডান-বামের বিভেদও খুব একটা দেখা যায় না, সবাই আমরা এসব ঠেকাতে চিন্তিত। আসলেও তাই হওয়া উচিত। তারপরও কেন কমছে না, বরং দিনদিন বাড়ছে। সম্ভবত এমন কোনো দিন নেই, যেদিন টিভি আর মিডিয়ার সংবাদে এসবের খবর নেই। এর একটাই কারণ, এসব বন্ধের যত আইন আর পদ্ধতিই গৃহীত হচ্ছে, সবই অকার্যকর।
আমি নিজে অ্যাকাডেমিক ফিল্ডে থাকায় বলতে পারি, এ বিষয়টাও সে দৃষ্টিতেই দেখা হলে সম্ভবত সমাধান আসতে পারে। অর্থাৎ মাঠপর্যায়ের গবেষণা আর ইতিহাস ও সামাজিক অবস্থানের বিবেচনা মাথায় নিয়ে যথাসিদ্ধ গবেষণা হয়তো এর একটি সমাধান আনতে পারে। সমাজবিজ্ঞানীরা কেউ এগিয়ে আসলে হয়তো ভালো হতো।
আজকের আলোচনা এ বিষয়েই। কোন পথে সমাধান আসতে পারে। এটা কোনো স্বতঃসিদ্ধ গবেষণা নয়। বরং পর্যবেক্ষণ আর যুক্তির নিরিখে ভবিষ্যতের গবেষকের জন্য দ্বার খোলার মতোই একটা লিখা। আবারও বলি, এটা অ্যাকাডেমিক লিখা নয়, বরং তার আদলে লিখার চেষ্টা।
[ক]
সমস্যা চিহ্নিত করার পর এর সমাধানের সাধারণ কাজ হচ্ছে এ সমস্যার কারণ চিহ্নিত করা। তারপর কারণের উপাদান, প্রভাবক, পরিপ্রেক্ষিত, প্রেক্ষাপট, ব্যাকগ্রাউন্ড সব বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের পথ চিন্তা করা। সে হিসেবে ধরে নেওয়া যায়—
‘সমস্যা > কারণ > প্রেক্ষাপট’ সমীকরণে আমাদের উদ্দিষ্ট ফরমুলা হলো—
প্রথমত, সমস্যা— ধর্ষণ বা নারীর প্রতি যৌনাচার।
দ্বিতীয়ত, কারণ— মানসিকতা।
তৃতীয়ত, উপাদান/প্রভাবক— [অর্থাৎ মানসিকতার কারণ বা পরিপ্রেক্ষিত] মোটাদাগে বলা যায় নৈতিক-সামাজিক অবক্ষয়, অশ্লীলতার প্রসার, মিডিয়া ও সংস্কৃতিতে পাশ্চাত্য আগ্রাসন, যথাযথ আইন ও এর বাস্তবায়নের অভাব, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়, পর্দাবিধানের শিথিলতা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখানে পাঠকদের দ্বিমত থাকতেই পারে। প্রেক্ষাপটকেও কেউ কোনো ঘটনায় কারণ হিসেবে উল্লেখ করতে পারেন; কিংবা এমনও হতে পারে তৃতীয় স্তর নিজেই সরাসরি সমস্যার সাথে জড়িত। তবে সমস্যা যেহেতু মানুষ সম্পর্কিত, সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ না হোক পরোক্ষভাবে হলেও তাদের মানসিকতা, মানবিক দীনতা এসব কার্যকর থাকবেই। তৃতীয় স্তরে আরো অনেক বিষয় আসতে পারে, সবকিছু এখানে উল্লেখ করিনি, শুধু কয়েকটি ছাড়া।
দ্বিতীয় স্তরে মানসিকতাকে উল্লেখ করার কারণ, তৃতীয় স্তরের এসব বিষয় সচরাচর মানুষের মানসিকতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজ করে থাকে। এতদসত্ত্বেও এসব উপাদান সব মানুষকে সমানভাবে প্রভাবিত করতে পারে না। একই সমাজ ও পরিবেশে বাস করেও আমরা নারীর প্রতি যৌনাচারের ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের মানুষ দেখতে পাই—
(ক) সৎ মানসিকতাসম্পন্ন, পরিবেশের উপাদানসমূহ যাকে খারাপ করতে পারেনি।
(খ) দুর্বল মানসিকতাসম্পন্ন, এ প্রকৃতির মানুষ সাধারণত সুযোগসন্ধানী। সুযোগ পেলে খারাপ কাজ করতে পারে, আবার অনুশোচনাও করে।
(গ) খারাপ মানসিকতাসম্পন্ন। এরা নিজেরাই সুযোগ সৃষ্টি করে নেয়।
এ তিন ধরনের মানুষের প্রতিটি শ্রেণিতে আবার মাত্রাগত তারতম্যও বিদ্যমান। এখন সমাজকে সার্বিক বিচারে যৌনাচারের অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্যোগ। যেমন তৃতীয় শ্রেণিকে হয়তো আইন দিয়ে আটকে রাখা যায়, আবার দ্বিতীয় শ্রেণিকে মটিভেশন কিংবা পরিবেশের সুস্থতা দ্বারা প্রথম পর্যায়ে উন্নীত করা যায়। হুট করে কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে, রাতারাতি এ সমস্যার সমাধান আশা করা দুরাশা বৈ কিছুই নয়।
এ লক্ষ্যে প্রথমেই প্রয়োজন সার্বিক ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা (holistic approach)। এমন নয় যে, শুধু কারণ নিয়েই কাজ করলাম আর এর পেছনের প্রভাবক বা উপাদানগুলোকে স্বাধীন ছেড়ে দিলাম। এতে তৃতীয় শ্রেণির মানুষের অবাধ যৌনাচারের সুযোগ থেকেই যায়। কেননা তারা এবং প্রথম শ্রেণিও মানসিকভাবে তুলনামূলক শক্ত অবস্থানে, যা পরিবর্তন করা বেশ দুঃসাধ্য।
আবার এমনও হওয়া উচিত নয় যে, কঠোর আইন করে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করলাম, কিন্তু মনোজাগতিক পরিবর্তনের চেষ্টা করলাম না। এতেও সার্বিক বিচারে কাজ হবে না; কারণ এতে তৃতীয় শ্রেণির মানুষ দ্বিতীয় শ্রেণির মুখোশ পরে নেবে। পাশাপাশি সমাজের নানা প্রভাবকের সুযোগ নিয়ে যৌনাচারের মানসিকতা প্রকাশ করবে।
[খ]
অনেকের ধারণা, আমাদের চিন্তার চাইতেও বেশ বড় একটা অংশের, এ ইস্যুতে আমাদের সমাজকে পুরোপুরি পাশ্চাত্য সমাজের আদলে ঢেলে সাজালে হয়তো সমাধান সম্ভব। অর্থাৎ ফ্রি মিক্সিং, অবাধ যৌনাচারের স্বাধীনতা (যেখানে সম্মতিই চূড়ান্ত)।
সমাজের সবপর্যায়ে, শিশু থেকে বৃদ্ধ, গ্রাম থেকে শহর, অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে রাখলে এ বিষয়টা হয়তো এতটা খারাপ পর্যায়ে যাবে না। কেননা এতে সকলেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে, নারীসঙ্গ লাভের উদগ্র বাসনা খুব একটা কাজ করবে না, ফলে যৌনাচারের ভয়াবহতা কমে আসবে। আবার পাশ্চাত্যের ন্যায় পরস্পরের সম্মতিক্রমে যৌনাচার হলে তাতে অভিযোগ বা হয়রানির পথও বন্ধ হয়ে যাবে।
তাদের এ চিন্তা যদি এ সমস্যা সমাধানের জন্য হয়, তাহলে অন্তত সমাধান চিন্তার জন্য তাদের ধন্যবাদ দেওয়াই যায়। তবে এটা অনেকটা পাগলদের মাঝে পাগল সেজে থাকার মতোই। সমস্যা হলো, পাগলের ভানকারী যে-কোনো সময় তার আসল রূপে ফিরে যেতে পারে।
যাহোক, বহুবিধ কারণে এদেশে, এমনকি সম্ভবত বিশ্বের সবখানেই, এ পন্থা কার্যকর নয়। কারণ—
* এ চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়। ফ্রি মিক্সিং হলেই যে সবাই আকর্ষণ হারিয়ে ফেলবে তা কিন্তু নয়। বরং সম্মতি না পেলে এর চাইতেই বেশি খারাপ অবস্থা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
* এ ধারণায় প্রথম শ্রেণির মানুষকে অস্বীকার করা হচ্ছে। অথচ সমাজের এই শ্রেণির মানুষের কারণে ফ্রি মিক্সিং সর্বজনীনতা পাবে না। গ্রহণীয় আর শালীনতার একটা মাপকাঠি সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করবেই।
* এতে পাশ্চাত্যের আদলে আইন ও এর প্রয়োগকে খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। কিন্তু তাতে দ্বিতীয় প্রকার মানুষের অবস্থান পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। এজন্যই দেখা যায়, পাশ্চাত্যে লোডশেডিং হলে হাজার নারী ধর্ষিত হয়; কেননা সুযোগ সন্ধানীদের তখন আইন আর আটকাতে পারে না।
* সমাজের অন্যান্য প্রভাবকের (অশ্লীলতা, মিডিয়ার আগ্রাসন) ফলে মানুষের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষের আধিক্য দেখা দেয়। এমনকি প্রথম শ্রেণির মানুষও দ্বিতীয় শ্রেণিতে নেমে আসতে পারে।
সর্বোপরি, পাশ্চাত্যের আদলে করতে চাইলেও খোদ পাশ্চাত্যই এ সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। যেখানে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ দুর্বল, ধর্ম নখদন্তহীন, সে সমাজে শুধু মানসিকতাকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে আর আইন করে ধর্ষণ রোধ করা যায় না। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি তাকালে এ দৃশ্যই চোখে পড়ে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের তালিকায় আমাদের স্বপ্নের আমেরিকা, ইংল্যাণ্ড, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া যেমন আছে, তেমনই আছে ভারতও। অথচ বেশ ক’বছর আগেও ভারত ছিল না। কারণ সেখানে ধর্মের একটা প্রভাব কিছুটা হলেও ছিল। মিডিয়ার অনাচার তা সফলতার সাথে দূর করে ভারতকে সেরা দশে ঠাঁই করে দিয়েছে।
এ ধারণার (ফ্রি মিক্সিং) আরো বড় একটা লুপহোল হলো এতে আইনের সহজাত উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো জীবনকে সহজ করা। এক্ষেত্রে জীবন বলতে ব্যক্তি জীবন না, সামষ্টিক।
ইসলামেও যেমন বলা আছে, ক্বিছাছ (হত্যার বিনিময়ে হত্যা) এর মধ্যে জীবন রয়েছে; তা হত্যাকারীর জীবন নয়, সমাজের বাকী জনগণের। উদাহরণস্বরূপ, আইন না থাকলে কি হয় তা একবার ট্র্যাফিক আইন তুলে দিলেও বুঝা যাবে। জীবন কত কঠিন।
যাহোক, অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে কঠোর আইন করলে তা অনেকটা ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে খাবার দেখিয়েও না দেওয়ার মতো হয়ে যায়। পাশ্চাত্যে sexual harassment কিংবা child abuse ইত্যাদি ক্ষেত্রে আইন খুব কঠিন। বিনা সম্মতিতে কিছু করলেই sexual harassment বিপদ, চাকরি, পেনশন, সম্মান সব শেষ।
এখন মানুষকে নানা প্রভাবক (খোলামেলা চলাফেরা, পর্ন সাইটের সহজলভ্যতা, মিডিয়ায় অশ্লীলতার সয়লাব) যখন সারাদিন উত্তেজিত করবে আর আইন তা ঠেকিয়ে রাখবে; তখন তা জীবনকে সহজ করে না; বরং কঠিনই করে। যার ফলাফল সুযোগ পেলেই ঝাপিয়ে পড়া; তা হতে পারে নিজ দেশে, হতে পারে বিদেশে যুদ্ধক্ষেত্রের বন্দীদের নিয়ে। আর নিদেনপক্ষে তালাকের মাধ্যমে।
বাংলাদেশেও এমনই হচ্ছে। প্রভাবকের নিয়ন্ত্রণ না করে নারীবান্ধব আইন করে পুরুষরা যেমন নির্যাতিত হচ্ছে। তেমনই সুযোগের অবাধ ব্যবহারও ধর্ষণ আর নারী নির্যাতনের হার বাড়িয়েই তুলেছে।
সুতরাং এককেন্দ্রিক চিন্তা কোনো সমাধান বয়ে আনতে পারছে না; কোনো দেশেই না, কোনো সময়েও না।
[গ]
এবার আসি এ প্রসঙ্গে ইসলামের বক্তব্য নিয়ে। আমি নিজে ইসলামের ছাত্র, ইসলাম নিয়ে যৎসামান্য পড়াশুনার সুযোগে নির্দ্বিধায় বলা যায়, ইসলামই একমাত্র এ সমস্যায় সর্বাত্মক সমাধান প্রদান করেছে।
ইসলাম শুধু মানসিকতার পরিবর্তনে হাত দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, দিয়েছে প্রভাবক আর উপাদানের ব্যাপারেও নির্দেশনা। পাশাপাশি শুধু নারীদের নয়; পুরুষদের দায়িত্ব কর্তব্যও নির্ধারিত করেছে, তিন শ্রেণির প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কর্মপদ্ধতি বর্ণনা করেছে। ইসলামী আইনে মানসিকতার পরিবর্তনে শুধু মন-মানসের উপরই অনুপ্রেরণা আর উৎসাহ চাপিয়ে দেয়নি; বরং মানসিকতা পরিবর্তনের প্রভাবক উপাদানগুলোর ব্যাপারেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
ইসলামে আইন প্রয়োগ ও শাস্তিপ্রদান অনেকটা প্রতিষেধকের মতো। তার আগে রয়েছে প্রতিরোধ প্রচেষ্টা। এ প্রক্রিয়া অনেকটা এমন—
সমাধান = প্রতিরোধ (ভয়, আশা, প্রভাবকের নিয়ন্ত্রণ) + প্রতিষেধক (ব্যক্তিগত, সামাজিক)।
আখেরাতের শাস্তির ভয়, জান্নাতের নেয়ামতের আশা হচ্ছে মানসিক পরিবর্তনের মূল উপাদান। এতে প্রথম শ্রেণির মানুষ যেমন নিজেকে ধরে রাখতে পারে, তেমনই দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের মানুষ পারে নিজেদের স্তরকে পরবর্তী স্তরে উন্নীত করতে। আর প্রভাবকের নিয়ন্ত্রণ (পর্দাপ্রথা, নর-নারী দুজনেরই, অশ্লীলতার নিষেধাজ্ঞা, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের সংরক্ষণ) তিন প্রকার মানুষেরই মানসিক অবনমন ঠেকিয়া রাখে।
হ্যাঁ, এরপরও যদি কেউ এতে লিপ্ত হয়। তাহলে প্রতিষেধক হিসেবে আইনের প্রয়োগ। প্রথমত, ব্যক্তিগত পর্যায়ে শাস্তি প্রদান। দ্বিতীয়ত, সামাজিকভাবে অপরাধীর অবস্থানকে চিহ্নিত করা। এজন্যই যেনার শাস্তি প্রদানে দুটি শর্তারোপ করা হয়েছে—
১. কোনরূপ দয়া করা যাবে না।
২. তা জনসমক্ষে প্রচারিত হতে হবে।
বলতে পারেন, অবিবাহিতের জন্য মাত্র ১০০ বেত্রাঘাত, এ আর এমন কি? কিন্তু সামাজিকভাবে প্রচার তার জীবনকে কী পরিমাণ দুর্বিষহ করে তুলবে, সে শাস্তির পরিমাপ করা কি সম্ভব? তাছাড়া প্রয়োজনে দেশ থেকে নির্বাসনের শাস্তিও হাদীছে আছে। আর ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে যেমন সসম্মানে নির্দোষ প্রমাণ করার কথা আছে, তেমনই ধর্ষক কর্তৃক তাঁকে মোহর পরিমাণ টাকা প্রদানের শাস্তিও আছে।
আরো মজার ব্যাপার হলো, হুদূদের এই আইনে ক্ষমার কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি তো কোনো ছাড়, কা‘বার ইমামেরও এই ইখতিয়ার নেই যে, এ শাস্তি রহিত করে। শাস্তি হবেই এবং তা জনসমক্ষে।
যদি নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করা হয়, তাহলে সম্ভবত সবাই এই বিধানের উপকারিতা বুঝতে পারবেন। আফসোস হলো, প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্বে যেখানে এত সর্বাত্মক বিধান দেওয়া হলো, সেখানে আমাদের উত্তরাধুনিক গবেষকগণ কারণ, উপাদান সবকিছুকে এক পাল্লায় মেপে যৌন হয়রানি বন্ধের পরিকল্পনা করেন।
এটা তো স্বতঃসিদ্ধ যে, ডুবন্ত জাহাজকে বাঁচাতে হলে এর সব ফুটোই বন্ধ করতে হয়। একটি ফুটোও যদি বাকী থাকে, তাহলেও জাহাজ বাঁচানো সম্ভব না। হয়তো একটু দেরি করানো যাবে, কিন্তু আজ না হয় কাল জাহাজ ডুববেই।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ আজ এ পথেই যাচ্ছে। শুধু আইন আর এর প্রয়োগ নিয়ে মেতে থাকলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। এজন্য চাই সমন্বিত পরিকল্পনা, সর্বাত্মক বিধান। ইসলাম একটি মডেল অনেক আগেই দিয়ে গেছে। আমাদের কর্তৃপক্ষ চাইলে তার সদ্ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি মনে করেন, এটা ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতিতে কাজ হবে, তাও চেষ্টা করে দেখেন। কিন্তু যা-ই করেন, তা যেন সমন্বিত হয়। কেবল এক দুইটা ফুটো বন্ধ করার মতো না হয়। আমাদের প্রিয় দেশে আমরা আর কোনো ধর্ষণ দেখতে চাই না, চাই না কোনো বোনের আহাজারি শুনতে।
অপেক্ষায় থাকলাম আমরা; কেউ যেন (কোনো ধর্ষিতা বা সরকার) বলতে না পারে আমরা তাদের জানাইনি। হয়তো একদিন সকলেই আমরা ইসলামের দিকে ফিরে আসব।
আমাদের গন্তব্য তো হে রব, তোমার পানেই।
সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।