কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

কিতাবুল ইলম: জ্ঞান অর্জনের স্বরূপ (মিন্নাতুল বারী-৪র্থ পর্ব)

post title will place here

باب مَنْ رَفَعَ صَوْتَهُ بِالْعِلْمِ.

পরিচ্ছেদ: ৩/৩. কে জ্ঞানের ক্ষেত্রে আওয়াজকে উঁচু করবেন:

حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ عَارِمُ بْنُ الفَضْلِ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: تَخَلَّفَ عَنَّا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفْرَةٍ سَافَرْنَاهَا فَأَدْرَكَنَا - وَقَدْ أَرْهَقَتْنَا الصَّلاَةُ - وَنَحْنُ نَتَوَضَّأُ، فَجَعَلْنَا نَمْسَحُ عَلَى أَرْجُلِنَا، فَنَادَى بِأَعْلَى صَوْتِهِ: «وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ» مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا.

৬০. ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমাকে আবুন নু‘মান আরেম ইবন ফাযল হাদীছ শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে আবূ আওয়ানা হাদীছ শুনিয়েছেন, তিনি আবূ বিশর থেকে, তিনি ইউসুফ ইবন মাহাক থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবন আমর থেকে, তিনি বলেন, ‘এক সফরে আমাদের সাথে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনে থেকে আসছিলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছালেন। তখন ছালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা ওযূ করছিলাম। আমরা (তাড়াহুড়ো করে) আমাদের পায়ে হাত বুলিয়ে নিচ্ছিলাম (ভালোমতো ধুচ্ছিলাম না)। তখন তিনি উচ্চৈঃস্বরে বললেন, দুঃখ (বা ধ্বংস) হোক! সেই গোড়ালিগুলো জাহান্নামের আগুনে! তিনি এটি দুই বা তিনবার বললেন।

তাখরীজ: ইমাম বুখারী[1] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসাদ্দাদ ইবন মুসারহাদ, মূসা ইবন ইসমাঈল আত-তাবুযাকী ও আবুন নু‘মান আরেম ইবন ফাযল থেকে। ইমাম মুসলিম[2] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ফুযাইল ইবন হুসাইন আল-জাহদারী ও শায়বান ইবন ফাররুখ থেকে। ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল[3] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আফফান ইবন মুসলিম আছ-ছফফার থেকে। ইমাম নাসাঈ[4] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আবুল ওয়ালীদ আত্ব-ত্বয়ালিসীর সূত্রে।

তারা সকলেই (মুসাদ্দাদ, মূসা, আবুন নু‘মান, ফুযাইল, শায়বান, আফফান ও আবুল ওয়ালীদ) হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আবূ আওয়ানা থেকে, তিনি আবূ বিশর থেকে, তিনি ইউসুফ ইবন মাহাক থেকে।

হাদীছটি আরও বর্ণনা করেছেন ইমাম আবূ দাঊদ[5] মুসাদ্দান ইবন মুসারহাদ থেকে, তিনি ইয়াহইয়া আল-কাত্তান থেকে। ইমাম মুসলিম[6] ও ইবনু মাজাহ[7] আবূ বকর ইবনু আবী শায়বা থেকে। আবূ বকর ইবনু আবী শায়বা[8] ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল[9] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ওয়াকী‘ ইবনুল জাররাহ থেকে। ইমাম নাসাঈ[10] ও আহমাদ ইবনু হাম্বাল[11] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আব্দুর রহমান ইবন মাহদী থেকে।

তারা সকলেই (আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী, ওয়াকী‘ ইবনুল জাররাহ ও ইয়াহইয়া আল-কাত্তান) হাদীছটি বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান আছ-ছাওরী থেকে।

ইমাম মুসলিম[12] ও নাসাঈ[13] হাদীছটি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন জারীর ইবন আব্দুল হামীদ আয-যব্বী থেকে। ইমাম মুসলিম[14] ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল[15] হাদীছটি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন শু‘বা ইবনুল হাজ্জাজ আল-ওয়াসিত্বী থেকে।

তারা সকলেই (সুফিয়ান ছাওরী, জারীর ইবন আব্দুল হামীদ আয-যব্বী ও শু‘বা ইবনুল হাজ্জাজ আল-ওয়াসিত্বী) হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মানছূর ইবনুল মু‘তামির থেকে, তিনি হেলাল ইবন ইয়াসাফ থেকে, তিনি মুসাদ্দাদ থেকে।

তারা দুইজন (ইউসুফ ইবন মাহাক ও মুসাদ্দাদ) হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে।

রাবীগণের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

(১) আবুন নু‘মান: আরেম তার উপাধি। এই রাবীর বিস্তারিত বিবরণ ‘কিতাবুল ঈমান-এ চলে গেছে।

(২) আবূ আওয়ানা: ওয়াযযাহ ইবন আব্দুল্লাহ আল-ইয়াশকুরী। তার পরিচয় পূর্বে চলে গেছে।

(৩) আবূ বিশর: জা‘ফর ইবনু ইয়াস। ছহীহ বুখারী ও মুসলিম উভয়েই তার হাদীছ গ্রহণ করেছেন। প্রায় সকল মুহাদ্দিছ তাকে মযবূত বলেছেন। একমাত্র শু‘বা তার মুজাহিদ থেকে বর্ণিত হাদীছগুলোকে দুর্বল বলতেন। কেননা তিনি মুজাহিদ থেকে সরাসরি শুনেননি।[16] আর আমাদের আলোচিত হাদীছটি আবূ বিশর মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেননি। সুতরাং আলোচিত হাদীছ বিশুদ্ধ।

(৪) ইউসুফইবন মাহাক: মাহাক শব্দটি কেউ কেউ মাহিকও পড়েছেন। তথা ‘হা’ বর্ণে যবর ও যের উভয় দিয়েই পড়া যায়। এই শব্দটি গায়রে মুনছারিফ কিনা তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যারা এই শব্দকে গায়রে মুনছারিফ মনে করেন তাদের দলীল হচ্ছে, শব্দটি অনারবী এবং নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন ইবরাহীম। তথা গায়রে মুনছারিফ-এর দুটি সাবাব বা কারণ আ‘জাম এবং আ‘লাম এই শব্দের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ‘মাহাক’ শব্দটি ফার্সী ‘মাহ’ শব্দ থেকে এসেছে। ‘মাহ’ শব্দের অর্থ চাঁদ। শেষের কাফটি তাছগীরের জন্য যুক্ত করা হয়েছে তথা ছোট চাঁদ।

যাদের মতে শব্দটি মুনছারিফ তারা মাহাক শব্দকে ছিফাত হিসেবে গণ্য করেন; নাম হিসেবে নয়। ছোট চাঁদের মতো সুন্দর কিছুর ক্ষেত্রে শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শব্দটি ছিফাত হিসেবে গণ্য হলে আলামিয়্যাতের সাবাব বাতিল হয়ে যায়। ফলত শব্দটি মুনছারিফ হিসেবে গণ্য হয়।[17]

তাদের আরও একটি দলীল হচ্ছে, ‘হা’ বর্ণে যের দিয়ে পড়লে শব্দটি আর অনারব থাকে না বরংمهكت الشَّيْء أمهكه مهكًا পূর্ণ আরবী শব্দের ইসমে ফায়েল-এর ছীগাহ হিসেবে গণ্য হবে। তখন অর্থ হবে দুর্বল করা বা ক্ষয় করা।

ইউসুফ ইবন মাহাককে ইয়াহইয়া ইবন মাঈন ও ইমাম নাসাঈ-সহ অনেকেই মযবূত বলেছেন।[18]

(৫) আব্দুল্লাহইবন আমর ইবন‘আছ: একজন সম্মানিত ছাহাবী। ‘কিতাবুল ঈমান-এ তার বিবরণ চলে গেছে।

(ইনশা-আল্লাহ চলবে)

আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রাযযাক

ফাযেল, দারুল উলূম দেওবান্দ, ভারত; বি. এ (অনার্স), মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
সঊদী আরব; এমএসসি, ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডি, যুক্তরাজ্য।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০, ৯৬, ১৬৩।

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪১।

[3]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০০২, ৬৯২৭, ৬৬৩৯, ৭২২৪, ৭০৯৬, ৭০৩০।

[4]. নাসাঈ, হা/১১১, ১৪২।

[5]. আবূ দাঊদ, হা/৯৭।

[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪১।

[7]. ইবনু মাজাহ, হা/৪৫০।

[8]. ইবনু আবী শায়বা, হা/২৭০।

[9]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০০২, ৬৯২৭, ৬৬৩৯, ৭২২৪, ৭০৯৬, ৭০৩০।

[10]. নাসাঈ, হা/১১১, ১৪২।

[11]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০০২, ৬৯২৭, ৬৬৩৯, ৭২২৪, ৭০৯৬, ৭০৩০।

[12]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪১।

[13]. নাসাঈ, হা/১১১, ১৪২।

[14]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪১।

[15]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০০২, ৬৯২৭, ৬৬৩৯, ৭২২৪, ৭০৯৬, ৭০৩০।

[16]. আল-জারহু ওয়াত তা‘দীল, ২/৪৭৩।

[17]. বিস্তারিত: ক্বাসত্বলানী, ইরশাদুস সারী, ১/২২।

[18]. তাহযীবুত তাহযীব, ৪/৪৫৯।

Magazine