হিজাব আল্লাহ তাআলার ফরয বিধান। হিজাব নারীর প্রতীক এবং মর্যাদার পরিচায়ক। এটি তাদের অলংকার তুল্য। তাদের উন্নতি ও প্রগতির সোপান। তাদের আত্মসম্মান ও সম্ভ্রমের সুরক্ষাকবজ। ইসলামী পর্দাব্যবস্থা ও হিজাবের কল্যাণকর দিক প্রতিভাত ও প্রমাণিত হওয়ার পরও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ও মুসলিমবিদ্বেষী কিছু জ্ঞানপাপী হিজাব তথা পর্দা সম্পর্কে বিষোদগার করছে। ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষীদের মুখোশ উন্মোচনপূর্বক ইসলামী পর্দার স্বরূপ ও সুফল তুলে ধরার প্রয়াসে বক্ষমাণ আলোচনা।
হিজাবের বিধান :
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীদের হিজাবের ব্যবস্থা মেনে চলা ফরয। কুরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল-প্রমাণাদির ভিত্তিতে ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতি বিধানের মতো হিজাবও সুস্পষ্ট একটি ফরয বিধান। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে হিজাবের আদেশ দিয়ে বলেন,وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, এমন বালক যারা গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (আন-নূর, ২৪/৩১)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ‘নারীদের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভিতা করে তোলে’।[1]
উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীছ দ্বারা সুস্পষ্ট যে, বিবাহ বৈধ পুরুষদের সামনে সর্বাবস্থায় নারীদের জন্য হিজাব তথা পর্দা পালন করা অবশ্য কর্তব্য।
হিজাবের বিধান কেন?
ইসলাম একটি ইলাহী জীবনব্যবস্থা, তাই এ জীবনব্যবস্থার বিধিবিধানগুলো নির্ভুল এবং চিরকল্যাণকর। আবার ইসলাম স্বভাবজাত জীবনব্যবস্থা, তাই এর সকল বিধান মানুষের জন্য সহজসাধ্য এবং মানবস্বভাব ও প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রত্যেকের ব্যাপারে সাধারণ বিবেক ও শারীরিক সুস্থ মন যে পথ অবলম্বন করে, ইসলামও সেটাই অবলম্বন করে। ইসলামের কোনো বিধান বিশেষ বোঝাস্বরূপ বা প্রকৃতি বিরুদ্ধ নয়। যেমন আল্লাহ বলেন, يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা করতে চান না’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৫)।
প্রাকৃতিক আবহাওয়া ও জলবায়ু, প্রাকৃতিক গঠন ও পরিবেশ, সৌন্দর্য ও স্বচ্ছন্দ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে আত্মিক পবিত্রতা ও দৈহিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ইসলাম হিজাবের ব্যবস্থা দিয়েছে। বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায়ও ইলাহী বিধান হিজাবের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা সুপ্রমাণিত। এককথায়, মানুষের চারিত্রিক সৌন্দর্য ও নৈতিক সুষমা এবং সামাজিক সুস্থতা রক্ষার জন্য ইসলাম হিজাবের বিধানকে ফরয বা অবশ্য পালনীয় হিসেবে নির্ধারণ করেছে।
হিজাবের গুরুত্ব ও উপকারিতা :
(১) হিজাব মানবজাতির জন্য আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার : পোশাকের বিধান স্বয়ং মহান স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এর উদ্দেশ্য ইযযত-আব্রুর গ্যারান্টি দেওয়া এবং সৌন্দর্য বর্ধন করা, সর্বোপরি তাক্বওয়ার সাজে সজ্জিত হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্যবর্ধন করে। আর তাক্বওয়ার পোশাকই সর্বোৎকৃষ্ট’ (আল-আ‘রাফ, ৭/২৬)।
(২) হিজাব নিরাপত্তার প্রতীক : হিজাবধারী নারীর সৌন্দর্য অপ্রকাশিত থাকে। তাই মানুষের লোলুপদৃষ্টি তাদের দিকে সহজে পড়ে না। এজন্য একজন হিজাবধারী নারী নিজেকে অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
(৩) হিজাব যুবক ও তরুণ প্রজন্মের রক্ষাকবচ : নারী-পুরুষের পাস্পরিক আকর্ষণ স্বভাবজাত ও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। হিজাব নারী-পুরুষের এ আকর্ষণের মাঝে বাধা হিসেবে কাজ করে। ফলে যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক স্খলন ও চারিত্রিক মহামারি থেকে রক্ষা পায়। যে সমাজে হিজাবের প্রচলন যত বেশি, সে সমাজের যুবক-যুবতিরা তত বেশি চরিত্রবান।
(৪) হিজাব অশ্লীলতার প্রতিরোধক : অশ্লীলতা হলো সামাজিক ক্যান্সার, যার প্রকাশ ঘটে পর্দাহীনতার মাধ্যমে। ক্যান্সার যেরূপ কোনো ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, অনুরূপভাবে হিজাব বা পর্দার অনুপস্থিতিও পুরো যুবসমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়।
(৫) আত্মমর্যাদা ও শুদ্ধতা রক্ষার হাতিয়ার : হিজাব বিশ্বের বিনীত ও সচ্চরিত্রবান মুসলিম মহিলাদের এবং মন্দ চরিত্রের মহিলাদের মধ্যে একটি পার্থক্যকারী দেওয়ালের মতো কাজে করে। এর মাধ্যমেই চেনা যায় কে ভালো চরিত্রের অধিকারী আর কে কলুষিত চরিত্রের অধিকারী। যেকোনো লম্পটও হিজাবধারী নারীকে অপেক্ষাকৃত বেশি সম্মান ও সমীহ করে থাকে।
(৬) হিজাব ইভটিজিং এবং ধর্ষণ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় : আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, আপনার কন্যাদেরকে আর বিশ্বাসীদের নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের মুখমণ্ডলের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আল-আহযাব, ৩৩/৫৯)।
২০১৩ সালের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, হিজাব পরা নারীদের ধর্ষণের হার ০.০৩%, যেখানে হিজাব না পরা নারীদের ধর্ষণের হার ৫৮%।
(৭) হিজাব নারীকে মূল্যবান সম্পদে পরিণত করে : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ ‘দুনিয়ার সব কিছুই সম্পদ; কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো সতীসাধ্বী নারী’।[2]
(৮) হিজাব পারিবারিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ও সুরক্ষিত করে : যে সমাজে হিজাব বা পর্দার কদর যত বেশি, সে সমাজে পারিবারিক কলহ তত কম। হিজাবী নারীদের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক থাকে খুবই মধুর। অন্যদিকে পর্দাহীন নারীদের মধ্যে আত্মহত্যা, ডিভোর্সের সংখ্যা অনেক অনেক গুণ বেশি। অন্যদিকে পর্দাহীন নারীদের মাঝে স্বাধীনতার নামে থাকে স্বেচ্ছাচারিতা।
(৯) হিজাব নৈতিক চরিত্রের সংরক্ষক : পর্দাহীনতার কারণে আজ বিভিন্ন দেশে আত্মপ্রদর্শনীর সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি সমাজে পরকিয়া, চরিত্রহীনতা, অশ্লীলতা, বেহায়পনা, নির্লজ্জতা, অপকর্ম ও ব্যভিচারের মতো নিকৃষ্ট ব্যাধির সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। পশ্চিমা অনেক দেশেই নারীকে পণ্যের মতো দেখা হয়। তাই সেখানে নারী প্রতিনিয়ত নির্যাতন ও যৌনসন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে, যা পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে। সুতরাং নৈতিক চরিত্র সংরক্ষণে ইসলামী হিজাব ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
(১০) আত্মিক সুরক্ষা ও পবিত্রতা : নারী-পুরুষের আকর্ষণ স্বভাবজাত, প্রাকৃতিক। এটি স্রষ্টার বড় নেয়ামত। এ আকর্ষণের কারণে উভয়ে পরস্পরের কাছ থেকে লাভ করেন সুখ ও প্রশান্তি। আর এ বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনার কারণে অটুট আছে মানব বুনিয়াদ। আবার এ আকর্ষণের জন্যই আল্লাহ নারীদেরকে তার সৌন্দর্যকে পরপুরুষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার জন্য হিজাব বা পর্দার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। পুরুষকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে। আল্লাহ তাআলা বলেন,قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ ‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন’ (আন-নূর, ২৪/৩০)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আর তোমরা যখন তার (নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের) কাছে কিছু চাও তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও, এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিক পবিত্রতার কারণ’ (আল-আহযাব, ৩৩/৫৩)।
(১১) মনস্তাত্ত্বিক পরিপক্বতা : হিজাবের শেকড় মানুষের মননের গভীরে প্রোথিত। এটি নারীদের মানসিক পরিপক্বতার সাথে জড়িত। সৃষ্টিগতভাবে নারী তার সতীত্ব ও পবিত্রতা রক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী। হিজাবের বিধান নারীকে তার এ সহজাত প্রকৃতি অনুযায়ী চলতে সাহায্য করে।
হিজাব বনাম উন্নতি ও প্রগতি :
অনেক জ্ঞানপাপী ও ইসলামবিদ্বেষীরা মনে করে হিজাব বা পর্দাপ্রথা সামাজিক উন্নতির পথে বড় বাধা। কারণ এতে সমাজের অর্ধাংশ অচল হয়ে পড়ে। তারা সমাজ উন্নয়নে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। এসব অজ্ঞ ও মূর্খদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করি, উন্নতি ও প্রগতি বলতে কী বুঝায়?
নারীরা ঘরের বাইরে, অফিসে, আদালতে, ক্লাবে এবং পাবলিক প্লেসে গেলেই কি শুধু উন্নতি হয়? এটাই কি প্রগতির একমাত্র সোপান? না-কি একাগ্রতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারার মধ্যে উন্নতি ও সমৃদ্ধি রয়েছে, যা প্রকৃতিগতভাবেই নারীদের অর্পণ করা হয়েছে। নারীদের আসল দায়িত্ব হলো, তারা সমাজ ও জাতিকে উত্তম প্রজন্ম সরবরাহ করবে, যা আগামী সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবে। আর তা তখনই সম্ভব হবে, যখন নারীরা নিজের চারিত্রিক সুষমা সুরক্ষিত রেখে একাগ্রতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে। নারী উন্নতির মাপকাঠি পশ্চিমাদের চোখে দেখলে চলবে না, দেখার প্রয়োজনও নেই। বরং উন্নতির মাপকাঠি হচ্ছে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা স্থাপন করেছেন, সেটা।
ইসলাম নারীকে প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। নারী ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় পড়ালেখা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল বৈধ কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে।
শারঈ হিজাব এবং ফ্যাশান :
হিজাব পরিধান করার পরও যদি দেহের অঙ্গসমূহ প্রকাশ পায়, তবে সেটা ফ্যাশন ব্যতীত আর কিছুই নয়। কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো, আমাদের সমাজের নারীদের মধ্যে পশ্চিমা সংস্কৃতির চর্চা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাদের তৈরি যে কোনো স্টাইলিস্ট পোশাক এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, নারীদের পর্দার সবচেয়ে বড় হাতিয়ারকেও তারা ফ্যাশন বানিয়ে ফেলেছে। হিজাব বা পর্দার নামে বাজারে তৈরি বাহারি ডিজাইনের বোরকা পাওয়া যাচ্ছে, যাতে নারীদের শরীরের আকৃতি খুব সহজেই অন্যের দৃষ্টিগোচর হয়, ফলে পর্দার আসল উদ্দেশ্যই (পরপুরুষ থেকে রূপলাবণ্যকে গোপন রাখা) বিনষ্ট হয়। পর্দা রক্ষার সর্বোত্তম উপকরণ বোরকাগুলোকে ঢাল বানিয়ে প্রাথমিক অবস্থায় তারা সেগুলোকে সাধারণ মানুষের ঈমান হরণের প্রথম অস্ত্র বানিয়েছে। এভাবে সাধারণ মুসলিমরা খুব সহজেই তাদের ফাঁদে পা রাখছে। তাদের অনুসরণে পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য হিজাবে আবৃত কিছু নারী কড়া বডি স্প্রে মেখে রাস্তায় বেরুচ্ছে। এসব স্টাইলিস্ট হিজাবধারী নারীদের কাছ থেকেও সর্তক ও সজাগ থাকা সচেতন মানুষের জন্য জরুরী।
আমাদের নারীদের একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শারঈ পর্দার ক্ষেত্রে শুধু প্রচলিত হিজাব পরা যথেষ্ট নয়; নিজেদেরকে দৃষ্টি নিম্নমুখী করে আনা এবং নম্রতার দিকে পরিচালিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাজগোজ না করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। অধিকন্তু সুগন্ধির ব্যবহার যদি বাতাসে ভেসে পুরুষকে আকর্ষণ করে তাও নিষিদ্ধ।
হিজাব বিতর্কের অন্তরালে :
কিছু নাস্তিক, সাম্প্রদায়িক, সুশীল এবং চরিত্রহীন নারীলোভী ব্যক্তি হিজাব নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করে থাকে। তাদের এ বির্তকের অন্তরালে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। যেমন—
(১) হিজাব বিতর্কের মূল অনুঘটক হলো ইসলামোফোবিয়া।
(২) ইসলামের সৌন্দর্য ও কল্যাণকর দিকের প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুতা।
(৩) বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের উত্থান ও নবজাগরণকে প্রতিরোধ করার বৃথা চেষ্টা।
(৪) বিজয়ী শক্তি হিসেবে মুসলিমদের আত্মপ্রকাশ করার সম্ভবনাকে নস্যাৎ করা।
(৫) ইসলাম ও মুসলিমদের ঈমান-আক্বীদা ধ্বংসের নীল নকশা এবং কথিত শুদ্ধি অভিযান।
(৬) সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ানের মাধ্যমে মুসলিম নিধন।
(৭) ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
(৮) ব্যক্তি স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ।
(৯) সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিলোপ সাধন।
(১০) সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানোর প্রয়াস।
(১১) অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার মতো শয়তানী প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন।
(১২) মুনাফিক্ব ও ইসলামবিদ্বেষীদের হীনস্বার্থ সংরক্ষণ।
(১৩) বাংলাদেশকে হিন্দুত্ববাদী দেশে রূপান্তরের চেষ্টা।
(১৪) পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লাগিয়ে রাজনীতির খেলায় বিজয়ী হওয়া।
সুতরাং এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হিজাব বা পর্দা আল্লাহ তাআলার ফরয বিধান। হিজাব নারীর সম্মানের প্রতীক এবং মর্যাদার পরিচায়ক। এটি তাদের অহংকার ও অলংকার তুল্য। এটি নারীর উন্নতি কিংবা প্রগতির বাহন; অন্তরায় নয়। যারা হিজাব ইস্যুতে অনর্থক বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে, তারা ইসলাম ও মুসলিমদের চিহ্নিত দুশমন। তাদের ইচ্ছা বা স্বপ্ন কোনোদিনই বাস্তবায়িত হবে না। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ ‘তারা চায় তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর আলো (ইসলামকে) নিভিয়ে দিতে, আর আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণতা দান করবেনই, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে’ (আছ-ছফ, ৬১/৮)।
সহকারী শিক্ষক, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ, বগুড়া।
[1]. তিরমিযী, হা/১১৭৩, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/৩১০৯।
[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৬৭