নবম পরিচ্ছেদ : জামা‘আত পরিভাষাটির ব্যাখ্যা
‘জামা‘আত’ শব্দটি বেশ কতকগুলো হাদীছে এসেছে। হাদীছগুলো উক্ত জামা‘আতের সাথে থাকা অপরিহার্য করেছে এবং সেখান থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হাদীছ নিম্নরূপ :
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,أَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ إِلاَّ أَنْ يَرْجِعَ ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি, যেসব বিষয়ে আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ করেছেন। কথা শুনবে, আনুগত্য করবে, জিহাদ করবে, হিজরত করবে এবং জামা‘আতবদ্ধ হয়ে থাকবে। যে ব্যক্তি জামা‘আত হতে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হলো, সে তার ঘাড় হতে ইসলামের বন্ধন খুলে ফেলল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে’।[1]
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ، وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ، مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যে ব্যক্তি (আমীরের) আনুগত্য থেকে বের হয়ে এবং জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যুবরণ করল, সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করল’।[2]
তিনি আরো বলেন,مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ، وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ، مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যে ব্যক্তি তার আমীরের পক্ষ থেকে অপছন্দনীয় কিছু দেখবে, সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে কেউ জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে মারা যাবে, তার মৃত্যু হবে জাহিলী মৃত্যু’।[3]
জামা‘আত শব্দের দু’টি অর্থ : আভিধানিক ও পারিভাষিক।
শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ‘কোনো ব্যাপারে যখন কিছু মানুষ সমবেত হয়, তখন সেটাই জামা‘আত। এর সর্বনিম্ন সংখ্যা ২ জন। তবে সর্বোচ্চ সংখ্যার কোনো সীমারেখা নেই। হাজার হাজার হয়ে গেলেও তারা একটিই জামা‘আত’।[4]
এই অর্থে জামা‘আত শব্দটি একটি পরিবারের সদস্যদের প্রতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতি, কোম্পানির কর্মচারীদের প্রতি… প্রয়োগ হয়। তবে নিশ্চিতভাবে উপর্যুক্ত হাদীছসমূহ থেকে এই অর্থ উদ্দীষ্ট নয়। সুতরাং একথা বলার কোনো সুযোগ নেই যে, ‘প্রত্যেকটি জামা‘আত, যারা কোনো একটি বিষয়ে একমত হয়েছে, তাদের একজন অনুসরণীয় ইমাম থাকা আবশ্যক’।[5]
একথার কোনো দলীল নেই। একথা বলা মানে সমালোচনার পেছনে দৌঁড়ানো। এর মানে হচ্ছে অনাবশ্যক বিষয়কে আবশ্যক করে দেওয়া।
অনুরূপভাবে তা শরী‘আতের মুক্বাইয়্যাদ বক্তব্য (সীমাবদ্ধ বক্তব্য)-কে মুতলাক্ব বা উন্মুক্ত করে দেওয়ার শামিল, যেমনটি ইতোপূর্বে আলোচনা হয়ে গেছে।[6] এরকম করা মানে খাছ-এর জায়গায় আম-এর দলীল গ্রহণের পেছনে ছুটা। এগুলোর কোনোটাই জায়েয নয়।
এর চেয়েও আশ্চর্য কথা হচ্ছে, ‘যাকাত হজ্জ এবং ছলাতের মতোই ইবাদত, যা জামা‘আত ও ইমাম ব্যতীত বিশুদ্ধ হবে না’।[7]
এরকমই আশ্চর্য কথা হচ্ছে, ‘একজন মুসলিমের উপর ইমাম ও অধিকাংশ মানুষের রায় মেনে চলা ওয়াজিব’।[8]
তিনি কোন্ ইমাম?!
তিনি কি অমুক জামা‘আত, দল বা সংগঠনের ইমাম নাকি অমুক মসজিদের ইমাম?! নাকি তিনি কোনো সংগঠনের প্রেসিডেন্ট? নাকি কোনো দল বা আন্দোলনের নেতা?
আর অধিকাংশ মানুষের মূল্যই-বা কী?
আর এই মেনে চলার মূলনীতি কী হতে পারে?
সেই আবশ্যকতার সীমারেখাই-বা কী? আর কোন্ অধিকারে তা ওয়াজিব হবে?
মুমিনদের সাধারণ ইমারত এবং মুসলিমদের যিনি ইমাম (শাসক) হবেন, তার উপর মনুষ্যসমাজের অন্য কোনো জমায়েতকে ক্বিয়াস করা এবং নবাবিষ্কৃত শাখা-প্রশাখাগত সেসব ইমারত ওয়াজিব হওয়ার কথা বলা কোনোভাবেই দলীল দ্বারা সমর্থিত নয় এবং এর পক্ষে কোনো দলীল বা বিবরণ নেই।
আর ইবাদত ও তার পদ্ধতির ক্ষেত্রে ক্বিয়াস করা স্পষ্ট ভ্রষ্টতা।
হায় আফসোস! যেন তীব্র রাজনৈতিক আকর্ষণ ও দাওয়াতী আন্দোলনের তেজ আন্দোলনমুখী দাঈকে শারঈ দলীল গ্রহণের মূলনীতির অ আ ক খ-ও ভুলিয়ে দিয়েছে!
উপর্যুক্ত বিষয়টি ভালোভাবে রপ্ত করার পর আমরা বলতে পারি, যে জামা‘আত পরিত্যাগ করলে একজন মুসলিম গোনাহগার হবে, সে জামা‘আত দ্বারা উদ্দেশ্য কী?
বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সংগঠনগুলোই কি জামা‘আত দ্বারা উদ্দেশ্য? নাকি এর দ্বারা জামা‘আতুল মুসলিমীন উদ্দেশ্য, যারা একজন মুসলিম শাসকের বায়‘আতের অধীনে সমবেত হয়েছেন?
কুরআন ও হাদীছের বক্তব্য থেকে প্রতিভাত হয়— যে জামা‘আত পরিত্যাগ করলে একজন মুসলিম গোনাহগার হবে, সে জামা‘আত দ্বারা নির্দিষ্টভাবে জামা‘আতুল মুসলিমীনই উদ্দেশ্য, যাদের নেতৃত্বে একজন মুসলিম শাসক রয়েছেন।
বর্তমান সময়ে এই অর্থটি প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরী। কেননা কুরআন-হাদীছে উল্লিখিত জামা‘আত দ্বারা সংগঠনই উদ্দেশ্য— এই দৃষ্টিভঙ্গি বহু সংখ্যক মানুষের অবস্থান ও অনুভূতিতে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করছে, যারা সমকালীন ইসলামী সংগঠনগুলোর অধীনে কাজ করে যাচ্ছেন।
এই ভুল বুঝ খুব স্পষ্টরূপে প্রকাশ পায় তখন, যখন কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ প্রচলিত কোনো সংগঠন ছেড়ে দেয়।… এটা তখন আত্মিক ট্রাজেডি ও ধ্বংসাত্মক চরিত্রের দিকে ঠেলে দেয়।
সেজন্য আমরা খুব জোর দিয়ে বলছি, প্রত্যেকটি সংগঠন বা আন্দোলন বা জামা‘আত কেবল মুসলিমদের মধ্য থেকে একটি জামা‘আত (جَمَاعَةٌ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ); তারা -বিচ্ছিন্ন থাক বা সঙ্ঘবদ্ধ থাক- জামা‘আতুল মুসলিমীন (جَمَاعَةُ الْمُسْلِمِيْنَ) নয়। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি কোনো ইসলামী সংগঠনে বা কোনো ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেবেন না, তিনি জামা‘আতত্যাগী হিসেবে গণ্য হবেন না এবং তিনি মৃত্যুবরণ করলে তার মৃত্যুও জাহিলী মৃত্যু হিসেবে বিবেচিত হবে না’।[9]
এসবই কিন্তু আমরা বাস্তবতার উপরে কথা বলছি। আমরা শারঈ হুকুম বিষয়ে কথা বলছি না। যদি শারঈ হুকুম নিয়ে কথা বলতে হয়, তাহলে সে ব্যাপারে হুকুম হচ্ছে, ইসলামের মানহাজের ভেতর অনুপ্রবেশকারী এসব দলাদলি নিষিদ্ধ এবং যা কিছু বিভক্তি ও বিভেদের দিকে ঠেলে দেয়, তার সবগুলো থেকে দূরে থাকা জরুরী। এ ব্যাপারে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই এবং এর সারকথা একটু পরে আমরা আলোচনা করব, তবে ইতোমধ্যে এর আলামত প্রকাশিত হয়ে গেছে।
এটাই হচ্ছে হক্বপন্থীদের মানহাজ। কারণ ‘আহলুস সুন্নাহ ও আহলুল হাদীছগণ একমত হওয়া ও মিলেমিশে থাকার দিক দেয় মহত্তর মানুষ’।[10] আর প্রবৃত্তিপূজারি ও পথভ্রষ্টরা দলাদলি ও বিভেদের দিক দিয়ে অগ্রসর মানুষ।
জামা‘আত (اَلْجَمَاعَةُ) শব্দটি হুবহু ইমাম (اَلْإِمَامُ) শব্দের ন্যায়। শব্দ দু’টি যুগলবদ্ধ ও পরস্পর সংযুক্ত শব্দ, যারা পরস্পর পৃথক হয় না।[11] সেকারণে ইমাম বিনা জামা‘আত হয় না। আর জামা‘আত বিনা ইমাম হয় না— যেমনটি ইমাম আহমাদ বলেছেন। ইবনু হানি তার নিকট থেকে নিম্নবর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তির ইমাম না থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হলো, সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করল’। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আপনি জানেন কি, ইমাম কে? ইমাম তিনিই, যার ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত হয়েছেন; সকলেই বলছেন, তিনিই ইমাম। এটাই হচ্ছে ইমামের অর্থ’।
শরী‘আতে নবাবিষ্কৃত পার্থক্য সৃষ্টির পেছনে একদমই কোনো দলীল নেই, যে পার্থক্যের ব্যাপারে আমরা শুনে থাকি এবং তাদের কারো কারো কাছ থেকে পড়ে থাকি যে, ইমাম দুই ধরনের : সাধারণ ইমাম এবং বিশেষ ইমাম!
এরপর ‘ইমাম’ ও ‘আমীর’ শব্দদ্বয়ের মধ্যে গলিয়ে ফেলা একটি নিকৃষ্ট বিভ্রান্তি, যেখান থেকে সূক্ষ্মদর্শী আলেম-উলামা মুক্ত থাকেন।
সেজন্য ‘বিশেষ আমীর’-এর ব্যাপারে নিম্নবর্ণিত কথাটি বলা একটি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য, যার একটি অপরটিকে অস্বীকৃতি জানায়: (কথাটি হচ্ছে,) ‘যে ব্যক্তি বিশেষ আমীরের ব্যাপারটি ভালো মনে করবে এবং তার আচরণ, কর্ম ও দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রতি সন্তুষ্ট হবে, সে তার জামা‘আতকে মেনে চলতে পারে। কিন্তু যে ব্যক্তি সেটাকে অপছন্দ করবে এবং তার চেয়ে উত্তম ও উপযুক্ত কাউকে দেখবে, সে তাকে মেনে চলবে, এতে কোনো সমস্যা নেই’।[12]
তাহলে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের মাপকাঠি কোথায়?!
কোথায় একমাত্র ইসলামী ভবনের বাস্তবতা?!
কোথায় সেই একটিমাত্র দেহ, যার এক অঙ্গ অপর অঙ্গের বিরোধিতা না করে বরং একাংশ অপরাংশের ব্যাথায় ব্যথাতুর হয়ে পড়ে?!
যার বাস্তবতা ও ফলাফল এরূপ, সে ব্যাপারে ফতওয়াবাজি করা কীভাবে জায়েয হতে পারে, অথচ আলেম-উলামা ও জ্ঞান পিপাসুগণের হৃদয়ে একথা স্থির হয়েছে যে, ‘আল্লাহ জামা‘আতবদ্ধ থাকার ও মিলেমিশে থাকার আদেশ দিয়েছেন এবং বিদ‘আত ও বিভেদ করতে নিষেধ করেছেন’?![13]
শারঈ আনুগত্যের ভিত্তি কি ভালো মনে করা বা না করা?! নাকি এর ভিত্তি দলীল ও প্রমাণ?!
কোনো অঞ্চলে ‘৪০টিরও বেশি জামা‘আত থাকবে, যাদের প্রত্যেকেই ইসলামের দাওয়াত দিবে; কিন্তু প্রত্যেকটি জামা‘আত ঐ ইসলামের দিকে ডাকবে, যে ইসলাম অন্য জামা‘আতের ইসলাম নয়’[14] আর বলা হবে, এতে কোনো অসুবিধা নেই?!
একথা কোনো ছাত্র বা বিজ্ঞ আলেম বলতে পারেন না।
জামা‘আত-এর অর্থের ব্যাপারে সারকথা হচ্ছে, ‘জামা‘আত মানে এমন ইমামের ব্যাপারে সংঘবদ্ধ হওয়া, যিনি কিতাব ও সুন্নাহর অনুকূলে রয়েছেন। আর একথা প্রকাশ্য যে, সুন্নাত ছাড়া অন্য কিছুর ব্যাপারে সংঘবদ্ধ হওয়া উপর্যুক্ত জামা‘আতবহির্ভূত’।[15]
সুন্নাত কি বিভক্তির প্রশংসা করে নাকি নিন্দা করে?!
কে এমন আছে, যে বলে, দলাদলি সংঘবদ্ধ হওয়ার নাম, বিভক্তির নাম নয়?!
আমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الْجَمَاعَةُ رَحْمَةٌ، وَالْفُرْقَةُ عَذَابٌ ‘জামা‘আত হচ্ছে রহমত এবং বিভাজন হচ্ছে আযাব’।[16]
এ বিষয়টি উলামায়ে কেরামের নিকট একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিষয়, যারা সালাফে ছালেহীনের মানহাজের উপর চলেন, সেদিকে দাওয়াত দেন এবং এই মানহাজের পক্ষেই লড়াই করেন।
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ বলেন, ‘বিদ‘আত বিভাজনের সাথে সম্পৃক্ত, যেমনভাবে সুন্নাত জামা‘আতের সাথে সম্পৃক্ত’।[17]
অতএব, ‘অবশ্যই একতাবদ্ধ থাকা জরুরী। বিভেদ করা বৈধ নয়। বরং অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আর তা একক পথ অবলম্বন ছাড়া সম্ভব নয়। ছোট-বড় সব ব্যাপারেই আল্লাহর বক্তব্য ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বক্তব্যের ফয়সালা মেনে নেওয়া ছাড়া তা বাস্তবায়ন করা কখনই সম্ভব নয়’।[18]
দশম পরিচ্ছেদ : যখন জামা‘আত থাকবে না, তখন পরিস্থিতি কেমন হবে?[19]
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কল্যাণের বিষয়াদি জিজ্ঞেস করতেন। কিন্তু আমি তাকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো জাহিলিয়্যাতেও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে অকল্যাণের পর আবার কি কোনো কল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে এর মধ্যে কিছুটা ধোঁয়াশাচ্ছন্নতা থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম, এর ধোঁয়াশাচ্ছন্নতাটা কীরূপ? তিনি বললেন, কিছু মানুষ আমার হেদায়াত ছেড়ে অন্য পথ অবলম্বন করবে। তাদের থেকে ভালো কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জাহান্নামের দরজামুখী আহ্বাকারীদের উদ্ভব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তারা আমাদেরই লোক এবং আমাদের ভাষাতেই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি এরূপ পরিস্থিতি আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে কি করতে নির্দেশ দেন? তিনি বললেন, মুসলিমদের জামা‘আত ও ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তখন মুসলিমদের কোনো জামা‘আত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তখন সকল দলমত পরিত্যাগ করে সম্ভব হলে কোনো গাছের শেকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকবে, যতক্ষণ না সে অবস্থায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।[20]
এই হাদীছটি একটি বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ হাদীছ। কারণ ‘এখানে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে মুসলিমদের বর্তমান পরিস্থিতি উল্লিখিত হয়েছে। কেননা তাদের কোনো জামা‘আত ও বায়‘আতকৃত ইমাম (শাসক) নেই। আজ তারা চিন্তা-চেতনা ও আদর্শে বহু দলে-উপদলে বিভক্ত।
হাদীছের ভাষ্যানুযায়ী, কোনো মুসলিম এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তার জন্য দলবাজি না করা এবং কোনো জামা‘আত বা দলের সাথে যোগ না দেওয়া আবশ্যক। কারণ এ সময় এমন জামা‘আত নেই, গোটা মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে যাদের নেতৃত্বে বায়‘আতকৃত একজন ইমাম (শাসক) রয়েছেন’।[21]
হাফেয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে (১৩/৩৫) ইমাম বুখারীর অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘এর অর্থ হচ্ছে, একজন খলীফার ব্যাপারে ইজমা হওয়ার প্রাক্কালে মতানৈক্যের সময় একজন মুসলিম কী করবে?’
‘হাদীছটির বাচনভঙ্গি থেকে একথা স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হুযায়ফা রযিয়াল্লাহু আনহু-এর মধ্যকার সংলাপটি ছিল রাজনৈতিক ইস্যুতে ঐক্য ও বিভেদ প্রসঙ্গে। সর্বশেষ প্রশ্নটি অটোমান সাম্রাজ্যের শেষের দিককার এবং এর পতনের পরের ইসলামী বিশ্বের পরিস্থিতির সাথে হুবহু মিলে যায়।
আর জবাবটি আমীরের (শাসকের) আনুগত্য করা ও তার পতাকাতলে যুক্ত হওয়া অবধারিত করে। অতএব, পরিস্থিতি যখন আমীরবিহীন ইমারতের সমাপ্তি পর্যন্ত পৌঁছবে এবং প্রত্যেকেই নিজের অভিমত নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে, তখন সকল জামা‘আত ও দল থেকে দূরে থাকা জরুরী, যারা ক্ষমতার জন্য গুঁতোগুঁতি করছে, ক্ষমতাই যাদের মূল লক্ষ্য এবং যাদের আক্বীদা স্পষ্ট নয়।…
তবে যদি ন্যায়পরায়ণ মুসলিম শাসকের আত্মপ্রকাশ ঘটে, তাহলে তার পেছনে চলা জরুরী।
রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত্তি যে কত নোংরা, তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। অতএব, জামা‘আত ও ইমামের সাথে থাকা এবং যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করে হলেও সমস্ত দল থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দলাদলি ও বিভক্তির নিকৃষ্টতা প্রমাণ করে; সেই বিভক্তি জাতীয়তা, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা, ভাষা বা এজাতীয় অন্য কিছুর প্রতি অতিভক্তির কারণে হোক, অথবা আক্বীদা ও হুকুম-আহকাম বিষয়ে মতভেদের জের ধরে হোক।
অতএব, এই হাদীছটি বর্তমান সময়ের নানা পরিস্থিতিতে আমাদেরকে অবিচল থাকার বার্তা দেয়’।[22] আর সেটাই প্রত্যেকটি মুসলিমের একান্ত করণীয়। আর তা এভাবে সম্ভব— ‘তিনি সকল মানুষকে এড়িয়ে চলবেন, যদি তাকে মরণ পর্যন্ত কোনো গাছের শেকড় কামড়ে পড়ে থাকতে হয়, তাই থাকবেন। যে দলের ইমাম নেই, সে দলে প্রবেশের চেয়ে এটাই তার জন্য বেশি ভালো। কারণ নানা মুনির নানা মত হওয়ার কারণে দলে প্রবেশ তাকে খারাপ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে’।[23]
ইমাম ইবনু জারীর ত্ববারী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘হাদীছটির বার্তা হচ্ছে, যখন জনগণের কোনো ইমাম (শাসক) থাকবে না এবং এর কারণে তারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে, তখন একজন ব্যক্তি কারো অনুসরণ করবে না এবং সম্ভব হলে সবাইকে এড়িয়ে চলবে। কারণ এখানে অনিষ্টে পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’।[24] তাছাড়া বিভক্তির মধ্যে জাহিলীযুগের লোকদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে, যাদের ‘এমন কোনো ইমাম ছিল না, যিনি তাদেরকে একটি দ্বীনের উপর সমবেত করবেন এবং একটি মতের উপর তাদেরকে একত্রিত করবেন। বরং তারা ছিল দলে দলে বিভক্ত, যাদের ছিল পরস্পর বিরোধী অভিমত এবং ভিন্ন ভিন্ন দ্বীন’।[25]
মহান আল্লাহ যুগে যুগে এগুলো থেকে মুসলিমদেরকে অনেক ঊর্ধ্বে রেখেছেন।
এখানে দু’টি বিশেষ জ্ঞাতব্য:
এক: ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ তার ‘আর-রিসালাহ’ কিতাবে (১৩১৯-১৩২০) জামা‘আতুল মুসলিমীন এবং তাদের সাথে থাকার ব্যাপারে বলেন, ‘যখন মুসলিমদের জামা‘আত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে, ফলে কেউ বিক্ষিপ্ত লোকগুলোর সাথে দৈহিকভাবে একত্রিত হতে পারবে না, তখন দৈহিকভাবে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করার কোনো অর্থই হয় না। কেননা তা সম্ভব নয়। তাছাড়া কেবল শারীরিকভাবে একত্রিত হয়েও কোনো কিছু করা যায় না। বিভিন্ন দেশে মুসলিম, কাফের, মুত্তাক্বী, পাপী সকলকে শারীরিকভাবে একত্রিত পাওয়া গেলেও তাতে কোনো লাভ হয় না। অতএব, কেবল শারীরিকভাবে সমবেত হওয়ার কোনো অর্থ হয় না। হালাল, হারাম, আনুগত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সকলে একমত হওয়াই মূল বিষয়।
ফলে জামা‘আতুল মুসলিমীন যা বলছে, তা যদি কেউ বলে, তাহলে সে-ই উক্ত জামা‘আতের সাথে থাকল। পক্ষান্তরে জামা‘আতুল মুসলিমীন যা বলছে, তার যদি সে বিরোধিতা করে, তাহলে সে উক্ত জামা‘আতের বিরোধিতাই করল। বিভক্তির ব্যাপারে উদাসীনতা দেখালেও জামা‘আত বিষয়ে কিতাব, সুন্নাহ ও ক্বিয়াসের মর্মার্থে কোনো ধরনের উদাসীনতা চলবে না’।
জামা‘আতুল মুসলিমীনের অবর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, সে ধরনের পরিস্থিতি উপলক্ষ্যেই আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু তার বিখ্যাত মূল্যবান উক্তিটি করেন,الجَمَاعَةُ مَا وَافَقَ الْحَقَّ، وَإِن كُنْتَ وَحْدَكَ ‘জামা‘আত হচ্ছে তা-ই, যা হক্বের সাথে মিলে যায়— যদিও তুমি একাকী হও’।[26]
অতএব, দলাদলি, বিভক্তি ও দলবদলের কোনো স্থান (ইসলামে) নেই। বরং সমবেত হতে হবে কেবল মানহাজের উপর, আবর্তিত হতে হবে শুধু ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর।
দুই: হাদীছ থেকে দলাদলি নিষিদ্ধের দলীল গ্রহণ থেকে কেউ যেন না বুঝে যে, ‘আমরা নতুনভাবে ইসলামী জীবন শুরু করার কাজ করতে এবং আল্লাহওয়ালা সমাজ গঠন করতে নিষেধ করছি। বরং এসবই হেদায়াতের পথ অনুসরণের ফল— যদিও এপথ অবলম্বনকারীর সংখ্যা কম। অতএব, যে সত্যবাদী, তার কথাই ধর্তব্য; যে স্রেফ অগ্রবর্তী তার কথা ধর্তব্য নয়। মূল শিক্ষা পদ্ধতিতে; পরিমাণে নয়’।[27]
‘যদি কোনো গাছের শেকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকতে হয়, তা-ই থাকবে’— রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্ত বাণীটি সাধারণ মুসলিম জনতা থেকে দূরে থাকা অবধারিত করে না। অথবা ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ’-কে অবধারিত করে না। অর্থাৎ গাছের শেকর কামড়িয়ে পড়ে থাকতে হবে এবং মুসলিমদেরকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে হবে— ব্যাপারটা সেরকম নয়। যদিও অন্যায়ভাবে কেউ কেউ তেমনটাই ধারণা করে।
বরং বাস্তবতা এর উল্টো। কারণ আরবী ভাষায় ‘লাও’ (لَوْ)[28] শব্দটি ‘নিবৃত্তির উদ্দেশ্যে নিবৃত্তি’-এর অর্থ দেয়। অর্থাৎ কোনো কিছুর বিপরীত বিষয় থেকে নিবৃত হওয়ার উদ্দেশ্যে সেই বিষয় থেকে নিবৃত হওয়া। অতএব, যেহেতু বিভিন্ন দল-উপদলের ধারেকাছে যাওয়া নিষিদ্ধ, সেহেতু গাছের শেকড় কামড় দিয়ে ধরাও নিষিদ্ধ। আর আমরা জানি, দল-উপদল থেকে দূরে থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায়— ‘গাছের শেকড় কামড়িয়ে ধরেও যদি ঐসব দলকে এড়িয়ে চলতে হয়, তাহলে তাই করবে’।[29] অর্থাৎ এখানে উৎসাহ, জোরদান ও কঠোরতা বুঝানো হয়েছে।
ফলে এড়িয়ে চলার নির্দেশটি কেবল ফেতনা ও বিভক্তির জায়গায় প্রযোজ্য। এর মানে কস্মিনকালেও এই নয় যে, ‘মুসলিম উম্মাহ তার উপর ফরয কাজটি ছেড়ে দেবে, যে ফরয কাজের নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ তাঁর কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন এবং তাঁর রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। সেই ফরয কাজটি হচ্ছে, ভালো কাজের আদেশ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভালো কাজের আদেশ হচ্ছে, তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আদেশ। ফরয কাজের আরেকটি অংশ হচ্ছে, মন্দ কাজে নিষেধ করা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মন্দ কাজ হচ্ছে, মহান আল্লাহর সাথে শিরক করা। মুসলিম উম্মাহ এ ফরয কাজটি করবে জ্ঞান ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এবং কোমলতা, ধৈর্যশীলতা ও দৃঢ় বিশ্বাস অবলম্বন করে’।[30]
আমাদের উম্মতের বর্তমান অবস্থার মতো হওয়া উচিত নয়। কারণ ‘আমরা (আজ) এমন কিছু মানুষ দ্বারা পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছি, যারা আল্লাহর দিকে দাওয়াতী ময়দানে নেতৃত্বের আসনে বসে রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা, বর্বর-উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড সম্পাদন এবং বাতিল ঠেকাতে বাতিলের আশ্রয় গ্রহণকে হালাল করে নিচ্ছে’।[31] ফলে এর দ্বারা তারা পবিত্র সেই দায়িত্ব ও কর্তব্যকে নষ্ট করে ফেলেছে, অথচ তারা ভাবছে যে, তারা ভালো কাজটাই করছে!
(চলবে)
[1]. মুসনাদে আহমাদ, ৪/১৩০, ২০২ ও ৩৪৪; ত্বয়ালিসী, হা/১১৬১; ইবনে হিব্বান, হা/১৫৫০; ইবনে খুযায়মাহ, হা/৯৩০; হাকেম, ১/২৩৬; সনদ ছহীহ।
[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮।
[3]. ছহীহ বুখারী, ১৩/৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৯।
এই হাদীছ ৩টি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আমীরের আনুগত্যের সাথে জামা‘আতের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং কোনো মুসলিমকে আমীরুল মুমিনীনের আনুগত্য ছাড়া অন্য কারো আনুগত্যে বাধ্য করা মানেই হচ্ছে, দ্বীনের ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারিতা করা, যা নিশ্চিতভাবে বাতিল। তবে এক্ষেত্রে পিতা-মাতা, স্বামী প্রমুখের আনুগত্যের ব্যাপারটা ভিন্ন। এ বিষয়টি লম্বা আলোচনার দাবি রাখে। আমি পৃথক পুস্তিকায় এ ব্যাপারটি নিয়ে কলম ধরার আশা রাখি।
[4]. মাশরূ‘ইয়্যাতুল ‘আমাল আল-জামাঈ, পৃ. ৭।
[5]. মাশরূ‘ইয়্যাতুল ‘আমাল আল-জামাঈ, পৃ. ৭।
[6]. এই বইয়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: মাধ্যম ও লক্ষ্যের ঠেলাঠেলির মাঝে দ্বীনী কার্যক্রম দ্রষ্টব্য।
[7]. মাশরূ‘ইয়্যাতুল ‘আমাল আল-ইসলামী, পৃ. ১১।
[8]. মাশরূ‘ইয়্যাতুল ‘আমাল আল-ইসলামী, পৃ. ১১।
[9]. সম্মানিত ভাই মাশহূর হাসানের উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্য এটি।
[10]. শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, ৪/৫১।
[11]. এক্ষেত্রে এই কিতাবের দশম অনুচ্ছেদটি দেখুন, যার শিরোনাম : যখন জামা‘আত থাকবে না, তখন পরিস্থিতি কেমন হবে?
[12]. মাশরূ‘ইয়্যাতুল ‘আমাল আল-জামাঈ, পৃ. ৩৬।
[13]. ইবনে তাইমিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, ৩/২৭৫।
[14]. আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক, আশ-শূরা ফী নিযামিল হুকমিল ইসলামী, পৃ. ৩৩।
[15]. শাত্বেবী, আল-ই‘তিছাম, ২/২৬৫।
[16]. মুসনাদে আহমাদ; ইমাম আহমাদের ছেলে তার যাওয়ায়েদে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, ৪/২৭৮ ও ৩৭৫; ইবনু আবী আছেম (৯৩), সনদ হাসান।
[17]. আল-ইস্তিক্বামাহ, ১/৪২।
[18]. আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক, আল-ওয়াছায়া আল-‘আশার লিল-‘আমিলীনা বিদ-দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহ, পৃ. ২১।
[19]. এটা ছহীহ বুখারীতে ইমাম বুখারীর অনুচ্ছেদ রচনা, ফেতনা অধ্যায়, নং ১২।
[20]. ছহীহ বুখারী, হা/৪০৮৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৭।
[21]. এটি আমাদের শায়খ আল্লামা আলবানীর বক্তব্য, সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, ক্যাসেট নং ১/২০০।
[22]. আল-আহযাব আস-সিয়াসিয়্যাহ, পৃ. ৮৮।
[23]. আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১২/২৪/১৯৩।
[24]. ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে (১৩/৩৭) ইবনু জারীর থেকে কথাটি উল্লেখ করেছেন এবং সমর্থন করেছেন। তাদের দু’জনের কাছ থেকে কথাটি আল্লামা মুহাম্মাদ রশীদ রেযা ‘আল-খিলাফাহ’ বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। আমাদের উস্তায শায়খ আলবানীও তার কাছ থেকে কথাটি উল্লেখ করেছেন।
[25]. আবু সুলায়মান আল-খাত্ত্বাবী, ‘আল-উযলাহ’ পৃ. ৫৮ (দামেশকে ছাপা)।
[26]. আল-লালকাঈ, ‘আল-উযলাহ’ পৃ. ৫৮ (দামেশকে ছাপা)।
[27]. সালীম হেলালী, ‘মুআল্লাফাতু সাঈদ, হাউওয়া দিরাসাতান ওয়া তাক্ববীমান’, পৃ. ১৭০।
[28]. আব্দুল গনী দাক্বার, ‘মু‘জামুন নাহু’, পৃ. ৩১৫।
[29]. ‘উমদাতুল ক্বারী’, ২৪/১৯৪।
[30]. ‘হুকমুল ইনতিমা’, পৃ. ৯১।
[31]. আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক, ‘ফুছূল ফিস-সিয়াসাহ আশ-শারঈয়্যাহ’, পৃ. ৮৭।
মূল : আলী ইবনে হাসান আল-হালাবী আল-আছারী
অনুবাদ : আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী
বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব;
অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।