কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

কিশোর গ্যাং : কারণ, ধরন ও প্রতিকার

post title will place here

শৈশব ও বাল্য পেরিয়ে সংক্ষিপ্ত বয়ঃসন্ধির মধ্য দিয়ে যৌবনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর যে দ্রুত, বাড়ন্ত ও পরিবর্তনশীল সময় তাকে কৈশোর বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিল (UNICEF)- এর মতে, ১০ বছর ও ১৯ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়টাকে কৈশোর বলে। সে মতে কিশোর-কিশোরী হলো ১০ বছর ও ১৯ বছর বয়সের মাঝামাঝি বয়সী ছেলে-মেয়ে। আর গ্যাং অর্থ দল। নির্দিষ্ট কিছু লোকের একটা দলকে গ্যাং বলে। গ্যাং শব্দটি সাধারণত অপরাধ বা নেতিবাচক কাজে জড়িত কোনো দল বা গ্রুপ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। অপরাধের সাথে জড়িত কিশোরদের প্রত্যেকটি দলকে কিশোর গ্যাং বলে।

কৈশোর মানব জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এসময়েই রচিত হয় জীবনের ভিত্তি। কিন্তু কিশোররা যখন বিপথগামী হয়ে অপরাধে লিপ্ত হয়, তখন সেই অমিত সম্ভাবনাময় কিশোরটিই পরিণত হয় দেশ ও জাতির মহা আপদে। বর্তমানে কিশোর গ্যাং একটি ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি ও মহা বিষফোড়ার নাম। প্রথম দিকে কিশোর গ্যাং কালচার রাজধানী ও বড় বড় বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে সারা দেশে ভয়াবহভাবে বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার। শহর, নগর ও গ্রাম সর্বত্রই সমান তালে গ্যাং কালচারের আধিপত্য। প্রতিটি জনপদেই তারা সাধারণ মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর লেখাপড়া না জানা ভবঘুরে কিশোর থেকে শুরু করে অভিজাত ঘরের কিশোররাও জড়িয়ে পড়ছে এ অভিশপ্ত কালচারে। বিশেষ করে রাজধানীর বড় শহরগুলোর অলিগলিতে কিশোর গ্যাং এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। প্রতিদিনই তারা কোনো না কোনো অপরাধের কারণে পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। কিশোর গ্যাং কালচার শুরুতে আড্ডা কিংবা ইভটিজিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও তা এখন ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদকব্যবসা, ভাঙচুর, দখলদারিত্ব, আধিপত্য বিস্তার এমনকি খুনখারাবি পর্যন্ত গড়িয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই নিরাপদ নয় তাদের কাছে। মোটকথা, কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ডে জনজীবন রীতিমতো অতিষ্ঠ, শঙ্কিত ও আতঙ্কিত। কিশোর গ্যাং নামে মানুষ শকুনদের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। অন্যথা এ অপরিণামদর্শী গ্যাং সদস্যরাই বাংলাদেশের অস্তিত্বের মূলে আঘাত হানতে পারে।

কিশোর গ্যাংয়ের কারণ :

কিশোর গ্যাং একদিনে কিংবা একক কোনো কারণে সৃষ্টি হয়নি। এর পেছনে আছে সুদীর্ঘ ইতিহাস ও বহুমুখী কারণ। সুশীল সমাজ, সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধ বিশ্লেষক, আইন বিশেষজ্ঞ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সচেতন নাগরিক সমাজ কিশোর গ্যাংয়ের উৎপত্তি ও কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। যেমন—

(১) বড়ভাই-ছোটভাই কালচার : মানব সমাজে বয়সের ভিত্তিতে কেউ ছোট কেউ বড়। এই বড় ও ছোটদের সম্পর্কের ভিত্তি হলো পারস্পরিক সম্মান-শ্রদ্ধা, স্নেহ-ভালোবাসা ও কল্যাণকামিতা। এ ভিত্তির উপরই দাঁড়িয়ে আছে মানব সমাজ ও সভ্যতা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অধুনা আমাদের সমাজে ‘বড়ভাই’ ও ‘ছোটভাই’ কালচার গড়ে উঠেছে। এ কালচারের ভিত্তি হলো অন্যায় আশ্রয়-প্রশ্রয় ও অবৈধ স্বার্থসিদ্ধি যা কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম কারণ।

(২) সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব : আদর্শিক ভিত্তি ছাড়া নিছক পার্থিব স্বার্থের উপর কোনো সম্পর্ক টেকসই হয় না। স্বার্থে সামান্য আঘাত আসলেই কিংবা সামান্য মনোমালিন্য হলেই কথিত বড়ভাই ও ছোটভাইয়ের সম্পর্কে ফাটল ধরে। শুরু হয় ছোট-বড় তথা সিনিয়র-জুনিয়রের দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বই পরিণামে আরেকটি কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম দেয়।[1]

(৩) বুড়ো গ্যাং : ছোটরা অনুকরণ প্রিয়। তারা বড়দের থেকে শেখে। আমাদের সমাজে বড়রা গ্যাং কালচারের সাথে জড়িত। নামে-বেনামে তাদের অনেক গ্যাং আছে। বড়দের এসব গ্যাং কালচার দ্বারা তাদের ছোট অর্থাৎ কিশোররা প্রভাবিত হয়। এক পর্যায়ে তারাও গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ে। কিশোর গ্যাংয়ের পেছনে আসল গডফাদার হিসেবে রয়েছে এই ‘বুড়ো গ্যাং’। এরা নিজেরা কিশোর না হলেও কিশোরদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলে নানা অপকর্ম করায়। মূলত তাদের কারণে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না। আইনি বা অন্য কোনো ঝক্কি-ঝামেলা থেকে গ্যাং সদস্যদের রক্ষা করেন। রাজনৈতিক দলের মিটিং-মিছিলে লোক জোগান দেওয়াসহ এলাকায় দলীয় আধিপত্য বিস্তারে ‘কিশোর গ্যাং’-কে ব্যবহার করে এই ‘বুড়ো গ্যাং’। ‘বড়ভাই’ হিসেবে পরিচিত এসব ‘বুড়ো গ্যাং‘-এর দৌরাত্ম্য বন্ধ না হলে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যও বন্ধ হবে না। এসব বুড়ো গ্যাংয়ের মধ্যে ঢাকার সোহেল রানা গ্যাং বহুবার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে।[2]

(৪) সামাজিক অসঙ্গতি : সামাজিক অসঙ্গতি মানুষের মনে ক্ষোভ ও দ্রোহ তৈরি করে। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় সমাজিক অসঙ্গতি ক্রমে বেড়েই চলেছে। এর অনিবার্য ফল হিসেবে জন্ম নিচ্ছে কিশোর গ্যাং।

(৫) ভিনদেশি সংস্কৃতির প্রভাব : প্রত্যেক সমাজের মানুষ তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক আচরণ দ্বারা প্রভাবিত। আমরা ধীরে ধীরে নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। শুধু তাই নয়, ভিনদেশি সংস্কৃতি আমদানি করতে নিজেরা রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছি। ফলে শিশু-কিশোররাও ভিনদেশিদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। এক পর্যায়ে ভিনদেশি সংস্কৃতি ইচ্ছামতো তাদের আয়ত্তে চলে যাওয়ায় তাদের আচরণেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

(৬) হিরোইজম বা বীরত্ব প্রদর্শন : হিরোইজম বা বীরত্ব প্রদর্শন কিশোরদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। তারা স্বাধীনভাবে বলতে চায়, স্বাধীনভাবে চলতে চায়, ভিন্ন কিছু করে দেখাতে চায়, নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করতে চায়। এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এ চাওয়াটাই যখন বাস্তবতা বর্জিত এবং শুধু আবেগ নির্ভর হয়ে পড়ে, তখন তা উচ্ছৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়। আবেগতাড়িত ও উচ্ছৃঙ্খল হিরোইজমই কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম কারণ।

(৭) অপরাধনির্ভর দেশি-বিদেশি সিনেমা : দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রচলিত নাটক-সিনেমায় দায়বদ্ধতার জায়গাটি খুবই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। সেখানে স্থান পেয়েছে অবাধ্যতা, অশ্লীলতা, অস্ত্রবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, ইভটিজিং, শঠতা, প্রতারণা, মাদকতা, নারীর বস্ত্রহরণ, খুনখারাবি এবং যৌনসুড়সুড়ি নির্ভর রগরগে দৃশ্য। এগুলো দর্শকদের অপরাধপ্রবণতাই বৃদ্ধি করছে। তারা নায়ক-নায়িকাদের অনুকরণে হিরো সাজার জন্য অপরাধ সংঘটনের প্রেরণা পাচ্ছে। সুতরাং প্রচলিত নাটক-সিনেমাও কিশোর গ্যাং তৈরির জন্য দায়ী।

(৮) সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের অভাব : সামাজিকীকরণ মানুষের জীবনব্যাপী একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজ জীবনের কাঙ্ক্ষিত আচরণ উপযোগী হয়ে গড়ে উঠে। শিশু একটি পরিবারে তথা সমাজে যেভাবে সামাজিক হয়ে ওঠে তাকে সামাজিকীকরণ বলা হয়। সামাজিকীকরণের প্রথম ও প্রধান বাহন পরিবার। এছাড়া স্থানীয় সমাজ, স্থানীয় সমাজের বিভিন্ন উপাদান, সমবয়সী সঙ্গী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের অভাবে কিশোররা অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে এবং কিশোর গ্যাং অপ্রতিরোধ্য গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(৯) ব্যর্থ প্যারেন্টিং : প্যারেন্টিং অর্থ সন্তান প্রতিপালন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সন্তান জন্মের পর থেকে তার অগ্রগতির প্রতি সজাগ থাকা হয় এবং মানসিক, শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ইত্যাদি দিক দিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হয়। এককথায়, সন্তান প্রতিপালনে পিতা-মাতার দায়িত্ব কর্তব্যই প্যারেন্টিং। প্যারেন্টিং একটি ‘গোল্ডেন জব’, মহান ব্রত। এতে আছে প্রস্তুতি, পরিকল্পনা, লক্ষ্য নির্ধারণ, প্রতিপালন, প্রশিক্ষণ ও প্রতিফলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের অধিকাংশ পিতা-মাতা প্যারেন্টিং সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা প্যারেন্টিং বলতে সন্তান জন্মদান ও সনাতনী পদ্ধতিতে তাদের বেড়ে উঠাকে বুঝে থাকেন। সন্তান কোথায় যাচ্ছে? কী করছে? কার সাথে মিশছে?— এব্যাপারে অধিকাংশ পিতা-মাতা খোঁজই নেন না। এ প্যারেন্টিং ব্যর্থতা কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম কারণ।

(১০) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা, শৈথিল্য ও দলীয় লেজুড়বৃত্তি : যে কোনো অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট বলে অভিজ্ঞরা মনে করেন। তারা যদি যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করেন, তাহলে কিশোর গ্যাং তো দূরের কথা, ভয়ংকর যে কোনো অপরাধ নির্মূল করাও সময়ের ব্যাপার মাত্র। অথচ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোর অপরাধ দমনে পুলিশের উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রে শুধু তালিকা করেই দায় সারছে পুলিশ। পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে বলছেন, তালিকা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। রাজনৈতিক কারণেও অনেক এলাকায় কিশোর অপরাধীদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে বেগ পেতে হয়। অনেক সময় পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গেলেই আসছে রাজনৈতিক নেতা তথা বড় ভাইদের থেকে অদৃশ্য বাধা।[3] সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি দলীয় লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা ও পরিচালিত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সমীহ করে চলেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। অনেক ক্ষেত্রে বখাটে কিশোর গ্যাং সদস্যদের নির্দেশ মতো নিরীহ ও নিরপরাধ কিশোরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগও ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। তাছাড়া, পুলিশের সোর্স হিসেবে যাদের ব্যবহার করে তারাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অপরাধীদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যা অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।

(১১) দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য : বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাছাড়া অর্থনৈতিক বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। পুলিশের তথ্য মতে, ১১ লাখ পথশিশু কোনো না কোনো অপরাধের সাথে জড়িত। পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদকে আসক্ত। তাছাড়া তারা রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং, শোডাউন, পিকেটিং, ভাঙচুরসহ নানা অপরাধে ব্যবহার হচ্ছে।[4] বিশেষজ্ঞদের মতে, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে অনেকে গ্যাং কালচারের দিকে ধাবিত হয়।

(১২) শিশুর বয়স নির্ধারণ ও আইনের ফাঁকফোকর : কিশোর গ্যাং সদস্যদের অধিকাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০-১১-১৯৮৯ কনভেনশন অব দ্য রাইট অব দ্য চাইল্ড সম্মেলনে শিশুর বয়স ১৮ নির্ধারণ করা হয়। সে আলোকে শিশু আইন-২০১৩ আইনে শিশুর বয়স ১৮ বছর নির্ধারিত হয়েছে। শিশু আইন-১৯৭৪ এ শিশুর বয়স নির্ধারিত ছিল ১৬ বছর। বাংলাদেশের পেনাল কোডের-৮২ ধারা মোতাবেক ৭ বছরের নিচে কোনো শিশুর আইনবহির্ভূত ব্যবহারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। ঐ আইনে ৮৩ ধারা মোতাবেক বিচারকের দৃষ্টিতে ১২ বছরের কোনো শিশুর যদি ম্যাচুরিটি সনাক্ত না হয় সে ক্ষেত্রেও শিশুটি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে না। ডিজিটাল যুগে ১৬-১৮ বছরের একজন কিশোর যথেষ্ট ম্যাচুরিটি লাভ করে। অথচ এরা যত বড় অপরাধই করুক না কেন তাদের শিশু আইনে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। ওই আইনে হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর। ফলে তারা নানা অপরাধমূলক কাজ করেও আইনের সুবিধা ভোগ করছে।[5]

(১৩) মাদকের সহজলভ্যতা : মাদক এখন খুবই সহজলভ্য। হাত বাড়ালেই তা পাওয়া যায়। মাদক সেবনের টাকার জন্য অনেকেই কিশোর গ্যাংয়ে যোগ দেয়।[6] ‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২’ এটিকে আরও সহজ করে দিয়েছে। এই নতুন বিধিমালার আলোকে ২১ বছরের বেশি বয়সীরা মদ খাওয়ার অনুমতি পাবে। এ বিধিমালার আলোকে কোনো এলাকায় ১০০ জন দেশি বা বিদেশি মদের পারমিটধারী থাকলে ওই এলাকায় অ্যালকোহল বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া যাবে।[7]

(১৪) পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় : একজন শিশুর প্রথম পাঠশালা তার পরিবার। বাবা-মা প্রথম শিক্ষক। যখন কোনো পরিবারে বিশৃঙ্খলা ও উচ্ছৃঙ্খলা দেখা দেয়, তখন থেকে তারা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে কিশোর গ্যাংয়ে পরিণত হয়। অপরাধ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, যে বয়সে কিশোররা স্কুল-কলেজে থাকার কথা তখন তারা নেশায় বুদ হয়ে থাকে। এমন কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নেই যার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। মূলত পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই কিশোররা আজ বিপথগামী। যখন তাদের হাতে থাকার কথা কলম, তখন থাকছে অস্ত্র। এই পরিস্থিতির দায় পরিবার ও সমাজের। কারণ পরিবার সেই নৈতিকতার শিক্ষা দিতে পারেনি। আর সমাজের গুটিকয়েক লোক কিশোরদের ব্যবহার করছে। তাদের ছত্রছায়ায় কিশোররা অপরাধী হয়ে উঠছে।

(১৫) খেলাধুলা ও সাংস্কৃতির কর্মকাণ্ডের সঙ্কোচন : শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলার মাঠ অগ্রণী ভুমিকা রাখে। শিশুর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় পরিবারের পরেই বেশি অবদান রাখে খেলার মাঠের সঙ্গী-সাথীরা। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে কংক্রিটের স্তূপে চাপা পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে শিশুর স্বাভাবিক জীবন। ঘরবন্দি শিশুর দৌড়ে বেড়ানোর, খেলার সেই মাঠই নেই। মেগাসিটি ঢাকায় জনসংখ্যার অনুপাতে অন্তত ১ হাজার ৩০০টি খেলার মাঠ প্রয়োজন। অথচ ঢাকায় খেলার মাঠের সংখ্যা মাত্র ২৩৫টি। আবার ঢাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ স্কুলে কোনো খেলার মাঠ নেই। শহরাঞ্চল তো বটেই গ্রামেও শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত খেলার মাঠ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। পরিকল্পিত এবং অপরিকল্পিতভাবে নির্বিচারে খেলার মাঠ ধ্বংসের মাধ্যমে ধ্বংস হচ্ছে আগামীর সম্ভাবনাময় প্রজন্ম। ফলে শিশু-কিশোরদের সুস্থ-স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুষ্ঠু বিনোদন ব্যবস্থার অভাবে আজকের শিশু-কিশোরদের মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে গ্যাং কালচার, বাড়ছে হানাহানি, মারামারি।[8]

(১৬) বই পড়ার অভ্যাস ত্যাগ : বই জ্ঞানের ধারক। বই জ্ঞানের আলো। বইয়ের সাথে শরীরের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। বই শরীরকে সুস্থ রাখে। বই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফোকাস পাওয়ার বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, মানসিক ভারসাম্য তৈরি করে। বই পড়ার সময় মস্তিষ্ক সবচেয়ে অ্যাক্টিভ থাকে। শরীরের পেশিগুলোকে সচল করতে যেমন ব্যায়ামের বিকল্প নেই, বই পড়া হলো মস্তিষ্কের ব্যায়াম।[9] কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, এদেশের শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে বইবিমুখ। কুরআন, হাদীছ, ধর্মীয় বই, গল্প, কবিতা, সাহিত্যের বই দূরে থাক তারা নিজের পাঠ্যবইও ঠিকমতো অধ্যয়ন করে না। এই বইবিমুখতা কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম কারণ।

(১৭) রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন : রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশ পরিচালনার নীতি-নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। যখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অপরাধপ্রবণ ও বিপথগামী হয়, তখন ঐ জাতির পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। কিশোর গ্যাং সৃষ্টি, প্রতিপালন ও পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংশ্লিষ্টতার কথা সকল আলোচনা ও গবেষণায় উঠে এসেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা উঠতি বয়সী ও বেপরোয়া এসব কিশোরদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়েদা নিয়ে থাকে। রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারাই মূলত এসব গ্যাং পরিচালনা করে থাকেন। এর জন্য তারা প্রথমে বেপরোয়া কিশোরদের বিভিন্নভাবে একত্রিত করেন। এরপর নিজেকে ‘বড় ভাই’ হিসেবে দেখিয়ে তাদের জড়িয়ে দেন বিভিন্ন অপরাধে। পরে সেই অপরাধ থেকে নিজেই তাদের উদ্ধার করে বনে যান দয়ার অবতার ও ত্রাণকর্তা। এরপর নিজের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাদের দিয়ে গড়ে তোলেন গ্যাং। রাজনৈতিক মিছিল মিটিং থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কাজেও তাদের ব্যবহার করা হয়। রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় মূলত কিশোর গ্যাং প্রতিপালিত হয়ে থাকে।[10]

(১৮) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতি গড়ার মহান কারিগর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতির প্রশিক্ষণালয়। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি তো দূরে থাক নিজের অস্তিত্বও রক্ষা করতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা করুণ। শিক্ষকের হাতে বই এর পরিবর্তে ফেসবুক। শিক্ষার্থীর হাতে বই, কলমের পরিবর্তে মারণাস্ত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন মানুষ গড়ার পরিবর্তে শিক্ষার্থী তৈরিতে ব্যস্ত। এগুলো এখন টাকা উপার্জন এবং সনদ তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। মানুষ তৈরির মহান কারিগররাও ‘শিক্ষা শ্রমিক’-এ পরিণত হয়েছেন। তারা পেটের দায়ে ছাত্র-অভিভাবক ও প্রশাসনের সব অনৈতিকতাকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় প্রশ্রয় দিচ্ছেন অথবা নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। কারণ ন্যূনতম নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাদেরকে নানামুখী হয়রানি এমনকি খুনেরও শিকার হতে হচ্ছে। সেই সাথে কিছু শিক্ষকের নৈতিক স্খলন তো আছেই। এই ক্রমাবনতির জন্য রাষ্ট্রীয় নানা অনুশাসনও কম দায়ী নয়। মোটকথা, আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আদর্শ জাতি গঠন এবং জাতীয় উন্নতি, অগ্রগতিতে অবদান রাখতে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। এ ব্যর্থতা কিশোর গ্যাং তৈরির অন্যতম কারণ।

(১৯) পরীক্ষায় সহজে পাশের ব্যবস্থা : পরীক্ষা মূল্যায়নের একটি মাধ্যম। এখানে পাশ ফেল থাকা বৈচিত্র নয়। যারা পরিশ্রম করবে, অধ্যবসায় করবে তারা ভালো ফলাফল করবে। যারা অমনোযোগী হবে কিংবা শ্রমবিমুখ হবে তারা ফেল করবে। পরবর্তীতে আবার চেষ্টা করবে পাশ করার— এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা প্রসাশনের সাথে যুক্ত কর্তা ব্যক্তিদের আচরণে মনে হয় তারা সবাই ‘ফেল’ শব্দটি তুলে দেওয়ার জন্য জিহাদ ঘোষণা করেছেন। শ্রেণিকক্ষে বিষয় শিক্ষককে, পরীক্ষার হলে কক্ষ পরিদর্শককে, বোর্ড থেকে খাতা বিতরণের সময় পরীক্ষককে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ‘চেক এন্ড ব্যালেন্স’-এর নামে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে যথাযথ দায়িত্ব পালনের সম্ভাব্য পরিণতি। বুদ্ধিমান শিক্ষক তাই ফেল করানোর ঝুঁকি তো নিচ্ছেনই না; বরং পাশ দেখাতে যা যা করণীয় তার সবটিই করছেন। তাই নিজ প্রতিষ্ঠানে সারা জীবন ফেল করা ছাত্রটিও নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং বোর্ড পরীক্ষায় প্লাস পেয়ে শিক্ষকের সামনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে সাহস পায়। পরীক্ষার হলে বিষয়ের নাম লিখতে না পারা ছাত্রটি যখন ভালো ফলাফলের নিশ্চয়তা পায় তখন শিক্ষার মান নিয়ে কথা বলা নিতান্তই বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। এভাবে পরীক্ষায় সহজ পাশ পদ্ধতি শিক্ষার্থীকে পড়ার টেবিল থেকে নিয়ে যাচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের অন্ধকার জগতে।

(২০) মানবিক আচরণ এবং কাউন্সিলিংয়ের অভাব : মানবিক আচরণ মানুষকে সংশোধন হতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে যখন কোনো কিশোর বিপথে যায়, খারাপ সঙ্গে মিশে, অপরাধপ্রবণতায় লিপ্ত হয়, তখন তাদেরকে সবাই বাঁকা চোখে দেখে, এড়িয়ে চলে কিংবা সমালোচনা করে। এসব বিপথগামীদের হৃদয়ের কান্না শোনা, তাদের সমস্যার গভীরে প্রবেশ করা, কারণ উদ্ঘাটন করা এবং উত্তরণের পথনির্দেশ করার লোক নেই বললেই চলে। এই বাঁকা চোখে দেখা এবং এড়িয়ে চলা তাদের আরো বড় অপরাধী হতে উদ্বুদ্ধ করে। অথচ এই কিশোরদের প্রতি একটু মানবিক আচরণই তাদেরকে সুপথে দিশা দিতে পারে।

(২১) নৈতিক শিক্ষার অভাব : নীতি সম্বন্ধীয় শিক্ষাই নৈতিক শিক্ষা। শিশু-কিশোররা সাধারণত পিতা-মাতা, বাড়ির বয়স্ক সদস্য, প্রতিবেশী, শিক্ষক, সহপাঠী, সঙ্গীদের কাছ থেকে নৈতিক শিক্ষা পেয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে নৈতিক অবক্ষয় এমন উচ্চতায়(!) পৌঁছেছে যে, শিশু-কিশোরদের সামনে আদর্শিক কোনো মডেল নেই। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা অনৈতিকতার পথে পা বাড়াচ্ছে। এছাড়া, নৈতিক শিক্ষার ভাণ্ডার হলো কুরআন ও হাদীছ। কিন্তু আমাদের দেশে পরিবার, বিদ্যালয় ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চরমভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে কুরআন ও হাদীছের শিক্ষা তথা নৈতিক শিক্ষাকে। নৈতিক শিক্ষার অভাবে কোমলমতি কিশোররা গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ছে।

কিশোর গ্যাংয়ের ধরন ও কার্যক্রম :

বাংলাদেশে কিশোর গ্যাং নামক সন্ত্রাসী সংস্কৃতির অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয় ২০১২ সালে। ২০১৭ সালে উত্তরার ট্রাস্ট কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির খুনের পর এদের কর্মকাণ্ড আলোচনায় আসে। প্রথমে এদের কর্মকাণ্ড দলবেঁধে আড্ডাবাজি ও ইভটিজিং-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে তাদের অপরাধজগৎ বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, ১০ বছর বয়স থেকে শুরু করে ২০ বছর বয়সীরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তাদের অধিকাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। প্রতিটি গ্যাংয়ের আলাদা আলাদা নাম থাকে। প্রতিটি গ্যাংয়ে ১০ থেকে ১৫০ জন পর্যন্ত সদস্য থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে কিছু গ্যাংয়ের সদস্যদের চলাফেরা, চুলের কাটিং, পোশাক একই ধরনের থাকে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে তাদের গ্রুপ খোলা থাকে। এসব গ্রুপের মাধ্যমেই তথ্য আদানপ্রদান করা হয়। একেকটি গ্যাংয়ের একজন দলনেতা থাকে। মূলত তার নেতৃত্বেই গ্যাং পরিচালিত হয়। আবার তাদের একজন পৃষ্ঠপোষক থাকে।

কিশোর গ্যাংয়ের অধিকাংশ স্কুলপড়ুয়া ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। তারা অধিকাংশ সময় দলবেঁধে চলে, দলবেঁধে আড্ডাবাজি করে। তারা দলবেঁধে দ্রুতবেগে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। তারা স্কুল-কলেজ শুরু ও ছুটির সময় ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত (ইভটিজিং) করে এবং বিভিন্নভাবে ভয় দেখায়। তারা নারীদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে আপত্তিকর ছবি পাঠায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ার করে, প্রকাশ্যে ধূমপান করে, যত্রতত্র মাদকদ্রব্য সেবন করে। তারা অকারণে মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করে, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়। আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। চুক্তিতে মারামারি করে। ফুটপাত, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ও নতুন ভবন তৈরির সময় ভবন মালিকদের থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে। মহল্লায় নতুন ভাড়াটিয়া দেখলেই বিভিন্ন কৌশলে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বাসার ভেতরে গিয়ে হেনস্তা করে (তাদের ভাষায় ভিটিং দেওয়া)। পরীক্ষার সময় বিশেষ করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় এদের দৌরাত্ম্য খুব বেশি দেখা যায়। ধর্মীয় উৎসব যেমন— ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, দুর্গাপূজার সময় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য থাকে চোখে পড়ার মতো। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানকে সামনে রেখেও তারা বেপরোয়া আচরণ প্রদর্শন করে থাকে। তারা মাদকবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। যত্রতত্র হামলা ও ভাঙচুর চালায়, স্কুল-কলেজে বুলিং-র‌্যাগিং তাদের নিত্যকর্ম। কথায় কথায় তারা দেশীয় ও খুদে অস্ত্র প্রদর্শন করে। জবরদখল, হাঙ্গামা, জমি দখল, ছিনতাই, মাস্তানি, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বোমাবাজি, অপহরণ, খুনখারাবিসহ নানা অপরাধে তারা জড়িত হচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা কী ভয়াবহরূপ ধারণ করেছে তা মাত্র কয়েকটি রির্পোট দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

মো. হাসিম আলী

সহকারী শিক্ষক, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ, বগুড়া।


[1]. দৈনিক ইনকিলাব, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩।

[2]. দৈনিক ইনকিলাব, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩।

[3]. দৈনিক যুগান্তর, ১৩ মে, ২০২৩।

[4]. দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২ মার্চ, ২০২২।

[5]. দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৮ অক্টোবর, ২০২২; দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩।

[6]. দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২২ নভেম্বর, ২০২২।

[7]. সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, ৪ মার্চ, ২০২২।

[8]. দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২।

[9]. দৈনিক যুগান্তর, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।

[10]. দৈনিক ইনকিলাব, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩।

Magazine