(মার্চ’২৩ সংখ্যায় প্রকাশিতের পর)
৩. ঈমানের ফলাফল ও উপকারিতা :
ঈমানের অসংখ্য-অগণিত ফলাফল ও উপকার রয়েছে। ঈমানের কত যে উপকারিতা রয়েছে অন্তরে, শরীরে, প্রশান্তিতে, উত্তম জীবনে, দুনিয়া ও আখেরাতে! যার সারসংক্ষেপ হলো, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণসমূহ এবং সমস্ত অকল্যাণ দূরীকরণ ঈমানের ফল। এই ফলাফল ও উপকারিতা হতে নিম্নে কিছু উল্লেখ করা হলো।
(১) আল্লাহর বন্ধুত্বের প্রতি খুশি হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾ ‘জেনে রেখো! নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না’ (ইউনুস, ১০/৬২)। অতঃপর আল্লাহ তাঁর ভাষায় তাদের পরিচয় তুলে ধরেন এভাবে, ﴿الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ﴾ ‘যারা ঈমান আনে আর তাক্বওয়া অবলম্বন করে’ (ইউনুস, ১০/৬৩)। তিনি আরো বলেন, ﴿اللهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ﴾ ‘যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন’ (আল-বাক্বারা, ২/২৫৭)। অর্থাৎ তিনি তাদেরকে কুফরের অন্ধকারসমূহ থেকে ঈমানের আলোর দিকে, অজ্ঞতার অন্ধকার হতে জ্ঞানের আলোয়, পাপের অন্ধকার হতে আনুগত্যের আলোর দিকে এবং উদাসীনতার অন্ধকার হতে সজাগ ও সচেতনতার দিকে বের করেন।
(২) আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে সফল হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ - وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾ ‘মুমিন পুরুষ আর মুমিন নারী পরস্পর বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, ছালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয়, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। তাদের প্রতিই আল্লাহ করুণা প্রদর্শন করবেন। আল্লাহ তো প্রবল পরাক্রান্ত মহাপ্রজ্ঞাময়। মুমিন পুরুষ আর মুমিন নারীর জন্য আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন জান্নাতের যার নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, আর জান্নাতে চিরস্থায়ী উত্তম বাসগৃহে। আর সবচেয়ে বড় (যা তারা লাভ করবে তা) হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই হলো বিরাট সাফল্য’ (আত-তওবা, ৯/৭১-৭২)। সুতরাং এই পবিত্র বাসস্থানসমূহের মাধ্যমে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি, রহমত ও সফলতা পাবে। কারণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করে তারা তাদের ঈমানের মাধ্যমে নিজেদেরকে এবং অন্যদেরকে পূর্ণাঙ্গ করেছে। সুতরাং তারা মহাসফলতা ও কল্যাণ অর্জন করেছে।
(৩) পূর্ণ ঈমান জাহান্নামে প্রবেশ থেকে বাধা দেয় এবং দুর্বল ঈমান জাহান্নামে চিরস্থায়ী হওয়া থেকে বাধা দেয়। কেননা যে ঈমান আনয়ন করে, ঈমানের কারণে সমস্ত ওয়াজিব কাজ আদায় করে এবং হারাম কাজ পরিহার করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। অনুরূপ যার অন্তরে ঈমানের কিছু অংশ আছে, সে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে না।
(৪) আল্লাহ মুমিনদের থেকে সমস্ত কষ্ট দূর করেন এবং বিপদ থেকে তাদের উদ্ধার করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿إِنَّ اللَّهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آمَنُوا﴾ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদেরকে রক্ষা করেন (যাবতীয় মন্দ হতে)’ (আল-হাজ্জ, ২২/৩৮)। অর্থাৎ তাদের থেকে সব কষ্ট এবং মানুষ ও জিন শয়তানের অনিষ্ট দূর করেন। তাদের থেকে শত্রুদের প্রতিহত করেন এবং বিপদ আসার পূর্বেই তাদের থেকে তা প্রতিরোধ ও দূর করেন এবং বিপদ চলে আসলে তা লাঘব করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَذَا النُّونِ إِذْ ذَهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَنْ لَنْ نَقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَى فِي الظُّلُمَاتِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ - فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذَلِكَ نُنْجِي الْمُؤْمِنِينَ﴾ ‘আর স্মরণ করুন যুননূন এর কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, আপনি ছাড়া কোনো (সত্য) মা‘বূদ নেই। আপনি মহাপবিত্র। নিশ্চয়ই আমি ছিলাম যালেম। অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি’ (আল-আম্বিয়া, ২১/৮৭-৮৮)। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿ثُمَّ نُنَجِّي رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا كَذَلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِينَ﴾ ‘অবশেষে আমি আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে নাজাত দেই, এভাবেই মুমিনদেরকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য’ (ইউনুস, ১০/১০৩)। তিনি আরো বলেন,﴿وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِينَ - إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُورُونَ - وَإِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ﴾ ‘আর নিশ্চয়ই আমার প্রেরিত বান্দাদের জন্য আমার কথা পূর্ব নির্ধারিত হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। আর নিশ্চয়ই আমার সৈন্যরাই বিজয়ী হবে’ (আছ-ছফফাত, ৩৭/১৭১-১৭৩)। তিনি আরো বলেন,﴿وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا﴾ ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন’ (আত-তালাক, ৬৫/২)। অর্থাৎ মানুষের উপর যা কিছু কষ্টসাধ্য হয়, তার সবকিছু থেকে বের হওয়ার পথ। তিনি অন্যত্র বলেন,﴿وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا﴾ ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন’ (আত-তালাক, ৬৫/৪)। সুতরাং মুত্তাক্বী মুমিনের জন্য আল্লাহ তাঁর কার্যাবলি সহজ করে দেন। সহজ কাজের জন্য তার পথ সুগম করেন, কষ্টের বিষয় তার থেকে দূর করেন এবং কষ্টকর কাজগুলো তার নিকট সহজ করেন। সকল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে স্বস্তি দেন, কষ্ট থেকে তার বের হওয়ার পথ তৈরি করে দেন এবং এমন জায়গা থেকে রিযিক্ব দেন যা সে ধারণাই করেনি। কুরআন ও হাদীছে এর আরো অনেক প্রমাণ আছে।
(৫) ঈমান দুনিয়া ও আখেরাতে পবিত্র জীবনের সুফল দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾ ‘যে মুমিন অবস্থায় সৎ আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত, তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব’ (আন-নাহল, ১৬/৯৭)। এটাই ঈমানের বৈশিষ্ট্য যা অন্তরের প্রশান্তি, আরাম, আল্লাহ যা রিযিক্ব দিয়েছেন তার প্রতি সন্তুষ্টি এবং অন্য কিছুর সাথে সম্পৃক্ত না থাকার সুফল বয়ে আনে। এটাই হলো পবিত্র জীবন। কারণ পবিত্র জীবনের মূল উৎস হলো অন্তরের আরাম, প্রশান্তি এবং বিশুদ্ধ ঈমানহারা ব্যক্তির ন্যায় অন্তর বিশৃঙ্খল না হওয়া’।[1] পবিত্র জীবন (হায়াতে ত্বয়্যেবা) যা শামিল করে: পবিত্র হালাল রিযিক্ব, অল্পে তুষ্টি, সুখ, দুনিয়ায় ইবাদতের মজা এবং আনুগত্যমূলক কাজ করা ও তা নিয়ে আনন্দিত হওয়া’।[2] ইমাম ইবনু কাছীর রহিমাহুল্লাহ বলেন, والصحيح أن الحياة الطيبة تشمل هذا كله ‘বিশুদ্ধ মত হলো, হায়াতে ত্বায়্যেবা এসবগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে’।[3] নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ ‘সে ব্যক্তি সফল হলো, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, যাকে প্রয়োজন পরিমাণ রিযিক্ব দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন, তাতে সে তুষ্ট হয়েছে’।[4] তিনি আরো বলেন,إِنَّ اللهَ لاَ يَظْلِمُ مُؤْمِنًا حَسَنَةً يُعْطَى بِهَا فِى الدُّنْيَا وَيُجْزَى بِهَا فِى الآخِرَةِ وَأَمَّا الْكَافِرُ فَيُطْعَمُ بِحَسَنَاتِ مَا عَمِلَ بِهَا لِلهِ فِى الدُّنْيَا حَتَّى إِذَا أَفْضَى إِلَى الآخِرَةِ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَةٌ يُجْزَى بِهَا ‘একটি নেকীর ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলা কোনো মুমিন বান্দার প্রতি অত্যাচার করবেন না। বরং তিনি এর ফলাফল দুনিয়াতে দান করবেন এবং আখেরাতেও দান করবেন। আর কাফের লোক পার্থিব জগতে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে সৎআমল করে, এর প্রতিদানস্বরূপ তিনি তাকে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরিশেষে আখেরাতে প্রতিফল দেওয়ার মতো তার কাছে কোনো সৎআমলই থাকবে না’।[5]
(৬) সমস্ত কথা ও কাজ বিশুদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ হবে, ব্যক্তি স্বীয় অন্তর দিয়ে কতটুকু ঈমান, ইখলাছের সাথে সেগুলো বাস্তবায়ন করেছে সে অনুপাতে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿فَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِ﴾ ‘সুতরাং যে মুমিন হয়ে সৎকাজ করে তার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা হবে না। আর আমি তো তা লিখে রাখি’ (আল-আম্বিয়া, ২১/৯৪)। অর্থাৎ তার চেষ্টা-পরিশ্রম অস্বীকার করা হবে না এবং তার আমলও নষ্ট হবে না। বরং তার ঈমানের দৃঢ়তা অনুপাতে তার আমল বৃদ্ধি করা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا﴾ ‘আর যে আখেরাত চায় এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে মুমিন অবস্থায়, তাদের চেষ্টা হবে পুরস্কারযোগ্য’ (বানী ইসরাঈল, ১৭/১৯)। আর আখেরাতের জন্য চেষ্টা-পরিশ্রম হলো, আখেরাতের নিকটবর্তী করে এমন সব আমল করা, যেগুলো আল্লাহ তাঁর নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবানে শরীআতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
(৭)ঈমানদারকে আল্লাহ ছিরাতে মুস্তাক্বীমের পথে পরিচালিত করবেন এবং ছিরাতে মুস্তাক্বীমের মধ্যে তাকে সত্যের জ্ঞান ও তার প্রতি আমল করা এবং আনন্দদায়ক বিষয়গুলো কৃতজ্ঞতার সাথে এবং কষ্টদায়ক ও বিপদ-মুছীবতকে সন্তোষ ও ধৈর্যের সাথে গ্রহণের তাওফীক্ব দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيمَانِهِمْ﴾ ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সৎআমল করে, তাদের প্রতিপালক তাদের ঈমানের বদৌলতে তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করবেন’।[6]
ইমাম ইবনু কাছীর রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘এখানে (ب) “বা” হরফটি (সাবাবিয়্যাত) কারণ বর্ণনার্থে ব্যবহারের সম্ভাবনা রাখে। তখন তার অদৃশ্য রূপ হবে, অর্থাৎ দুনিয়াতে তাদের ঈমান অনুপাতে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের ছিরাতে মুস্তাক্বীমের পথে পরিচালিত করবেন। যাতে তারা সেদিনটি অতিক্রম করে জান্নাতে পৌঁছতে পারে এবং (ب) “বা” হরফটি (ইস্তিআনা) ‘সাহায্য’ অর্থেও ব্যবহারের সম্ভাবনা রাখে। যেমনটি মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, يَهْدِيهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيمَانِهِمْ তাদের প্রতিপালক তাদের ঈমানের সাহায্যে তাদের পথ দেখাবেন। তিনি বলেন, يكون لهم نورا يمشون به ‘তাদের জন্য নূর (আলো) থাকবে যার সাহায্যে তারা চলবে’।[7] আর বলা হয়ে থাকে, তার আমল তার জন্য সুন্দর আকৃতি ও পরিচ্ছন্ন বাতাসের আকৃতি দেওয়া হবে। যখন সে কবর থেকে উঠবে, আমল তার সামনে আসবে এবং তার প্রতিটি ভালো কাজের সুসংবাদ দিবে। সে তাকে বলবে, তুমি কে? সে (আমল) বলবে, আমি তোমার আমল। অতঃপর সে তার জন্য তার সামনে নূর (আলো) হবে যাতে করে সে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারে’।[8]
(৮)ঈমানের কারণে আল্লাহ বান্দাকে ভালোবাসেন এবং মুমিনদের অন্তরেও তার প্রতি ভালোবাসা তৈরি করে দেন। আর আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন এবং মুমিনগণ যাকে ভালোবাসেন, সমস্ত সুখ ও কল্যাণ তাঁর জন্য অর্জিত হবে। মুমিনদের ভালোবাসার অনেকগুলো উপকার রয়েছে। যেমন- সুন্দর প্রশংসা, জীবিত ও মৃত অবস্থায় তার জন্য দু‘আ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, পরম করুণাময় অবশ্যই তাদের জন্য (বান্দাদের হৃদয়ে) ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন’ (মারইয়াম, ১৯/৯৬)।
(৯)দ্বীনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব অর্জন। এটা ঈমানের সবচেয়ে সুন্দর ফল। যারা (ইলম) জ্ঞান ও আমলের দ্বারা তাদের ঈমানকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, যে সমস্ত মুমিনের জন্য আল্লাহ সত্য বলার জবান দিবেন এবং তাদেরকে ইমাম বানাবেন, তাঁর নির্দেশে তারা পথ দেখাবেন এবং তাদের অনুকরণ করা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ ‘আর আমি তাদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার নির্দেশ মোতাবেক পথ প্রদর্শন করত। যতদিন তারা ধৈর্য অবলম্বন করেছিল আর আমার আয়াতসমূহের উপর দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল’ (আস-সাজদাহ, ৩২/২৪)। সুতরাং ধৈর্য ও দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমে দ্বীনের নেতৃত্ব পাওয়া যাবে। কারণ ঈমান ও ঈমান পূর্ণ হওয়ার মুখ্য বিষয় হলো, ধৈর্য ও দৃঢ় বিশ্বাস।
(১০)সুউচ্চ মর্যাদা লাভ। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَرْفَعِ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ﴾ ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন’ (আল-মুজাদালা, ৫৮/১১)। সুতরাং তারা দুনিয়াতে ও আখেরাতে আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের নিকটে সৃষ্টিকুলের সেরা। বস্তুত তারা এই মর্যাদা লাভ করেছে তাদের বিশুদ্ধ ঈমান, ইলম (জ্ঞান) ও তাদের দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমে।
(১১)আল্লাহর মর্যাদা ও সর্বদিক থেকে পূর্ণ নিরাপত্তার সুসংবাদ লাভ। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ﴾ ‘আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও’ (আল-বাক্বারা, ২/২২৩; আত-তওবা, ৯/১১২; ইউনুস, ১০/৮৭; আল-আহযাব, ৩৩/৪৭; আছ-ছফ, ৬১/১৩)। তিনি এখানে সুসংবাদকে কোনো শর্ত না দিয়েই ব্যবহার করেছেন, যাতে দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত কল্যাণ অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং তিনি অন্য আয়াতে সুসংবাদকে শর্তযুক্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলার বাণী,﴿وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ﴾ ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ,[9] যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ’ (আল-বাক্বারা, ২/২৫)। সুতরাং মুমিনদের জন্য শর্তমুক্ত ও শর্তযুক্ত সুসংবাদ আছে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের জন্য শর্তমুক্ত নিরাপত্তা আছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ﴾ ‘যারা ঈমান এনেছে এবং স্বীয় ঈমানকে যুলুমের সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত’ (আল-আনআম, ৬/৮২)। আর তাদের জন্য শর্তযুক্ত নিরাপত্তা আছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿فَمَنْ آمَنَ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾ ‘যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেকে সংশোধন করে নিয়েছে, তাদের নেই কোনো ভয় এবং তারা চিন্তিত হবে না’ (আল-আনআম, ৬/৪৮)। সুতরাং ভবিষ্যতে তারা যা কিছুর সম্মুখীন হয় তার ভয় আল্লাহ তাদের থেকে দূর করেছেন এবং অতীতে যা ঘটেছে তার চিন্তা দূর করেছেন। এর মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা পূর্ণ হয়। ফলে মুমিনের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আছে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সমস্ত কল্যাণের সুসংবাদ’।[10]
(১২)ঈমানের মাধ্যমে বহুগুণে ছওয়াব এবং পূর্ণ আলো অর্জিত হয় যার মাধ্যমে বান্দা তার জীবনে ও ক্বিয়ামতের দিনে চলবে। দুনিয়াতে তার ইলম (জ্ঞান) ও ঈমানের আলো দিয়ে চলবে এবং ক্বিয়ামতের দিনে যখন সমস্ত আলো নিভে যাবে, তখন তার আলো দিয়ে পুলসিরাতে চলবে এবং সম্মান ও স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা জান্নাতে যাবে। অনুরূপ ঈমানের উপর আল্লাহ ক্ষমা ধার্য করেছেন। আর যাকে তার পাপসমূহ থেকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে, শাস্তি থেকে সে নিরাপদ থাকবে এবং মহাপ্রতিদান পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيَجْعَلْ لَكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ﴾ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো, তিনি স্বীয় রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দিবেন, আর তোমাদেরকে নূর (আলো) দিবেন, যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আল-হাদীদ, ৫৭/২৮)।
(১৩)ঈমানের কারণে মুমিনদের জন্য কল্যাণ ও হেদায়াত অর্জিত হবে। আল্লাহ মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পূর্ববর্তী নবীগণের উপর যা নাযিল করেছেন তাঁর প্রতি মুমিনদের ঈমান, অদৃশ্যের প্রতি ঈমান, ছালাত আদায় ও যাকাত প্রদান উল্লেখ করার পর বলেছেন,﴿أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾ ‘তারাই তাদের প্রতিপালকের হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে, আর তারাই সফলকাম’ (আল-বাক্বারা, ২/৫)। সুতরাং এটাই পরিপূর্ণ হেদায়াত ও পূর্ণাঙ্গ কল্যাণ। অতএব পূর্ণ ঈমান ব্যতীত হেদায়াত ও কল্যাণের কোনো পথ নেই।
(১৪)উপদেশ হতে উপকৃত হওয়া ঈমানের আরেকটি সুফল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِينَ﴾ ‘আর তুমি উপদেশ দিতে থাকো, কেননা উপদেশ মুমিনদের উপকার দিবে’ (আয-যারিয়াত, ৫১/৫৫)। আর এটা একারণে যে, ঈমান ব্যক্তিকে সত্য গ্রহণ ও ইলম-আমলে তাঁর অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। ঈমানের সাথে রয়েছে উপকারী উপদেশসমূহ গ্রহণের মহা হাতিয়ার ও প্রস্তুতি এবং তার নিকটে এমন কোনো বাধা থাকে না যা তাকে সত্যগ্রহণ ও তার প্রতি আমল করতে তাকে বাধা দেয়।
(১৫)ঈমান ব্যক্তিকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে, দুঃখ-দুর্দশার সময় ধৈর্যধারণ করতে ও সর্বাবস্থায় কল্যাণ অর্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيرٌ - لِكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ﴾ ‘পৃথিবীতে অথবা তোমাদের নিজেদের উপর এমন কোনো মুছীবত আসে না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিব্ধ রাখি না। এটা (করা) আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। এটা এজন্য যে, তোমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য তোমরা যেন হতাশাগ্রস্ত না হও, আর তোমাদেরকে যা দান করা হয়েছে তার জন্য তোমরা যেন উৎফুল্ল না হও। কেননা আল্লাহ অহংকারী ও অধিক গর্বকারীকে পছন্দ করেন না’ (আল-হাদীদ ৫৭/২২-২৩)। তিনি অন্যত্র বলেন,﴿مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللهِ يَهْدِ قَلْبَهُ﴾ ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন’ (আত-তাগাবুন, ৬৪/১১)। এটা যদি ঈমানের ফল নাও হয়, তবুও তা ব্যক্তিকে ঐ সকল বিপদাপদ ও দুর্ঘটনা থেকে দূরে রাখে, যেগুলো প্রত্যেকের সামনে সবসময় দৃষ্টিগোচর হয়। আর ঈমান ও দৃঢ় বিশ্বাসের সমন্বিত রূপ সবচেয়ে বেশি এগুলো থেকে দূরে রাখে। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ﴿عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ﴾ ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুছীবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য্য ধরে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর’।[11] আর কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্য্য সকল প্রকার কল্যাণ একত্রিত করে। সুতরাং মুমিন সবসময় কল্যাণের গনীতম পায়, সর্বাবস্থায় লাভবান হয়। নেয়ামতরাজি ও স্বাচ্ছন্দ্যের সময় তার জন্য দুটি নেয়ামত একত্রিত হয়: (ক) প্রিয় বস্তু পাওয়ার নেয়ামত, (খ) আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনের তাওফীক্ব পাওয়ার নেয়ামত, যা এর চাইতেও মহত্তর। এর মাধ্যমে তার উপর নেয়ামত পরিপূর্ণ হবে।
পক্ষান্তরে দুঃখ-দুর্দশা প্রাপ্তির সময় তার জন্য তিনটি নেয়ামত একত্রিত হয়: (ক) পাপসমূহ মোচনের নেয়ামত, (খ) এর চাইতে মহত্তর ধৈর্যের মর্যাদা প্রাপ্তির নেয়ামত এবং (গ) দুঃখ-দুর্দশা তার উপর সহজসাধ্য হওয়ার নেয়ামত। কারণ, সে যখন পুরস্কার ও প্রতিদান অর্জনের ব্যাপারে জানতে পারবে এবং ধৈর্যধারণের প্রতি অভ্যস্ত হবে, বিপদ তার জন্য হালকা হয়ে যাবে’।[12]
(চলবে)
মূল : ড. সাঈদ ইবনু আলী ইবনু ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী রহিমাহুল্লাহ
অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
নারায়ণপুর, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
[1]. সা‘দী, আত-তাওযীহু ওয়াল বায়ান লি শাজারাতিল ঈমান, পৃ. ৬৮।
[2]. ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ২/৫৬৬।
[3]. প্রাগুক্ত।
[4]. ছহীহ মুসলিম, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকা এবং অল্পে তুষ্ট থাকা সম্পর্কে’ অনুচ্ছেদ, ২/৭৩০, হা/১০৫৪; মিশকাত, হা/৫১৬৫।
[5]. ছহীহ মুসলিম, ‘ক্বিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা’ অধ্যায়, ‘নেকীর প্রতিফল মুমিনকে দুনিয়া ও আখেরাত দু’জগতে প্রদান করা হয় এবং কাফেরকে নেকীর প্রতিফল দুনিয়াতে ত্বারান্বিত করা হয়’ অনুচ্ছেদ, ৪/২১৬২, হা/২৮০৮; মিশকাত, হা/৫১৫৯।
[6]. সূরা ইউনুস, ১০/৯; সূরা আল-হজ্জ, ২২/৫৪; সা‘দী, আত-তাওযীহু ওয়াল বায়ান লি শাজারাতিল ঈমান, পৃ. ৭০।
[7]. তাফসীরে কুরআনুল আযীম, ২/৩৯০।
[8]. ত্বাবারানী, জামেউল বায়ান আন-তা‘বীলি আইয়িল কুরআন, ১৫/২৭, আর সনদ ক্বাতাদার দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
[9]. জান্নাত কয়টি? উত্তর : জান্নাতের নাম, অর্থ ও শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে ইবনুল ক্বাইয়িম রহিমাহুল্লাহ বলেন,ولها عدة أسماء باعتبار صفاتها ومسماها واحد باعتبار الذات فهي مترادفة من هذا الوجه وتختلف باعتبار الصفات فهي متباينة من هذا الوجه وهكذا أسماء الرب سبحانه وتعالى وأسماء كتابه وأسماء رسله وأسماء اليوم الآخر وأسماء النار ‘জান্নাতের ছিফাত বা গুণসমূহের বিবেচনায় জান্নাতের নাম বেশ কয়েকটি, কিন্তু অস্তিত্ব বিবেচনায় জান্নাত একটিই। সুতরাং এদিক থেকে জান্নাতের নামসমূহ একার্থবোধক। পক্ষান্তরে, জান্নাতের ছিফাত বা গুণসমূহের দিক বিবেচনায় প্রতিটি নামের অর্থ ভিন্ন। আল্লাহর নাম, আল্লাহর কিতাবের নাম, আল্লাহর রাসূলগণের নাম, আখেরাতের নাম ও জাহান্নামের নামসমূহও ঠিক এমনই’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, হাদীয়ুল আরওয়াহ, পৃ.১১১)।
[10]. সা‘দী, আত-তাওযীহু ওয়াল বায়ান লি শাজারাতিল ঈমান, পৃ. ৭৭-৮৮।
[11]. ছহীহ মুসলিম, ‘দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণহীনতা’ অধ্যায়, ‘মুমিনের সকল কাজই অতীব কল্যাণকর’ অনুচ্ছেদ, হা/২৯৯৯।
[12]. সা‘দী, আত-তাওযীহু ওয়াল বায়ান লি শাজারাতিল ঈমান, পৃ. ৭১-৮৮।