কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

তাফসীর করার মূলনীতি

post title will place here

মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো’ (আত-তাহরীম, ৬৬/৮)। বাংলাদেশের জনৈক বক্তা উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নাসুহা নামক ব্যক্তির মতো তওবা করো’। চলুন আমরা দেখি এই আয়াতের ব্যাখ্যা কী? তাফসীরে কুরতুবীতে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘তওবাতুন নাছূহা হলো মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করা, অন্তরে অনুশোচনা করা এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ভবিষ্যতে সেই গুনাহ থেকে দূরে রাখা’। শুধু ওই বক্তা নয়, আমাদের দেশে বহু মুফাসসির এই ধাঁচের। চলছে শীতকাল। শুরু হয়েছে তাফসীর মাহফিল। তাফসীরের নামে ওয়ায-মাহফিলে কী যে হয়, তা জ্ঞানী মাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। অনেক বক্তা মুফাসসির সেজে বসে আছেন। শুরুতে নামের আগে টাইটেল লাগান আল্লামা মুফাসসিরে কুরআন অমুক। অথচ তিনি তাফসীর করেন মনগড়া। আমাদের দেশের অনেক মুফাসসির তাফসীর করার মূলনীতি জানেন না। এখন যেহেতু শীতকাল চলছে, সেহেতু বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন অনুভব করছি।

কুরআনের তাফসীর পাঁচভাবে করতে হবে—

(১) আমাদের প্রথমে কুরআনের তাফসীর কুরআন দিয়েই করার চেষ্টা করতে হবে‌। কুরআন নিজেই অনেক অস্পষ্ট আয়াতের তাফসীর করেছে। যেমন- আল্লাহ তাআলা বলেন,أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ - الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ - لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ‘জেনে রাখো, আল্লাহর অলীদের (বন্ধুদের) কোনো ভয় নেই, চিন্তা নেই। (আল্লাহর অলী হলেন, তারা) যারা ঈমান এনেছে ও তাক্বওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য পার্থিব জগতে ও পরকালে সুসংবাদ রয়েছে। আল্লাহর কালেমাসমূহের কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই হচ্ছে মহাসফলতা’ (ইউনুস, ১০/৬২-৬৪)। এই আয়াতে কুরআনই কারা আল্লাহর অলী তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,الْقَارِعَةُ - مَا الْقَارِعَةُ - وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ - يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ - وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوشِ ‘মহাপ্রলয়! মহাপ্রলয় কী? মহাপ্রলয় সম্পর্কে আপনাকে কীসে জানাবে? (যেদিন মহাপ্রলয় হবে) সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো, আর পর্বতসমূহ হবে বিক্ষিপ্ত পশমের মতো’ (আল-ক্বারিআহ, ১০১/১-৫)। এই আয়াতে কুরআনই الْقَارِعَةُ এর ব্যাখ্যা দিয়েছে।

(২) কুরআনে যদি কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা না থাকে, তাহলে হাদীছ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ‘আমরা আপনার কাছে কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের কাছে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা করতে পারেন এবং যাতে তারা চিন্তাভাবনা করতে পারে’ (আন-নাহল, ১৬/৪৪)। এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কুরআনের ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছে বলেন,أَلاَ إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ ‘জেনে রাখো! আমাকে কিতাব এবং তার অনুরূপ কিছু দেওয়া হয়েছে’।[1] ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘অনুরূপ কিছু দেওয়া হয়েছে’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সুন্নাহ।[2]

কুরআনের তাফসীর যে হাদীছ দিয়ে হয়েছে, তার কিছু উদাহরণ নিচে পেশ করা হলো—

আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,لَمَّا نَزَلَتِ ‏‏الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ‏‏ قَالَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَيُّنَا لَمْ يَلْبِسْ إِيمَانَهُ بِظُلْمٍ فَنَزَلَتْ ‏لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ‘যখন এ আয়াত নাযিল হলো, “যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানের সাথে যুলমের সংমিশ্রন ঘটায়নি” (আল-আনআম, ৬/৮২)। তখন নবী‎ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি আছে যে, নিজের ঈমানের সাথে যুলমের সংমিশ্রন ঘটায়নি? তখন এ আয়াত নাযিল হয়, ‘আল্লাহর সঙ্গে শরীক করো না। কেননা শিরক হচ্ছে মহা যুলুম’ (লুক্বমান, ৩১/১৮)[3] এখানে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলমের ব্যাখ্যা করেছেন শিরক।

আবূ উমামা আল-বাহেলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেক্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ فِي خُطْبَتِهِ عَامَ حِجَّةِ الْوَدَاعِ إِنَّ اللهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ فَلاَ وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ‏ ‘আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিদায় হজ্জের দিন তাঁর খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক হক্বদারকে তার হক্ব দিয়ে দিয়েছেন। অতএব কোনো ওয়ারিসের জন্য অছিয়ত করা যাবে না’।[4] এই হাদীছে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অছিয়ত-সংক্রান্ত কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন যে, ওয়ারিশদের জন্য কোনো অছিয়ত করা যাবে না।

উক্ববা ইবনু আমের আল-জুহানী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُولُ‏ وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ‏ أَلاَ إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْىُ، أَلاَ إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْىُ أَلاَ إِنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْىُ‏‏ ‘আমি রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের উপরে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী শক্তি অর্জন করো” (আল-আনফাল, ৮/৬০)। জেনে রাখো! নিশ্চয়ই শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপণ, জেনে রাখো! নিশ্চয়ই শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপণ, জেনে রাখো! নিশ্চয়ই শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপণ’।[5] এখানে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন।

(৩) কুরআন ও সুন্নাহ থেকে কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা না পেলে এ বিষয়ে ছাহাবীদের কথা দ্বারা তাফসীর করতে হবে। কারণ তারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গী ছিলেন। কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাদের থেকে কুরআন বেশি বুঝতেন। তাদের হৃদয় ছিল নিষ্কলুষ। স্বয়ং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্পর্কে বলেন,خَيْرُكُمْ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ قَالَ عِمْرَانُ لاَ أَدْرِي ذَكَرَ ثِنْتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا بَعْدَ قَرْنِهِ ثُمَّ يَجِيءُ قَوْمٌ يَنْذِرُونَ وَلاَ يَفُونَ وَيَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ وَيَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ وَيَظْهَرُ فِيهِمْ السِّمَنُ ‘তোমাদের মধ্যে আমার যুগ সর্বোত্তম, এরপর তাদের পরবর্তী যুগ, অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগ। ইমরান রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যুগ বলার পর দু’বার বলেছেন, না-কি তিনবার বলেছেন, তা আমার জানা নেই’। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এরপর এমন লোকের আবির্ভাব হবে, যারা মানত করবে কিন্তু তা পূরণ করবে না, তারা খিয়ানত করবে, আমানতদার হবে না। তারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদের সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। আর তাদের মাঝে প্রকাশ পাবে শারীরিক স্থূলতা’।[6]

ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একবার নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টয়লেটে গেলেন, তখন আমি তাঁর জন্য ওযূর পানি রাখলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কে রেখেছে?’ তাঁকে জানানো হলে তিনি বললেন, اللَّهُمَّ فَقِّهْهُ فِي الدِّينِ ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করুন’।[7] এই হাদীছে দেখুন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর জন্য বিশেষভাবে দু‘আ করেছেন।

আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, وَاللهِ الَّذِيْ لَا إِلَهَ غَيْرُهُ مَا أُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ مِنْ كِتَابِ اللهِ إِلَّا أَنَا أَعْلَمُ أَيْنَ أُنْزِلَتْ وَلَا أُنْزِلَتْ آيَةٌ مِنْ كِتَابِ اللهِ إِلَّا أَنَا أَعْلَمُ فِيْمَ أُنْزِلَتْ وَلَوْ أَعْلَمُ أَحَدًا أَعْلَمَ مِنِّيْ بِكِتَابِ اللهِ تُبَلِّغُهُ الإِبِلُ لَرَكِبْتُ إِلَيْهِ ‘আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সূরা সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোন ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তাহলে সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম’।[8]

ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,كانوا إذا تَعلَّموا عَشْرَ آياتٍ لم يُجاوِزوهنَّ إلى العَشْرِ الأُخَرِ حتى يَعلَموا ما فيهنَّ فكُنا نتعلَّمُ القُرْآنَ والعَمَلَ به ‘ছাহাবীগণ যখন ১০টি আয়াত শিক্ষা করতেন, তখন তারা পরবর্তী ১০ আয়াতের দিকে মনোনিবেশ করতেন না যতক্ষণ না সেসব আয়াতের ইলম শিক্ষা করতেন। কাজেই আমরা কুরআন শিখতাম এবং আমলও শিখতাম’।[9]

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোনো ছাহাবী যদি কোনো কথা বলেন, আর আরেক ছাহাবী তার বিরোধিতা করেন, তাহলে ওই ছাহাবীর কথা গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, الصَّحَابِيُّ إِذَا قَالَ قَوْلًا وَخَالَفَهُ غَيْرُهُ مِنْهُمْ لَمْ يَكُنْ قَوْلُهُ حُجَّةً ‘কোনো ছাহাবী যদি একটি কথা বলেন আর অন্য ছাহাবী তার বিপরীত কথা বলেন, তাহলে ওই কথা দলীলযোগ্য নয়’।[10]

এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো, দেখতে হবে কার কথা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা বা কাজের সাথে মিলে। যার কথা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথার সাথে মিলবে, তার কথা প্রাধান্য পাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ‘যদি তোমরা কোনো বিষয়ে মতদ্বন্দ্বে লিপ্ত হও, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে থাকো। এটাই হলো উত্তম এবং পরিণতির দিকদিয়ে উৎকৃষ্ট’ (আন-নিসা, ৪/৫৯)

(৪) কুরআন, সুন্নাহ ও ছাহাবীদের কথা থেকে কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা না পেলে এ ক্ষেত্রে তাবেঈনের কথা থেকে তাফসীর করতে হবে। কারণ তারা ছাহাবীদের থেকে জ্ঞান শিখেছেন।

رأيتُ مُجاهِدًا يسألُ ابنَ عبّاسٍ عن تفسيرِ القرآنِ ومعهُ الواحِدُ فيقولُ له ابنُ عبّاسٍ اكتُبْ. قال حتّى سألَهُ عَنِ التَّفسيرِ كلِّهِ.

‘আমি মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ-কে দেখেছি তিনি ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-কে কুরআনের তাফসীর জিজ্ঞেস করতেন। তার সাথে আরো একজন ছিলেন। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা তাকে বলেন, তুমি লেখো। তিনি বলেন, মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ তাকে সম্পূর্ণ কুরআনের তাফসীর জিজ্ঞেস করেন’।[11]

(৫) কুরআন, সুন্নাহ, ছাহাবীদের কথা ও তাবেঈনের কথা থেকেও যদি কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা না পাওয়া যায়, তাহলে এ ক্ষেত্রে যারা কুরআন ও হাদীছের ভাষাজ্ঞান রাখে তাদের থেকে তাফসীর গ্ৰহণ করতে হবে। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,التَّفْسِيرُ عَلَى أَرْبَعَةِ أَوْجُهٍ: وَجْهٍ تَعْرِفُهُ الْعَرَبُ مِنْ كَلاَمِهَا، وَتَفْسِيرٌ لاَ يُعْذَرُ أَحَدٌ بِجَهَالَتِهِ، وَتَفْسِيرٌ يَعْلَمُهُ الْعُلَمَاءُ، وَتَفْسِيرٌ لاَ يَعْلَمُهُ إِلاَّ اللَّهُ ‘তাফসীর চার ধরনের- ১. আরবরা তাদের ভাষা আরবী হওয়ার সুবাদে জানে। ২. আরেক প্রকার তাফসীর সবাই জানে। ৩. আরেক প্রকার তাফসীর আলেমরা জানে। ৪. আরেক প্রকার তাফসীর শুধু আল্লাহ জানেন। অন্য কেউ জানে না।[12] অন্যত্র ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,نَزَلَ الْقُرْآنُ عَلَى أَرْبَعَةِ أَوْجُهٍ: حَلَالٍ وَحَرَامٍ، لَا يَسَعُ أَحَدًا جَهْلُهُمَا، وَوَجْهٍ عَرَبِيٍّ تَعْرِفُهُ الْعَرَبُ، وَوَجْهِ تَأْوِيلٍ يَعْلَمُهُ الْعُلَمَاءُ، وَوَجْهِ تَأْوِيلٍ لَا يَعْلَمُهُ إِلَّا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ، وَمَنِ انْتَحَلَ فِيهِ عِلْمًا فَقَدْ كَذَبَ ‘তাফসীর চার ধরনের। হালাল-হারাম সম্পর্কে তাফসীর সবাই জানে। আরবরা তাদের ভাষা আরবী হওয়ার সুবাদে জানে। আরেক প্রকার তাফসীর আলেমরা জানে। আরেক প্রকার তাফসীর শুধু আল্লাহ জানেন। অন্য কেউ জানে না। কেউ এই বিষয়ে জ্ঞানের দাবি করলে সে মিথ্যা দাবি করেছে’।[13]

শীতকালে আমরা যারা সাধারণ জনতাকে সঠিক দিশা দেওয়ার জন্য ওয়ায-নছীহত করে থাকি, তাদের উচিত তাফসীর করার এই নীতিমালা গভীরভাবে উপলব্ধি করে আলোচনা করা।

শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য অনেক বক্তা আহলে কিতাব থেকে আগত বর্ণনা যাকে ইসরাঈলী বর্ণনা বলা হয় এগুলো দেদারসে বলে থাকেন। ইসরাঈলী বর্ণনা বলার ক্ষেত্রে লাগাম টেনে আলোচনা করার দরকার। কারণ অধিকাংশ ইসরাঈলী বর্ণনা ভুয়া, মিথ্যা। ইয়াহূদীরা বিকৃতি করে বর্ণনা করেছে। ইসরাঈলী বর্ণনার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো, যে বিষয়ে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিপরীত হাদীছ পাওয়া যায়, ওই বিষয়ে বর্ণনা করা জায়েয নেই। তবে শ্রোতাদের সতর্ক করার জন্য বর্ণনা করা জায়েয আছে। আর যে বিষয়ে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো কিছু বর্ণিত হয়নি, ওই ইসরাঈলী বর্ণনার ব্যাপারে সত্য মিথ্যা কোনো কিছু বলা যাবে না। বরং নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ আপনি মিথ্যা বললে ওইটা সত্য হলে আপনি সত্যকে মিথ্যা মনে করলেন। আর মিথ্যা হলে আপনি মিথ্যাকে সত্য মনে করলেন। এদিকে লক্ষ্য রেখেই নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘আমার কথা পৌঁছে দাও, যদিও তা একটি আয়াত হয়। আর বনী ইসরাঈলের ঘটনাবলি বর্ণনা করো। এতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু যে কেউ ইচ্ছা করে আমার উপর মিথ্যারোপ করল, সে যেন জাহান্নামকে তার ঠিকানা নির্দিষ্ট করে নিল’।[14]

তাছাড়া তাফসীর ত্ববারী, তাফসীর কুরতুবী, তাফসীর ইবনে কাছীরসহ অতীত ও বর্তমানের নির্ভরযোগ্য তাফসীরগুলো থেকে আয়াতের তাফসীর দেখে উপস্থাপন করতে হবে। আর হাদীছের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো দেখে সঠিক ব্যাখ্যা নিতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের কুরআন-হাদীছ বুঝে ব্যাখ্যা করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

সাঈদুর রহমান

শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


[1]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৪, হাদীছ ছহীহ।

[2]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ১/১০।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪২৮।

[4]. ইবনু মাজাহ, হা/২৭১৩, হাদীছ ছহীহ।

[5]. আবূ দাঊদ, হা/২৫১৪, হাদীছ ছহীহ।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৬৯৫।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪৩।

[8]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০০২।

[9]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ১/১১।

[10]. শারহুন নাবাবী আলা ছহীহি মুসলিম, ৩/৫।

[11]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ১/১২।

[12]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ১/১৫।

[13]. প্রাগুক্ত।

[14]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১।

Magazine