এ সময় যা নিষিদ্ধ
(১) মসজিদে হারামে প্রবেশকালে মাথা নত করা।
(২) মসজিদে হারামে প্রবেশকালে প্রমাণিত দু‘আ ছাড়া মনগড়া দু‘আ পাঠ করা।
(৩) কা‘বাঘর দর্শন মাত্র কোনো মনগড়া দু‘আ পাঠ না করা এবং লোক দেখানো কোনো ভাব প্রকাশ না করা।
ত্বাওয়াফে কুদূম : মক্কার অধিবাসী নয় এমন ব্যক্তির মক্কায় আগমনের সময় যে ত্বওয়াফ করা হয়, তাকে ত্বাওয়াফে কুদূম বলে। মক্কার সীমানায় প্রবেশের সাথে এর হুকুম কার্যকর হয় আর বের হওয়ার সাথে সাথে এর হুকুম রহতি হয়ে যায়।
(১) ১০ তারিখে ত্বাওয়াফে ইফাযা বা হজ্জের ত্বাওয়াফ।
(২) ওয়াজিব ত্বাওয়াফ, যেমন- বিদায়ী ত্বাওয়াফ।
(৩) নফল ত্বাওয়াফ, যা হজ্জ-উমরা ছাড়াই করা হয়।
ত্বাওয়াফ শুরু হবে হাজরে আসওয়াদ হতে এবং শেষ হবে হাজরে আসওয়াদের কোণায় এসে। এভাবে সাত চক্কর দেওয়ার নাম ত্বাওয়াফ।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَدِمَ مَكَّةَ أَتَى الْحَجَرَ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ مَشَى عَلَى يَمِينِهِ فَرَمَلَ ثَلاَثًا وَمَشَى أَرْبَعًا
জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় আসলেন তখন হাজরে আসওয়াদের নিকট এসে তাতে চুম্বন দিলেন। অতঃপর তার ডান দিক হয়ে হাঁটতে লাগলেন। তিনি তিন বার রমল বা দ্রুত হাঁটলেন। আর চার বার স্বাভাবিকভাবে হাঁটলেন।[1] এ হাদীছ প্রমাণ করে চক্করের সংখ্যা সাত।
زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ رَأَيْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رضي الله عنه قَبَّلَ الْحَجَرَ وَقَالَ لَوْلاَ أَنِّى رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبَّلَكَ مَا قَبَّلْتُكَ
যায়েদ ইবনু আসলাম রাযিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা হতে বর্ণনা করে বলেন, আমি উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন দিতে দেখেছি। তিনি চুম্বন দেওয়ার সময় বললেন, যদি আমি আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চুম্বন দিতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন দিতাম না।[2]
عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَرَبِىٍّ قَالَ سَأَلَ رَجُلٌ ابْنَ عُمَرَ رضي الله عنهما عَنِ اسْتِلاَمِ الْحَجَرِ . فَقَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَلِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ. قَالَ قُلْتُ أَرَأَيْتَ إِنْ زُحِمْتُ أَرَأَيْتَ إِنْ غُلِبْتُ قَالَ اجْعَلْ أَرَأَيْتَ بِالْيَمَنِ ، رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَلِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ
যুবায়ের ইবনু আরাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা-কে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্পর্শ ও চুম্বন দিতে দেখেছি। সে ব্যক্তি বললেন, যদি ভিড়ে আটকে যাই অথবা অপারগ হই, সেক্ষেত্রে আপনার অভিমত কী? তিনি বললেন, (আপনার অভিমত কী) এ কথাটি ইয়ামানে রেখে দাও। আমি আল্লাহর রাসূলকে স্পর্শ ও চুম্বন দিতে দেখেছি।[3] এই হাদীছে প্রমাণিত হয় হাজরে আসওয়াদে চুম্বন দেওয়া এবং স্পর্শ করা দুটাই জায়েয। তবে চুম্বন ও স্পর্শ সম্ভব না হলে পাথর অভিমুখে এক হাত তুলে ইশারা করবে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ طَافَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَيْتِ عَلَى بَعِيرٍ ، كُلَّمَا أَتَى عَلَى الرُّكْنِ أَشَارَ إِلَيْهِ
ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে আরোহী হয়ে বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ করেন। যখনই তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন, তখনই কোনো কিছু দিয়ে তার দিকে ইশারা করতেন।[4] এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, কোনো বস্তু বা হাত দিয়ে ইশারা করলেই চলবে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ طَافَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَيْتِ عَلَى بَعِيرٍ ، كُلَّمَا أَتَى الرُّكْنَ أَشَارَ إِلَيْهِ بِشَىْءٍ كَانَ عِنْدَهُ وَكَبَّرَ
ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে আরোহী হয়ে বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ করেন। যখনই তিনি হাজরে আসওয়াদের পাশে আসতেন, তখনই কোনো বস্তু দিয়ে ইশারা করতেন এবং তাকবীর বলতেন।[5] এই হাদীছ প্রমাণ করে ইশারা করার সময় মুখে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে। হাতে চুম্বন খেতে হবে না এবং মুখ মুছা যাবে না।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما قَالَ: «لَمْ أَرَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَلِمُ مِنَ الْبَيْتِ إِلَّا الرُّكْنَيْنِ الْيَمَانِيَّيْنِ
ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শুধু বায়তুল্লাহর রুকনে ইয়ামানী এবং রুকনে হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করতে দেখেছি।[6] এই হাদীছ প্রমাণ করে, কা‘বাঘরের এ কোণদ্বয় স্পর্শ করতে হবে। হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা বড় ছওয়াবের কাজ।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْحَجَرِ: وَاللَّهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا، وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ، يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে উঠাবেন। তখন পাথরের দুটি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখতে পাবে এবং জিহ্বা থাকবে, যা দিয়ে সে কথা বলবে। আর যারা সঠিকভাবে পাথরটি স্পর্শ করবে, তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।[7]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزَلَ الْحَجَرُ الْأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَهُوَ أَشَدُّ (بَيَاضًا) مِنَ اللَّبَنِ، فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ
ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হাজরে আসওয়াদ যখন জান্নাত হতে অবর্তীণ হয়, তখন দুধের চেয়ে অধিক সাদা ছিল। পরে আদম সন্তানের পাপ তাকে কালো করে দেয়’।[8]
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ رضي الله عنه أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يُزَاحِمُ عَلَى الرُّكْنَيْنِ زِحَامًا مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَاحِمُ عَلَيْهِ. قَالَ: إِنْ أَفْعَلْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ مَسْحَهُمَا كَفَّارَةٌ لِلْخَطَايَا وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ مَنْ طَافَ بِهَذَا الْبَيْتِ أُسْبُوعًا، فَأَحْصَاهُ كَانَ كَعِتْقِ رَقَبَةٍ وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ لَا يَضَعُ قَدَمًا وَلَا يَرْفَعُ أُخْرَى إِلَّا أَحَطَّ اللَّهُ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةً وَكَتَبَ لَهُ حَسَنَةً
তাবেঈ উবায়দা ইবনু উমায়ের হতে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীতে ভিড় করতেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্য কোনো ছাহাবীকে এমন ভিড় করতে দেখিনি। ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যদি আমি এরূপ করি (তাতে কোনো সমস্যা নেই)। কেননা আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় এই দুটিকে স্পর্শ করা সকল পাপের কাফফারাস্বরূপ। আরো বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চারপাশে সাত চক্কর দিবে এবং তা পূর্ণভাবে আদায় করবে, সে একটি গোলাম আযাদ করার সমান নেকী পাবে। ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরো বলতে শুনেছি, ‘কোনো ব্যক্তি ত্বাওয়াফের সময় যত বার পা উঠাবে এবং নামাবে, তত বার তার একটি করে পাপ মাফ হবে এবং একটি করে নেকী লিখা হবে’।[9]
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ يَا عُمَرُ إِنَّكَ رَجُلٌ قَوِىٌّ لاَ تُزَاحِمْ عَلَى الْحَجَرِ فَتُؤْذِىَ الضَّعِيفَ إِنْ وَجَدْتَ خَلْوَةً فَاسْتَلِمْهُ وَإِلاَّ فَاسْتَقْبِلْهُ فَهَلِّلْ وَكَبِّرْ
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে উমার! নিশ্চয় তুমি একজন শক্তিশালী মানুষ। হাজারে আসওয়াদের নিকট ভিড় করে দুর্বলদের কষ্ট দিবে না। যদি নিরিবিলি (মানুষের ভিড়মুক্ত) পাও, তাহলে তা স্পর্শ করো, আর যদি পাথর স্পর্শ করা সম্ভব না হয়, (মানুষের ভিড় থাকে), তাহলে পাথরমুখী হয়ে লাইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলে ত্বাওয়াফ শুরু করো’।[10] এই হাদীছ প্রমাণ করে ভিড় করে পাথরে চুম্বন দিতে যাওয়া যাবে না। রুকনে ইয়ামানী প্রত্যেক ত্বাওয়াফে স্পর্শ করবে। তবে রুকনে ইয়ামানীকে চুম্বন দেওয়া যাবে না। সম্পর্শ করা সম্ভব না হলে হাতের ইশারা করা যাবে না।
আব্দুল্লাহ ইবনু সায়েব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুই রুকনের মাঝে বলতে শুনেছি,رَبَّنَا اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে ইহকালে ও পরকালে কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করো’।[11]
উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে, দুই রুকনের মাঝে এ দু‘আটি পড়তে হবে। ত্বাওয়াফ ছাড়া পাথর চুম্বন দেওয়া এবং স্পর্শ করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ত্বাওয়াফ করার সময় এই দু‘আটি ছাড়া আর কোনো দু‘আ ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। ছাহাবীগণ থেকেও কোনো প্রমাণ নেই। বিভিন্ন বই-পুস্তকে প্রতি চক্করের জন্যে পৃথক পৃথক দু‘আ উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো মানুষের বানানো দু‘আ। এগুলো বিদআতী আমল যা পরিহার করা জরুরী।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যদি কেউ আমার এ শরীআতে নতুন কিছু বৃদ্ধি ঘটায় যা আমার শরীআতের অন্তর্ভুক্ত নয় তা পরিতাজ্য’।[12] রুকনে ইয়ামানী এবং রুকনে হাজরে আসওয়াদের মাঝে (رَبَّنَا اٰتِنَا) দু‘আ ছাড়া আর কোনো দু‘আ নির্ধারিত নয়। অতএব ত্বাওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখস্থ মাসনূন দু‘আ পড়তে হবে অথবা দেখে দেখে পড়তে হবে। না পারলে নিজের ভাষায় আল্লাহকে যা বলার বলবে। মানুষের বানানো নির্ধারিত দু‘আ বর্জন করবে।
ওযূ অবস্থায় ত্বাওয়াফ করতে হবে : সকলকে ওযূ অবস্থায় ত্বাওয়াফ করতে হবে। মহিলাদের ভালোভাবে পাক-পবিত্র হয়ে ত্বাওয়াফ করতে হবে। হায়েয-নেফাস অবস্থায় ত্বাওয়াফ করতে পারবে না। পবিত্রতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে; পবিত্র হলে ত্বাওয়াফ করবে।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ نَذْكُرُ إِلاَّ الْحَجَّ، فَلَمَّا جِئْنَا سَرِفَ طَمِثْتُ، فَدَخَلَ عَلَىَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا أَبْكِى فَقَالَ مَا يُبْكِيكِ. قُلْتُ لَوَدِدْتُ وَاللَّهِ أَنِّى لَمْ أَحُجَّ الْعَامَ. قَالَ لَعَلَّكِ نُفِسْتِ. قُلْتُ نَعَمْ. قَالَ «فَإِنَّ ذَلِكَ شَىْءٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ، فَافْعَلِى مَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ، غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوفِى بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِى
আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমরা একমাত্র হজ্জের উদ্দেশ্যে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম। আমরা যখন ‘সারেফ’ স্থানে পৌঁছলাম, তখন আমি ঋতুবতী হয়ে গেলাম। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলেন তখন আমি কাঁদছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, কোন জিনিস তোমাকে কাঁদাল? আমি বললাম, আল্লাহর কসম! এ বছর আমি হজ্জ করতে চাচ্ছিলাম না। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সম্ভবত তুমি ঋতুবতী? আমি বললাম জি, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটা এমন বিষয় যা আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালাম-এর কন্যাদের (ভাগ্যে) লিখে দিয়েছেন। হাজীগণ যা করেন, তুমি তা করো। তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত ত্বাওয়াফ করো না।[13] এই হাদীছ প্রমাণ করে, হায়েয-নেফাস অবস্থায় ত্বাওয়াফ করা যাবে না।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الطَّوَافُ حَوْلَ الْبَيْتِ مِثْلُ الصَّلَاةِ، إِلَّا أَنَّكُمْ تَتَكَلَّمُونَ فِيهِ، فَمَنْ تَكَلَّمَ فِيهِ فَلَا يَتَكَلَّمَنَّ إِلَّا بِخَيْرٍ
ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বায়তুল্লাহ এর চারপাশে ত্বাওয়াফ হচ্ছে ছালাতের মতো। তবে তোমরা ত্বাওয়াফের মাঝে কথা বলতে পার। অতএব ত্বাওয়াফের মধ্যে কথা বলতে চাইলে কল্যাণকর কথা বলতে হবে।[14]
উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে, ত্বাওয়াফের মধ্যে জরুরী কথা বলা যায়। অপ্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে না। পরস্পরে গল্পে লিপ্ত হওয়া যাবে না। ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত হওয়া যাবে না।
পুরুষের জন্য ত্বাওয়াফে আরো দুটি কাজ : পুরুষের জন্য ত্বাওয়াফে কুদূমে আরো দুটি কাজ হলো ইযতেবা ও রমল করা। ইযতেবা হলো চাদরের ডানপাশের বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপরে ফেলে দেওয়া। ইযতেবা শুধু ত্বাওয়াফে কুদূমে করতে হবে। তার সাত চক্করই করতে হবে। এ ত্বাওয়াফের আগেও করা হবে না, পরেও করা হবে না। ত্বাওয়াফ চলাকালীন ছালাত আরম্ভ হলে কাঁধ ঢেকে নিতে হবে। ছালাত শেষ হলে আবার কাঁধ উন্মুক্ত করে ফেলতে হবে। সাত চক্কর শেষ হলে ঢেকে ফেলতে হবে।
عَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَافَ بِالْبَيْتِ مُضْطَجِعًا بِبُرْدٍ أَخْضَرَ
ইয়া‘লা ইবনু উমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সবুজ চাদর ইযত্বেবারূপে গায়ে দিয়ে ত্বাওয়াফ করেছিলেন।[15]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابَهُ اعْتَمَرُوا مِنَ الْجِعْرَانَةِ فَرَمَلُوا بِالْبَيْتِ ثَلَاثًا، وَجَعَلُوا أَرْدِيَتَهُمْ تَحْتَ آبَاطِهِمْ، ثُمَّ قَذَفُوهَا عَلَى عَوَاتِقِهِمُ الْيُسْرَى
ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছাহাবীগণ ‘জি‘রানা’ থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা করেছিলেন। আর ত্বাওয়াফের সময় তিন চক্করে রমল করেছিলেন। আর চাদরগুলো ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর ছেড়ে রেখেছিলেন।[16]
(চলবে)
[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; মিশকাত, হা/২৫৬৬।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬১০; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৭০; আবূ দাঊদ, হা/১৮৭৩।
[3]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬১১; নাসাঈ, হা/২৯৪৬; মিশকাত, হা/২৫৬৭।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৭৮; মিশকাত, হা/২৫৭০।
[5]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬১৩; মিশকাত, হা/২৫৭০।
[6]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬০৯; মিশকাত, হা/২৫৬৮।
[7]. তিরমিযী, হা/৯৬১; ইবনু মাজাহ, হা/২৯৪৪; মিশকাত, হা/২৫৭৮, হাদীছ ছহীহ।
[8]. তিরমিযী, হা/৮৭৭; মিশকাত, হা/২৫৭৭, হাদীছ ছহীহ।
[9]. তিরমিযী, হা/৯৫৯; মিশকাত, হা/২৫৮০, হাদীছ ছহীহ।
[10]. আহমাদ, হা/১৯০; মিশকাত, হা/২৫৮০, হাদীছ হাসান।
[11]. আবূ দাঊদ, হা/১৮৯২; মিশকাত, হা/২৫৮১, হাদীছ হাসান।
[12]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯; মিশকাত, হা/১৪০।
[13]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১২১১; মিশকাত, হা/২৫৭২।
[14]. তিরমিযী, হা/৯৬০; মিশকাত, হা/২৫৭৬, হাদীছ ছহীহ।
[15]. আবূ দাঊদ, হা/১৮৮৩; মিশকাত, হা/২৫৮৪, হাদীছ হাসান।
[16]. আবূ দাঊদ, হা/১৮৯০; মিশকাত, হা/২৫৮৫, হাদীছ ছহীহ।