ভূমিকা : কুরআন মাজীদ ইসলামী শরী‘আতের সকল তথ্যের উৎস। কুরআন যারা মানেন এবং যারা মানেন না, তারা সকলে কুরআনের বহুমুখী হেদায়াত থেকেই আলো নিয়েছেন। বরং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু তথ্য রয়েছে কুরআন মাজীদে। অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থের এই বৈশিষ্ট্য নেই। কুরআনে রয়েছে সমাজবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, সমরবিজ্ঞান, নভোমণ্ডল ও ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান প্রভৃতি। তাছাড়া রয়েছে জীবনের বিভিন্ন শাখা ও প্রশাখাগত বিজ্ঞান।
কুরআনেরবৈজ্ঞানিক বিষয়সমূহ : নিচে কুরআনের কিছু বৈজ্ঞানিক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
(১)বিশ্বজগৎ সৃষ্টি : জগৎ সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক তথ্য হিসেবে বলা হয়, কোটি কোটি বছর পূর্বে বিশ্বজগৎ একটি অখণ্ড জড়বস্তুরূপে বিদ্যমান ছিল। পরে তার কেন্দ্রে একটি মহাবিস্ফোরণ ঘটে, যাকে বিগ-ব্যাং বলা হয়। সেই মহাবিস্ফোরণের ফলে আমাদের সৌরজগৎ, ছায়াপথ, তারকারাজি ইত্যাদি সৃষ্টি হয় এবং বিনা বাধায় সর্বত্র সন্তরণ করে চলে। অথচ কুরআন বহু পূর্বেই এ তথ্য প্রদান করেছে। আল্লাহ বলেন,أَوَلَمْ يَرَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقاً فَفَتَقْنَاهُمَا ‘কাফেররা কি দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী পরস্পরে মিলিত ছিল। অতঃপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম’ (আল-আম্বিয়া, ২১/৩০)।
প্রশ্ন হলো, বিস্ফোরণ ঘটালো কে? সেখানে প্রাণের সঞ্চার হলো কীভাবে? অতঃপর বিশাল সৃষ্টিসমূহ অস্তিত্বে আনলো কে? যদি কেউ বলে যে, প্রেস মেশিনে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং তা ধ্বংস হয়ে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। অতঃপর সেখানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গবেষণাগ্রন্থ। একথা কেউ বিশ্বাস করবে কি? না। তাহলে উত্তর হলো সেই সত্তা মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ নন।
(২) প্রাণীর সৃষ্টিতত্ত্ব : মহান আল্লাহ বলেন,بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِذَا قَضَى أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ ‘তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনি যে বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, সে সম্পর্কে কেবল বলেন, ‘হও’; ফলে তা হয়ে যায়’ (আল-বাক্বারা, ২/১১৭)।
প্রাণের উৎস কী?
এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পানি থেকেই প্রাণীজগতের উদ্ভব। অথচ কুরআন একথা আগেই বলেছে,وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلاَ يُؤْمِنُونَ ‘আমরা জীবন্ত সবকিছু সৃষ্টি করেছি পানি হতে। তবুও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (আল-আম্বিয়া, ২১/৩০)। প্রশ্ন হলো, পানি সৃষ্টি করল কে? অতঃপর তার মধ্যে প্রাণশক্তি এনে দিল কে? আল্লাহ বলেন,وَاللهُ خَلَقَ كُلَّ دَابَّةٍ مِنْ مَاءٍ فَمِنْهُمْ مَنْ يَمْشِي عَلَى بَطْنِهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَمْشِي عَلَى رِجْلَيْنِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَمْشِي عَلَى أَرْبَعٍ يَخْلُقُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘আর আল্লাহ পানি থেকে প্রত্যেক প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্য থেকে কেউ বিচরণ করে পেটে ভর দিয়ে, কেউ বিচরণ করে দুই পায়ে হেঁটে আবার বিচরণ করে চার পায়ে ভর দিয়ে। যা কিছু তিনি চান সৃষ্টি করেন, তিনি প্রত্যেক জিনিসের ওপর শক্তিশালী’ (আন-নূর, ২৪/৪৫)।
(৩) জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি : বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিটি জিনিস জোড়ায় বিদ্যমান। অথচ কুরআন বহু পূর্বেই এ তথ্য দিয়েছে,سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لاَ يَعْلَمُوْنَ ‘মহাপবিত্র সেই সত্তা, যিনি ভূ-উৎপন্ন সকল বস্তু, মানুষ ও তাদের অজানা সবকিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন’ (ইয়াসীন, ৩৬/৩৬)।
(৪) মহাবিশ্বসম্প্রসারিত হচ্ছে : মহান আল্লাহ বলেন, وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ ‘আর আমরা হাতসমূহ দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি এবং নিশ্চয় আমরা মহাসম্প্রসারণকারী’ (আয-যারিয়াত, ৫১/৪৭)।
(৫) মহাকাশ বিজ্ঞান : মহান আল্লাহ বলেন,رَبُّ الْمَشْرِقَیْنِ وَ رَبُّ الْمَغْرِبَیْنِ ‘দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচল সবকিছুর মালিক ও পালনকর্তা তিনিই’ (আর-রহমান, ৫৫/৬)। অর্থাৎ সূর্য পূর্ব দিকের দুটি প্রান্তে উঠে এবং পশ্চিম দিকের দুটি প্রান্তে অস্ত যায়। আল্লাহ আরো বলেন,وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِيَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ إِنَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَفْعَلُونَ ‘তুমি পাহাড়গুলোকে মনে করছ স্থির হয়ে আছে, কিন্তু এগুলো মেঘের মতো চলমান থাকে। এ হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টিনৈপুণ্য, যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে পরিপূর্ণভাবে সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই তোমরা যা করছ, সে সম্পর্কে তিনি জানেন’(আন-নামল, ২৭/৮৮)।
সূর্যের নিজস্ব অক্ষ রয়েছে, এটি আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। আল্লাহ বলেন,لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ ‘সূর্যের জন্য চাঁদের নাগাল পাওয়া এবং রাতের দিনের ওপর অগ্রবর্তী হওয়া সমীচীন নয়। আর প্রত্যেকেই মহাশূন্যের কক্ষপথে সন্তরণ করছে’ (ইয়াসীন, ৩৬/৪০)।
(৬) পদার্থবিজ্ঞান : মহান আল্লাহ বলেন,يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ ‘তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত দুনিয়ার যাবতীয় বিষয় পরিচালনা করেন এবং এ পরিচালনার বৃত্তান্ত ওপরে তার কাছে যায় এমন একদিনে, যার পরিমাপ তোমাদের গণনায় এক হাজার বছর’ (আস-সাজদাহ, ৩২/৫)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,تَعْرُجُ الْمَلٰٓئِكَةُ وَ الرُّوْحُ اِلَیْهِ فِیْ یَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِیْنَ اَلْفَ سَنَةٍ ‘ফেরেশতারা এবং রূহ তার দিকে উঠে যায় এমন এক দিনে, যা ৫০ হাজার বছরের সমান’ (আল-মা‘আরিজ, ৭০/৪)। অর্থাৎ সময় আপেক্ষিক।
পৃথিবীতে যত লোহা আছে, তার সবই এসেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে। একমাত্র সুপার নোভার বিস্ফোরণে মহাবিশ্বে লোহা সৃষ্টি হয়, যা উল্কার মাধ্যমে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়। মহান আল্লাহ বলেন,لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ ‘আমি আমার রাসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও মীযান নাযিল করেছি, যাতে মানুষ ইনছাফ প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আর লোহা নাযিল করেছি, যার মধ্যে বিরাট শক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে। এটা করা হয়েছে এজন্য যে, আল্লাহ জেনে নিতে চান কে তাঁকে এবং তাঁর রাসূলদেরকে না দেখে সাহায্য করে। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ অত্যন্ত শক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী’ (আল-হাদীদ, ৫৭/২৫)।
ব্ল্যাকহোল (নক্ষত্র যেখানে ধ্বংস হয়) সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে কুরআনে। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন,فَلَا اُقْسِمُ بِمَوٰقِعِ النُّجُوْمِ ‘আমি শপথ করছি তারকাসমূহের পতিত হওয়ার স্থানের’ (আল-ওয়াক্বি‘আহ, ৫৬/৭৫)।
পালসার (যা অতি তীব্র ছিদ্রকারী গামারশ্মি বিচ্ছুরণকারী তারকা) সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,وَالسَّمَاءِ وَالطَّارِقِ - وَمَا أَدْرَاكَ مَا الطَّارِقُ - النَّجْمُ الثَّاقِبُ ‘কসম আকাশের এবং রাতে আত্মপ্রকাশকারীর। তুমি কি জানো রাতে আত্মপ্রকাশকারী কী? তা হলো উজ্জ্বল তারকা’ (আত্ব-ত্বারেক্ব, ৮৬/১-৩)।
আগুন জ্বালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন তৈরি করে গাছের সবুজ পাতা। আল্লাহ বলেন,الَّذِي جَعَلَ لَكُمْ مِنَ الشَّجَرِ الْأَخْضَرِ نَارًا فَإِذَا أَنْتُمْ مِنْهُ تُوقِدُونَ ‘তিনিই তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালিয়ে থাকো’ (ইয়াসীন, ৩৬/৮০)।
বৃষ্টির পানির ফোঁটা মাটিতে পড়ে মাটির কণাগুলো আয়নিত করে ফেলে, যার কারণে কণাগুলো ‘ব্রাউনিয়ান গতি’-এর কারণে স্পন্দন করা শুরু করে। তারপর আয়নিত কণাগুলোর ফাঁকে পানি এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ আকৃষ্ট হয়ে জমা হয় এবং মাটির কণাগুলো ফুলে যায়। আল্লাহ বলেন,وَتَرَى الْأَرْضَ هَامِدَةً فَإِذَا أَنْزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ وَأَنْبَتَتْ مِنْ كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ ‘আর তোমরা যমীন শুষ্ক দেখতে পাও, তারপর যখন আমি তার ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন সেটি আলোড়িত ও স্ফীত হয় এবং সব রকমের সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করতে শুরু করে’ (আল-হাজ্জ, ২২/৫)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً مُبَارَكًا فَأَنْبَتْنَا بِهِ جَنَّاتٍ وَحَبَّ الْحَصِيدِ ‘আমি আসমান থেকে বরকতময় পানি নাযিল করেছি। অতঃপর তা দ্বারা বাগান ও খাদ্যশস্য উৎপন্ন করেছি’ (ক্বাফ, ৫০/৯)। অর্থাৎ মেঘের পানিতে মৃত জমিনকে জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে।
সমুদ্রের পানির উপরে ০.১ মিলিমিটার মোটা স্তর থাকে, যাতে বিপুল পরিমাণে জৈব বর্জ্য পদার্থ থাকে, যা মৃত শৈবাল এবং প্ল্যাঙ্কটন থেকে তৈরি হয়। এই বর্জ্য পদার্থগুলো ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, কপার, জিঙ্ক, কোবাল্ট, লেড শোষণ করে। এই স্তরটি পানি বাষ্প হওয়ার সময় পানির পৃষ্ঠটানের কারণে পানির কণার সাথে চড়ে মেঘে চলে যায় এবং বৃষ্টির সাথে বিপুল পরিমাণে পড়ে মাটির পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থগুলো সরবরাহ করে।
(৭) পানিচক্র ও মহাকাশ বিজ্ঞান : মহান আল্লাহ বলেন,أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ يُزْجِي سَحَابًا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهُ ثُمَّ يَجْعَلُهُ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ جِبَالٍ فِيهَا مِنْ بَرَدٍ فَيُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَصْرِفُهُ عَنْ مَنْ يَشَاءُ يَكَادُ سَنَا بَرْقِهِ يَذْهَبُ بِالْأَبْصَارِ ‘তুমি কি দেখোনি, আল্লাহ মেঘমালাকে ধীর গতিতে সঞ্চালন করেন, তারপর সেগুলোকে পরস্পর সংযুক্ত করেন, তারপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, তারপর তুমি দেখতে পাও তার মাঝখান থেকে বৃষ্টিবিন্দু নির্গত হয়। আর তিনি আকাশে স্থিত মেঘমালার পাহাড় থেকে শিলা বর্ষণ করেন, তারপর যাকে চান এর দ্বারা আক্রান্ত করেন এবং যাকে চান এর হাত থেকে বাঁচিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ চমক দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেওয়ার উপক্রম হয়’ (আন-নূর, ২৪/৪৩)।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,اللَّهُ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِي السَّمَاءِ كَيْفَ يَشَاءُ وَيَجْعَلُهُ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ فَإِذَا أَصَابَ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ ‘আল্লাহই বাতাস পাঠান, ফলে তা মেঘ উঠায়, তারপর তিনি যেভাবে চান এ মেঘমালাকে আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাদেরকে খণ্ড-বিখণ্ড করেন, তারপর তুমি দেখো বারিবিন্দু মেঘমালা থেকে নির্গত হয়। অতঃপর যখন এ বারিধারা তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে থেকে যার ওপর চান বর্ষণ করেন তখন তারা আনন্দোৎফুল্ল হয়’ (আর-রূম, ৩০/৪৮)।
মেঘ অত্যন্ত ভারী, একটি বড় আকারের মেঘ ১১ লক্ষ পাউন্ড পর্যন্ত ওযন হয়। মহান আল্লাহ বলেন,هُوَ الَّذِیْ یُرِیْكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَّ طَمَعًا وَّ یُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ ‘তিনিই তোমাদের সামনে প্রদর্শন করান বিজলি, যা দেখে তোমাদের মধ্যে আশঙ্কার সঞ্চার হয় আবার আশাও জাগে এবং তিনিই ভারী মেঘ সৃষ্টি করেন’ (আর-রা‘দ, ১৩/১২)। তিনি আরো বলেন,وَهُوَ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ حَتَّى إِذَا أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَيِّتٍ فَأَنْزَلْنَا بِهِ الْمَاءَ فَأَخْرَجْنَا بِهِ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ كَذَلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتَى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ‘আর আল্লাহই বায়ুকে স্বীয় অনুগ্রহের পূর্বে সুসংবাদরূপে পাঠান। তারপর যখন সে পানি ভরা মেঘ ধারণ করে তখন আমরা তাকে কোনো মৃত ভূখণ্ডের দিকে চালিত করি অতঃপর তার মাধ্যমে আমরা বারি বর্ষণ করি তারপর তার মাধ্যমে আমরা সব ধরনের ফল-ফলাদি উৎপাদন করি। এভাবেই আমরা মৃতদেরকে পুনরুত্থিত করি যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো’ (আল-আ‘রাফ, ৭/৫৭)।
আকাশ পৃথিবীর জন্য একটি বর্মস্বরূপ যা পৃথিবীকে মহাকাশের ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মি থেকে রক্ষা করে। আল্লাহ বলেন,وَجَعَلْنَا السَّمَاءَ سَقْفًا مَحْفُوظًا وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ ‘আর আমি আকাশকে করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদ, অথচ তারা এর নিদর্শনাবলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়’ (আল-আম্বিয়া, ২১/৩২)। আল্লাহ আরো বলেন,الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ ‘তিনিই তোমাদের জন্য যমীনকে বিছানা বানিয়েছেন, আকাশকে বানিয়েছেন ছাদস্বরূপ, আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন অতঃপর তোমাদের জীবিকা হিসেবে তার মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের ফল উৎপন্ন করেন। কাজেই তোমরা জেনেশুনে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করো না’ (আল-বাক্বারা, ২/২২)।
সমুদ্রের নিচে আলাদা ঢেউ রয়েছে, যা উপরের ঢেউ থেকে ভিন্ন। আল্লাহ বলেন,أَوْ كَظُلُمَاتٍ فِي بَحْرٍ لُجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ سَحَابٌ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا وَمَنْ لَمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِنْ نُورٍ ‘অথবা তার উপমা যেমন একটি গভীর সাগর বুকে অন্ধকার। ওপরে ছেয়ে আছে একটি তরঙ্গ, তার ওপরে আর একটি তরঙ্গ আর তার ওপরে মেঘমালা অন্ধকারের ওপর অন্ধকার আচ্ছন্ন। যেখানে কোনো মানুষ নিজের হাত বের করলে তাও প্রায় দেখতে পায় না। যাকে আল্লাহ আলো দেন না তার জন্য আর কোনো আলো নেই’ (আন-নূর, ২৪/৪০)।
বৃষ্টির পরিমাণ সুনির্ধারিত। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِي نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَنْشَرْنَا بِهِ بَلْدَةً مَيْتًا كَذَلِكَ تُخْرَجُونَ ‘আর যিনি আসমান থেকে পরিমিত পানি বর্ষণ করেন এবং তার মাধ্যমে আমরা মৃত ভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলি। এভাবেই তোমাদের পুনরুত্থান করা হবে’ (আয-যুখরুফ, ৪৩/১১)।
পৃথিবীতে প্রতি বছর যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় তার পরিমাণ ৫১৩ ট্রিলিয়ন টন এবং ঠিক সমপরিমাণ পানি প্রতি বছর বাষ্প হয়ে মেঘ হয়ে যায়। এভাবে পৃথিবী এবং আকাশে পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়।
মিষ্টি ও লবণাক্ত দুই সাগরের মাঝে অনতিক্রম্য ব্যবধান সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ - بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَا يَبْغِيَانِ ‘দুটি সমুদ্রকে তিনি পরস্পর মিলিত হতে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে একটি পর্দা আড়াল হয়ে আছে, যা তারা অতিক্রম করে না’ (আর-রহমান, ৫৫/১৯-২০)।
(৮) জীববিজ্ঞান : মৌমাছির একাধিক পাকস্থলী আছে, কর্মী মৌমাছিরা স্ত্রী বা পুরুষ নয়। মধুর অনেক ঔষধি গুণ আছে। আল্লাহ বলেন,وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ - ثُمَّ كُلِي مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ‘তোমার প্রতিপালক মৌমাছির প্রতি প্রত্যাদেশ করেছেন যে, পাহাড়ে, বৃক্ষে আর উঁচু স্থানে বাসা তৈরি করো। অতঃপর প্রত্যেক ফল থেকে আহার করো, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পন্থা অবলম্বন করো। অতঃপর তার পেটসমূহ থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় বের হয়, যাতে মানুষের জন্য আছে আরোগ্য। নিশ্চয়ই চিন্তাশীল মানুষের জন্য এতে নিদর্শন আছে’ (আন-নাহল, ১৬/৬৮-৬৯)।
গাভী খাবার হজম হবার পর তা রক্তের মাধ্যমে একটি বিশেষ গ্রন্থিতে গিয়ে দুধ তৈরি করে, যা আমরা খেতে পারি। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُسْقِيكُمْ مِمَّا فِي بُطُونِهِ مِنْ بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِلشَّارِبِينَ ‘আর তোমাদের জন্য গবাদিপশুর মধ্যেও শিক্ষা রয়েছে। তাদের পেটের গোবর ও রক্তের মাঝখান থেকে তোমাদের পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য বড়ই সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক’ (আন-নাহল, ১৬/৬৬)।
আধুনিক বিজ্ঞান বলছে মানুষের সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ জীবনযাপন করে পিপীলিকা। তারা মানুষের মতোই সামাজিক জীবনযাপন করে এবং পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,حَتَّى إِذَا أَتَوْا عَلَى وَادِ النَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يَا أَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوا مَسَاكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُودُهُ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ ‘এমনকি যখন তারা সবাই পিপীলিকার উপত্যকায় পৌঁছল, তখন একটি পিপীলিকা বলল, ‘হে পিপীলিকারা! তোমাদের গর্তে ঢুকে পড়ো, যাতে অজান্তেই সুলায়মান ও তাঁর সৈন্যরা তোমাদের পিশে না ফেলতে পারে!’ (আন-নামল, ২৭/১৮)।
উদ্ভিদের পুরুষ এবং স্ত্রীলিঙ্গ আছে। আল্লাহ বলেন,وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ‘আর তিনিই এ যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন এবং তাতে পাহাড় ও নদী সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সব রকম ফল জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন। নিশ্চয়ই এতে বহু নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করে’ (আর-রা‘দ, ১৩/৩)।
গম শীষের ভেতরে রেখে দিলে তা সাধারণ তাপমাত্রায়ও কয়েক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে এবং তা সংরক্ষণ করার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থার দরকার হয় না। এটি সূরা ইউসূফের ৪৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে।
উঁচু ভূমিতে ফুল ও ফলের বাগান ভালো ফসল দেয়, কারণ উঁচু জমিতে পানি জমে থাকতে পারে না এবং পানির খোঁজে গাছের মূল অনেক গভীর পর্যন্ত যায়, যার কারণে মূল বেশি করে মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে। তবে শস্য যেমন আলু, গম ইত্যাদি ফসলের জন্য উল্টোটা ভালো, কারণ তাদের ছোট মূল থাকে, যা মাটির উপরের স্তর থেকে পুষ্টি নেয়। আল্লাহ বলেন,وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِنْ لَمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ‘আর যারা পূর্ণ একাগ্রতা ও অবিচলতার সাথে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে, তাদের এই ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছে কোনো উঁচু ভূমিতে একটি বাগান, প্রবল বৃষ্টিপাত হলে সেখানে দ্বিগুণ ফলন হয়। আর প্রবল বৃষ্টিপাত না হলে সামান্য হালকা বৃষ্টিপাতই তার জন্য যথেষ্ট। আর তোমরা যা কিছু করো, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক দ্রষ্টা’ (আল-বাক্বারা, ২/২৬৫)।
গাছে সবুজ ক্লোরোফিল রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,وَهُوَ الَّذِي أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَأَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُتَرَاكِبًا وَمِنَ النَّخْلِ مِنْ طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَجَنَّاتٍ مِنْ أَعْنَابٍ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ انْظُرُوا إِلَى ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَيَنْعِهِ إِنَّ فِي ذَلِكُمْ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ ‘আর তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। তারপর তার মাধ্যমে সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি। এরপর তা থেকে সবুজ-শ্যামল ক্ষেত ও বৃক্ষ সৃষ্টি করি, তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি আর খেজুর গাছের মাথি থেকে খেজুরের অবনমিত কাঁদি, আঙুর বাগান, যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করি, এগুলো পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ ও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে থাকে। তোমরা লক্ষ করো এর ফলের দিকে, যখন তা ফলবান হয় এবং দেখো তার পরিপক্কতা। নিশ্চয়ই এসব জিনিসের মধ্যে ঈমানদারদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে’ (আল-আনআম, ৬/৯৯)।
রাত হচ্ছে বিশ্রামের জন্য আর দিন হচ্ছে কাজের জন্য। কারণ দিনের বেলা সূর্যের আলো আমাদের রক্ত চলাচল, রক্তে সুগার, কোষে অক্সিজেনের পরিমাণ, পেশিতে শক্তি, মানসিক ভারসাম্য, মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। আল্লাহ বলেন,وَمِنْ رَحْمَتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ‘তাঁর অন্যতম অনুগ্রহ হলো, তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন, যাতে তোমরা (রাতে) শান্তি এবং (দিনে) তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং যাতে তোমরা শোকরগুজার হতে পারো’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/৭৩)।
(৯) চিকিৎসা বিজ্ঞান : মানবশিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ হয় পুরুষের বীর্য থেকে। আল্লাহ বলেন,وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى - مِنْ نُطْفَةٍ إِذَا تُمْنَى ‘আর তিনি পুরুষ ও নারীর জোড়া সৃষ্টি করেছেন শুক্র থেকে, যখন তা স্খলিত হয়’ (আন-নাজম, ৫৩/৪৫-৪৬)। তিনি আরো বলেন, أَلَمْ يَكُ نُطْفَةً مِنْ مَنِيٍّ يُمْنَى ‘সে কি সবেগে স্খলিত বীর্য ছিল না? (আল-ক্বিয়ামাহ, ৭৫/৩৭)।
মায়ের গর্ভ শিশুর জন্য একটি সুরক্ষিত জায়গা। এটি বাইরের আলো, শব্দ, আঘাত, ঝাঁকুনি থেকে রক্ষা করে। এটি শিশুর জন্য সঠিক তাপমাত্রা তৈরি করে, পানি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে।
মায়ের গর্ভে সন্তান কীভাবে ধাপে ধাপে বড় হয় তার নিখুঁত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যা কুরআনের আগে অন্য কোনো চিকিৎসাশাস্ত্রে ছিল না। আল্লাহর বাণী,ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ - ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ ‘তারপর তাকে একটি সংরক্ষিত স্থানে শুক্রকীট হিসেবে রাখি। এরপর সেই শুক্রাণুকে জমাট রক্তপিণ্ডে পরিণত করেছি, তারপর সেই রক্তপিণ্ডকে মাংসপিণ্ডে পরিণত করেছি, এরপর মাংসপিণ্ডে অস্থি-পাঞ্জর স্থাপন করেছি, তারপর অস্থি-পাঞ্জরকে ঢেকে দিয়েছি গোশত দিয়ে, তারপর তাকে দাঁড় করেছি স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টিরূপে। কাজেই সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত বরকতময় (আল-মুমিনূন, ২৩/১৩-১৪)।
মানবশিশু প্রথমে শুনতে পায়, তারপর দেখতে পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا ‘আমি মানুষকে এক সংমিশ্রিত বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি, যাতে তার পরীক্ষা নিতে পারি। অতঃপর আমি তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন করেছি’ (আদ-দাহর, ৭৬/২)। অর্থাৎ প্রথমে কান হয়, তারপর চোখ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রত্যেক মানুষের আঙুলের ছাপ ভিন্ন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, بَلَى قَادِرِينَ عَلَى أَنْ نُسَوِّيَ بَنَانَهُ ‘হ্যাঁ, আমি তার আঙুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম’ (আল-ক্বিয়ামাহ, ৭৫/৪)।
মহান আল্লাহ ওই আয়াতে ইঙ্গিত করেছেন, মানুষের আঙুলের অগ্রভাগে তিনি সূক্ষ্ম কোনো রহস্য রেখেছেন, যা তিনি মানুষের পুনরুত্থানের সময়ও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।
উপসংহার : মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ ‘নিশ্চয়ই আকাশসমূহ এবং পৃথিবীর সৃষ্টি আর দিন-রাতের আবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে’ (আলে ইমরান, ৩/১৯০)।
কুরআনের ভাষা কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধের ভাষা নয়, এটি কোনো বৈজ্ঞানিক রিসার্চ পেপার নয়। মানুষ যেভাবে দেখে, শুনে, অনুভব করে, আল্লাহ কুরআনে সেই পরিপ্রেক্ষিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ কুরআনে এমন সব শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেগুলো ১৪০০ বছর আগে বিজ্ঞান সম্পর্কে কোনোই ধারণা নেই এমন মানুষরাও বুঝতে পারবে এবং একই সাথে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরাও সেই শব্দগুলোকে ভুল বা অনুপযুক্ত বলে দাবি করতে পারবে না।
এস এম আব্দুর রউফ
পিএইচডি গবেষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।