কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

রজব মাসের বিধান

post title will place here

হিজরী সনের সপ্তম মাস রজব। শরীআতের পক্ষ থেকে এ মাসের জন্য নির্ধারিত বিশেষ কোনো ছালাত, ছিয়াম ও বিশেষ কোনো আমলের হুকুম দেওয়া হয়নি। তাই মনগড়া আমল করে এ মাসের ফযীলত ও বরকত লাভ করা যাবে না। মহিমান্বিত মাসগুলোতে, বিশেষ করে রজব মাসে সতর্ক থাকতে হবে; যেন নিজের ওপর কোনো ধরনের যুলুম না হয়।

রজব হারাম মাসের একটি:

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে বলেন,

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ

‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা ১২টি, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এসব মাসে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করবে না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করবে, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সঙ্গে আছেন’ (আত-তাওবা, ৯/৩৬)

চার হারাম মাস হচ্ছে— মুহাররম, রজব, যুলক্বা‘দাহ ও যুলহিজ্জাহ। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي بَكْرَةَ t عَنِ النَّبِيِّ قَالَ إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلاَثٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ.‏

আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যেদিন আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন যামানা যেরূপ ছিল, তা চক্রাকারে ঘুরে আবার সেস্থানে এসে পৌঁছেছে। বছরে ১২ মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম (পবিত্র), তন্মধ্যে তিন মাস পরপর আগত; যুলক্বা‘দাহ, যুলহিজ্জাহ ও মহররম, আর মুযার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাছ ছানী ও শা‘বানের মাঝে অবস্থিত’।[1]

রজব মাসে পশু যবেহ:

ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগে রজব মাসে মুশরিকদের মধ্যে স্বীয় দেবতা/প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করার একটি রেওয়াজ ছিল। একে ‘আতীরা’ বলা হতো। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শিরকী রেওয়াজের মূলোৎপাটন করেছেন।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ قَالَ لاَ فَرَعَ وَلاَ عَتِيرَةَ وَالْفَرَعُ أَوَّلُ النِّتَاجِ كَانُوا يَذْبَحُونَه لِطَوَاغِيتِهِمْ وَالْعَتِيرَةُ فِي رَجَبٍ.

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(ইসলামে) ফারা‘ ও আতীরা নেই’। ফারা‘ হলো উটের সে প্রথম বাচ্চা, যা তারা তাদের দেব-দেবীর নামে যবেহ করত। আর আতীরা হলো রজবে যে জন্তু যবেহ করত’।[2]

ইমাম আবূ দাঊদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন, ফারা‘ বলা হয় উটের প্রথম ভূমিষ্ঠ বাচ্চাকে। প্রাচীন আমলে লোকেরা তাদের উপাস্য তাগূতের জন্য একে বলি দিত। অতঃপর তার গোশত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত, চামড়া ঝুলিয়ে রাখত গাছের ডালে। আতীরা বলা হয় সেই প্রাণী, যা রজবের ১০ তারিখে উপাস্যের উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হয়’।[3]

আজকাল রজব মাসে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রাহিমাহুল্লাহ-এর মাযারে তাঁর ওফাত উপলক্ষ্যে যে ‘উরস’ হয়, সেখানে এমন অনেক পশু যবেহ করা হয়, যা মূর্খ লোকেরা খাজা রাহিমাহুল্লাহ বা তার মাযারের নামে মান্নত করে থাকে। জাহেলী যুগের ‘ফারা’, ‘আতীরা’ আর বর্তমানের এসব যবেহকৃত পশুর মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারো নামে মান্নত করা, তা যদি পীর-বুযুর্গের নামেও হয় তবুও তা শিরক। আমাদের দেশেও খাজা আজমীরী রাহিমাহুল্লাহ-এর ওফাতকে কেন্দ্র করে জাহেল লোকেরা এমন সব রসম-রেওয়াজ উদ্ভাবন করেছে, যা কঠোরভাবে পরিহার করে চলা উচিত। বিভিন্ন স্থানে লাল কাপড়ে মোড়ানো বিরাট ‘আজমীরী ডেগ’ বসানো হয়। কোথাও কোথাও মাযারের আদলে অস্থায়ী মাযার স্থাপন করা হয়। এরপর খাজা আজমীরী রাহিমাহুল্লাহ-এর উদ্দেশ্যে নযর-নিয়ায ও মান্নতের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, চাল-ডাল ইত্যাদি ওঠানো হয়। যা দেওয়াও হারাম এবং ওখান থেকে কিছু খাওয়াও হারাম। যারা এগুলো উঠায়, তারা এগুলো দিয়ে আনন্দ-ফুর্তির আয়োজন করে। ঢোল-তবলা ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে নাচগানের আসর বসায়। যেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে নাচ-গান ও খাওয়া-দাওয়ায় অংশ নেয়, অবাধে মেলামেশা করে এবং নানা ধরনের গর্হিত কাজ করে থাকে, যা নিঃসন্দেহে হারাম।[4]

রজবের ছালাত:

অনেক মুসলিম ভাই ও বোনেরা রজব মাসে বিশেষ করে মি‘রাজ উপলক্ষ্যে কেউ ১২ রাক‘আত, কেউ ২০ রাক‘আত ছালাত আদায় করে থাকেন। ইসলামী শরীআতে মি‘রাজের ছালাত বলে কিছু নেই। নফল ছালাত পড়া ছওয়াবের কাজ কিন্তু মি‘রাজ উপলক্ষ্যে নফল ছালাত আদায় করার কোনো ভিত্তি ও প্রমাণ ইসলামে নেই। কাজেই মি‘রাজের নামে নফল ছালাত আদায় করা এবং এর ব্যবস্থা প্রণয়ন করা মানে ইসলামী শরীআতে নিজের পক্ষ থেকে কিছু সংযোজন করা। আর এ ব্যাপারে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরীআতে এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত’।[5]

মি‘রাজ উপলক্ষ্যে রজব মাসের ছালাত সম্পর্কেও বহু জাল হাদীছ শোনা যায়। তন্মধ্যে কতিপয় নিম্নে উদ্ধৃত হলো—

আনাস ইবনু মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রজবের প্রথম রজনিতে মাগরিবের ছালাতের পর ২০ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, যার প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও সূরা ইখলাছ পড়বে ...’। অতঃপর দীর্ঘ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদীছটি মাওযূ বা জাল।[6] আনাস ইবনু মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রজবের রজনিতে ১৪ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, যার প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহা একবার, কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ ২০ বার, কুল আঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব তিনবার, কুল আঊযু বিরব্বিন নাস তিনবার পড়বে। অতঃপর ছালাত হতে ফারেগ হয়ে ১০ বার দরূদ পড়বে...’। ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘হাদীছটি মাওযূ’।[7] ইমাম ইবনু ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘অনুরূপভাবে রজব মাসের প্রথম শুক্রবারে ছালাতুর রাগায়িব পড়ার ব্যাপারে হাদীছগুলো বানোয়াট ও রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর মিথ্যা আরোপ’।[8]

রজব ও নফল ছিয়াম:

আমাদের অনেক মুসলিম ভাই ও বোনেরা লায়লাতুল ক্বদরের সাথে মিলিয়ে মি‘রাজেও নফল ছিয়াম রেখে থাকেন। একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য— নফল ছিয়াম যখন ইচ্ছা তখন রাখা যায় কিন্তু কোনো উপলক্ষ্যে নফল ছিয়াম রাখতে হলে অবশ্যই আগে জেনে নিতে হবে যে, আমি বা আমরা যে উপলক্ষ্যে নফল ছিয়াম রাখছি, শরীআত সেটাকে অনুমতি দিয়েছে কিনা। মি‘রাজ উপলক্ষ্যে নফল ছিয়াম রাখার কোনো বর্ণনা কুরআন-হাদীছের কোথাও বর্ণিত নেই। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অনুসারীরা এই দিনে বিশেষভাবে কোনো ছিয়াম রেখেছেন এমন কোনো বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এই দিনে মি‘রাজ উপলক্ষ্যে ছিয়াম রাখা কোনো ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। মি‘রাজের নফল ছিয়াম সম্পর্কে অসংখ্য জাল হাদীছ এসেছে। যেমন- আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রজব মাসের ২৭ তারিখ অর্থাৎ মি‘রাজ দিবসে ছিয়াম পালন করবে, তার আমলনামায় ৬০ মাসের ছিয়ামের নেকী লেখা হবে’।

আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রজব মাস আল্লাহর মাস, শা‘বান মাস আমার মাস এবং রামাযান মাস উম্মতের মাস। অতএব, যে ব্যক্তি ঈমানের অবস্থায় নেকীর আশায় রজবের ছিয়াম পালন করবে, তার জন্য আল্লাহর মহান সন্তুষ্টি অবধারিত হয়ে যায় এবং তাকে তিনি জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান দেন...। যে ব্যক্তি রজব মাসে ২ থেকে ১৫টি ছিয়াম পালন করবে, তার নেকী পাহাড়ের মতো হবে... সে কুষ্ঠ, শ্বেত ও পাগলামি রোগ থেকে মুক্তি পাবে। ...জাহান্নামের সাতটি দরজা তার জন্য বন্ধ থাকবে। ...জান্নাতের আটটি দরজা তার জন্য খোলা থাকবে’। জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘হাদীছটি জাল’।[9]

‘রজব মাসের ২৭ তারিখ আমি নবুঅত পেয়েছি। সুতরাং যে ব্যক্তি এ দিনে ছিয়াম রাখবে, তা তার ৬০ মাসের গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে’।[10] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরামহীনভাবে তথা টানা তিন মাস (রজব, শা‘বান ও রামাযান) ছিয়াম রাখতেন না। যেমনটা কিছু মানুষ করত। আর তিনি রজব মাসে কখনোই ছিয়াম রাখেননি এবং এটাকে পছন্দও করতেন না’।[11] শায়খ উছায়মীন রাহিমাহুল্লাহ-কে ২৭শে রজব ছিয়াম ও ক্বিয়াম পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন, ‘সবিশেষ মর্যাদা দিয়ে ২৭শে রজব ছিয়াম ও ক্বিয়াম পালন- বিদআত। আর প্রত্যেকটি বিদআতই বিভ্রান্তি’।[12]

রজবে উমরা পালন:

কেউ কেউ রজব মাসকে বিশেষভাবে উমরা পালনের মাস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। তাদের বিশ্বাস এর রয়েছে প্রভূত ফযীলত এবং পরকালীন পুরস্কার। প্রকৃত সত্য ও শুদ্ধ মত হলো রজব অন্যান্য মাসের অবিকল, তার বিশেষত্ব নেই অন্য মাসের তুলনায়। তাতে উমরা পালনের বিশেষ কোনো ফযীলত বর্ণনা করা হয়নি। উমরা পালনের ক্ষেত্রে সময় সংশ্লিষ্ট আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী রামাযান মাস এবং হজ্জের তামাত্তুর জন্য হজ্জের মাসগুলো। এ মাসগুলোয় উমরা পালনের বিশেষ ফায়দা হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত। হাদীছের কোথাও এ স্বীকৃতি পাওয়া যায় না যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে উমরা পালন করেছেন। তাছাড়া, বিষয়টিকে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহু এক হাদীছে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছেন। অন্য এক হাদীছে এসেছে,

عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ قَالَتْ مَا اعْتَمَرَ رَسُولُ اللهِ فِي رَجَبٍ.

উরওয়াহ ইবনু যুবায়ের রাহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে কখনো উমরা আদায় করেননি’।[13]

রজব মাসে কবর যিয়ারত:

কবর যিযারত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এর দ্বারা মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। কবরআযাবের ভীতি সঞ্চারিত হয়। হৃদয় বিগলিত হয়। চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়। অন্যায় থেকে তওবা এবং নেকীর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরকালীন মুক্তির প্রেরণা সৃষ্টি হয়। তবে কবর যিয়ারত করার জন্য রজব মাস, জুমআ ও দুই ঈদের দিনকে নির্দিষ্ট করে নেওয়া বিদআত হবে। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম বলেন, ‘কবর যিয়ারত বা অন্য যে-কোনো আমলের জন্য যদি রজব মাসের কোনো দিনকে নির্দিষ্ট করা হয়, তবে তা বিদআত হবে। কেননা তার কোনো ভিত্তি নেই’। এ কথাকে সমর্থন করেছেন ইমাম আবূ শামাহ। তিনি তাঁর كتاب البدع والحوادث নামক গ্রন্থে বলেন, ‘শরীআত নির্ধারণ করে দেয়নি, এমন কোনো সময়কে কোনো শারঈ আমলের জন্য হলেও নির্দিষ্ট করা ও ফযীলতের প্রত্যাশা করা জায়েয নেই। এজন্যই আলেমগণ বেশি বেশি উমরা পালনের জন্য রজব মাসকে নির্দিষ্ট করাকে অপছন্দ করেছেন। তবে কেউ যদি রজব মাসে নির্দিষ্ট কোনো ফযীলতের আক্বীদা ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে উমরা করে অথবা এ সময় উমরা করা তার জন্য সহজ হয়, তবে এসময় উমরা করলে কোনো ক্ষতি নেই’।[14] তবে যে-কোনো দিনে, যে-কোনো সময়ে কবর যিয়ারত করা যায়।[15]

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিদআত থেকে দূরে থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

মুহাম্মাদ গিয়াসুদ্দীন

শিবগঞ্জ, বগুড়া।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৬৬২।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৬।

[3]. আবূ দাঊদ, হা/২৮৪২।

[4]. মাসিক আল কাউসার, জুলাই ২০০৯।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭।

[6]. আল্লামা ইবনুল জাওযী, কিতাবুল মাওযূআত (বৈরত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ), ২/১১৮-১৯।

[7]. প্রাগুক্ত।

[8]. আল-মানারুল মুনীফ, পৃ. ৯০।

[9]. আল্লামা ইবনুল জাওযী, কিতাবুল মাওযূআত (বৈরত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ), ২/১১৭।

[10]. তাবয়ীনুল আযাব, পৃ. ৬৪; তানযীহ, ২/১৬১।

[11]. ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ, যাদুল মাআদ ফী হাদই খায়লি ইবাদ (বৈরূত: মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ২৭তম সংস্করণ, ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি.), ২/৬৪।

[12]. মাজমূ‘ ফাতাওয়াশ শায়খ উছায়মীন, ২০/৪৪০।

[13]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৭৭।

[14]. মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আলুশ শায়খ, ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ৬/১১৫; ফাতাওয়া ইসলাম সওয়াল ও জওয়াব, প্রশ্ন নং- ৩৬৭৬৬।

[15]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৫৫; মিশকাত, হা/১৭৬৭।

Magazine