কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত শিরক : ধরন ও প্রকৃতি

post title will place here

অবতরণিকা : আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে একমাত্র তাঁরই ইবাদতের নিমিত্তে সৃষ্টি করেছেন (আয-যারিয়াত, ৫১/৫৬)। যুগে যুগে তিনি অসংখ্য নাবী ও রাসূলকে প্রেরণ করেছেন,[1] কিতাবসমূহ অবতরণ করেছেন, যাতে মানবজাতি তাঁর স্পষ্ট পরিচয় লাভের মাধ্যমে একমাত্র তারই ইবাদত করে। শিরক হচ্ছে সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করা। স্রষ্টার গুণাবলিকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করলে সে মুশরিক হয়ে যায়। ক্ষতি করা, উপকার করা, দান করা ও দান না করার একক অধিকারী হওয়া একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। আর এ গুণাবলির একক অধিকারী হওয়ার কারণে প্রার্থনা করা, ভয় করা, কোনো কিছুর আশা করা এবং ভরসা করা কেবল তাঁর সাথেই সম্পৃক্ত। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি এসব গুণকে কোনো সৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত করে, তাহলে সে যেন সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে শরীক সাব্যস্ত করল। আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কোনো প্রকার মাধ্যম দাঁড় করানো তাঁর প্রভুত্ব, রবূবিয়্যাত ও একত্বের প্রতি চরম আঘাত এবং তাঁর সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করার শামিল। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য এরূপ ধারণা করাকে কিছুতেই অনুমোদন করেন না। শিরক হলো জঘন্যতম গোনাহ। তওবা ছাড়া যার কোনো ক্ষমা নেই। শিরকমিশ্রিত যেকোনো আমল ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যহীন এবং আল্লাহর নিকটে তা প্রত্যাখ্যাত। কেউ যদি জীবনে একটি শিরকও করে এবং তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে এই একটিমাত্র শিরকই তার ঈমান ও জীবনের যাবতীয় সৎকর্মকে নিষ্ফল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। এ ধরনের লোকদের ঈমান ও আমলের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا - الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا ‘বলুন, আমি তোমাদেরকে কি সংবাদ দেব নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত? তারা সেসব লোক, দুনিয়ার জীবনে যাদের চেষ্টা-সাধনা ব্যর্থ হয়ে গেছে আর তারা নিজেরা মনে করছে যে, তারা সৎকর্ম করছে’ (আল-কাহফ, ১৮/১০৩-১০৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا ‘আর আমি তাদের আমলের দিকে অগ্রসর হব, অতঃপর তা (তাওহীদশূন্য হওয়ার কারণে) বিক্ষিপ্ত ধূলিকণার ন্যায় উড়িয়ে দিব’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/২৩)। কেবল আল্লাহর তাওহীদের স্বীকৃতি দান, এর সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। ফলে এ পৃথিবীতে আগমনকারী প্রত্যেক নবী বা রাসূল সর্বপ্রথম তাওহীদের দিকেই আহ্বান করেছেন এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য বারবার তাগিদ জানিয়েছেন (আন-নহল, ১৬/৩৬)। তাওহীদের মর্মবাণী প্রচারের জন্য জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমাদের দেশে তাওহীদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে তাওহীদ পরিপন্থী বিষয় শিরক মুসলিম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তার লাভ করেছে। আর শিরক এমনই ভয়াবহ ও জঘন্যতম পাপ, যা থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষের আবশ্যই কর্তব্য। শিরকের ব্যাপারে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

(১) বাংলাদেশের সমাজে প্রচলিত শিরক : বাংলাদেশের গ্রাম এবং শহরে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে শিরক, বিদআত ও নানাবিধ কুসংস্কার। কুসংস্কারজনিত এমন শিরক রয়েছে, যা এ দেশের লোকজন ধর্মীয় বিধান বা নিয়ম মনে করেই পালন করে থাকে।

(২) গায়েবী ক্ষমতায় বিশ্বাসজনিত শিরক : বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় এই ধারণা প্রচলিত আছে যে, পীর, মুর্শিদ বা বিশেষ কিছু ব্যক্তির সীমাহীন ক্ষমতা রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এই জগতের উপর কর্তৃত্ব রয়েছে এমন বিশ্বাস নেহায়তই শিরক। যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সম্পর্কে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, সে অলৌকিক শক্তির অধিকারী এবং অলৌকিকভাবেই কোনো ঘটনা ঘটাতে, বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করতে, রোজগারহীনকে রোজগারের ব্যবস্থা করতে, সন্তানহীনকে সন্তান দিতে পারে, তাহলে সে মুশরিক বলে গণ্য হবে।

(৩) জ্যোতির্বিদ্যাসংক্রান্ত ধারণায় শিরকের চর্চা : জ্যোতির্বিদ্যা হলো সৌরজগতের বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণ বর্ণনা করা। জ্যোতির্বিদরা বলে থাকেন যে, অমুক নক্ষত্রের অমুক স্থানে অবস্থানের সময়ে যে ব্যক্তি বিবাহ করবে তার অমুক অমুক জিনিস অর্জিত হবে। যে ব্যক্তি অমুক নক্ষত্রের অমুক জায়গায় অবস্থানের ক্ষণে সফরে থাকবে সে ভাগ্যবান কিংবা ভাগ্যহীন হবে। যেমন- বর্তমানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ ধরনের কল্পনাপ্রসূত রাশিফলের খবরাখবর পরিবেশন করা হয়, আর এগুলোর আশেপাশে বিক্ষিপ্ত তারকারাজি, সরলরেখা, বক্ররেখা ইত্যাদি ধরনের আঁকাবাঁকা রেখা অঙ্কিত থাকে। কিছু সংখ্যক মূর্খ ও দুর্বল ঈমানের মানুষও বিভিন্ন সময় জ্যোতিষীদের নিকট গমন করে থাকে এবং তাদেরকে স্বীয় ভবিষ্যৎ ও বিবাহ-শাদী ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন করে থাকে।

(৪) জাদু সংস্কৃতিতে শিরকের চর্চা : বাংলাদেশের সমাজে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যদি কারো সাথে কারো শত্রুতা সৃষ্টি হয় এবং এ দু’পক্ষের কোনো এক পক্ষ যদি দুর্বল হয়, তবে দুর্বল পক্ষ সাধারণত বিভিন্ন জিন সাধকের মাধ্যমে জাদুর আশ্রয় গ্রহণ করে সবল পক্ষকে বাণ মারে বা বধ করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সবল পক্ষও দুর্বল পক্ষকে সমূলে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে জাদুর আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। এভাবেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অধিকতর ভালোবাসা সৃষ্টি, কারো সাথে শত্রুতা সৃষ্টি, কারো বিবাহ হতে না দেওয়া, কারো প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি, কাউকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে চলে জাদুর খেলা। আর এখানেই শেষ নয়, বরং এ সকল জাদুকে নিষ্ক্রিয় করতে পুনরায় আশ্রয় গ্রহণ করা হয় জাদুমন্ত্রের। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট তথা জিন, পীর, ওলী-আওলিয়া, এমনকি হিন্দুদের দেব-দেবী প্রভৃতির নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করা, নির্দিষ্ট দিনে লাল বা কালো মোরগ জিন বা ভূতের নামে রোগীকে যবেহ করতে বলা কিংবা মিষ্টি ও ফলমূল গায়রুল্লাহর নামে এমনকি হিন্দুদের মন্দিরে অবস্থিত দেব-দেবীকেও মানত করা- অশিক্ষিত শ্রেণির মাঝে এসবের প্রচলন সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

(৫) ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি আংটি ও বালা পরিধানের মাধ্যমে শিরকের চর্চা : রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে ধাতব পদার্থ নির্মিত আংটি ও বালা পরিধান করা মুসলিম সমাজের এক শ্রেণির মানুষের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ফুটপাতে এবং বড় বড় পাইকারি বাজারে এমন কিছু ব্যবসার দোকান পাওয়া যায়, যারা ধাতব নির্মিত আংটি ও বালা বিক্রি করে থাকে। অনেক লোককে তা বাতরোগ নিরাময়, যে কোনো উদ্দেশ্য সফল হওয়া, শনি ও মঙ্গল গ্রহের কুদৃষ্টি থেকে আত্মরক্ষা ইত্যাদির জন্য আঙুলে ও হাতে ব্যবহার করতে দেখা যায়।

আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কোনো বস্তুই নিজস্ব গুণে কোনো রোগের ক্ষেত্রে উপকারী বা অপকারী হতে পারে না। এতে রোগীর অন্তরে ধাতব বন্তুর প্রতি উপকারী হওয়ার ধারণার সৃষ্টি হয় এবং রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর পরিবর্তে বস্তুর উপর ভরসা করা হয়। তাই কোনো বস্তুকে কোনো ক্ষেত্রে উপকারী বা অপকারী ধারণা করে ব্যবহার করা শিরক।

(৬) তা‘বীয ব্যবহারে শিরকের চর্চা : বিভিন্ন রোগের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য বা জিনের অশুভ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ তা‘বীয ব্যবহার করে থাকে। এভাবে সাধারণ মুসলিমদের মাঝে তা‘বীয ব্যবহার একটা সাধারণ রীতিতে পরিণত হয়েছে। অথচ সকল ধরনের তা‘বীয ব্যবহার করা শিরক। বাংলাদেশে গ্রামীণ জীবনে তা‘বীয ব্যবহারের সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু আলেম বিভিন্নভাবে তা বৈধ করার প্রয়াস পান, দেশের দ্ররিদ্র জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় আবেগ ব্যবহার করে কিছু টাকা-পয়সা উপার্জন করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

(৭) মাযার সংস্কৃতিতে শিরকের চর্চা : বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিত মাযারে গমন করে থাকে। মাযার স্পর্শ করা, শরীর মাসাহ করা বা চুমু খাওয়া, কবরের মাটি বরকতের নিয়্যতে নিয়ে তা‘বীযে করে গলায় বাঁধা, গায়ে মালিশ করা, রওযা শরীফ, মাযার বা কবর ইত্যাদির ছবি বরকতের জন্য রাখা, চুমু খাওয়া, সম্মান করা, বিপদাপদ, বালা-মুছীবত থেকে বাঁচার জন্য ঘর-বাড়িতে রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকতের জন্য দোকান, অফিস, হোটেলে মাযার ও খানকার ছবি রেখে আদবের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা, মাযারকে মাঝে মাঝে মহা ধুমধামের সাথে গোসল করানো, আর এ কবর ধোয়া পানি বোতলে করে নিয়ে যাওয়া এবং নেক মাক্বছাদ পূরণের নিয়্যতে পান করা, বিভিন্ন পীর, ওলী-আওলিয়া, বুযুর্গানে দ্বীনের মাযারে বা কবরের উপরে গিলাফ পরানো, নির্দিষ্ট সময়ের পর এ গিলাফ পরিবর্তন করে আবার নতুন গিলাফ পরানো, পুরানো গিলাফ অতি যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা, অজ্ঞ-অশিক্ষিত মানুষের এসব গিলাফে চুমু খাওয়া, গিলাফ ধরে ফরিয়াদ জানানো, আদবের সাথে মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ও এ গিলাফের সুতা তা‘বীযে ভরে গলায় বাঁধা ইত্যাদি এ জাতীয় শিরকের অন্তর্ভূক্ত। এমনকি অনেকেই আরো একধাপ এগিয়ে গিলাফের কাছেই দু‘আ চেয়ে বসে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের কোনো এক প্রসিদ্ধ গ্রুপের মালিক ভারতের আজমিরে গিয়ে মাযারে গিলাফ ও সেজদা দিতে দেখা যায়।

(৮) ওরশ সংস্কৃতিতে শিরকের চর্চা : বাংলাদেশের চট্টগ্রামসহ প্রায় সকল মাযার ও পীরের দরবারে অমাবস্যা, পূর্ণিমা, পীরের জন্ম বা মৃত্যু তারিখকে কেন্দ্র করে ওরশ হয়ে থাকে। নাচুনে বাল্ব, জরি, র‌্যাপিং পেপার ইত্যাদি দিয়ে গেট, প্যান্ডেল ও স্টেজ সাজানো হয়। বেপর্দা অবস্থায় নারী-পুরুষ একত্রে বসে যিকির করে, কাওয়ালী-সামা সংগীত শোনে। ভণ্ড পীর, ফকীররা এসব ওরশে ওয়ায-নছীহতের নামে শরীআতবিরোধী আক্বীদা-বিশ্বাস প্রচার করে। শাহী তবারক রান্না করা হয়। ওরশের পরে যে টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়, তা পীর ও তার খাদেমদের পকেটে চলে যায়। ওরশ মূলত আনন্দোৎসব ও টাকা উপার্জনের পন্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একদল লোক বিশেষত যুবকেরা রজব মাস এলেই পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে যেখানেই সুযোগ পায়, সেখানেই একটা ডেগ বা বড় হাড়ি বসায়। লালসালু কাপড় বিছিয়ে, বাঁশের ছাউনি দিয়ে, চুকমকি, জরি, রঙ্গীনকাগজ এবং বিভিন্ন ধরনের রং লাগিয়ে ঘর আলোকসজ্জা করে তার মধ্যে স্থাপন করে ডেগ। তারা একে বলে ‘খাজা বাবার ডেগ’।

(৯) প্রাণীর ছবি, চিত্র, ভাস্কর্য ইত্যাদি জনিত শিরক : কোনো নেতা বা কোন স্মরণীয় বা বরণীয় ব্যক্তিত্বের ছবি, চিত্র, প্রতিকৃতি, মূর্তি, ভাস্কর্য ইত্যাদি তৈরি করা, মাঠে-ঘাটে, অফিস-আদালতে বা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এগুলোকে স্থাপন করা বা সম্মান করা বা এদেরকে উদ্দেশ্যে করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা বর্তমানে বাংলাদেশের সমাজে সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের স্মরণে সমাধি, স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার ইত্যাদি নির্মাণ এবং এগুলোকে সম্মান জানানো বা এদের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা বর্তমান সমাজের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ‘শিখা চিরন্তন’ বা ‘শিখা অনির্বাণ’ নামে অগ্নি মশালকে সারা দেশে ঘুরিয়ে ভক্তি-শ্রদ্ধা জানানো, বিশেষ ধরনের বেদির ওপর এগুলোর প্রজ্বলন অব্যাহত রাখা ও বিভিন্ন ক্রীড়ানুষ্ঠানে অলিম্পিক মাশাল বা কোন নির্দিষ্ট খেলার প্রতীকি মশাল প্রজ্বলন করা। কারণ, যারা অগ্নিউপাসক তারাও ভক্তি, প্রণাম, মাথানত ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আগুনকে সম্মান করে থাকে। বাংলাদেশে এসবের চর্চা অনেক বেশি হয়ে থাকে। হিন্দুদের অনুকরণে কোনো অনুষ্ঠানের শুরুতে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা পালন করা।

(ইনশা-আল্লাহ আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

সহকারী অধ্যাপক (বিসিএস, সাধারণ শিক্ষা), সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা।


[1]. ‘আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রাসূল পাঠিয়েছিলাম এই নির্দেশ দিয়ে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন করো’ (আন-নাহল, ১৬/৩৬)

Magazine