অধঃপতন, বিপথগামিতা, অবক্ষয় ও বিচ্যুতির কারণ :
(১) কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ও দূরে সরে যাওয়া : আল্লাহ তাআলা বলেন,إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا ‘এ কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ পথনির্দেশ করে এবং সৎকর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার’ (আল-ইসরা, ১৭/৯)। সুতরাং কুরআন সত্যিকার অর্থেই এমন পথের দিক নির্দেশনা দেয়, যা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিকটবর্তী, সহজ ও বিপদমুক্ত।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে বলেছেন, তিনি বলেন,تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ ‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে না, তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ’।[1] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ جَعَلَ القرآن إِمَامَهُ قَادَهُ إِلَى الْجَنَّةِ وَمَنْ جَعَلَهُ خَلْفَ ظَهْرِهِ سَاقَهُ إِلَى النَّارِ ‘যে ব্যক্তি কুরআনকে সামনে রাখে তা তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে কুরআনকে পিছনে রাখে তা তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে’।[2]
(২) ছহীহ সুন্নাহসম্মত জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া : আল্লাহ তাআলা বলেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আল-মায়েদা, ৫/১০৩)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, يَدُ اللهِ مَعَ الجَمَاعَةِ ‘আল্লাহর সাহায্য সংঘবদ্ধ জীবনযাপনের সাথেই রয়েছে’।[3]
(৩) লজ্জাহীন হওয়া : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ الأُولَى إِذَا لَمْ تَسْتَحْيِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ ‘অতীতের নবীগণের কাছ থেকে মানুষ একথা জানতে পেরেছে যে, যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে’।[4]
(৪) গান-বাজনা ও অশ্লীলতায় গা ভাসিয়ে দেওয়া : মহান আল্লাহ বলেন,وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ ‘কতক মানুষ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশত, অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে এবং আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি’ (লুক্বমান, ৩১/৬)।
অবান্তর কথাবার্তা হলো, এমন সব বিনোদন বা অপ্রয়োজনীয় কাজ ও খেলা যা মানুষকে আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণ থেকে গাফেল ও অমনোযোগী করে রাখে। আর যে সমস্ত বিনোদন ও খেলায় কোনো ধর্মীয় ও পার্থিব উপকারিতা নেই, সেসবই নিন্দনীয় ও নিষিদ্ধ।
উত্তরণের উপায় :
(১) অনর্থক, অপ্রয়োজনীয় ও সন্দেহমুক্ত বিষয় পরিত্যাগ করে চলা : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ ‘কোনো ব্যক্তির সুন্দর ইসলামের পরিচয় হলো, অনর্থক অপ্রয়োজনীয় বিষয় পরিত্যাগ করে চলা’।[5] আর কোনো বিষয়ে যদি সন্দেহ হয় এটা হালাল না হারাম, তাহলে তা পরিত্যাগ করাই শ্রেয়’। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ ‘সন্দেহযুক্ত বিষয় বর্জন করে সন্দেহমুক্ত বিষয় গ্রহণ করো’।[6]
(২) আল্লাহকে সর্বাবস্থায় ভয় করা এবং প্রত্যেক মন্দ ও খারাপ কাজের পরই ভালো কাজ করা : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,اتَّقِ اللهِ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ ‘তুমি যেখানেই থাক না কেন আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক মন্দ ও খারাপ কাজের পর ভালো কাজ করো, যা তাকে অর্থাৎ পাপকে মুছে দেবে আর মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করো’।[7]
(৩) দ্বীন ও নৈতিকতা শিক্ষা করা : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, طَلَبَ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর দ্বীন শিক্ষা করা ফরয’।[8] আবুদ দারদা রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,كَيْفَ أَنْتَ يَا عُوَيْمِرُ إِذَا قِيلَ لَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعَلِمْتَ أَمْ جَهِلْتَ فَإِنْ قُلْتَ عَلِمْتُ قِيلَ لَكَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا عَلِمْتَ وَإِنْ قُلْتَ جَهِلْتُ قِيلَ لَكَ فَمَا كَانَ عُذْرُكَ فِيمَا جَهِلْتَ أَلَا تَعَلَّمْتَ ‘হে উমাইর কী অবস্থা তোমার! ক্বিয়ামতের দিন যখন তোমাকে বলা হবে, তুমি বিদ্যা অর্জন করেছিলে না মূর্খ ছিলে? যদি উত্তরে তুমি বল, আমি জ্ঞান অর্জন করেছিলাম, তখন তোমাকে বলা হবে, তুমি কী আমল করেছিলে, যে বিষয়ে বিদ্যা অর্জন করেছিলে? আর যদি তুমি বল, মূর্খ ছিলাম, তাহলে তোমাকে বলা হবে, যে বিষয়ে তুমি মূর্খ ছিলে তার ব্যাপারে তোমার ওযর কী ছিল যে, তুমি জ্ঞান অর্জন করতে পারনি?।[9]
(৪) কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে আলেমদের জিজ্ঞেস করা : মহান আল্লাহ বলেন,فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ‘তোমরা যদি না জান, তবে কিতাবের জ্ঞান যাদের আছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো’ (আন-নাহল, ১৬/৪৩; আল-আম্বিয়া, ২১/৭)।
(৫) ভালো বন্ধু নির্বাচন করা : আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ ‘মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে’।[10] আবূ সাঈদ খুদরী রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,لَا تُصَاحِبْ إِلَّا مُؤْمِنًا وَلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلَّا تَقِيٌّ ‘তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন কেবল পরহেযগার লোক খায়’।[11] আবূ মূসা রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَثَلُ الجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالجَلِيسِ السَّوْءِ كَمَثَلِ صَاحِبِ المِسْكِ وَكِيرِ الحَدَّادِ لاَ يَعْدَمُكَ مِنْ صَاحِبِ المِسْكِ إِمَّا تَشْتَرِيهِ أَوْ تَجِدُ رِيحَهُ وَكِيرُ الحَدَّادِ يُحْرِقُ بَدَنَكَ أَوْ ثَوْبَكَ أَوْ تَجِدُ مِنْهُ رِيحًا خَبِيثَةً ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মিসক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর ক্রয় করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে’।[12] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ ‘মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালোবাসবে (ক্বিয়ামতের দিন) সে তারই সঙ্গী হবে’।[13]
(৬) যেখানে ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা হয় এমন স্থান পরিত্যাগ করা : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ ‘তোমরা নারীদের কাছে প্রবেশ করা হতে বিরত থাকো’।[14] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ ‘কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ শয়তান উভয়ের তৃতীয় জন (কুটনি) হয়’।[15] আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,وَلَا وَاللهِ مَا مَسَّتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ ‘আল্লাহর শপথ! রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত কখনো স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো মহিলার হাত স্পর্শ করেনি’।[16]
(৭) যথাসময়ে বিবাহ করা : আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন,يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে যে সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টিকে অবনত রাখে ও লজ্জাস্থানের সর্বাধিক সংরক্ষণ করে। আর যে সক্ষম নয়, সে যেন ছিয়াম পালন করে। কেননা তা তার জন্য ঢালস্বরূপ’।[17]
(৮) অবসর সময় ভালো কাজে ব্যয় করা : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ ‘দু’টি নেয়ামতের বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অমনোযোগী; একটি সুস্থতা অপরটি অবসর’।[18] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন,اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغُلُكَ وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ ‘তুমি পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের পূর্বে গনীমত বা সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। তোমার যৌবনকে কাজে লাগাও বার্ধক্য আসার পূর্বে, তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও তোমার অসুস্থতা আসার পূর্বে, তোমার সচ্ছলতাকে কাজে লাগাও অসচ্ছলতার পূর্বে, তোমার অবসরকে কাজে লাগাও তোমার ব্যস্ততার পূর্বে এবং তোমার হায়াত বা জীবনকে কাজে লাগাও তোমার মৃত্যু আসার পূর্বে’।[19] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,لَا تَزُولُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ،عَنْ شَبَابِهِ فِيمَ أَبْلَاهُ ‘ক্বিয়ামতের দিনে পাঁচটি বিষয় (অবস্থা) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ বা প্রশ্নোত্তর হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পা আল্লাহর তাআলার নিকট হতে সরতে পারবে না। তার মধ্যে একটি হলো তার যৌবনকাল (শক্তি) সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে’।[20]
অতএব দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা নিজেদের মূল্যবান জীবনকে উপকারবিহীন অনর্থক কাজে নষ্ট করে।
৯. সঠিক সময়ে ছালাত আদায় করা ও ধূমপান থেকে বিরত থাকা : মহান আল্লাহ বলেন,وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ ‘ছালাত প্রতিষ্ঠা করো; নিশ্চয় ছালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে। নিশ্চয় আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ (বিষয়)। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন’ (আল-আনকাবূত, ২৯/৪৫)। ফলে কোনো ছালাত আদায়কারী ব্যক্তি যে কোনো অন্যায় কাজে জড়িত হয় না, দুর্নীতি করে না, রাষ্ট্রের মাল আত্মসাৎ করে না। আবুদ দারদা রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,أَوْصَانِى خَلِيلِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئًا وَإِنْ قُطِّعْتَ وَحُرِّقْتَ وَلاَ تَتْرُكْ صَلاَةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ وَلاَ تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ ‘আমার দোস্ত (রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন যে, ‘তুমি আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খণ্ড-বিখণ্ড করা হয় বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং ইচ্ছা করে কোনো ফরয ছালাত পরিত্যাগ করবে না। যে ইচ্ছা করে তা পরিত্যাগ করবে তার থেকে নিরাপত্তা উঠে যাবে। আর মদপান করবে না। কেননা তা হচ্ছে সমস্ত মন্দের চাবিকাঠি’।[21]
যুবকদের দ্বীনদারিতার একটি নমুনা :
আছহাবে কাহফের ঘটনা : তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা সত্য দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ঈমান আনে এবং দ্বীনকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের জাতি থেকে পালিয়ে গুহায় আশ্রয় নেয় এই ভয়ে যে, না জানি তাদের স্বজাতির লোকেরা তাদেরকে সঠিক দ্বীন থেকে বিভ্রান্ত করে ফেলে। তৎকালীন বাদশা ছিল দাকইয়ানুস, সে ছিল শিরকী ভাবাপন্ন এবং মূর্তিপূজক। আর সেই যুবকরা এই মূর্তিপূজাকে মানতে পারেনি বলেই তারা তাদের দ্বীন রক্ষার জন্য গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করে, যাতে তাদের দ্বারা কোনো শিরক না হয়ে যায়। সেখানে তারা প্রার্থনায় বলেছিল, হে আল্লাহ! আপনার পক্ষ থেকে আমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। আমাদেরকে আমাদের জাতি হতে লুকিয়ে রাখুন এবং আমাদের এই কাজের ফলাফল ভালো করুন। আর আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে তাদের মনোবলকে দৃঢ়চিত্ত করে দিলেন যাতে তারা ভয় না পায়। অতঃপর তারা সেখানে ঘুমিয়ে যায় আর এই অবস্থায়ই তাদের ৩০৯ বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। এরপর আল্লাহ তাআলা এমন অবস্থায় তাদেরকে জাগ্রত করেন যে, তাদের মধ্যে কোনো প্রকারের পরিবর্তন সাধিত হয়নি। ফলে তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, আমরা কত সময় ঘুমিয়ে ছিলাম? উত্তরে বলা হয়, একদিন বা একদিনেরও কিছু কম। এটা বলার কারণ হলো, যখন তারা ঘুমিয়ে যায় তখন ছিল সকাল, আর যখন জেগে উঠে তখন ছিল সন্ধ্যা। তাই তারা সূর্যের ওপর অনুমান করে এ কথা বলেছে। অতঃপর তারা তাদের ক্ষুধা মিটানোর জন্য কিছু খাদ্য ক্রয় করার উদ্দেশ্যে তাদের মধ্য থেকে একজনকে মুদ্রাসহ বাজারে পাঠায়। আর তাকে বলে দেয়, সে যেন জনগণের দৃষ্টি এড়িয়ে খুব সাবধানতার সাথে এ কাজ করে। যাতে করে কেউ আমাদের বিষয় জানতে না পারে। যদি তারা আমাদের খবর জানে তাহলে তারা আমাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবে এবং আমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে (আল-কাহফ, ১৮/৯-২১)।
পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের কবল থেকে উদ্ধার করেন- আমীন!
মাহবূবুর রহমান মাদানী
শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
[1]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৩৩৩৮, ৫/১৩২৩; মিশকাত, হা/১৮৬, হাসান।
[2]. ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/১২৪; সিলসিলা ছহীহা, হা/২০১৯।
[3]. তিরমিযী, হা/২১৬৬।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৮৪।
[5]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৭৬; মিশকাত, হা/৪৮৩৯, হাদীছ ছহীহ।
[6]. নাসাঈ, হা/৫৭১১; মিশকাত, হা/২৭৭৩, হাদীছ ছহীহ।
[7]. তিরমিযী, হা/১৯৮৭, হাদীছ ছহীহ।
[8]. শুআবুল ঈমান, হা/১৫৪৭, হাদীছটি ছহীহ।
[9]. বাগিয়্যাতুল বাহিছ আন যাওয়ায়িদি মুসনাদিল হারিস, হা/১১২৪।
[10]. আবূ দাঊদ, হা/৪৮৩৩; তিরমিযী, হা/২৩৭৮, হাসান।
[11]. আবূ দাঊদ, হা/৪৮৩২; মিশকাত, হা/৫০১৮, হাসান।
[12]. ছহীহ বুখারী, হা/২১০১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬২৮।
[13]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১৬৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৪০।
[14]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৭২।
[15]. তিরমিযী, হা/১১৭১; মিশকাত, হা/৩১১৮, হাদীছ ছহীহ।
[16]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৮৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৬।
[17]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৬৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০০।
[18]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪১২।
[19]. শুআবুল ঈমান, হা/৯৭৬৭; হাকেম, হা/৭৮৪৬।
[20]. তিরমিযী, হা/১৪১৬, হাসান; সিলসিলা ছহীহা, হা/৯৪৬।
[21]. ইবনু মাজাহ, হা/৪০৩৪, হাসান।