কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

কুরআনের আলোকে হাদীছের অপরিহার্যতা (পর্ব-৫)

নবীদেরহাদীছঅমান্যকরায়গযব :

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক কিতাবের সাথে রাসূল পাঠিয়েছেন। কেননা তিনি জানেন, তিনি যদি শুধু কিতাব পাঠান, তাহলে কিতাব বুঝা নিয়ে মানুষের মধ্যে মতভেদ তৈরি হবে। কিতাব যেন মানুষ সঠিকভাবে বুঝতে পারে এই জন্য প্রত্যেক কিতাবের সাথে রাসূল পাঠানো হয়েছে। কোনো কিতাবই আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা দিয়ে লিখিত আকারে আসমান থেকে সাধারণ মানুষের কাছে পাঠিয়ে দেননি; বরং কিতাবের সাথে রাসূলও প্রেরণ করেছেন।

নবী-রাসূলগণের প্রেরণ সংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের সকল আয়াত যদি আমরা সামনে রাখি, তাহলে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারব যে, মহান আল্লাহর মুখ্য উদ্দেশ্য নবী ও নবুঅত। নবীদের মূল দাবি হয়ে থাকে তাওহীদ যা কোনো প্রকার কিতাব ছাড়াই স্বভাবজাত চিন্তাভাবনা দ্বারাই মানুষ অনুভব করতে পারবে। সুতরাং তাওহীদের দিকে ডাকার জন্য সবসময় কিতাবের প্রয়োজন হয় না। স্বাভাবিক অহী তথা হাদীছই যথেষ্ট। এই জন্য বহু নবীকে আল্লাহ তাআলা কিতাব প্রদান করেননি। তবে নবুঅতের প্রমাণের জন্য তিনি বিভিন্ন সময় নবীদেরকে বিভিন্ন নির্দশন প্রদান করেছেন। কিছু কিছু নবীর ক্ষেত্রে তাদের প্রতি প্রদত্ত কিতাবই নিদর্শন আবার কিছু ক্ষেত্রে কিতাব ছাড়া ভিন্ন নিদর্শন আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছেন। সুতরাং নবীদের সত্যবাদিতা এবং তাওহীদের দাওয়াতের সহজবোধ্যতাই মহান আল্লাহর নবী প্রেরণের মৌলিক ভিত্তি। প্রত্যেক জাতির ধ্বংসের ক্ষেত্রে মুখ্য কারণ হচ্ছে নবীদেরকে মিথ্যারোপ করা। তাদের কথা ও আদেশকে অমান্য করা। তথা তাদের হাদীছকে অমান্য করা। এই জন্য কিতাববিহীন নবী প্রেরণ করা হলেও নবীবিহীন কোনো কিতাব মহান আল্লাহ প্রেরণ করেননি।

নিম্নে আমরা পবিত্র কুরআন থেকে বিভিন্ন নবীর উদাহরণ পেশ করব। যা দ্বারা প্রমাণিত হবে নবীদের কথা তথা তাদের হাদীছকে অমান্য করার কারণেই মহান আল্লাহর আযাব এসেছে।

নূহ আলাইহিস সালাম-এর ক্বওম: আল্লাহ তাআলা বলেন,وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُبِينٌ - أَنْ لَا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ أَلِيمٍ - فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ مَا نَرَاكَ إِلَّا بَشَرًا مِثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلَّا الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرَى لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ بَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِينَ ‘আর অবশ্যই আমরা নূহকে প্রেরণ করেছিলাম তাঁর ক্বওমের কাছে (এই বার্তা দিয়ে) যে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্ককারী এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না। নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক দিবসের আযাবের ভয় করছি। অতঃপর তাঁর ক্বওমের যারা কুফরী করেছিল, তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বলল, ‘আমরা তো তোমাকে আমাদের মতো একজন মানুষই দেখছি, আমরা দেখছি যে, কেবল আমাদের নিচু শ্রেণির লোকেরাই চিন্তাভাবনা ছাড়াই তোমার অনুসরণ করেছে। আর আমাদের উপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব আমরা দেখছি না; বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করছি’ (হূদ, ১১/২৫-২৭)

দলীলের যৌক্তিকতা :

(১) উক্ত আয়াতে নূহ আলাইহিস সালাম-এর প্রতি যারা ঈমান আনয়ন করেছিল তাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে তারা নূহ আলাইহিস সালাম-এর অনুসরণ করেছে।

(২) যারা নূহ আলাইহিস সালাম-এর প্রতি ঈমান আনয়ন করেনি তাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, তারা নূহ আলাইহিস সালাম-কে মিথ্যারোপ করেছে।

(৩) নূহ আলাইহিস সালাম-এর বলা প্রতিটি কথাকে আল্লাহ তাআলা নূহ আলাইহিস সালাম-এর কথা হিসেবেই পেশ করেছেন। নূহ আলাইহিস সালাম-এর উপর অবতীর্ণ কোনো কিতাবের আয়াত হিসেবে নয়। তথা এই কথাগুলো নূহ আলাইহিস সালাম-এর হাদীছ। যা অমান্য করার কারণে তারা গযবের শিকার হয়েছে।

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,وَإِنْ يُكَذِّبُوكَ فَقَدْ كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَعَادٌ وَثَمُودُ - وَقَوْمُ إِبْرَاهِيمَ وَقَوْمُ لُوطٍ - وَأَصْحَابُ مَدْيَنَ وَكُذِّبَ مُوسَى فَأَمْلَيْتُ لِلْكَافِرِينَ ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ ‘যদি তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে তাদের পূর্বে ক্বওমে নূহ, আদ, ছামূদ, ক্বওমে ইবরাহীম ও ক্বওমে লূত এবং মাদইয়ানের অধিবাসীরাও (তাদের নবীদের) মিথ্যাবাদী বলেছে। আর মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল মূসাকেও। অতঃপর আমি কাফেরদেরকে অবকাশ দিয়েছিলাম এরপর তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম। অতএব কেমন ছিল আমার প্রত্যাখ্যান ও শাস্তি’ (আল-হজ্জ, ২২/৪২-৪৪)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,وَقَوْمَ نُوحٍ لَمَّا كَذَّبُوا الرُّسُلَ أَغْرَقْنَاهُمْ وَجَعَلْنَاهُمْ لِلنَّاسِ آيَةً وَأَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ عَذَابًا أَلِيمًا ‘আর যখন নূহের সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করল তখন আমি তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম এবং তাদেরকে মানুষদের জন্য নিদর্শন করে দিলাম। আর আমরা অত্যাচারীদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/৩৭)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوحٍ الْمُرْسَلِينَ ‘নূহের ক্বওম রাসূলদের মিথ্যারোপ করেছিল’ (আশ-শুআরা, ২৬/১০৫)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, قَالَ نُوحٌ رَبِّ إِنَّهُمْ عَصَوْنِي ‘আর নূহ বললেন, হে আমার প্রতিপালক, তারা আমাকে অমান্য করেছে’ (নূহ, ৭১/২১)

দলীলের যৌক্তিকতা : উপরের সকল আয়াতে নবী হিসেবে নূহ আলাইহিস সালাম-কে মিথ্যারোপ করার কথা বলা হয়েছে। নূহ আলাইহিস সালাম-কে অস্বীকার করার কথা বলা হয়েছে। যার কারণে তারা মহান আল্লাহর গযবের স্বীকার হয়েছে।

হূ আলাইহিস সালাম-এর ক্বওম: আল্লাহ তাআলা বলেন,كَذَّبَتْ عَادٌ الْمُرْسَلِينَ - إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ هُودٌ أَلَا تَتَّقُونَ - إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ - فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ - وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ - أَتَبْنُونَ بِكُلِّ رِيعٍ آيَةً تَعْبَثُونَ - وَتَتَّخِذُونَ مَصَانِعَ لَعَلَّكُمْ تَخْلُدُونَ - وَإِذَا بَطَشْتُمْ بَطَشْتُمْ جَبَّارِينَ - فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ - وَاتَّقُوا الَّذِي أَمَدَّكُمْ بِمَا تَعْلَمُونَ - أَمَدَّكُمْ بِأَنْعَامٍ وَبَنِينَ - وَجَنَّاتٍ وَعُيُونٍ - إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ - قَالُوا سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَوَعَظْتَ أَمْ لَمْ تَكُنْ مِنَ الْوَاعِظِينَ - إِنْ هَذَا إِلَّا خُلُقُ الْأَوَّلِينَ - وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ - فَكَذَّبُوهُ فَأَهْلَكْنَاهُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ - وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ ‘আদ সম্প্রদায় নবীগণকে মিথ্যাবাদী বলেছিল। যখন তাদের ভাই হূদ তাদেরকে বলেছিল, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো কেবল জগৎসমূহের পালনকর্তার কাছে। তোমরা কি প্রতিটি উচ্চস্থানে নিদর্শন নির্মাণ করছ স্রেফ চিত্তবিনোদন ও নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য জানান দেওয়ার জন্য? আর তোমরা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছ, যেন তোমরা তাতে চিরকাল থাকবে? যখন তোমরা কাউকে পাকড়াও করো, তখন তোমরা প্রতাপশালী হয়ে পাকড়াও করো। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার অনুগত্য করো। ভয় করো তাঁকে, যিনি তোমাদেরকে সেসব বস্তু দিয়েছেন, যা তোমরা জানো। তোমাদেরকে দিয়েছেন চতুষ্পদ জন্তু ও পুত্র-সন্তান এবং বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারা। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্যে মহাদিবসের শাস্তির ভয় করি। তারা বলল, ‘এটা আমাদের জন্য সমান, চাই তুমি উপদেশ দাও অথবা উপদেশকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হও। এসব কথাবার্তা পূর্ববর্তী লোকদের অভ্যাসচরিত বৈ কিছুই নয়। আমরা মোটেও শাস্তিপ্রাপ্ত হব না। সুতরাং তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলতে বলল এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম। এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী ছিল না এবং নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু’ (আশ-শুআরা, ২৬/১২৩-১৪০)

দলীলের যৌক্তিকতা :

(১) উক্ত আয়াতগুলোতে দুই বার হূদ আলাইহিস সালাম তার ক্বওমকে তার আনুগত্যের দিকে আহ্বান করেছেন।

(২) তার আদেশগুলোকে তার উপদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

(৩) নবীকে মিথ্যারোপ করার কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

(৪) হূদ আলাইহিস সালাম-এর সকল কথা আল্লাহ তাআলা হূদ আলাইহিস সালাম-এর দিকে সম্পৃক্ত করেই কুরআনে উল্লেখ করেছেন। ঠিক যেভাবে আমরা আমাদের নবীর কথা তার ছাহাবীদের সাথে হাদীছে পড়ে থাকি। তথা পুরো বিষয়টিই নবীর নবুঅতের দাবি তাওহীদের দাওয়াত এবং নবীর কথাকে বিশ্বাস করার সাথে। তথা হূদ আলাইহিস সালাম-এর হাদীছ অস্বীকার করার কারণেই তার ক্বওম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَاقَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا مُفْتَرُونَ - يَاقَوْمِ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى الَّذِي فَطَرَنِي أَفَلَا تَعْقِلُونَ - وَيَاقَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ - قَالُوا يَاهُودُ مَا جِئْتَنَا بِبَيِّنَةٍ وَمَا نَحْنُ بِتَارِكِي آلِهَتِنَا عَنْ قَوْلِكَ وَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ ‘আর আদ জাতির নিকট আমি তাদের ভাই হূদকে প্রেরণ করেছি। তিনি বলেন, হে আমার জাতি! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের কোনো মা‘বূদ নেই, তোমরা সবাই মিথ্যা আরোপ করছ। হে আমার জাতি! আমি এজন্য তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না; আমার প্রতিদান তাঁরই কাছে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন; তবু তোমরা কেন বোঝো না?

আর হে আমার ক্বওম! তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ করো; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা অপরাধীদের মতো বিমুখ হয়ো না। তারা বলল, হে হূদ! তুমি আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নিয়ে আসোনি, আমরা তোমার কথায় আমাদের দেব-দেবীদের বর্জন করতে পারি না আর আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনয়নকারীও নই’ (হূদ, ১১/৫০-৫৩)

দলীলের যৌক্তিকতা :

(১) প্রাথমিক অবস্থায় হূদ আলাইহিস সালাম কোনো প্রকার নিদর্শন ছাড়াই নিজের ক্বওমকে দাওয়াত দিতে থাকেন।

(২) আল্লাহ তাআলা হূদ আলাইহিস সালাম-কে নিদর্শন হিসেবে কোনো কিতাব প্রেরণ করেননি। যেমন মূসা আলাইহিস সালাম যখন তার ক্বওমের নিকট দাওয়াতি কাজ শুরু করেন, তখন তার কাছে কোনো কিতাব ছিল না। নিদর্শন হিসেবে লাঠি ছিল। আর কিতাব পেয়েছেন ফেরাউন ডুবে যাওয়ার পর। যা আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশা-আল্লাহ। সুতরাং এই কথা দিনের আলোর ন্যায় স্পষ্ট যে, নবীদের প্রতি ঈমান মানে মূলত তাদের কথা তথা হাদীছের প্রতি ঈমান। তাদের কিতাব মুখ্য নয়। মহান আল্লাহ কখনো কিতাব প্রদান করে থাকেন আবার কখনো কিতাব ছাড়াই স্বাভাবিক অহী প্রেরণ করেন তথা হাদীছ প্রেরণ করেন।

ছালেহ আলাইহিস সালাম-এর ক্বওম : আল্লাহ তাআলা বলেন,كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِينَ - إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ صَالِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ - إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ - فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ - وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ - أَتُتْرَكُونَ فِي مَا هَاهُنَا آمِنِينَ - فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ - وَزُرُوعٍ وَنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيمٌ - وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ - فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ - وَلَا تُطِيعُوا أَمْرَ الْمُسْرِفِينَ - الَّذِينَ يُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ - قَالُوا إِنَّمَا أَنْتَ مِنَ الْمُسَحَّرِينَ - مَا أَنْتَ إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُنَا فَأْتِ بِآيَةٍ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ - قَالَ هَذِهِ نَاقَةٌ لَهَا شِرْبٌ وَلَكُمْ شِرْبُ يَوْمٍ مَعْلُومٍ - وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَظِيمٍ - فَعَقَرُوهَا فَأَصْبَحُوا نَادِمِينَ - فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ - وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ ‘ছামূদ সম্প্রদায় নবীগণকে মিথ্যাবাদী বলেছিল। যখন তাদের ভাই ছালেহ তাদেরকে বলছিলেন, তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না? আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো আর আমি এজন্য তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না; আমার প্রতিদান তো বিশ্বপালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তোমরা এখানে যেভাবে আছো, তোমাদেরকে কি সেভাবে নিরাপদে রেখে দেওয়া হবে? উদ্যানসমূহ এবং ঝর্ণাসমূহের মধ্যে? শস্যক্ষেত্র এবং কোমল মুকুলবিশিষ্ট খেজুরবাগানের মধ্যে? আর তোমরা নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার অনুগত্য করো। আর সীমালঙ্ঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না; যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে এবং সংশোধন করে না; তারা বলল, তুমি তো জাদুগ্রস্তদের একজন। তুমি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ বৈ কিছুই নও। সুতরাং যদি তুমি সত্যবাদী হও, তবে আমাদের কাছে কোনো একটি নিদর্শন উপস্থিত কর। ছালেহ বললেন, ‘এই উষ্ট্রী, এর রয়েছে পানি পান করার পালা এবং তোমাদের জন্যও রয়েছে পানি পানের নির্দিষ্ট দিন। তোমরা একে ক্ষতি সাধনের জন্য স্পর্শ করো না; পাছে তোমাদেরকে মহাদিবসের আযাব পাকড়াও করবে। অতঃপর তারা তাকে হত্যা করল, তারপর তারা অনুতপ্ত হয়ে গেল। ফলে আযাব তাদেরকে পাকড়াও করল। নিশ্চয় এতে নিদর্শন আছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়। নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু’ (আশ-শুআরা, ২৬/১৪১-১৫৯)

দলীলের যৌক্তিকতা :

(১) প্রথমেই আমরা দেখেছি ছালেহ আলাইহিস সালাম তার ক্বওমের কাছে নিজেকে বিশ্বস্ত হিসেবে দাবি করছেন এবং এই বিশ্বস্ততার কারণেই তাকে সত্যায়ন করার আহ্বান জানাচ্ছেন, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে নবীদের ক্ষেত্রে তাঁদের সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততাই নবুঅতের অন্যতম ভিত্তি।

(২) ছালেহ আলাইহিস সালাম-এর নিকট যখন তার ক্বওম নিদর্শন দেখতে চেয়েছিল, তখন তিনি উষ্ট্রীকে নিদর্শন হিসেবে পেশ করেন। তথা সকল নবীর ক্ষেত্রে কিতাবকে নিদর্শন করা হয়নি। বহু নবীর ক্ষেত্রে কিতাবের বাইরেও নিদর্শন প্রদান করা হয়েছিল, যা প্রমাণ করে, নবীদের হাদীছের অনুসরণ নবীদের প্রতি ঈমান আনয়নের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

(৩) তারা ছালেহ আলাইহিস সালাম-এর উটনী সংক্রান্ত কথাকে বিশ্বাস করেনি বরং মিথ্যারোপ করেছে। যার ফলে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। তথা ছালেহ আলাইহিস সালাম-এর হাদীছ অমান্য করার কারণে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।

(৪) ছালেহ আলাইহিস সালাম নবী হওয়ার পরও কেনো তিনি মানুষের মতো এটি ছিল তাদের একটি অভিযোগ। যুগে যুগে প্রায় নবীর ক্ষেত্রে এই অভিযোগটি উত্থাপন করা হয়েছে যে, কেনো তারা সাধারণ মানুষের মতো মানুষ। কাফেরদের দ্বারা উত্থাপিত উক্ত অভিযোগটি থেকে একটি বিষয় প্রতীয়মান হয় যে, মানুষ হওয়া নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠতে পারে যখন নবী হিসেবে নবীকে নিঃশর্ত অনুসরণ করতে হয়। তখনই মূলত প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, আমাদের মতো মানুষের কেনো আমরা নিঃশর্ত অনুসরণ করব। সুতরাং মানুষদের মধ্যে থেকে নবী পাঠানো এবং তাদের মানুষ হওয়া নিয়ে কাফেরদের প্রশ্ন উত্থাপন করা প্রমাণ করে যে, নবী হিসেবে নবীগণ নিঃশর্তভাবে অনুসরণীয়। তাদের সাথে কিতাব থাকুক অথবা না থাকুক।

(চলবে)

Magazine