মানব জাতি ইসলামের বিধি-বিধান পালন করে চিরসুখের ও আরাম-আয়েশের স্থান জান্নাতের অধিবাসী হোক এটাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চান। পক্ষান্তরে, শয়তান চায় মানুষ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভয়াবহ কষ্টদায়ক স্থান জাহান্নামের অধিবাসী হোক। কারণ সে তো মানুষের বিরোধী ও প্রকাশ্য শত্রু। হ্যাঁ, সে বিরোধীই! আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম-কে প্ররোচিত করে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করানোর মধ্য দিয়ে তার বিরোধিতার সূত্রপাত হয়। যুগে যুগে মানুষকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ধোঁকা দিয়ে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে সে। সে কখনো ধরেছে নায়কের রূপ আবার কখনো-বা ধরেছে গায়কের রূপ আবার কখনো ধরেছে পীর, ফকির ও দরবেশের রূপ। কারণ সে তো মানুষের গতিবিধি লক্ষ্য করে তাদের চালচলনে। সে মানুষের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করতে পারে। সে এই শক্তি মহাপ্রলয় অবধি আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে এসেছে। উদ্দেশ্য শুধু একটিই আর তা হচ্ছে ‘মানুষকে বিপথগামী করা’। বর্তমানে শয়তান নব উদ্দীপনা নিয়ে মানুষের পিছনে লেগেছে; নাস্তিকতার চাদরে আবৃত হয়ে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে আপতিত হয়েছে। আর তার কাজগুলো আঞ্জাম দিচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষী মানুষরূপী কিছু শয়তান ও মিডিয়া। যেহেতু ইয়াজূজ-মাজূজ পৃথিবীর বিপর্যয় ঘটাবে আর নাস্তিকরা বর্তমানে মানবতার বিপর্যয় সৃষ্টি করছে, সেহেতু এই দিকে মিল রেখে বিষয়ের নাম চয়ন করা হয়েছে ‘ইয়াজূজ-মাজূজ ও নাস্তিকদের মাঝে মিল’।
নাস্তিকপরিচিতি : যারা আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা বলতে একজন আছেন, তা বিশ্বাস করে না; মনে করে পৃথিবী নিজ থেকে অস্তিত্বে এসেছে আবার নিজ থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে। পুনরুত্থান, জান্নাত-জাহান্নাম প্রভৃতি গায়েবী বিষয়গুলো অস্বীকার করে এবং যা চোখে দেখা যায়, তা বিশ্বাস করে আর যা দেখে যায় না, তা বিশ্বাস করে না- এরূপ বিশ্বাস পোষণকারীরাই নাস্তিক। সারা বিশ্বে যারা নিজেদের নাস্তিক বলে বুলি আওড়িয়ে থাকে তারা মূলত নাস্তিক না; বরং তারা ইসলাম বিদ্বেষী। নাস্তিকতার আড়ালে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরোধিতা করাই তাদের মূল লক্ষ্য। কখনো কি তাদের মুখ থেকে বিদ্যমান বিকৃত অন্যান্য ধর্মের সমালোচনা শুনেছেন? তাদের সমালোচনার বিষয় একটাই, তা হলো ‘ইসলাম’।
ইয়াজূজ-মাজূজপরিচিতি : চারজন বাদশাহ ব্যতীত কোনো বাদশাহই সারা পৃথিবী শাসন করেনি। মুসলিমদের থেকে দুইজন: সোলায়মান ও যুলকারনায়ন আলাইহিমাস সালাম আর খ্রিষ্টানদের থেকে দুইজন: নমরূদ ও বুখতে নাসর। যুলকারনাইন একদা কোনো এক এলাকায় যান। ঐ এলাকার অধিবাসীরা তাঁর কাছে অভিযোগ করে যে, আমাদের এলাকায় দুটি দল বিপর্যয় সৃষ্টি করে, তাই আমাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করুন। ঐ দলদ্বয়কে প্রতিরোধকল্পে তখন তিনি গিরিপথের মাঝে সীসাঢালা প্রাচীর নির্মাণ করেন। এই বিপর্যয় সৃষ্টিকারী দলই হলো ইয়াজূজ-মাজূজ।
উৎপত্তি : আমরা জানি নূহ আলাইহিস সালাম-এর চারজন পুত্র সন্তান ছিলেন। তারা হলেন- কেনান, হাম, সাম ও ইয়াফেস। এর মাঝে কেনান প্লাবনের সময় কাফের অবস্থায় মারা যায়। আর বাকি তিন পুত্র মুসলিম অবস্থায় নূহ আলাইহিস সালাম-এর সাথে ছিল। এদের মাঝে সামের বংশ থেকে এসেছে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আর ইবরাহীম থেকে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-এর বংশধর হতে এসেছেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর ইয়াফেসের বংশ থেকে এসেছে ইয়াজূজ-মাজূজ ও ইউনান অর্থাৎ গ্রীক দার্শনিকরা, যারা পরবর্তীতে মনে করত যে, আল্লাহ বা স্রষ্টা বলতে কোনো কিছু নেই, পৃথিবী নিজ থেকে অস্তিত্বে এসেছে আবার নিজ থেকে বিলীন হয়ে যাবে।[1] তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম যে, ইয়াজূজ-মাজূজ ও নাস্তিকদের বংশ একই এবং তারা একই সূত্রে গাঁথা।
ক্রমবিকাশ : ইয়াজূজ ও মাজূজ দুটি সম্প্রদায়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাদীছ বর্ণনা করেন, তখন তাদের দুই দলে ৪ লক্ষ করে মোট ৮ লক্ষ লোক ছিল। তাদের মাঝে প্রত্যেক পুরুষ এমন ১ হাজার সন্তান জন্ম দিয়ে মৃত্যুবরণ করে, যারা যুদ্ধের উপযুক্ত। তারা তাদের মৃত লাশগুলোকে ভক্ষণ করে ফেলে এবং তারা তাদের ভাই-বোন, মা ও মেয়ের সাথেও ব্যভিচার ও বলাৎকারে লিপ্ত হয়। অর্থাৎ তাদের মাঝে কোনো বাছ-বিচার নেই। বর্তমানে তাদের সংখ্যা কত হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।[2]
বিভিন্ন যুগে নাস্তিক আগমন করেছে; কিন্তু ইয়াজূজ-মাজুজের মতো সংখ্যায় এতো বেশি হতে পারেনি। ঈসা আলাইহিস সালাম-এর পূর্বে নাস্তিক ছিল এরিস্টটল, প্লেটো ও সক্রেটিস। তারপর ডারউইন, কালমার্কস ও সর্বশেষ লেনিন। এই ক্রমধারায় বর্তমানেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অসংখ্য নাস্তিক রয়েছে। বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন বড় বড় কর্মকর্তাদের মাঝে নাস্তিক রয়েছে, যারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্ভট কথা বলে সাধারণ মানুষের মস্তিষ্ক ধোলাই করে, তাদের বিপদগামী করছে। আল্লাহ ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ থেকে মানুষকে বিমুখ করছে।
উদ্দেশ্য : আল্লাহ তাআলা বলেন,قَالُوا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ‘তারা বলল, হে যুলকারনাইন! নিশ্চয় ইয়াজূজ ও মাজূজ পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে’ (আল-কাহফ, ১৮/৯৪)।
আমরা জানি, ইয়াজূজ-মাজূজ দাজ্জালের পরে এসে সারা পৃথিবীতে ফেতনা-ফাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। আর বর্তমানে নাস্তিকদের উদ্দেশ্যও তাই। অর্থাৎ ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা। ইয়াজূজ-মাজূজ যেমন হালাল-হারামের তোয়াক্কা করে না, অনুরূপ নাস্তিকরাও কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না। শূকর, কুকুর থেকে শুরু করে সব হিংস্র জন্তু ভক্ষণ তারা বৈধ মনে করে। সূদ, ঘুষ, পতিতাবৃত্তি তাদের নিকট হালাল উপার্জন। ইয়াজূজ-মাজূজ যেমন মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে ব্যভিচার ও বলাৎকার করতে দ্বিধা করে না, অনুরূপ নাস্তিকরাও দ্বিধা করে না। অনেকেই হয়তো পত্রিকাতে পড়েছেন যে, ভারতে বলাৎকার বৈধতাকরণে হাইকোর্টে আপিল করেছে নাস্তিকরা; শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট এর অনুমোদন দিতে পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে।[3] নারী অধিকার ও স্বাধীনতার নামে তারা নারীদের সুকৌশলে উলঙ্গ-অর্ধোলঙ্গ করছে; নামিয়েছে তাদের রাস্তাঘাটে। যার কারণে অহরহ শোনা যাচ্ছে নারী ধর্ষণের অনাকাঙ্ক্ষিত দু্র্ঘটনা। নাস্তিকরা এই কাজগুলো সুনিপুণভাবে বিভিন্ন মহলে করছে। নিম্নে কয়েকটি স্থান উল্লেখ করা হলো :
(১) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আছে অনেক নাস্তিক শিক্ষক। ক্লাসে ঢুকেই এই নাস্তিকরা শুরু করে ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা। ইসলামের অনেক ইস্যু নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী কুরআন ও হাদীছের যথার্থ জ্ঞান রাখে না, সেহেতু এই সরলমনা তরুণদের মাঝে সহজেই এসব সমালোচনা বিষের ন্যায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আস্তে আস্তে তারা নাস্তিকতার দিকে ধাবিত হয়। এই নাস্তিকরা অন্য কোনো ধর্মের সমালোচনা করে না, শুধু ইসলামকে নিয়েই তাদের যত মাথা ব্যথা। কোনো ছাত্র যদি এসকল সমালোচনার যথোচিত উত্তর দেয়, তাহলেই তার পিছনে লাগে; পরীক্ষায় ভালো করা সত্ত্বেও তাকে কম নম্বর দেওয়া হয়। এই ভয়ে কেউ তাদের সমালোচনার জবাব দেয় না। আর এতে নাস্তিকদের প্রপাগান্ডা বৃদ্ধি পায়।
একটি বিষয় নিয়ে যদি বারবার আলোচনা করা হয়, তখন শিক্ষার্থীদের মাঝে এর একটা প্রভাব পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে তারা ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে ওঠে। কারণ একজন মানুষকে জাহান্নামী করার জন্য তিনটি জিনিস কাজ করে- শয়তান, কুপ্রবৃত্তি ও মানুষরূপী শয়তান। নাস্তিকরা কখনো প্রকৃত ইসলাম তুলে ধরে না, বরং কারসাজি করে। আংশিক বলে আর আংশিক গোপন রাখে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুল ধরার মতো শিক্ষার্থী একেবারে বিরল; ধর্ম চর্চা সেখানে নেই বললেই চলে।
আমরা আগে বলেছি যে, ইয়াজূজ ও মাজূজ ব্যভিচার করে, আর নাস্তিকরা যেহেতু তাদের বংশধর সেহেতু তাদেরও অভ্যাস ব্যভিচার করা। তারা প্রেমের নামে ব্যভিচারের মতো এই মহামারি সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এখন আর কেউ প্রেমিক-প্রেমিকার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে খারাপ মনে করে না। সবাই মনে করে প্রেম হলো পবিত্র। শয়তান তাদের উপর এমনভাবে চেপে বসেছে যে, তারা বিন্দুমাত্র টের পায় না। এভাবেই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর নাস্তিকরা তাদের চক্রান্তে সফল হচ্ছে। ইয়াজূজ-মাজূজ যেমন পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে, অনুরূপ নাস্তিকরাও বর্তমানে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ তা অনুধাবন করতে পারছে না।
(২) মিডিয়া : নাস্তিকতার বীজ বপনে মিডিয়ার ভূমিকাও কম নয়। অনেক সাংবাদিক আছে নাস্তিক। তারা তাদের উদ্দেশ্যকে খুব সূক্ষ্মভাবে বাস্তবায়ন করছে। মিডিয়ার মাধ্যমে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আপনি দেখবেন, বিভিন্ন সময় টকশোতে মাদরাসা শিক্ষাকে কটাক্ষ করা হয়, দেশের বড় বড় আলেমদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়। এতে করে জনসাধারণের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
বর্তমানে কিছু মিডিয়া আলোচিত কিছু স্কলারের বক্তব্য কাটছাঁট করে তাদের সুনাম নষ্ট করার সাথে সাথে পাবলিক প্লেসে ইসলামের দুর্নাম করছে, করছে ইসলামের সমালোচনা। ধর্ষণের কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছে মাহফিলের বক্তব্যকে। বক্তব্য শুনে নাকি ধর্ষকরা ধর্ষণের প্রতি ধাবিত হচ্ছে, বক্তারা নাকি ধর্ষণের উসকানিদাতা। আমরা তাদের তীব্র নিন্দা করে বলছি, বর্তমানের কিছু বক্তা জাতির জন্য রহমতস্বরূপ। তাদের জোরালো বক্তব্যের প্রভাবেই একবিংশ শতাব্দীতে ইসলামের রেনেসাঁ শুরু হয়েছে। দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে, অনেক বিপদগামী সুপথের সন্ধান পাচ্ছে, যারা আগে দ্বীন-ধর্মের কোনো পরওয়াই করত না, তারা এখন দ্বীন ছাড়া কিছু বোঝে না। তারা বুঝতে পেরেছে যে, শান্তি একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। যে সমস্ত নারী স্বাধীনতার নামে বেপর্দায় চলত, তারা এখন শালীন পোশাক পরে চলাফেরা করে। ওহে নাস্তিক! আপনার মধুমাখা আলোচনা শুনে কতজন নারী শালীনভাবে পোশাক পরছে?
(৩) সহযোগিতারনেপথ্যেকুমতলব : গ্রামের অধিকাংশ পরিবার দুস্থ-দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের; সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। শহরের লোকদের ন্যায় এত টাকা-পয়সা নেই যে ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাবে। এসব সরলমনা লোকদের নিকট নাস্তিকরা গমন করছে, সহযোগিতার নামে তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে নাস্তিকতার বিষবাষ্প। তারা গ্রামে গ্রামে কিছু নারী পাঠাচ্ছে, যারা গ্রামের সাধারণ নারীদের নারী স্বাধীনতার নামে ইসলাম বিদ্বেষী করে তুলছে। গ্রামে এনজিও-র নামে সূদের বিস্তার ঘটাচ্ছে, বাস্তবায়ন করছে অসৎ উদ্দেশ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষার্থীদেরপ্রতি : হে আমার মুসলিম ভাই! আপনারা হলেন জাতির কাণ্ডারী, জাতি আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাওহীদের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে অগ্রসর হোন। আপনাদের দ্বারা অসম্ভব কাজ সম্ভব, কারণ আপনারাই তো জাতির ভবিষ্যৎ দিশারী। আপনারা সুপথে থাকলে জাতি সুপথে থাকবে আর আপনারা উদাসীন হলে জাতি আলোর মুখ কীভাবে দেখবে? আপনারা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শকে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করুন।
এসব নাস্তিকদের মোকাবেলা করতে হলে আপনাকে ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে হবে; পড়তে হবে ইসলামের নিয়ম-নীতি, আদর্শ, হালাল-হারাম সংক্রান্ত বই। নচেৎ আপনি তাদের খোঁড়া যুক্তির কাছে হেরে যাবেন। আর আপনারা হারলে চলবে না। আপনাকে যে বিজয়ী হতেই হবে। আপনি হয়ে যান রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কলম সৈনিক, নাস্তিকদের আতঙ্ক। সিলেবাসের বই পড়ার সাথে সাথে কিছু সময় আপনাকে ইসলামের বই পড়তে হবে। সময়টা কীভাবে ঠিক করবেন সেটা আপনার ব্যাপার, তবে আপনাকে ইসলাম সম্পর্কে জনতে বই পড়তে হবে। কিছু বইয়ের নাম আমি উল্লেখ করব। যেহেতু নাস্তিকরা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনী নিয়ে সমালোচনা করে, সেহেতু রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনী বিষয়ক একটি বই পড়া আবশ্যক। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনী বিষয়ক অন্যতম সেরা গ্রন্থ হলো আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপুরী রহিমাহুল্লাহ সংকলিত ‘আর-রাহীকুল মাখতূম’। নাস্তিকরা কবরের শাস্তি, পরকাল, পুনরুত্থান, পুলসিরাত, জান্নাত ও জাহান্নামকে অস্বীকার করে। তাই ইবনুল ক্বাইয়িমের লেখা ‘আত্মার রহস্য’ বইটি পড়া জরুরী। আক্বীদা সংক্রান্ত কিছু বই পড়তে হবে। এমনিভাবে হাদীছের কিতাবগুলো পড়াও জরুরী।
ওহে ইবলিসেরপ্রেতাত্মা! তুমি মুসলিম জাতিকে বিপদগামী করার জন্য প্রতিটি পথে চক্রান্তের জাল বিস্তার করেছো, ওঁৎ পেতে বসে আছো পথের ধারে। মনে রেখো, মৃত্যু থেকে কিন্তু বাঁচতে পারবে না। শিক্ষা গ্রহণ করো আতাতুর্কের পরিণাম থেকে ও ত্বহা খান থেকে, তারাও তোমাদের মতো সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিয়েছিল; কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। তারা নিঃশেষ হয়ে গেছে ঠিকই, ইসলাম কিন্তু নিঃশেষ হয়ে যায়নি। আর কত মানুষকে গোলকধাঁধায় ফেলবে? মেঘের ঘনঘটা দেখে উল্লাস করছ! মনে রেখো, মেঘের আড়ালে কিন্তু সূর্যের কিরণ হাসছে। খড়কুটা, আবর্জনার ন্যায় আর কত দিন বেঁচে থাকবে! মনে রেখো, খড়কুটা, আবর্জনা কিন্তু পানির স্রোতে ভেসে যায় দূর অজানায়। মুসলিম জাতি বর্তমানে ঘুমন্ত বাঘের ন্যায় থাকলেও জেগে উঠতে দেরি হবে না। আর যদি তারা জেগে উঠে, তাহলে তোমাদের মতো বিড়ালকে মুহূর্তের মাঝে কুপোকাত করে ফেলবে। نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় অচিরেই আসবে। সুতরাং মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও’ (আছ-ছফ,৬১/১৩)।
মহিলাদের পোশাক পুরুষরা ও পুরুষদের পোশাক মহিলারা পরিধান করা : মহিলাদের জন্য নির্ধারিত বা তাদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পুরুষদের পরিধান করা নিষিদ্ধ। তেমনি পুরুষদের জন্য নির্ধারিত বা তাদের পোশাকের সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাকও মহিলাদের জন্য পরিধান করা হারাম। আবু হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষ এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীর প্রতি অভিসম্পাৎ করেছেন’।[4]
খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি পোশাক : যে পোশাক অন্যান্য মানুষের চেয়ে খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য পরা হয়, তা হারাম।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ.
আব্দুল্লাহ ইবনু উমাররযিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় খ্যাতির পোশাক পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন’।[5]
ভিন্ন ধর্মীয় বা বিজাতীয় কোনো পোশাক পরিধান করা : ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা যাবে না। অর্থাৎ যে পোশাক অন্য কোনো ধর্মের নিদর্শন প্রকাশ করে বা পরিচয় দান করে।
عن عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ t رَأَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আছ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পরিধানে দুটি রঙ্গিন কাপড় দেখে বললেন, ‘এটা কাফেরদের কাপড়। অতএব, তা পরিধান করো না’।[6] এ ছাড়াও প্রাণীর ছবি অঙ্কিত পোশাকও পরিধান করা হারাম।[7]
অন্য ধর্মাবলম্বীদের নির্ধারিত ধর্মীয় প্রতীক বহন করে এমন পোশাক পরিধান করাও জায়েয নেই। যেমন- খ্রিষ্টানদের ক্রুশ অঙ্কিত পোশাক, হিন্দুদের মতো উল্কি আঁকা, সিঁদুর পরা ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির অনুসরণ করবে, সে সেই জাতির উম্মত হিসাবে গণ্য হবে’।[8] এ প্রসঙ্গে একটি হাদীছ উল্লেখ করা যায়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘লা‘নত বর্ষিত হোক সেসব নারীর ওপর, যারা উল্কি এঁকে নেয় এবং যারা উল্কি আঁকে, যারা চুল উঠিয়ে ফেলে, ভ্রু প্লাক করে, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত কেটে চিকন করে, দাঁতের মধ্যে ফাঁকা সৃষ্টি করে, যা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন এনে দেয়’।[9] এক কথায় অন্য ধর্মের ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা যাবে না।
আঁটসাঁট পোশাক ও পাতলা কাপড় পরিধান করা : যদি পরিধেয় পোশাক এরূপ হয় যে, আবৃত অংশের চামড়া বা হুবহু আকৃতি তার বাইরে থেকে ফুটে ওঠে, তাহলে তাতে পোশাকের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। এরূপ পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,
عَنْ ضَمْرَةَ بْنِ ثَعْلَبَةَ t أَنَّهُ أَتَى النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ حُلَّتَانِ مِنْ حُلَلِ الْيَمَنِ فَقَالَ يَا ضَمْرَةُ أَتَرَى ثَوْبَيْكَ هَذَيْنِ مُدْخِلِيكَ الْجَنَّةَ. فَقَالَ لَئِنِ اسْتَغْفَرْتَ لِىْ يَا رَسُولَ اللهِ لاَ أَقْعُدُ حَتَّى أَنْزِعَهُمَا عَنِّى. فَقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِضَمْرَةَ بْنِ ثَعْلَبَةَ. فَانْطَلَقَ سَرِيْعاً حَتَّى نَزَعَهُمَا عَنْهُ.
যামরা ইবনু ছা‘লাবা রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি এক জোড়া ইয়ামানী কাপড় পরিধান করে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে যামরা! তুমি কি মনে কর যে, তোমার এই কাপড় দুটি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? যামরা রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবে আমি বসার আগেই (এখনি) কাপড় দুটি খুলে ফেলব। তখন নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আপনি যামরাকে ক্ষমা করে দিন। তখন যামরা রযিয়াল্লাহু আনহু দ্রুত গিয়ে তার কাপড় দুটি খুলে ফেলেন।[10]
ছবি বা ধর্মীয় প্রতীক সম্বলিত পোশাক পরা : ইসলামে কোনো প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা, ব্যবহার করা, টাঙ্গানো বা পোশাকে বহন করা নিষেধ করা হয়েছে। এ সকল কর্মে জড়িতদের জন্য পারলৌকিক জীবনে কঠিনতম শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বহু হাদীছ রয়েছে, তন্মধ্যে একটি হাদীছ উল্লেখ করা হলো- ইসহাক্ব ইবনু মূসা আনছারী রহিমাহুল্লাহ... উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে যে,
أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى أَبِي طَلْحَةَ الأَنْصَارِيِّ يَعُودُهُ . قَالَ فَوَجَدْتُ عِنْدَهُ سَهْلَ بْنَ حُنَيْفٍ . قَالَ فَدَعَا أَبُو طَلْحَةَ إِنْسَانًا يَنْزِعُ نَمَطًا تَحْتَهُ فَقَالَ لَهُ سَهْلٌ لِمَ تَنْزِعُهُ فَقَالَ لأَنَّ فِيهِ تَصَاوِيرَ وَقَدْ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَا قَدْ عَلِمْتَ . قَالَ سَهْلٌ أَوَلَمْ يَقُلْ " إِلاَّ مَا كَانَ رَقْمًا فِي ثَوْبٍ " فَقَالَ بَلَى وَلَكِنَّهُ أَطْيَبُ لِنَفْسِي . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
তিনি একবার অসুস্থ আবূ তালহা রযিয়াল্লাহু আনহু-কে দেখতে গেলেন। তিনি সেখানে সাহল ইবনু হুনায়ফ রযিয়াল্লাহু আনহু-কে পেলেন। আবূ তালহা রযিয়াল্লাহু আনহু একজনকে ডেকে তার নিচে বিছানো চাদরটি সরিয়ে ফেলতে বললেন। তখন সাহল রযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এটিকে সরিয়ে ফেলছেন কেন? তিনি বললেন, এতে তো ছবি রয়েছে। আর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ছবি সম্পর্কে) কী বলেছেন তা তো তুমি জানো। সাহল রযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি একথা বলেননি যে, কাপড়ে যদি সামান্য নকশাস্বরূপ কিছু থাকে, তবে অসুবিধা নেই? আবূ তালহা রযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হ্যাঁ, কিন্তু আমি আমার নিজের জন্য উত্তম পথ গ্রহণ করতে চাই।[11]
সুতরাং, ছবি বা প্রাণীযুক্ত কাপড় পরিধান করা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি বিছানায় প্রাণীর ছবিযুক্ত চাদর বিছানায় ব্যবহার করার বিধান শরীআতে নেই, যা উক্ত হাদীছ থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন- আমীন!
অধিকাংশ নারী পোশাক পরেও উলঙ্গ : হে আমার মুসলিম বোন! আপনি কি জানেন শারঈ হিজাব কী? হিজাব কেমন হতে হবে এবং এর শর্তাবলি কী? আর এ ব্যাপারে আপনার অজ্ঞতায় ক্ষতিইবা কী? আপনি কি পর্দা করছেন ‘কেন হিজাব পরেছো এবং কীভাবে হিজাব পরেছো’ সে প্রশ্নের সদুত্তর দিয়ে পার পেতে নাকি সামাজিক রীতি হিসেবে? ঠিক বা বেঠিক যা-ই হোক পরিপার্শ্বের প্রভাবে? আপনি কি হিজাব নিয়ে ভেবে দেখেছন, কে একে ফরয করেছেন? কেনইবা ফরয করেছেন? আর তা হওয়া চাই কেমন? হ্যাঁ, অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে, আপনি এ ব্যাপারে অজ্ঞ নন। আপনি কেন অজ্ঞ থাকবেন, যেখানে আপনাকে দেখি চাকরির ক্ষেত্রে সফল পরিচালিকা, শিক্ষিকা, অধ্যাপিকা, প্রধান শিক্ষিকা, নিয়ন্ত্রক থেকে নিয়ে ডাক্তার আর নার্স হতে। আপনাকে দেখি মেধাবী অফিসার, জনপ্রিয় লেখিকা, অকুতোভয় সাংবাদিক থেকে নিয়ে দুরন্ত সব পেশার কত কিছুই না হতে। দেখি মা, বোন, কন্যা ও স্ত্রী হিসেবে অসামান্য ভূমিকা রাখতে। পর্দার ক্ষেত্রে আপনার অনমনীয়তা দেখেই কি রিপু ও প্রবৃত্তি পূজারীরা আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা করে? প্রতিবেশী ও আশপাশের দোকানে দাঁড়ানো তরুণরা মশকরা করে? এর প্রভাবেই কি আপনি সব অপরিণামদর্শী ফ্যাশনের পেছনে ছুটেন? আরও আশ্চর্য হয়ে আমাদের কোনো কোনো বোনকে দেখি, সন্ধ্যার আগে-পরে খোলা নকশি আঁকা উজ্জ্বল গেঞ্জি, ফতুয়া বা টি-শার্ট পরে পথে বেরিয়েছেন! ভেবে দেখুন, নিজের মধ্যে আপনি কোন গুণগুলো দেখতে চেয়েছেন আর কোনগুলোকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন? পরিতাপের বিষয়, এমন পরিধেয়ও আমরা অনেকে সুশীল পোশাক বলে আখ্যায়িত করে মর্যাদা বৃদ্ধি করি! না, খোদ এই গেঞ্জি, ফতুয়া আর শার্টই তো আরেক পোশাকের অপেক্ষা রাখে। এর কমনীয়তা আড়াল করতে। এর অনাবৃতকে আবৃত করতে। এর ছিদ্র ও ফাঁক-ফোকর বন্ধ করতে। যার ওপর দিয়ে বক্ষবন্ধনীর রং কিংবা নিচের সেমিসও দেখা যায়। আল্লাহর শপথ! এটি কোনো সুশীল বা মার্জিত পোশাক নয়। শালীন হতে হলে তা হতে হবে স্পর্শকাতর ও মনোরঞ্জক সব নারী অঙ্গের আড়াল করা পোশাক। আবূ উযাইনা ছাদাফী রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
خَيْرُ نِسَائِكُمُ الْوَدُودُ الْوَلُودُ الْمُوَاتِيَةُ الْمُوَاسِيَةُ، إِذَا اتَّقَيْنَ اللهَ، وَشَرُّ نِسَائِكُمُ الْمُتَبَرِّجَاتُ الْمُتَخَيِلَّاتُ وَهُنَّ الْمُنَافِقَاتُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْهُنَّ، إِلَّا مِثْلُ الْغُرَابِ الْأَعْصَمِ
‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে তারাই সর্বোত্তম, যারা আল্লাহকে ভয় করার পাশাপাশি স্বামীকে ভক্তি করে, অধিক সন্তান জন্ম দেয় এবং (স্বামীর দুঃখে তার প্রতি) সমব্যথী ও সহানুভূতিশীল হয়। পক্ষান্তরে, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে মন্দ তারাই, যারা বেপর্দা হয়ে দম্ভভরে চলে। এরাই হলো মুনাফিক্ব। এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল লাল ঠোঁট ও পা বিশিষ্ট কাকদের মতো। (অর্থাৎ এমন বৈশিষ্ট্যের কাক যেমন সংখ্যায় অনেক কম তেমনি তারা কম সংখ্যক জান্নাতে প্রবেশ করবে)।[12]
আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا
‘জাহান্নামবাসী দুটি দল রয়েছে, যাদের আমি এখনো দেখিনি। একদল এমন লোক, যাদের হাতে গরুর লেজের মতো লাঠি থাকবে, যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী, যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে। তারা অন্যদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে, নিজেরাও অন্যদের প্রতি ঝুঁকবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের কুঁজের মতো হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ এর ঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যায়’।[13]
হাদীছে উল্লেখিত ‘পোশাক পরেও উলঙ্গ’-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এমন সংক্ষিপ্ত পোশাক, যা নারীর আবরণীয় অংশ ঢাকতে যথেষ্ট নয়। এমন পাতলা পোশাক, যা ভেদ করে সহজেই নারীর ত্বক দেখা যায়। এমনকি টাইট কাপড়, যা ভেদ করে ত্বক দেখা যায় না বটে, তবে তা নারীর আকর্ষণীয় অবয়বকে পরিস্ফূট করে দেয়। এসব পোশাক নারীরা কেবল তার সামনেই পরতে পারেন, যার সামনে নিজের গোপন সৌন্দর্য তুলে ধরার অনুমতি রয়েছে। বলাবাহুল্য তিনি হলেন একমাত্র স্বামী। কেননা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো পর্দা নেই। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
‘আর যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৫-৭)।
উল্লিখিত শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, অর্থাৎ এমন পোশাক পরিধান করে, যা তাকে পুরোপুরি আবৃত করে না। ফলে কাপড় পরলেও মূলত সে উলঙ্গই থেকে যায়। যেমন ওই নারী, যে কি-না এমন পাতলা কাপড় পরে, যা তার কোমল ত্বক দৃশ্যমান করে কিংবা এমন আঁটসাঁট বস্ত্র গায়ে জড়ায়, যা তার শরীরের বাহু, নিতম্ব প্রভৃতির ভাঁজগুলোকে পরিষ্কার ফুটিয়ে তোলে। নারীর পোশাক সেটিই, যা তার আপাদমস্তক ঢেকে ফেলে। দেহের কোনো অংশই প্রকাশ করে না। পুরু ও প্রশস্ত হওয়ায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকারও সুদৃশ্য করে না।[14]
হিজাব এতদিন শিল্পিত সৌন্দর্য বিকাশ বা তরুণদের রিপু সুড়সুড়ি দেওয়ার উপাদান ছিল না, যেমনটি আজ হয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে নামকাওয়াস্তে পর্দা। তখনকার পর্দা ছিল কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত। ছিল নারীর সম্মান ও সতীত্বের রক্ষাকবচ।
প্রিয় মুসলিম বোন! আপনি যতদিন নিজেকে আল্লাহর নিকট পর্দাকারী দেখতে পছন্দ করেন, নিজেকে তাদের কাতারে দেখতে চাইবেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি তালাশ করে, আপনার দায়িত্ব হবে ঠিক সেভাবে বোরকা পরা, যেভাবে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। তেমন নয়, যেমন যুগ চায় কিংবা আমাদের মন টানে। আল্লাহ নারীদের বাঞ্ছিত পদ্ধতিতে কাম্য পর্দা করবার তাওফীক দান করুন- আমীন!
নারী ও পুরুষের পোশাক পর্যালোচনা :
পোশাক প্রথমে লজ্জাস্থান আবরণকারী হতে হবে। এজন্য নারী ও পুরুষের পোশাকে মৌলিকভাবে পার্থক্য হতে বাধ্য এ কারণে যে, পুরুষের লজ্জাস্থান এবং নারী দেহের লজ্জাস্থানের পরিধির দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, তা অবশ্যই ভূষণ বা শোভাবর্ধক ও সৌন্দর্য প্রকাশক হতে হবে। মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ
‘আর মুমিন নারীদের বলো, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখো এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায়, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে’ (আন-নূর, ২৪/৩১)।
উক্ত আয়াতের আলোকে বলা যায়, যে পোশাক মানুষের আকার-আকৃতিকে কিম্ভূতকিমাকার বা বীভৎস করে দেয়, চেহারা বিকৃত করে দেয়, সে পোশাক কুরআন সমর্থিত পোশাক নয়; কোনো মুসলমানের পক্ষেই তা ব্যবহারযোগ্য হতে পারে না। আর মহিলাদের জন্য তো অবশ্যই শালীন পোশাক পরিধান করা বাঞ্ছনীয়। উক্ত আয়াতে তাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অতএব বলা যায়, মহিলাদের পোশাকে মাথা, বক্ষ এবং গ্রীবা আবৃতকারী কাপড় থাকতে হবে। যেহেতু নারী ও পুরুষের পোশাকে পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে, সেহেতু এ প্রসঙ্গে হাদীছে অত্যন্ত কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষের উপর আর পুরুষের বেশ ধারণকারী নারীর উপর লা‘নত করেছেন।[15]
বেশ ধারণ করার অন্যতম মাধ্যম হলো পোশাক। অতএব নারীর জন্য পুরুষের পোশাক পরিধান করা আর পুরুষের জন্য নারীর পোশাক পরিধান করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীকে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন।[16]
আজকাল অনেক নারীকে তো প্যান্ট ও টি-শার্টও পরতে দেখা যায়। এসব যে কেবল পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণের কারণেই হারাম তা নয়; নির্লজ্জতা, পর্দাহীনতা আর বিজাতির সামঞ্জস্য গ্রহণ ইত্যাদি বহু কারণেই তা হারাম ও কবীরা গুনাহ। কোনো কোনো সময় পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন মুসলিম দেশের নারীদের ছবি দেখা যায়, যাদের মাথায় ওড়না, কিন্তু শরীরে ইউরোপীয় সাজ। শুধু তাই নয়, পরচুলা পরা, উল্কি অঙ্কন ইত্যাদি সাজে সজ্জিত হয়, যা শরীআতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেমন হাদীছে এসেছে, ‘যে মহিলা পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে ও উল্কি উৎকীর্ণ করতে বলে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অভিশাপ করেছেন’।[17]
পোশাক ও বর্তমান পরিস্থিতি এবং আমাদের করণীয় :
ইসলামে পোশাক পরিধানের কিছু আদব ও নিয়মনীতি রয়েছে, প্রত্যেক মুমিনকে তা মেনে চলা উচিত। এতে একদিকে যেমন সুন্নাত পালন হবে, অপরদিকে পোশাক পরিধানের জন্য ছওয়াবের অধিকারী হবে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন,
يَٰبَنِىٓ ءَادَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَٰرِى سَوْءَٰتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ ٱلتَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ذَٰلِكَ مِنْ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
‘হে বানী আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র এবং তাক্বওয়ার পোশাক। এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে’ (আল-আ‘রাফ, ৭/২৬)।
উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, মানুষের বিরুদ্ধে শয়তানের সর্বপ্রথম আক্রমণের (কুমন্ত্রণার) ফলে তার পোশাক খসে পড়েছিল। আজও শয়তান তার শিষ্যবর্গের মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছায় সভ্যতার নামে সর্বপ্রথম তাকে উলঙ্গ বা অর্ধ-উলঙ্গ করে পথে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় রত। শয়তানের তথাকথিত প্রগতি নারীকে লজ্জা-শরম থেকে বঞ্চিত করে সাধারণ্যে অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় নিয়ে আসা ছাড়া অর্জিতই হয় না।
বর্তমান এক শ্রেণির আলেম ও পীরদের সুন্নাতি লেবাস সম্পর্কে আলোচনা কুরআন ও হাদীছের আলোকে কতটুকু শরীআতসম্মত তার পর্যালোচনায় বলা যায় যে, তারা নিজেদের দরবার, খানকা, তরীক্বা ও ইচ্ছানুযায়ী এক প্রকার পোশাক নির্ধারণ করে বলে থাকেন, এটা সুন্নাতী পোশাক। মূলত সুন্নাতী পোশাক বলতে নির্ধারিত কোনো দরবার বা খানকার পোশাককে বুঝানো হয়নি। বরং সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী বা সুন্নাহ পোশাকের যেই ফর্মূলা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী যদি পোশাক তৈরি করা হয়, সেটাই সুন্নাতী পোশাক হিসাবে বিবেচিত হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিকটা বুঝার ও অনুসরণ করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. ছহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী, ‘ইয়াজুজ ও মাজুজ’ অধ্যায়, হা/৩৩৪৬
[2]. প্রাগুক্ত।
[3]. বিবিসি বাংলা (অনলাইন), ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮। লিংক : https://www.bbc.com/bengali/news-45430015.
[4]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৯৮; মিশকাত, হা/৪৪৬৯।
[5]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৬০৬; মিশকাত, হা/৪৩৪৬।
[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৭৭; মিশকাত, হা/৪৩২৭।
[7]. ছহীহ গায়াতুল মারাম, হা/১৩৪; তিরমিযী, হা/১৭৫০ (আল মাদানী প্রকাশনী), ইমাম আবূ ঈসা রহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদীছটি হাসান-ছহীহ।
[8]. ফাতহুল বারী, ১৩/৩০০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৯।
[9]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৫০৭।
[10]. মুসনাদ আহমাদ, হা/১৯৪৯৪, হাদীছ ছহীহ।
[11]. ছহীহ গায়াতুল মারাম, হা/১৩৪; তিরমিযী, হা/১৭৫০ (আল মাদানী প্রকাশনী), ইমাম আবূ ঈসা রহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদীছটি হাসান-ছহীহ।
[12]. বায়হাক্বী, হা/১৩৪৭৮।
[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/২১২৮।
[14]. মাজুমূ‘ ফাতাওয়া, ২২/১৪৬।
[15]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৮৮৫।
[16]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৯২।
[17]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৩৭, ৫৯৪০, ৫৯৪২, ৫৯৪৭।