কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ইসলামে মুছাফাহার বিধান

অভিধানের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায় যে, মুছাফাহার আভিধানিক অর্থ হলো— করমর্দন করা, হাতে হাত মেলানো। আগন্তুক অথবা সাক্ষাৎকারীর হাত ধরে তাকে অভিনন্দন জানানোর নাম মুছাফাহা। কারও সাক্ষাৎ হলে মুখে সালাম আদানপ্রদান করে হাতে হাত মিলানো মুসলিম ঐতিহ্য ও সামাজিকতার অংশ এবং নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত আর ছাহাবীগণের রীতি-রেওয়াজ। দু’জন মুসলিমের মধ্যে দেখা হলে মুছাফাহা বা করমর্দন করা একটি ইসলামী রীতি ও উত্তম চরিত্র। এটি মুছাফাহাকারী ব্যক্তিদ্বয়ের মাঝে ভালোবাসা ও হৃদ্যতার বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে এটি মুসলিমদের পারস্পারিক হিংসা-বিদ্বেষ ও কলহ দূর করে দেয়।

মুছাফাহার সংজ্ঞা :

মুছাফাহার পারিভাষিক সংজ্ঞায় আলেমদের একাধিক মত পাওয়া যায়। প্রখ্যাত হাদীছ ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, الْإِفْضَاءُ بِصَفْحَةِ الْيَدِ إِلَى صَفْحَةِ الْيَدِ ‘হাতের তালু দ্বারা হাতের তালু ধারণ করার নাম মুছাফাহা বা করমর্দন করা’।[1] আল-হাত্তাব আল-মালেকী রহিমাহুল্লাহ বলেন, اَلْمُصَافَحَةُ: وَضْعُ كَفٍّ عَلَى كَفٍّ مَعَ مُلَازَمَةٍ لَّهُمَا قَدْرَ مَا يُفْرَغُ مِنَ السَّلَامِ. ‘মুছাফাহা হলো, সালাম থেকে অবসর না হওয়া পর্যন্ত পরস্পর হাত সংযুক্ত থাকা অবস্থায় হাতের তালুর উপর হাতের তালু রাখা’।[2]

মুসলিমদের সৌহার্দপূর্ণ সম্প্রীতির সুদৃঢ় বন্ধন আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। মানুষের বন্ধন সুদৃঢ় হয় সুন্দর আচরণের মাধ্যমে। তাই সুন্দর আচার-ব্যবহার প্রকাশের প্রতিটি ধরন আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দনীয়। কারও সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সালাম আদানপ্রদানের সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রতি হাত বাড়িয়ে দিলে ভালোবাসা, আন্তরিকতা ও বিনয় প্রকাশ পায়। পরস্পরে এমন ভালোবাসার দৃশ্য আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক পছন্দনীয়।

মুছাফাহার ফযীলত ও বিধান :

মুছাফাহার ফযীলতের ব্যাপারে অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদীছ উদ্ধৃত হয়েছে। হাদীছটি হলো— রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا ‘দু’জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুছাফাহা করলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়’।[3] ছাহাবীগণের মাঝে মুছাফাহা একটি প্রসিদ্ধ অভ্যাস ছিল। ক্বাতাদা রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু-কে জিজ্ঞেস করলাম, ছাহাবীদের সময়ে কি তাদের মধ্যে মুছাফাহার প্রচলন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ।[4] ইবনু বাত্তাল রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘সর্বস্তরের আলেমগণের মতে, মুছাফাহা একটি নেক কাজ আর সাক্ষাতের সময় মুছাফাহা করা সুন্নাত’।[5] অবশ্য আলেমগণের কেউ কেউ বলেন, মুছাফাহা করা মুস্তাহাব। আর অধিকাংশের মতে, মুছাফাহা করা সুন্নাত। ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ-এর মতে মুছাফাহা মুস্তাহাব। এ প্রসঙ্গে রদ্দুল মুহতার গ্রন্থে এসেছে,اعْلَمْ أَنَّ الْمُصَافَحَةَ مُسْتَحَبَّةٌ عِنْدَ كُلِّ لِقَاءٍ ‘জেনে রাখুন! প্রত্যেক সাক্ষাতের সময় মুছাফাহা করা মুস্তাহাব’।[6]

মুছাফাহার নিয়ম :

মুছাফাহা (مصافحة) সংঘটিত হয় ব্যক্তির হাতের তালু (صفح) অপর ব্যক্তির হাতের তালুতে রাখার মাধ্যমে। এটাই আরবী ভাষার দাবী, ঠিক যেমনটি উদ্ধৃত হয়েছে ‘মু‘জামু মাকায়িসিল লুগাহ’[7] ও অন্যান্য অভিধানে। মুছাফাহা সম্পর্কে ইতোপূর্বে উল্লেখিত হাদীছগুলোর আপাত মর্ম এভাবেই বুঝতে হবে। এ কারণে অধিকাংশ আলেমের মতে, এক হাতে মুছাফাহা করাই সুন্নাত হিসেবে যথেষ্ট এবং এটা ছিল মুসলিমদের মাঝে ও ছাহাবায়ে কেরামের মাঝে সাধারণ অভ্যাস। আলবানী রহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘আস-সিলসিলা আছ-ছহীহা’[8] গ্রন্থে এক হাদীছের শিক্ষার মধ্যে উল্লেখ করেন, মুছাফাহার ক্ষেত্রে এক হাত দিয়ে ধরতে হবে। মুছাফাহার আলোচনা অনেক হাদীছে স্থান পেয়েছে। উল্লেখিত হাদীছটি যা প্রমাণ করছে, এ শব্দটির ভাষাগত বুৎপত্তিও সেটাই নির্দেশ করছে। আমি বলব, যে হাদীছগুলোর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেগুলোর কোনো কোনোটি পূর্বোক্ত অর্থের প্রতি নির্দেশ করছে। যেমন— হুযাইফা রযিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত মারফূ হাদীছ, ‘নিশ্চয় এক মুমিন যখন অপর মুমিনের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে সালাম দেয় এবং তার হাত (একবচনের শব্দ) ধরে তার সাথে মুছাফাহা করে, তখন তাদের দুই জনের গুনাহসমূহ এমনভাবে ঝরে যায়, যেভাবে গাছের পাতা ঝরে যায়’।[9] আল-মুনযিরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ত্ববারানী হাদীছটি ‘আল-আওসাত্ব’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং হাদীছটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে কারও ব্যাপারে জারহ (নেতিবাচক মন্তব্য) উদ্ধৃত হয়েছে মর্মে আমি জানি না।[10] আমি বলব, হাদীছটির কিছু শাহেদ (সমার্থক ভিন্ন হাদীছ) রয়েছে। যেগুলোর সহযোগিতায় হাদীছটি ‘ছহীহ’ পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে। এসবগুলো হাদীছ নির্দেশ করছে যে, মুছাফাহার ক্ষেত্রে সুন্নাত হচ্ছে এক হাতেই ধরা।

মানুষের পারস্পরিক সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ের পর একে অপরের সঙ্গে মুছাফাহা করে বা হাত মেলায়। এটিকে ইংরেজিতে হ্যান্ডশেক (Handshake), আরবীতে মুছাফাহা কিংবা বাংলায় করমর্দন বা হাত মেলানো বলে থাকে। একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎকালে একে অপরের ডান হাত মিলিয়ে মুছাফাহা করা হয়। মুছাফাহা করতে হয় হাতের তালুর সাদা অংশ বা ভেতরের অংশ মিলিত করে। হাতের পিঠের অংশ মিলিয়ে মুছাফাহা হয় না। অথবা এক হাতের তালুর অংশ অন্য হাতের পিঠের অংশের সাথে মিলিয়ে মুছাফাহা হয় না।

মুছাফাহার সুন্নাতী পদ্ধতি :

মুছাফাহার সুন্নাতী পদ্ধতি হলো- মুছাফাহাকারী ব্যক্তিদ্বয় শুধু ডান হাতে মুছাফাহা করবে। আর যার সাথে সালাম করা হলো তার হাতের তালু সালামদাতার হাতের তালুতে রাখবে। জনৈক ব্যক্তি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে মুছাফাহা করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কেবল দু’হাত মিলানোর ব্যাপারে সম্মতি দেন।[11] মুছাফাহা স্বাভাবিকভাবে উভয়ের ডান হাত মিলাবে, যা অত্যন্ত নেকীর কাজ।[12]

সুতরাং এর বাইরে ঝাঁকি দেওয়া বাড়াবাড়ি বৈ কিছু নয়। মুছাফাহা করার সময় নির্ধারিত কোনো দু‘আ পড়ার ছহীহ দলীল নেই। তবে হাদীছে আল্লাহর প্রশংসা ও ইসতিগফার করার কথা বলা হয়েছে। মুছাফাহার দু‘আ আছে, তবে তা নির্ধারিত না। আমরা দেখতে পাই, আমাদের সমাজে এর একটি দু‘আর প্রচলন রয়েছে।

পক্ষান্তরে, কিছু হানাফী আলেম ও মালেকী আলেম মত দিয়েছেন যে, দুই হাতে মুছাফাহা করা মুস্তাহাব। তা এভাবে যে, বাম কব্জির তালু অপর ব্যক্তির কব্জির পিঠের ওপর রাখা— এ পদ্ধতিতে মুছাফাহা করা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ছাহাবায়ে কেরামের অভ্যাসগত সুন্নাত বা আদর্শ হিসেবে সাব্যস্ত হয়নি। বরং এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যা বর্ণিত হয়েছে সেটা হলো, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ছাহাবীকে শিক্ষা দেওয়া ও দিক-নির্দেশনা দেওয়ার সময় গুরুত্বারোপ করার জন্য তার হাতকে তিনি দুই হাত দিয়ে ধরেছিলেন। যেমনটি হাদীছে এসেছে— ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত তার হাতদ্বয়ের মধ্যে রেখে আমাকে তাশাহহুদ শিখিয়েছেন।[13]

কিন্তু, এটি সাধারণ অভ্যাস ছিল না; যেমনটি ইতোপূর্বেই সাব্যস্ত হয়েছে যে, মূল পদ্ধতি ছিল এক হাতে মুছাফাহা করা। কোনো কোনো বর্ণনাতে সেটা দ্ব্যর্থহীনভাবে উদ্ধৃত হয়েছে, বরং এ হাদীছেও সে দলীল রয়েছে। কারণ যদি এভাবে দুই হাত দিয়ে মুছাফাহা করাটাই অভ্যাস হতো, তাহলে ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু এ অবস্থাটির কথা উল্লেখ করতেন না। ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু এ অবস্থাটিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ছাহাবীগণের সাথে মুছাফাহা করার ক্ষেত্রে এটি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল না।

সুতরাং মুছাফাহা মুসলিমদের পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি, অভিবাদন জ্ঞাপন, সম্ভাষণ, ইসলামের এক উত্তম ব্যবহারিক রীতি ও সৌজন্যের প্রতীক হিসেবে পারস্পরিক সালাম বিনিময় ও মুছাফাহা-করমর্দন রীতি ইসলামের সূচনাকাল থেকে প্রচলিত, যা বিশ্বব্যাপী মুসলিম সংস্কৃতিরূপে সর্বদা পরিচিত। এক মুসলিম অপর মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎকালে পারস্পরিক শান্তি ও কল্যাণ কামনার অভিব্যক্তি হলো সালাম বিনিময়। একজন বলবেন, ‘আস-সালামু আলাইকুম’, অর্থাৎ ‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক’। প্রতি উত্তরে অন্যজন বলবেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ’, অর্থাৎ ‘আপনার উপরও শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক’। এ বিধান ইসলামে সুন্নাত হিসেবে স্বীকৃত। এতে উচ্চারিত প্রতি অক্ষরের বিনিময়ে পুণ্যের শুভ সংবাদ রয়েছে।

মুছাফাহা কয় হাতে করবে :

মুছাফাহা কয় হাতে করতে হবে— এ ব্যাপারে দুটি মত পাওয়া যায়। একটি হলো এক হাতে মুছাফাহা করবে। অর্থাৎ শুধু ডান হাত দিয়ে মুছাফাহা করবে। দ্বিতীয় মতটি হলো— মুছাফাহা দুই হাতে হবে। অর্থাৎ ডান হাতের সাথে বাম হাতও যোগ করা হবে। তবে এক হাতে করার ব্যাপারে বেশি শক্তিশালী দলীল পাওয়া যায়। মুছাফাহা কয় হাতে হবে এ নিয়ে শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদকে প্রশ্ন করলে, তিনি জবাবে বলেছেন, মুছাফাহা সংঘটিত হয় ব্যক্তি তার হাতের তালু অপর ব্যক্তির হাতের তালুতে রাখার মাধ্যমে। এটাই আরবী ভাষার দাবী।[14] এ কারণে অধিকাংশ আলেমের মতে, এক হাতে মুছাফাহা করাই সুন্নাত হিসেবে যথেষ্ট এবং এটা ছিল মুসলিমদের মাঝে ও ছাহাবায়ে কেরামের মাঝে সাধারণ অভ্যাস।

‘আল-মাওসুআ আল-ফিক্বহিয়্যা’ গ্রন্থের ‘মুছাফাহা’ অধ্যায়ে ও ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’-তে বলা হয়েছে, ‘দুই হাতে মুছাফাহা করার ব্যাপারে আমরা কোনো কিছু জানি না বলে দুই হাতে মুসাফাহা করাটা অনুচিত। উত্তম হলো— এক হাতে মুছাফাহা করা’।[15] এজন্যই সঊদী আরবের সম্মানিত আলেমগণ এবং হারামাইন শারীফাইনের ইমামগণ দুই হাতে মুছাফাহা করাকে বিদআত বলে থাকেন। তাই উভয়ের শুধু ডান হাতে মুছাফাহা করাটাই সুন্নাত পদ্ধতি ও উত্তম।[16]

যাদের সাথে মুছাফাহা করা জায়েয :

ইসলামী শরীআত কোনো পুরুষ পরনারীর সাথে এবং কোনো নারী পরপুরুষের সাথে মুছাফাহা অনুমোদন করে না। এটা ইসলামে নাজায়েয বা হারাম। পুরুষ পুরুষের সাথে, নারীরা নারীর সাথে মুছাফাহা করবে- এটা ইসলাম অনুমোদিত ও স্বীকৃত। আজকের সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিজাতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির অনুকরণ, ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানদের কৃষ্টি-কালচার যেভাবে দ্রুতগতিতে মুসলিম সমাজে সংক্রমিত হচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে লজ্জা ও ঘৃণার বিষয়। বর্তমান বিশ্বে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান ও কর্তা ব্যক্তিরা নিজেদের কৃষ্টি-কালচার পরিত্যাগ করে ইয়াহূদী-নাছারাদের পদাঙ্ক অনুসরণে পরপুরুষ ও পরনারীর সাথে উদারতা ও আধুনিকতার নামে যেভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করছে, তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য। আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত কখনই কোনো নারীর হাত স্পর্শ করেনি।[17] বিশিষ্ট ফক্বীহ আল্লামা রিয়াজ ইবনু মুহাম্মাদ আল-মুসাইমিরী বলেন, উম্মতের পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকল আলেম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, পরনারীর সাথে পুরুষের মুছাফাহা করা হারাম।[18] প্রচলিত চার মাযহাবের কোনো মাযহাবেই পরনারীকে স্পর্শ করা, হাত স্পর্শ করে মুছাফাহা করা অনুমোদন ও সমর্থন করে না। এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহিমাহুল্লাহ-এর অভিমত প্রণিধানযোগ্য। মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মেহরান বলেন, পুরুষ নারীর সাথে মুছাফাহা করতে পারবে কিনা? ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন, না। এ ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করেন। আমি বললাম, কাপড়ের সাহায্যে পুরুষ নারীর সাথে মুছাফাহা করতে পারবে কিনা? তিনি জবাব দিলেন, পারবে না; বরং পুরুষ নারীর সাথে যেকোনো মাধ্যমেই মুছাফাহা হারাম।[19]

ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যাতে মানবজীবনের সকল দিক ও বিভাগ নিয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। মানুষের সামাজিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মুছাফাহা।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রত্যাহিক জীবনে মুসলিমদের পারস্পরিক সামাজিক যোগাযোগে মুছাফাহার বিধান পরিপূর্ণ মেনে চলার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

 অধ্যাপক ওবায়দুল বারী বিন সিরাজউদ্দীন

পিএইচডি গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাতহুল বারী, ১১/৫৪।

[2]. ইতহাফুল ইখওয়ান ফী হুকমি মুছাফাহাতিন নিসওয়ান, ১/১।

[3]. আবূ দাঊদ, হা/৫২১২, হাদীছ ছহীহ।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৬২৬৩।

[5]. ফাতহুল বারী, ১১/৫৫।

[6]. ইবনে আবেদীন, রদ্দুল মুহতার আলাদ-দুররিল মুখতার, ৬/৩৮১।

[7]. মু‘জামু মাকায়িসিল লুগাহ, ৩/২২৯।

[8]. সিলসিলা ছহীহা, ১/২২।

[9]. সিলসিলা ছহীহা, হা/৫২৬।

[10]. আল-মুনযিরী, ৩/২৭০।

[11]. তিরমিযী, হা/২৭২৮, হাদীছ হাসান; মিশকাত, হা/৪৬৮০।

[12]. আবূ দাঊদ, হা/৫২১২; মিশকাত, হা/৪৬৭৯, হাদীছ ছহীহ।

[13]. ছহীহ বুখারী, হা/৬২৬৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৪০২।

[14]. দেখুন: https://islamqa.info/ar/answers/92806/

[15]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৭/৪৩১-৪৩৩।

[16]. সঊদী শরীআহ বোর্ডের স্থায়ী কমিটির ফতওয়াসমগ্র, ২৪/১২৫।

[17]. ছহীহ ‍মুসলিম, হা/১৮৬৬।

[18]. ইতহাফুল ইখওয়ান ফী হুকমি মুছাফাহাতিল নিসওয়ান, পৃ. ৪।

[19]. ইতহাফুল ইখওয়ান ফি হুকমি মুসাফাহাতিল নিসওয়ান, পৃ. ৫।

Magazine