কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ইসকনের মতলব কী?

post title will place here

ভূমিকা: বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। কিন্তু আবহমানকাল ধরে এখানে মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ-সহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে চমৎকার বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে সহাবস্থান করে আসছে। ছোটোবেলা থেকে আমরা একই গ্রামে খেলাধুলা, চলাফেরা, লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, পড়াশুনা ইত্যাদিতে মুসিলম ও হিন্দু মিলেমিশে করতে দেখেছি এবং এখনও দেখছি। সারা পৃথিবীজুড়ে এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির বিরল। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ইসলামের ছায়াতলে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ নিরাপদ। ইতিহাস সাক্ষী, যুগে যুগে পৃথিবীর সব জায়গায় ইসলামের ছায়াতলে মুসলিমদের পড়শি হিসেবে সবাই এমন নিরাপদেই ছিল।

বিভিন্ন সময় এই সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা হয়েছে। যারা করেছে এবং করে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে বিদেশী এনজিও ও সংগঠন ‘ইসকন’ অন্যতম। সম্প্রতি তাদের অপতৎপরতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সামাজিক সংহতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে তারা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে। ইসকন আসলে কী? তাদের মতলবটাই-বা কী? বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আমরা তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো ইনশা-আল্লাহ।

ইসকনের জন্ম ও পরিচয়: ‘ইসকন’ (ISKCON), যার পূর্ণরূপ: INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS ‘আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ’। ১৮৯৬ সালে কোলকাতায় জন্ম নেওয়া শ্রীল অভয়াচরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১৯৬৬ সালের ১১ জুলাই নিউইয়র্কে ‘ইসকন’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বামী প্রভুপাদ ১৯৬৫ সালে ৭০ বছর বয়সে আমেরিকায় যান এবং ১৯৭৭ সালে মারা যান।[1] এটি মূলত গৌড়ীয় বৈষ্ণব হিন্দু সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনটি ‘সাধারণভাবে হরে কৃষ্ণ আন্দোলন নামে পরিচিত, এক জটিল ইতিহাসের অধিকারী সংগঠন, যা ধর্মীয় উদ্দীপনা, বৈশ্বিক প্রসার এবং চলমান বিতর্কে পরিপূর্ণ’।[2]

‘অবাক হওয়ার মতো বিষয়, এ ব্যক্তি ভারতে কোনো হিন্দু শিক্ষালয়ে লেখাপড়া করেনি, সে লেখাপড়া করেছে খ্রিষ্টানদের চার্চে। পেশায় সে ছিল ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসায়ী, কিন্তু হঠাৎ করেই তথাকথিত প্রভুপাদ নতুন ধরনের হিন্দু সংগঠন চালু করতেই প্রথমেই তাতে বাধা দিয়েছিল মূল ধারার হিন্দুরা। অধিকাংশ হিন্দুই তার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেছিল। কিন্তু সেই সময় তথাকথিত প্রভুপাদের পাশে এসে দাঁড়ায় জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স-এর মতো চিহ্নিত ইহুদী-খ্রিষ্টান এজেন্টরা’।[3] ইসকন আসলে হিন্দুবেশধারী ইহুদীদের একটি সংগঠন। বাংলাদেশে ‘র’ বইয়ে বলা হয়েছে, ‘ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। এর সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। মূলত এটা ইহুদীদের একটি সংগঠন বলে জানা গেছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উসকানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি’।[4]

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসকন আমেরিকা, ইউরোপ এবং আফ্রিকায় প্রসারিত হয়েছে। এটি বর্তমান প্রায় এক মিলিয়ন অনুসারীর একটি বৃহৎ সংগঠন।[5]

ইসকনের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে মন্দির নির্মাণ, ধর্মীয় উপদেশ দেওয়া, শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রচার, ভক্তি কার্যক্রম এবং দাতব্য সংস্থা পরিচালনা। মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনও করে থাকে ইসকন। সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসেবে যোগব্যায়াম এবং জীবনযাত্রার উপর শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম করে থাকে সংগঠনটি। অভাবীদের বিনামূল্যে নিরামিষ খাবারও বিতরণ করে থাকে ইসকন।[6]

অর্থের উৎস: সংগঠনের আয় মূলত সদস্যদের দান, সরকারি অনুদান, মন্দিরের সংগ্রহ, ধর্মীয় সাহিত্য ও পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে আসে। ইসকনের প্রকাশনা বিভাগ, ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট, প্রভুপাদের হিন্দু ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ ও ভাষ্য বিক্রি করে উল্লেখযোগ্য অর্থ আয় করে। এতদ্ব্যতীত, শুভাকাঙ্ক্ষী, দাতাগণ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থার দান ইসকনের সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমকে অর্থায়ন করে। বাংলাদেশে ইসকনের বিরুদ্ধে অভিযোগে আছে যে, তারা ভারতের হাইকমিশন থেকে তহবিল পায়, যা রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।[7]

ইসকন কী ধরনের সংগঠন? কী তার লক্ষ্য? উপর্যুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারলাম, ইসকন বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর কাজে ব্যস্ত।

‘এ সংগঠনটির মূল ধারণা মধ্যযুগের চৈতন্য’ থেকে আগত। চৈতন্য’-এর অন্যতম থিউরি হচ্ছে, “নির্যবন করো আজি সকল ভুবন”। যার অর্থ, সারা পৃথিবীকে যবন মানে অহিন্দু বা মুসলিম মুক্ত করো’।[8]

‘ইসকন একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন। সংগঠনটি মূলত এনজিও টাইপ। এরা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের দলে ভিড়িয়ে দল ভারি করে। এ কারণে তাদের আস্তানাগুলো হয় নিম্নবর্ণের হিন্দুদের আস্তানার পাশে’।[9] চট্টগ্রামের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘের নেতৃবৃন্দ ইসকনকে ‘উগ্রবাদী, প্রকৃত অর্থেই ধর্মবিরোধী ও পেশিশক্তি প্রদর্শনকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।[10] ২৭ নভেম্বর ২০২৪ অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান চট্টগ্রামে ইসকন সম্পর্কে বলেন, ‘এটি একটি ধর্মীয় মৌলবাদী ধর্মীয় উগ্রপন্থি ও মৌলবাদী সংগঠন’।[11]

বাংলাদেশে ইসকন কী চায়? ‘তাদের লক্ষ্য হচ্ছে—

১. বাংলাদেশে সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা এবং সনাতনদের মেরে-পিটিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া। যেমন স্বামীবাগের মন্দিরটি আগে সনাতনদের ছিল, পরে ইসকনরা কেড়ে আগেরদের ভাগিয়ে দেয়। এছাড়া পঞ্চগড়েও সনাতনদের পিটিয়ে এলাকাছাড়া করে ইসকনরা। ঠাকুরগাঁও-এ সনাতন হিন্দুকে হত্যা করে মন্দির দখল করে ইসকন। এছাড়া তারা সিলেটের জগন্নাথপুরে সনাতনদের রথযাত্রায় হামলা চালায়।

২. বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে সাম্প্রদায়িক হামলা করা, যাতে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকাস্থ স্বামীবাগে মসজিদের তারাবীর ছালাত বন্ধ করে দিয়েছিল ইসকন পুলিশ ডেকে, সে কথা হয়তো অনেকের মনে আছে।

৩. বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটানো।

৪. বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে চাকরিতে প্রচুর সনাতন ধর্মীরা প্রবেশের অন্যতম কারণ— ইসকন হিন্দুদের প্রবেশ করানোর জন্য প্রচুর ইনভেস্ট করে।

৫. সিলেটে রাগীব রাবেয়া মেডিক্যালে কলেজের ইস্যুর পেছনে ছিল ইসকন। ইসকন আড়াল থেকে পুরো ঘটনা পরিচালনা করে এবং পঙ্কজগুপ্তকে লেলিয়ে দেয়। বর্তমানে বিচারবিভাগে ইসকনের প্রভাব এখনো মারাত্মক তার অন্যতম কারণ খোদ সাবেক প্রধান বিচারপতি’।[12]

৬. ইসকন নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেশকে অকার্যকর ও অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। আর এর অন্তরালে তারা ‘ইসকন বাংলাদেশকে ভারতের একটি অংশ করতে চায়’ বলে অনেকেই মনে করেন।[13]

ইসকনের সাথে মূল ধারারহিন্দুদের সম্পর্ক: হিন্দু পণ্ডিত ও ঐতিহ্যবাদীদের মতে, ‘ইসকনের হিন্দুধর্মের ব্যাখ্যা মূলধারার বিশ্বাস থেকে অনেকটাই ভিন্ন’।[14] ইসকনের গ্রন্থগুলোতে কৃষ্ণকে সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে তুলে ধরা হয়, যেখানে শিব ও দুর্গার মতো অন্যান্য দেবতার অবমূল্যায়ন করা হয় এবং তাদের ‘অর্ধদেবতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[15] অনুরূপভাবে হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদ এক নয়। রাজস্থানের জয়পুরে এক রাজনৈতিক সভায় ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আজকের দিনে ভারতের রাজনীতিতে হিন্দু আর হিন্দুত্ববাদী এই শব্দ দুটির মধ্যে লড়াই চলছে। দুটি শব্দ আলাদা অর্থ বহন করে। আমি হিন্দু, হিন্দুত্ববাদী নই’।[16]

বাংলাদেশে ইসকনের অপকর্ম: শুরু থেকেই ইসকনের নানা কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ; বরং রীতিমতো উদ্বেগজনক। যেমন—

(১) ‘২০১৯ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে ইসকন ফুড ফর লাইফের খাবার বিতরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, শিশুদের খাওয়ার পূর্বে ‘হরে কৃষ্ণ’ জপতে বলা হচ্ছে’।[17]

(২) চট্টগ্রামের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তী ইসকনকে উগ্রবাদী সংগঠন উল্লেখ করে বলেন, ‘গত রোববার (১৪ মার্চ ২০২১) ইসকন মন্দির থেকে দুষ্কৃতকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবর্তক সংঘের কর্মচারীদের উপর হামলা চালায়। এতে আহত হয় অন্তত ১২ জন’।[18] ‘সনাতন ধর্মকে কলঙ্কিত করেছে ইসকন’ বলে অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম প্রবর্তক সংঘের নেতৃবৃন্দ।[19]

(৩) ‘সাধুর ছদ্মবেশে একদল সন্ত্রাসী প্রবর্তক শ্রী শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরে অবস্থান করছে জানিয়ে তিনকড়ি বলেন, ইসকনের পুরোহিতদের কাজ পূজা, অর্চনা করা। কিন্তু ইসকনের সদস্যরা সংঘের ভূমি দখলসহ নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত’।[20] এমনকি তারা অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান প্রবর্তক সংঘের নেতারা।[21]

(৪) ‘১৯৯০-এর দশকে, ইসকনের অধীনস্থ বোর্ডিং স্কুলগুলোতে শিশু নির্যাতনের ব্যাপক অভিযোগ সামনে আসে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ইসকন পরিচালিত স্কুলগুলোতে ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে অনেক শিশু শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে তদন্তে প্রকাশ পায়’।[22]

(৫) ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে, ইসকন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্রেনওয়াশিং’ বা মানসিক প্রভাব বিস্তার, অবৈধভাবে কারাগারে রাখা এবং তরুণ ভক্তদের অপহরণের অভিযোগে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় পড়ে।[23]

(৬) ‘ইসকন আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে অংশ নিচ্ছে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ইসকন আন্তর্জাতিক মতামত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে এবং দেশটির ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। যাতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং বাংলাদেশের বাণিজ্য, পর্যটন এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।।[24]

(৭) ‘বাংলাদেশে তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে সাম্প্রদায়িক হামলা করা। কিছুদিন আগে ঢাকাস্থ স্বামীবাগে মসজিদের তারাবীর নামাজে সন্ত্রাসী হামলা করে ইসকন। এরপরে সেই কাজ করে সিলেটে। চট্টগ্রামে কদম রসূল মসজিদে হামলা করে তারা। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু মহাসমাবেশের নামে মুসলিম-হিন্দু দাঙ্গা তৈরি করে দেশকে তথাকথিত অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। তাবা চায় বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করে উগ্রহিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটাতে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে। যেমন- জাতীয় হিন্দু মহাজোট, জাগো হিন্দু, বেদান্ত, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ইত্যাদি। বর্তমান অনলাইন জগতে যে ইসলাম অবমাননা হচ্ছে, তার ৯০ ভাগ করেছে ইসকনের সদস্যরা’।[25]

(৮) তারা ৫ নভেম্বর ২০২৪-এ চট্টগ্রামে যৌথবাহিনীর উপর অতর্কিত জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিড হামলা চালায় এবং ভারী ইট-পাটকেলসহ ভাঙা কাচের বোতল ছুড়ে। এতে সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন।[26]

চিন্তা করতে পেরেছেন? প্রশাসনও তাদের হাত থেকে নিরাপদ নয়!

(৯) সর্বশেষ ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইসকন নেতা চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে ইসকন সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রাম আদালত ভবনে বিচারকদের কক্ষে হামলা ও আদালত চত্বরে গাড়ি ভাঙচুর এবং মুসলিম হাই স্কুল সংলগ্ন এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালায়। এই সন্ত্রাসীরাই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই সময় তারা আরও ৮/১০ জনকে মারাত্মকভাবে আহত করে। কোর্ট বিল্ডিং জামে মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদে হামলার পাশাপাশি কোতোয়ালী, নিউ মার্কেট-সহ আশপাশের এলাকায় তারা তাণ্ডব চালায়।[27]

আইন, আদালত, বিচারবিভাগ কোনো কিছুই তাদের কাছে নিরাপদ নয়! ভাবতে পারেন?

ইসকন যেসব দেশে নিষিদ্ধ: বর্তমানে বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশে ইসকনের অস্তিত্ব থাকলেও কিছু দেশে সংগঠনটি নিষিদ্ধ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সঊদী আরব, মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান, চীন ও ইরানে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ।

ইন্দোনেশিয়ায় আংশিক নিষিদ্ধ ইসকন। কিছু শর্ত মেনে দেশটিতে কার্যক্রম চালাতে পারে সংগঠনটি। এছাড়াও তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে ইসকনের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে।[28]

ইসকন নিষিদ্ধ করতে হবে: বাংলাদেশের উচিত, জাতীয় স্বার্থ, দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সামাজিক সংহতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা।

জনৈক রাহুল গাঙ্গুলী বলেন, ‘ইসকন একটা কাল্ট সংগঠন। এরা জোর জবরদস্তি খাটিয়ে, লোকের মগজ ধোলাই করে নিজেদের দলে ভেড়ায়। ইসকন শুধু ইসলামের জন্যে নয়, মূলধারার হিন্দুদের জন্যেও ক্ষতিকর। আমরা প্রকৃত হিন্দুরা এদের হিন্দু বলেই মনে করি না। এরা একগুঁয়ে এবং আজ পর্যন্ত হাজার হাজার বাবা-মায়ের কোল খালি করে জোর করে ছেলে-মেয়েদের ইসকনে ঢুকিয়েছে। ছেলে ইসকনের সঙ্গে যুক্ত হলে পিতা-মাতার কাছ থেকে ছেলেকে বঞ্চিত করে ইসকনেররা, সেই মায়ের হাতের রান্নাটুকু খেতে পাবে না।

একবার এদের পাল্লায় পড়লে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। বেরিয়ে আসতে গেলে ভয় দেখায়, নির্যাতন করে। কারুর জাগতিক কাজকর্মে অগ্রগতি দেখলেই এদের মাথা খারাপ হয়ে যায়, এরা যেভাবে পারে তাকে মগজ ধোলাই করে। এদের বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করুন’।[29]

আন্তর্জাতিক সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী আল মামুন রাসেল। বুধবার (২৭ নভেম্বর) ১০ আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

আমরাও ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে এটিকে নিষিদ্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।

ইসকন আর সনাতনী জাগরণ জোটের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডকে কঠোর হাতে দমন না করা হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হুমকির মুখে পড়বে। অতএব, আমার দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সামাজিক সংহতি, ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এমন উসকানিমূলক সকল কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

মহান আল্লাহ যাবতীয় ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের দ্বীন ও দেশকে রক্ষা করুন- আমীন!

* বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।



[1]. তথ্যগুলো ইসকন বাংলাদেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://bn.iskconbd.org) থেকে সংগৃহীত।

[2]. ব্রি. জে. (অব.) রোকন উদ্দিন, দৈনিক ইনকিলাব, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: ইসকনের যত আপত্তিকর কর্মকাণ্ড। লিংক: https://dailyinqilab.com/index.php/editorial/article/706983

[3]. দৈনিক ইনকিলাব, লিংক: https://dailyinqilab.com/entertainment/news/704948

[4]. আবু রুশদ, বাংলাদেশে ‘র’, (স্টুডেন্ট ওয়েজ, বাংলাবাজার, ঢাকা, চতুর্থ সংস্করণ: ১৫ জুলাই ২০০৩), পৃ. ১৭১।

[5]. ব্রি. জে. (অব.) রোকন উদ্দিন, দৈনিক ইনকিলাব, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: ইসকনের যত আপত্তিকর কর্মকাণ্ড। লিংক: https://dailyinqilab.com/index.php/editorial/article/706983

[6]. যুগান্তর প্রতিবেদন, যুগান্তর, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: বিশ্বের যেসব দেশে নিষিদ্ধ ‘ইসকন’। লিংক: https://www.jugantor.com/national/883738

[7]. ব্রি. জে. (অব.) রোকন উদ্দিন, দৈনিক ইনকিলাব, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: ইসকনের যত আপত্তিকর কর্মকাণ্ড। লিংক: https://dailyinqilab.com/index.php/editorial/article/706983

[8]. বিশেষ সংবাদদাতা, ময়মনসিংহ, দৈনিক ইনকিলাব, ২০ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: উগ্রতা সৃষ্টিতে সন্ত্রাসী ইসকনকে নিষিদ্ধ করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে সমাবেশ। লিংক: https://dailyinqilab.com/entertainment/news/704948

[9]. দৈনিক সময়ের কণ্ঠ, ২১ জুলাই ২০১৯, শিরোনাম: ইসকন কি? এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও যোগানদাতা। লিংক: https://dailysomoyerkantho.com/?p=18472

[10]. দৈনিক ইনকিলাব, ২১ মার্চ ২০২১, শিরোনাম: উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন কী চায়। লিংক: https://dailysomoyerkantho.com/?p=18472

[11]. এনটিভি অনলাইন, লিংক: https://www.ntvbd.com/bangladesh/news-1483741

[12]. জি এম শরীফ মাছুম বিল্লাহ, দৈনিক সময়ের কণ্ঠ, ২১ জুলাই, ২০১৯, শিরোনাম: ইসকন কি? এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও যোগানদাতা। লিংক: https://dailysomoyerkantho.com/?p=18472

[13]. নয়াদিগন্ত, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪, শিরোনাম: ‘ইসকন বাংলাদেশকে ভারতের একটি অংশ করতে চায়’। লিংক: https://www.dailynayadiganta.com/chattagram/19670128/

[14]. ব্রি. জে. (অব.) রোকন উদ্দিন, দৈনিক ইনকিলাব, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: ইসকনের যত আপত্তিকর কর্মকাণ্ড। লিংক: https://dailyinqilab.com/index.php/editorial/article/706983

[15]. প্রাগুক্ত।

[16]. newsbangla24, ১২ ডিসেম্বর ২০২১, শিরোনাম: হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদীর পার্থক্য বোঝালেন রাহুল। লিংক: https://www.newsbangla24.com/international/170816/Rahul-explained-the-difference-between-Hindu-and-Hindutva

[17]. দৈনিক ইনকিলাব (অনলাইন সংস্করণ), ২১ মার্চ ২০২১, শিরোনাম: উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন কী চায়। লিংক: https://dailysomoyerkantho.com/?p=18472

[18]. প্রাগুক্ত।

[19]. প্রাগুক্ত।

[20]. দৈনিক ইনকিলাব, ২১ মার্চ ২০২১, শিরোনাম: উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন কী চায়। লিংক: https://dailysomoyerkantho.com/?p=18472

[21]. প্রাগুক্ত।

[22]. ব্রি. জে. (অব.) রোকন উদ্দিন, দৈনিক ইনকিলাব, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: ইসকনের যত আপত্তিকর কর্মকাণ্ড। লিংক: https://dailyinqilab.com/index.php/editorial/article/706983

[23]. প্রাগুক্ত।

[24]. প্রাগুক্ত।

[25]. বিশেষ সংবাদদাতা, ময়মনসিংহ, দৈনিক ইনকিলাব, ২০ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: উগ্রতা সৃষ্টিতে সন্ত্রাসী ইসকনকে নিষিদ্ধ করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে সমাবেশ। লিংক: https://dailyinqilab.com/entertainment/news/704948

[26]. নিজস্ব সংবাদদাতা, jagonews24, ৬ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: হাজারী গলি: যৌথবাহিনীর ওপর অ্যাসিড ও কাচের বোতল ছোড়া হয়। লিংক: https://dailyinqilab.com/entertainment/news/704948

[27]. আজাদী প্রতিবেদন, দৈনিক আজাদী, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: ইসকন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। লিংক: https://dainikazadi.net/

[28]. যুগান্তর প্রতিবেদন, যুগান্তর, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, শিরোনাম: বিশ্বের যেসব দেশে নিষিদ্ধ ‘ইসকন’। লিংক: https://www.jugantor.com/national/883738

[29]. Quora, শিরোনাম: ইসকন কাকে বলে? তার উদ্দেশ্য কী? এবং ইসকন ইসলামের জন্য কতটা ক্ষতিকর? লিংক: https://bn.quora.com

Magazine