কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আল্লাহর দিকে দাওয়াত : দলীয় মোড়কে নাকি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে? (পর্ব-৫)

প্রথম পরিচ্ছেদ : একজন মুসলিমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

যিনি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ পড়েছেন এবং ভালোভাবে অনুধাবন করেছেন, তার কাছে মোটেও অস্পষ্ট থাকার কথা নয় যে, একজন মুসলিম যে মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিজের জীবনে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেন এবং অন্যের মধ্যেও তার বিদ্যমানতার জন্য চেষ্টা করেন, তা হচ্ছে মহান আল্লাহর ইবাদত। আর সেই ইবাদতকে যেকোনো ধরনের ত্রুটিমুক্ত করতে ভালোভাবে আল্লাহর তাওহীদ সম্বন্ধে জানার কোনো বিকল্প নেই।

যে দাঈ বা আহ্বায়ক এই পথ সম্পর্কে অবগত হয়েছেন, তিনি তা বাস্তবায়ন করতে নানা বাধাবিঘ্ন ও জটিলতার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তবে তিনি এগুলোকে কোনো প্রতিবন্ধকই মনে করেন না। কারণ তিনি তার দাওয়াতী কার্যক্রমে রাত-দিন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণী মাথায় রেখে চলেন, أَشَدُّ النَّاسِ بَلاَءً الأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الأَمْثَلُ فَالأَمْثَلُ ‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপদাপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হন নবীগণ। তারপর তাদের পরের স্তরের মানুষ। তারপর তাদের পরের স্তরের মানুষ’।[1]

কেনই-বা এমনটা হবে না, সেই দাঈ তো সেই রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর পথেই হাঁটছেন, তাঁর জীবনচরিতই ধারণ করছেন এবং তাঁর মানহাজই অবলম্বন করছেন।

‘তাদের পরের স্তরের মানুষ’ বলতে সেসব সৎমানুষকে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর দিকে দাওয়াতী কার্যক্রমে নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম–এর পথে হাঁটেন, তাঁরা যে তাওহীদ ও ইখলাছ গ্রহণের এবং শিরক বর্জনের দাওয়াত দিয়েছেন, তাঁরাও ঠিক সেই একই দাওয়াত দেন। ফলে তাদের আদর্শ নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম–এর উপর যে বালা-মুছীবত ও কষ্টক্লেশ আপতিত হয়েছে, তা তাদের উপরও আপতিত হয়ে থাকে।

সেজন্য আপনি অনেক দাঈকে এই কঠিন ও দুর্গম পথ এড়িয়ে যেতে দেখবেন। কারণ যে দাঈ এই পথে হাঁটবেন, তাকে তার মা, বাবা, ভাই, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব সকলের মুখোমুখি হতে হবে। সমাজের মানুষের শত্রুতা, ঠাট্ট-বিদ্রুপ ও কষ্টেরও তিনি মুখোমুখি হবেন।

ফলে তারা ইসলামের অন্যান্য দিক নিয়েই ব্যস্ত থাকেন; সেগুলোও গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনো মুমিন ব্যক্তি সেগুলোও অবজ্ঞা করতে পারে না। তবে সেগুলোর ক্ষেত্রে মুসলিমসমাজে তেমন একটা কঠিনতা, জটিলতা, ঠাট্টা আর কষ্ট পেতে হয় না। কেননা মুসলিম উম্মাহর বেশিরভাগ মানুষ এই ধরনের দাঈগণের পাশ বেশি ঘেঁষে এবং তাদেরকে সম্মান-শ্রদ্ধায় পরিবেষ্টন করে রাখে। যেখানে কোনো ঠাট্টা-বিদ্রুপ থাকে না, থাকে না কোনো ধরনের কষ্ট। তবে এই শ্রেণির দাঈগণ কেবল তখনই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, যখন তারা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন বা সরকারের ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ান। কারণ এই সময় সরকার তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন, ঠিক অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো, যারা সরকারের বিরোধিতা করে এবং তাদের ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়। আর এরকম সময় সরকার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, মুসলিম-কাফের কারো প্রতি আনুকূল্য দেখায় না।

যাহোক, আমরা সেসব দাঈর উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা যতই বুলি আওড়ান না কেন এবং ইসলামের নামে যতই উচ্চবাচ্য করেন না কেন, আপনারা নিজেদের প্রতি সদয় হোন। কারণ আপনারা আল্লাহপ্রদত্ত মানহাজ ও তার স্পষ্ট ছিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে বের হয়ে গেছেন, যে মানহাজ ও পথ দিয়ে নবীগণ আলাইহিমুস সালাম ও তাদের অনুসারীদের কাফেলা গমন করেছেন। আর তা হচ্ছে, আল্লাহর তাওহীদ ও ইখলাছের দিকে মানুষকে আহ্বান জানানো। আপনারা ইসলামের নামে যতই গলাবাজি করেন না কেন, আপনারা কিন্তু নবীগণ আলাইহিমুস সালাম-এর মানহাজ থেকে বিচ্যুত, যে মানহাজ স্বয়ং আল্লাহ প্রবর্তন করেছেন। আপনারা যত প্রচেষ্টাই ব্যয় করেন না কেন এবং আপনাদের দাওয়াত ও মানহাজ যত বড় করেই দেখান না কেন, আপনারা আসলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের আগে মাধ্যম নিয়ে ব্যস্ততা দেখাতে চাচ্ছেন। অথচ মাধ্যম যদি মূল লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যাহত করে, তাহলে তার উপকার ও বাস্তবায়নযোগ্যতা কতই না কম! যদিও তা বড় করে দেখানো হয়।

বরং যদি সেসব দাঈ বিভিন্ন চটকদার শ্লোগানের অন্তরালে তাদের নবাবিষ্কৃত মানহাজগুলোর উপর অবিচল থাকতে জিদ ধরে এবং আল্লাহর তাওহীদের দিকে দাওয়াতে নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম কর্তৃক স্বীকৃত মানহাজের বিরুদ্ধে লড়ে যায়, তাহলে তাদের জন্য আফসোস। আর যাইহোক এসব শ্লোগান নবীগণ আলাইহিমুস সালাম-এর মানহাজ সম্পর্কে অজ্ঞ ও নির্বোধ ব্যক্তিদের মন কেড়ে নেয়’।[2]

ইসলামে শাখা-প্রশাখাগত বহু বিষয় থাকায় ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে শুরু করা আবশ্যক। তারপর গুরুত্বের বিবেচনায় পরের গুলো আসবে। অর্থাৎ সর্বপ্রথম আক্বীদা সংশোধনের দিকে দাওয়াত দিতে হবে। আক্বীদা সংশোধনের ক্ষেত্রে সব ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য নিবেদনের আদেশ করতে হবে এবং যাবতীয় শিরক থেকে নিষেধ করতে হবে। এরপর ছালাত ক্বায়েম, যাকাত প্রদান, ওয়াজিবসমূহ বাস্তবায়ন এবং হারামসমূহ বর্জনের আদেশ করতে হবে। এটাই ছিল সকল রাসূল আলাইহিমুস সালাম–এর পদ্ধতি। মহান আল্লাহ বলেন,‌وَلَقَدْ ‌بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ‘আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করেছি এ নির্দেশনা দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগূত বর্জন করো’ (আন-নাহল, ১৬/৩৬)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا ‌نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ ‘আর আপনার পূর্বে আমি এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এই অহী নাযিল করিনি যে, আমি ছাড়া কোনো (প্রকৃত) ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমার ইবাদত করো’ (আল-আম্বিয়া, ২১/২৫)। এরকম আরো বহু আয়াত রয়েছে।

রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর দাওয়াতী পদ্ধতি ও তাঁর জীবন-চরিতে রয়েছে উত্তম নমুনা ও পূর্ণাঙ্গ মানহাজ। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু বছর ধরে মানুষকে ছালাত, যাকাত, ছিয়াম ও হজ্জের আদেশ দেওয়ার আগে; সূদ, যেনা, চুরি ও অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করতে নিষেধের পূর্বে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন এবং শিরক থেকে নিষেধ করেছেন’।[3]

বুঝা গেল, মূল বিষয়ই হচ্ছে কেবল মহান আল্লাহর ইবাদত বাস্তবায়ন করা। মহান আল্লাহ যথার্থই বলেছেন,‌وَمَا ‌خَلَقْتُ ‌الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ‘আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে’ (আয-যারিয়াত, ৫১/৫৬)। আর আল্লাহ তাআলার তাওহীদ সম্পর্কে অবগত হওয়া ছাড়া ইবাদত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

আপনি অনেক ইসলামী দাঈ ও অনেক ইসলামী দল পাবেন, যারা ইসলামী হুকুমত কায়েমের পেছনে বা ইসলামী রাষ্ট্রের দাবির পেছনে হাঁপাতে হাঁপাতে তাদের বয়স শেষ করে দিচ্ছে, যৌবন নষ্ট করে ফেলছে!! আপনি যদি তাদের ব্যাপারে তদন্ত চালান, তবে তাদেরকে দেখতে পাবেন যে, তারা শরীআতবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন শিরকী অবস্থান ও বিদআতী কার্যক্রমে ডুবে রয়েছে; আমার মহান রব যার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, সে ব্যতীত। অথচ তারা ভুলেই গেছে বা ভুলার ভান ধরেছে অথবা জানেই না বা না জানার ভান ধরেছে যে, ‘এধরনের পদ্ধতিতে কস্মিনকালেও কোনো দেশে ইসলামী হুকুমত ক্বায়েম করা সম্ভব নয়। ইসলামী হুকুমত ধীরগতিসম্পন্ন মানহাজের মাধ্যমে লম্বা সময় নিয়েই কেবল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। যে মানহাজের লক্ষ্য হবে নীতি; চূড়ায় আরোহণ নয়। যা নতুনভাবে ফের আক্বীদা ও ইসলামী নৈতিক শিক্ষার চারা রোপনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে। এই যে পথকে অনেক ধীরগতিসম্পন্ন ও লম্বা মনে হচ্ছে, সেটাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার সবচেয়ে নিকটতম ও দ্রুততম পথ’।[4] ‘কারণ ইসলামী আইন বাস্তবায়ন এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফয়সালার বিষয়টি কোনো তড়িৎ লক্ষ্য নয়। কেননা পুরো সমাজটাই বা সমাজের বড় একটা সৎ অংশ— যাদের ব্যক্তিত্ব ও ভারত্ব আছে, তারা ইসলামী আক্বীদা, অতঃপর ইসলামী আইনের বিশুদ্ধ মর্মার্থ না বুঝা পর্যন্ত ইসলামী আইন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে ইসলামী আদর্শের উপর তাদের যথাযথভাবে লালিত-পালিত না হওয়া পর্যন্তও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর সে অবস্থায় যেতে যত লম্বা সময়ই লাগুক না কেন এবং যত ধীরগতির পথই পাড়ি দিতে হোক না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না’।[5]

সারকথা হচ্ছে, ‘ইসলামী শরীআহ অনুযায়ী ফয়সালা দেওয়া, দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, হারাম বিষয়াবলি থেকে বেঁচে থাকা, ওয়াজিবসমূহ বাস্তবায়ন করা— এগুলো সবই তাওহীদের অধিকার ও এর পরিপূরক। এসবই তাওহীদের অনুগামী। তাহলে কীভাবে পরিপূরক বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া হবে, অথচ মূল বিষয়কে অবজ্ঞা করা হবে?

আমি মনে করি, আল্লাহর দিকে দাওয়াতের পদ্ধতিতে রাসূলগণ আলাইহিমুস সালাম–এর মানহাজের বিরোধিতা এই মানহাজ সম্পর্কে ঐসব জামাআতের অজ্ঞতার কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। আর কোনো অজ্ঞ ব্যক্তির জন্য দাঈ হওয়া সমীচীন নয়। কারণ দাওয়াতী কাজের অন্যতম শর্তই হচ্ছে, ইলম থাকা। মহান আল্লাহ যথার্থই বলেছেন,‌قُلْ ‌هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ‘বলুন, এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ জাগ্রত জ্ঞান সহকারে আল্লাহর দিকে ডাকি। আর আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ, ১২/১০৮)। অতএব, একজন দাঈর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতাই হচ্ছে ইলম।[6]

তারপর আরেকটি বিষয় হচ্ছে, দাওয়াতী এসব জামাআতকে আমরা নিজেদের মধ্যে মতভেদপূর্ণ দেখতে পাই। প্রত্যেকটি জামাআত নিজের জন্য অন্য জামাআতের তুলনায় ভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করে এবং ভিন্ন মানহাজে চলে!!

আসলে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর মানহাজের বিরোধিতা করার এটাই চূড়ান্ত ফল। কারণ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর মানহাজ একটিই, যেখানে না আছে কোনো বিভাজন, না আছে কোনো মতভেদ। মহান আল্লাহ বলেন,‌قُلْ ‌هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ‘বলুন, এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ জাগ্রত জ্ঞান সহকারে আল্লাহর দিকে ডাকি’ (ইউসুফ, ১২/১০৮)অতএব, এই একটি পথে চলমান রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসারীগণ মতভেদ করতে পারেন না। মতভেদ করে কেবল তারা, যারা এই পথের বিরোধিতা করে। তাই তো মহান আল্লাহ বলেছেন,وَأَنَّ هَذَا ‌صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ‘আর এটাই আমার সোজা পথ। কাজেই তোমরা তার অনুসরণ করো আর নানা পথের অনুসরণ করো না। করলে তা তোমাদেরকে তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে’ (আল-আনআম, ৬/১৫৩)[7]

সারকথা হলো, আল্লাহর দিকে দাওয়াতের সূচনাই হচ্ছে তাওহীদ এবং চূড়ান্ত লক্ষ্যও তাওহীদ। সুতরাং ইসলামের যে নামই ধারণ করুক না কেন এবং যে নামের দিকেই নিজেকে সম্বন্ধিত করুক না কেন তাওহীদ ছাড়া আল্লাহর দিকে কোনো দাওয়াতই হতে পারে না। কারণ সকল রাসূল আলাইহিমুস সালাম এবং বিশেষ করে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ‍মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর শুরু ও শেষ সবসময়ই দাওয়াত ছিল তাওহীদের দিকে। অনুরূপভাবে প্রত্যেকটা রাসূল আলাইহিমুস সালাম সর্বপ্রথম তাঁর ক্বওমকে যেকথা বলেছেন, তা হচ্ছে—يَاقَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ ‌مَا ‌لَكُمْ ‌مِنْ ‌إِلَهٍ غَيْرُهُ ‘হে আমার ক্বওম! আপনারা আল্লাহর ইবাদত করুন’ (আল-আ‘রাফ, ৭/৫৯, ৬৫, ৭৩, ৮৫; হূদ, ১১/৫০, ৬১, ৮৪; আল-মু’মিনূন, ২৩/২৩৩)[8]

অতএব, এটাই একজন মুসলিমের মহান লক্ষ্য। যা মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠার জন্য সে তার সারাজীবন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। যে সৃষ্টিকর্তা তাঁর বান্দাদের জন্য তাদের দুনিয়াবী সমস্ত কল্যাণ সংরক্ষণের যাবতীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত করে দিয়েছেন, তিনিই তাদের জন্য ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে ধার্য করে দিয়েছেন এবং চিরকাল এর হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে আল্লাহ কর্তৃক দ্বীন হেফাযতের বিষয়টি তুলনামূলক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও জোরদার। কারণ মানুষের এই ‍দুনিয়াবী যিন্দেগীর মূল উদ্দেশ্য তিনি নিজেই। মহান আল্লাহ বলেন,‌وَمَا ‌خَلَقْتُ ‌الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ‘আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে’ (আয-যারিয়াত, ৫১/৫৬)[9]

(চলবে)

মূল : আলী ইবনে হাসান আল-হালাবী আল-আছারী

অনুবাদ : আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী

বইটির লেখক আলী ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে আব্দুল হামীদ আল-হালাবী আল-আছারী (জন্ম : ১৩৮০ হিজরী) একজন ফিলিস্তীনী সালাফী আলেম। তিনি আল্লামা মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানীর অত্যন্ত ঘনিষ্ট ও প্রিয় ছাত্র ছিলেন। শায়খ আলবানী, শায়খ ইবনে বায, শায়খ বাকর আবূ যায়েদ, শায়খ মুক্ববিল ইবনে হাদী, শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ প্রমুখ জগদ্বিখ্যাত উলামায়ে কেরাম শায়খ আলী আল-হালাবীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি একাধারে প্রসিদ্ধ আলোচক এবং বহু গ্রন্থপ্রণেতা।

বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


[1]. সুনানে তিরমিযী, হা/২৪০০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৪০২৩; মুসনাদে আহমাদ, ১/১৭২ ও ১৭৪, ‘সনদ হাসান’।

[2]. রবী‘ ইবনে হাদী, মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ-দাওয়াতি ইলাল্লাহ, ফীহিল হিকমাতু ওয়াল আক্বল, পৃ. ৩১।

[3]. ছলেহ ইবনে ফাওযান, মানহাজুল আম্বিয়া, পৃ. ৯।

[4]. সাইয়্যেদ কুতুব, লিমাযা আ‘দামূনী, পৃ. ৬৭।

[5]. সাইয়্যেদ কুতুব, লিমাযা আ‘দামূনী, পৃ. ২৯।

[6]. যার কোনো একটা জিনিস নেই, সে তা দিতে পারে না।

[7]. মানহাজুল আম্বিয়া, পৃ. ৯।

[8]. মানহাজুল আম্বিয়া, পৃ. ৯।

[9]. ইয়াহইয়া আল-মু‘আল্লিমী, আত-তানকীল, ১/৪৭।

Magazine