কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

মুঠোফোন প্রযুক্তি : অপূরণীয় ক্ষতি

দুই বছরের শিশু থেকে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ, অশিক্ষিত কী মূর্খ, আলেম কী জাহেল— কেউ আমরা বাদ নেই*এ যন্ত্রের রকমারি ব্যবহার থেকে! শিক্ষার নামে, উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও উন্নয়নের নামে, তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্র গঠনের সৎ চিন্তা চেতনা নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায়!

কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য আজ এটি একটি জীবনবিধ্বংসী মরণব্যাধির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে মরণব্যাধি ক্যানসার বা করোনা ভাইরাস বললেও ভুল হবে না! দীর্ঘ এক বছরের করোনাকালীন লকডাউনে মুঠোফোন শিক্ষার্থীদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবজীবন ও যৌবনকে ঠেলে দিচ্ছে ভয়াবহ পরিণতির দিকে।

অনেকে শুধু পড়ালেখার নাম করেই এই মৌসুমে ১০-১৫ হাজার টাকা এর পিছনে ব্যয় করেছেন। অথচ করোনাকালে অর্থনৈতিক মন্দার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে কিছুটা হলেও আন্দাজ সকলের হয়েছে নিশ্চয়ই! অনলাইনে পাঠদানের আয়োজন হবে। তাই মুঠোফোন প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। আপডেট হতে হবে ইত্যাদি।

তবে সচেতনমহলের অনেকে আবার বলছেন— অনলাইনে পাঠদানের আয়োজন, না পয়সার ধান্দা! যা-ই হোক। ক্ষতি যা হবার তাই হয়েছে।

আমরা বড়রা কিংবা অভিভাবক বা আপনজন সময় পাস করতে, বিনোদন বা ঠুনকো কারণবশতই শিশুদের হাতে তুলে দিয়েছি এই মুঠোফোন। সে হয়তো ইউটিউবে কার্টুন দেখছে, নয়তো অন্য কিছু। এভাবেই তার সাইকোলজির পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। একসময় সে নেট আসক্তির চরম সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এরপর না আছে তার টাইমলি পড়ালেখা; না আছে বিশ্রাম ঘুম নাওয়া খাওয়া।

বিশ্বের অন্যতম ধনী বিল গেটসের নাম শুনেননি এমন মানুষ কমই আছে সমাজে। তিনি তার সন্তানকে ১৪ বছর বয়সের আগে কোনো মুঠোফোন দেননি। অথচ তার কি টাকা-পয়সার অভাব ছিল কোনো? কেন তিনি তার সন্তানকে মুঠোফোন দেননি? বোঝা যাচ্ছে যে, তারা আমাদের মতো হুজুগে বাঙালী নয়। একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ‘১৬ বছরের নিচে বাচ্চাদেরকে মুঠোফোন না দেওয়া উচিত’। তবে আমরা কী করছি, ভেবেছি একটিবারের জন্য? আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন দিব্যি নেট ব্যবহার করে। ফেসবুক, ইউটিউব আরও কত কী! এগুলো এক একটি নেশার মতো। শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল এর মতে, ‘ড্রাগ আর ফেসবুকে কোনো পার্থক্য নেই’। তবে কল্পনা করা যায় কী হবে আমাদের তরুণপ্রজন্মের?

এজন্য কুরআনে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘জলে ও স্থলে যে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, তা মানুষের কৃতকর্মের ফল’ (আর-রূম, ৩০/৪১)

আজ আমরা নিজ হাতে আমাদের সন্তানের হাতে দামি মুঠোফোন তুলে দিচ্ছি। এর ফলে যে সমূহ ক্ষতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার কোনো প্রতিকার বা বিকল্প কি আছে আমাদের?

তাই বেকার তরুণ-তরুণী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কী হবে? যাদের এখন কোনো কাজ নেই। অভিভাবকরা আদরে-আহ্লাদে তাই এদের হাতে তুলে দিয়েছি— মুঠোফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ জাতীয় নানা রকম ডিভাইস।

ভার্চুয়াল আবিষ্কার ও আবির্ভাবে মানব সমাজের মনুষ্যত্ব কী পরিমাণ লোপ পেয়েছে, তা বলবার ভাষা থাকলেও সাহস নেই। এসব প্রযুক্তির বিরুদ্ধে বলছি না। আবার এসব ছেড়ে দিতে হবে কিংবা বাদ দিতে বলব, তাও না; বরং বলতে চাইছি যে, এই প্রযুক্তিই আমাদের পারস্পরিক অশ্রদ্ধাবোধ ও অভক্তির কারণ হয়েছে। বেড়ে গেছে ক্রাইম, অন্যায়-অনাচার, মহামারি। শিশু-কিশোর, তরুণ প্রজন্মকে করে তুলেছে বেয়াদব-বেপরোয়া। তুলনামূলক শিক্ষিত ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর মানুষের চেয়ে অশিক্ষিত বিজ্ঞানবিমুখ সেকেলে টাইপের মানুষের মাঝেই এখনো রয়ে গেছে অনাবিল আনন্দ, সুখ ও শান্তি। আছে দুঃখ-বেদনা-কষ্ট ভাগাভাগি করে নেবার সহজাত মানসিকতা। তবে আমরাই আধুনিক আপডেট হতে হতে মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলছি দিন দিন। ডিশ এন্টেনার চেয়ে হালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে এখন আধুনিক প্রযুক্তিসম্বলিত এই মুঠোফোন! সুতরাং আমাদের এখনই সচেতন হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন- আমীন!

মীযান মুহাম্মাদ হাসান

* সাবেক খত্বীব, বৈরাগীরচালা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, শ্রীপুর, গাজীপুর।

Magazine