সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই, তিনিই সৎকর্মশীলদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। তাঁর প্রতি ক্বিয়ামত অবধি অবারিত দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
অতঃপর, বর্তমান চলমান এই সংকটের মুখোমুখি শুধু আমাদের মিসরই নই, বরং আমাদের সমগ্র উম্মাহই আজ এ সংকটের মুখোমুখি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তার প্রস্তাব থেকে ফিরে এসেছে। যার অর্থ হলো তিনি যে প্রস্তাব পেশ করেছেন, সেটা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হবে।
খুব সম্ভবত এটি তার একটি কৌশলগত পশ্চাদপসরণ। কেননা এখানে আরেকটি বিষয় রয়েছে, যা যথেষ্ট ভয়াবহ। কেননা অনেকেই ভাববেন যে, যেহেতু ঘোষিত পরিকল্পনা থেকে সে সরে এসেছে, কাজেই বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে আর তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি এ রকম বিশ্বাস করবে, ধারণা করবে অথবা সংশয়ে নিপতিত হবে, তবে জানতে হবে যে, তার ইয়াহূদী, জায়নবাদ ও ফ্রিম্যাসনরি সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান নেই।
কারণ, যদি তাদের সামনে একটি পথ বন্ধ হয়ে যায়, তারা শত নতুন পথ খোঁজে। ঠিক শয়তানের মতো, যে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি পথ দিয়ে প্রবেশ করতে না পারলে অন্য পথ ধরে আসে। এ কারণেই দখলদার ইসরাঈলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার সেনা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে, যেন তারা ফিলিস্তীনিদের ‘স্বেচ্ছাসম্মত’ উচ্ছেদের অনুকূল পরীক্ষানিরীক্ষা ও পন্থা গ্রহণ করে।
এখানে শর্ত নেই যে, তাদেরকে সিনা উপত্যকা বা জর্ডানে নির্বাসিত করতে হবে বরং স্বেচ্ছাসম্মত বাস্তুচ্যুত পূর্ণতা দেওয়ার জন্য পরীক্ষানিরীক্ষা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ২ লাখ গাযাবাসী স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়তে চাইছেন। এটা হতে পারে মাসের পর মাস তারা যে দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিন কাটিয়েছেন, দক্ষিণ গাযা থেকে উত্তরে স্থানান্তরের পর সেখানে শুধুই ধ্বংসস্তূপ দেখতে পেয়েছেন। বাসস্থান বলতে কিছুই নেই। সেখানে জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন। রাতের তাপমাত্রা দুই-তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। অথচ কোনো গরম কাপড়, বিছানা, দেয়াল নেই যা তাদেরকে বাতাসের আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে, কোনো ছাদ নেই, যা তাদেরকে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত থেকে রক্ষা করবে, কোনো চাদর বা বিছানা নেই, যা তাদেরকে কিছুটা উষ্ণ করতে পারে— ফলে প্রচণ্ড ঠান্ডায় সর্বত্র কষ্টের শিকার হয়ে শিশুরা মারা যাচ্ছে। খাবার নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসা নেই। চারিদিকে শুধুই দুর্ভোগ।
প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, কমবেশি প্রায় ২ লাখ গাযাবাসী দেশত্যাগ করতে চাইছেন। নেগেভ মরুভূমিতে একটি বিমানবন্দর প্রস্তুত করা হচ্ছে, যেখানে ‘বানর ও শূকরের ভ্রাতারা’ (ইয়াহূদীরা) সেইসব ফিলিস্তীনিদের একত্র করবে, যারা স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করতে চায়। তারপর তারা ফিরে আসতে পারবে না। এরপর তাদের অন্য কোনো দেশে পাঠানো হবে। সেখানে প্রলুদ্ধকর সাহায্য ও বাসস্থান দেওয়া হবে এই শর্তে যে, তারা আর কখনো ফিলিস্তীনে ফিরে আসবে না! এটাই বিপদ! মানুষ ভাবছে, যখন ঘোষিত সিদ্ধান্ত ফিরে আসা হয়েছে, তাহলে সেটি শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়।
আমেরিকার নির্বোধ নেতা সমগ্র বিশ্বের বিরুদ্ধেই শত্রুতা করছে: এই ব্যক্তি—আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট—সম্ভবত আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নেতা, সে শুধু নিজ দেশেই নয়, গোটা বিশ্বেও বিপর্যয় ডেকে এনেছে। তার প্রেসিডেন্সির মাত্র তিন সপ্তাহ পার হয়েছে, অথচ ইতোমধ্যেই সে সমগ্র বিশ্বের বিরোধিতা কুড়িয়েছে এবং খোদ আমেরিকার সমাজের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করেছে।
ফলে আজ আমেরিকার সমাজ প্রায় দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার উপক্রম— রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট। এই নেতা অজ্ঞতাবশত নয়, বরং অন্ধের মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে। এমনকি ইউরোপের সঙ্গেও শত্রুতা সৃষ্টি করেছে সে। ন্যাটোর সামরিক শক্তি এখন সরাসরি প্রস্তুত রয়েছে। কারণ সে ডেনমার্কের মালিকানাধীন একটি দ্বীপ দখল করতে চায়। আর ডেনমার্ক ন্যাটোর সদস্য হওয়ায় এই আগ্রাসন প্রতিহত করতে ন্যাটোও সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই ব্যক্তি সমগ্র বিশ্বকে এক অদ্ভুত সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউরোপ এখন বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ভাবছে এবং সামরিক দিক থেকেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সে ডেনমার্কের গ্রীনল্যান্ড দ্বীপ দখল করতে চায়; কিন্তু ইউরোপ তাকে তা কখনোই করতে দেবে না। আর যদি সে সামরিক শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করে তাহলে এক ভয়ংকর যুদ্ধ বাধবে, যা সবকিছু ধ্বংস করে দেবে, সবুজ বনানী থেকে শুরু করে শুষ্ক মরুভূমি পর্যন্ত সবকিছু ছারখার করে ছাড়বে।
এছাড়াও, সে পানামা খাল দখল করার চেষ্টা করেছিল! সে কয়েকজন মার্কিন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল যারা পানামার সরকারকে এই খালকে মার্কিন মালিকানাধীন করার ব্যাপারে দরকষাকষি করতে বলেছিল। তবে তারা ফিরে আসে। অতঃপর সে মনে করল যেন পানামা খাল ইতোমধ্যেই তাদের হয়ে গেছে। তাই সে মার্কিন জাহাজগুলোর জন্য আদেশ জারি করল যেন তারা পানামা খাল দিয়ে পারাপারের জন্য কোনো ফি প্রদান না করে।
পানামা কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল যে, মার্কিন জাহাজগুলোকেও অন্যান্য দেশের জাহাজের মতোই ফি দিতে হবে।
শুধু পানামা খাল নয়, সে কানাডাকেও আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত করতে চায়! মেক্সিকোর সঙ্গে তার গুরুতর সমস্যা রয়েছে। ইউরোপের সব দেশ ও ন্যাটোর সঙ্গেও দ্বন্দ্ব চলছে। যা সামরিক সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হতে পারে।
উপরন্তু সে গোটা আরব ও মুসলিম বিশ্বকেও শত্রু বানিয়েছে তার এই উদ্ভট ও পাগলাটে চিন্তাধারার মাধ্যমে যে সে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যে সে গাযা দখল করতে চায়!’
আমেরিকার গাযা দখলের চেষ্টা ও আল-আক্বছার বিরুদ্ধে চক্রান্ত: এটি এক বিস্ময়কর যুগ। যেখানে দাবি এক আর বাস্তবতা আরেক। আর এ দুয়ের ব্যবধান আকাশ-পাতালের মতো! এই যুগে স্বাধীনতা সংরক্ষণের দাবি তোলা হয়, এমনকি মতপ্রকাশের স্বাধীনতারও। আর তা এমন এক পর্যায়ে যে, নাস্তিকতার স্বাধীনতাও স্বাধীনতা সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহকে গালি দেওয়ার স্বাধীনতাও স্বাধীনতা সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত! এটাকেই তারা স্বাধীনতা বলে! তারপর ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর এমনভাবে আক্রমণ চালানো হয়, যা কোনো আইন, কোনো রীতি, কোনো নৈতিকতা, কোনো ধর্ম— কোনো কিছুই অনুমোদন করে না! যেমন গাযা দখল করার পরিকল্পনা! যাতে এটি আমেরিকার মালিকানার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়!
সুতরাং সারকথা হলো: বর্তমানে কিছু কৌশলগত পশ্চাদপসরণ লক্ষ করা গেলেও, এটি সাময়িক। মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন তারা করবেই। কারণ খ্রিষ্টান জায়নিষ্টরা এক অদ্ভুত মতবাদের উপর রয়েছে। তারা ইয়াহূদীদের থেকেও বড় জায়নিষ্ট! যদিও তারা খ্রিষ্টান জায়নিষ্ট। তথাপি তারা ইয়াহূদীদের মতোই বিশ্বাস করে যে আল-আক্বছার স্থানে মন্দির পুনর্নির্মাণ করতেই হবে। তবেই তাদের তথাকথিত ‘মাসীহ’ আবির্ভূত হবে এবং ‘সৌভাগ্যের সহস্রাব্দ’ শুরু হবে! তারা সবাই চেষ্টা করছে মন্দির পুনর্নির্মাণ করতে। সেই মন্দির কোথায় রয়েছে?
তারা বলে, ‘মন্দির আল-আক্বছা মসজিদের নিচে রয়েছে!’ এ কারণেই তারা দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের নিচে খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মসজিদের ভিত্তি এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে, একটি বিমান শব্দের বাধা ভেদ করলে (যে কম্পনের সৃষ্টি হয়, তাতে) মসজিদটি ধসে পড়তে পারে!
তারা এটা করছে তাদের কল্পিত ‘মন্দির’ খোঁজার জন্য! এটা তাদের আক্বীদা বা বিশ্বাস।
ফিলিস্তীন ও মিসরের বিরুদ্ধে ইয়াহূদীদের যুদ্ধ একটি আক্বীদাগত যুদ্ধ: যে বিষয়টি আমাদেরকে ব্যথিত করে তা হলো, যখন আমরা এই ইস্যুতে আলোচনা করি যে, শত্রুপক্ষের নিকট এর আক্বীদাগত শিকড় রয়েছে তখন অনেকেই অস্বীকার ও বিস্ময় প্রকাশ করে; বরং এ কথার তীব্র নিন্দা করে এবং বলে যে, তারা আমাদের সাথে কোনো আক্বীদাগত যুদ্ধে লিপ্ত নয়!!
বাস্তবে তারা আমাদের সাথে আক্বীদাগত যুদ্ধেই লিপ্ত। এমনকি আমাদের উন্নতি ও উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রেও, যেমনটি ইশাইয়া পুস্তকের[1] ১৯তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘আমি মিসরীয়দেরকে মিসরীয়দের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করব, যাতে ভাই ভাইকে হত্যা করে এবং ভাই ভাইকে বন্দী করে’। আরও বলা হয়েছে, ‘নদী শুকিয়ে যাবে, খালগুলো দুর্গন্ধময় হবে এবং মিসরীয়রা তুচ্ছ শহরগুলোতে আশ্রয় নেবে’। মাছ শিকার করা সম্পর্কে নানা কথা রয়েছে, জেলেরা নদীতে কোন কিছু পাবে না কারণ নদী শুকিয়ে যাবে! নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখন লক্ষণীয়, হয়তো তোমরা পিপাসায় মারা যাবে নতুবা সিনা উপত্যকা আমাদেরকে প্রদান করবে, প্রভুর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিনা ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত হবে।
অতএব, যখন আমরা বলি, এটি তাদের আক্বীদার মৌলিক বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত। তখন বুঝতে হবে যে, এটি তাদের দৃষ্টিতে একটি আক্বীদাগত বিষয়। এমনকি দখলদার রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীও গাযার ওপর চালানো আগ্রাসনের সময় ইশাইয়া গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে এটিকে তাদের জন্য রবের প্রতিশ্রুতি হিসেবে উপস্থাপন করেছিল!
এই ভূমি তাদের লক্ষ্যবস্তু, কারণ তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এটি রবের প্রতিশ্রুতির অন্তর্ভুক্ত।
এই সম্প্রদায়টি কোনো অনর্থক বা হাসিতামাশা করছে না; তারা আক্বীদার ভিত্তিতে কাজ করে এবং এই আক্বীদা বাস্তবায়নের জন্য তারা প্রাণপণ চেষ্টা করে। কারণ তাদের অস্তিত্বই এই আক্বীদার উপর নির্ভরশীল, আর তারা অনেক মানুষকে এই আক্বীদায় প্রভাবিত করেছে। এমনকি এখন ‘খ্রিষ্টীয় জায়নবাদ’ নামে একটি ধারণা প্রচলিত হয়েছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর মধ্যে ডুবে রয়েছে আমেরিকানরা এবং ইংরেজরাও। তারা সবাই এই ভিত্তি, এই বিশ্বাসের উপর রয়েছে।
যখন আপনি এই কথা বলবেন তখন দেখতে পাবেন যে অনেকে বলছে, এটি বলা উচিত নয় এবং এই যুদ্ধ কোনো আক্বীদাগত যুদ্ধও নয়!
কিন্তু হে মুসলিম ও আরবরা! তোমরা কীসের জন্য যুদ্ধ করছ? তোমাদের অভিপ্রায় কী?
ইয়াহূদীরা বলে, ‘ফিলিস্তীন আমাদের, এটি আমাদের ভূমি। তারা একটি সম্পূর্ণ জাতিকে তাদের নিজস্ব ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে দিতে চায়। অথচ ভূমি তাদের নিজেরই। ইতিহাস তাদেরই!
তারা জোরগলায় বলে, ফিলিস্তীন আমাদের ইতিহাস, এটি আমাদের ভূমি এবং এখান থেকে তাদের অবশ্যই চলে যেতে হবে। এমনকি মিসরীয়রাও। যারা প্রতিশ্রুত ভূমির মধ্যে রয়েছে, তাদেরও চলে যেতে হবে!!
সুতরাং, আমাদেরকে এই ধরনের বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং সমস্যাটিকে তার সঠিক রূপে বুঝতে সচেষ্ট হতে হবে।
মিসরের রাষ্ট্রপতিকে সমর্থন করার জন্য আরব ও ইসলামী সংগঠন এবং জনগণের একতা অপরিহার্য: সত্যিই বিস্ময়ের বিষয় হলো, এই মুহূর্ত পর্যন্ত আরব লীগ কোনো শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেনি। এমনকি ইসলামী সহযোগিতা সংস্থাও (OIC) এই ইস্যুতে কোনো দৃঢ় বিবৃতি দেয়নি। ফিলিস্তীনের ইস্যুটি একটি আরব ও ইসলামী ইস্যু। আরব লীগের উচিত ছিল আমাদের মিসরের রাষ্ট্রপতি এবং জর্ডানের রাজা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাতের আগেই একটি জরুরী শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা। অবশ্যই এই উপাদান থাকতে হবে। অবশ্যই মিসর, ফিলিস্তীন আরব জাতিসহ মুসলিম জাতির ইচ্ছা-অভিপ্রায় প্রতিফলিত হতে হবে, এই অভিপ্রায়টি অত্যন্ত জোড়ালো ও অকাট্য হতে হবে। এমনকি আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান সেখানে গেলে তিনি আমাদের এই জাতির ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করবেন।
আমাদের জাতি কর্তৃক স্বীকৃত ও সমর্থিত কোনো সিদ্ধান্ত বলার জন্য যাওয়া আর এই জাতির অভিপ্রায় ঠিক করার জন্য যাওয়ার মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
আর শুধু এই অঞ্চলের প্রতিটি আরব এবং প্রতিটি মুসলিম নয়, বরং পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের প্রতিটি মুসলিম ফিলিস্তীন ইস্যু নিয়ে ভাবে। এই ইস্যুটি একটি অস্তিত্বের প্রশ্ন। ফিলিস্তীনের ইস্যুটি একটি কেন্দ্রীয় ইস্যু। যার জন্য মুসলিমরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কষ্ট ভোগ করেছেন। মুসলিমরা দীর্ঘ সময় ধরে এই সমস্যায় ভুগছে। বহু দশক ধরে তারা এই কষ্ট ভোগ করছে— যখন থেকে আমাদের এই প্রিয় ভূমিতে দূরাগত লোক দ্বারা এই রাষ্ট্রটির সূত্রপাত হয়েছে।
আমাদেরকে অবশ্যই এই ধরনের বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে আমাদের মনে এই বিষয়টি সদা জাগ্রত থাকা প্রয়োজন। আর এই ইস্যুটি আমাদের হৃদয়ে সর্বদা জাগ্রত থাকতে হবে। এটি আমাদের মুসলিমদের ইস্যু, আমাদের আরবদের ইস্যু। আমাদের জন্য সমীচীন হলো আমাদের মনে এই বিষয়টি সদা উজ্জ্বল ও প্রদীপ্ত থাকা এবং যারা সচেতন নয় তাদের সচেতন করার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো উচিত। কারণ আমরা যে নীরবতা লক্ষ করছি, বিশেষ করে সেইসব সংস্থার পক্ষ থেকে, যাদের এই বিষয়ে সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল, যেমন আরব লীগ।
আরব লীগ কেন এখনও সমাবেশ আয়োজন করেনি এবং একটি জরুরী শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেনি যেখানে তারা একটি দৃঢ় ও স্পষ্ট বিবৃতি দেবে? এই ধরনের ইস্যুকে হালকা হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।
এই ধরনের ফালতু কথাগুলো পাগলের প্রলাপ, যেদিকে ভ্রুক্ষেপ করা উচিত নয়। কীভাবে কোনো ভূমিকে তার অধিবাসীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া যায়?! কীভাবে একটি সম্প্রদায়কে তাদের ভূমি ও ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যায়?!
গাযার দুঃখী মানুষের উপর চাপ প্রয়োগের জন্য শয়তানী পরিকল্পনা: বিপজ্জনক বিষয় হলো, যেমনটি আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা চক্রান্ত করছে। যারা কষ্ট ভোগ করছে তাদেরকে কষ্ট লাঘব করার প্রলোভন দেখিয়ে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা করছে। তারা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফিলিস্তীনিদের বহিষ্কার করার চক্রান্ত আঁটছে। তারা প্রলোভন দেখিয়ে বলছে, ২ লক্ষ মানুষকে স্বেচ্ছায় স্থানান্তর করা হবে। এছাড়াও যারা যাবে তাদেরকে সুবিধা দেওয়া হবে। আর যদি বাকিরা না যায়, তবে হোয়াইট হাউস বা ব্ল্যাক হাউসের ব্যক্তি ইয়াহূদীদের ও ফিলিস্তীনিদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের হুমকি দেবে এবং আবারও আক্রমণ করবে। তখন এই সংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষ বেরিয়ে যেতে বাধ্য হবে। এমনকি এ অঞ্চলকে তার অধিবাসী ও মালিকদের থেকে খালি করে দিতে হবে।
এটাই হলো আসল বিপদ! আর এই কষ্ট বাস্তব, আপনি এটি অস্বীকার করতে পারবেন না। আবার আপনি এটাও বলতে পারবেন না যে, ‘অটল থাকুন এবং ধৈর্য ধরুন!’
কারণ তারা দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্য ধরেছে। দীর্ঘ সময় ধরে অটল থেকেছে। গাযার এই দুঃখী মানুষরা অনেক কিছু সহ্য করেছে এবং এখনও সহ্য করে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের শক্তির একটি সীমা আছে। মানুষ কোনো কোনো সময় এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছায় যেখানে জীবন সংরক্ষণের স্বাভাবিক আগ্রহ সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুর পরওয়া করে না।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি তাদেরকে অটল রাখেন এবং তাদের কষ্ট দূর করেন।
আরব লীগ ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (OIC) একটি জরুরী বৈঠক আহ্বানের অপরিহার্যতা: জরুরী ভিত্তিতে আরব লীগের এক বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা প্রয়োজন যাতে একটি দৃঢ় ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। OIC যদি ফিলিস্তীনের ইস্যুতে সমবেত না হয়, তাহলে কখন সমবেত হবে?! OIC যদি ফিলিস্তীনের ইস্যুতে একত্রিত না হয়, তাহলে কখন একত্রিত হবে? একটি দৃঢ় ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন। যে সিদ্ধান্ত প্রতিটি বিষয়ে পরিষ্কার অবস্থান নেবে।
আর এই হঠকারিতা ও পাগলামিকে কেউ মেনে নেবে না। এটা স্পষ্ট যে, শক্তির ব্যবহারেরও একটি সীমা আছে। আর প্রতিটি মানুষকে তার সীমার মধ্যে থাকা উচিত!
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের দেশ ও সকল মুসলিম দেশকে নিরাপদ রাখেন এবং আমাদের সকলের শেষ পরিণতি উত্তম করেন। আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল ছাহাবীর উপর।
আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন সাঈদ রসলান
রবিবার, ১০ শা‘বান, ১৪৪৬ হিজরী
৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ।
মূল : আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে সাঈদ রাসলান
বিশিষ্ট দাঈ, কায়রো, মিসর।
পরিমার্জিত অনুবাদ : মাহফুজুর রহমান বিন আব্দুস সাত্তার
*কুল্লিয়া ২য় বর্ষ, মাদরাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবীয়া, উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
[1]. এটি ইয়াহূদীদের ধর্মগ্রন্থ তানাখ ও খ্রিষ্টানদের ওল্ড টেস্টামেন্টের সমন্বয়ে গঠিত একটি ধর্মগ্রন্থ, এই বইয়ের ১৯তম অধ্যায়ে মিসর সম্পর্কে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে।