عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرَى فَجَعَلَ الْبَيْتَ عَنْ يَسَارِهِ وَمِنًى عَنْ يَمِينِهِ وَرَمَى بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ ثُمَّ قَالَ هَكَذَا رَمَى الَّذِي أُنْزِلَتْ عَلَيْهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি জামরাতুল কুবরার (বড় জামরার) নিকট পৌঁছে বায়তুল্লাহকে বামে আর মিনাকে ডানে রেখে সাতটি কঙ্কর মারলেন। এতে প্রত্যেকবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, যাঁর উপর সূরা আল-বাক্বারা নাযিল হয়েছে, তিনিও ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে পাথর মেরেছেন।[1] ১০ তারিখের কাজগুলো আগ-পিছ হলে কোনো দোষ নেই।[2]
যাকরানিষেধ :
(১) আরাফা হতে মুযদালিফায় দৌড়ঝাঁপ করে আসা।
(২) মুযদালিফায় রাত যাপনের জন্য বিশেষ গোসল করা।
(৩) মুযদালিফায় বিশেষ দু‘আ ও ওয়াযীফা পাঠ করা।
(৪) মুযদালিফায় পৌঁছে ছালাত আদায় না করে তাড়াহুড়া করে পাথর সংগ্রহ করা।
(৫) মাগরিব ও এশার সুন্নাত এবং বিতর পড়া।
(৬) মুযদালিফার রাতে না ঘুমিয়ে জেগে ইবাদত করা বা গল্পগুজব করা।
যিলহজ্জের১০তারিখেরদ্বিতীয়কাজ : ১০ তরিখের দ্বিতীয় কাজ হলো হাদী যবেহ করা। হাদীর জন্য উত্তম হলো উট। তারপর গরু, তারপর ছাগল বা দুম্বা অথবা উট বা গরুর সাত ভাগের এক ভাগ। হাদীর বয়স ও বৈশিষ্ট্য কুরবানীর পশুর মতোই হতে হবে।[3] হাদী একাধিক হতে পারে। যেমন- নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদী ছিল ১০০টি উট। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে ৬৩টি যবেহ করেছিলেন আর বাকিগুলো আলী রযিয়াল্লাহু আনহু যবেহ করেছিলেন।[4] পশু যবেহর স্থান সম্পর্কে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সম্পূর্ণ মিনা পশু যবেহর স্থান। আর মক্কার প্রতিটি পথ চলাচল এবং পশু যবেহর স্থান। অতএব তোমরা তোমাদের বাড়ি-ঘরে কুরবানী করতে পার বা পশু যবেহ করতে পার। হাদী ও কুরবানী যবেহর সময় মোট চার দিন। তা হলো, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, كُلُّ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ ذَبْحٌ ‘আইয়ামে তাশরীকের ১১, ১২ ও ১৩ এর প্রতিটি দিনই হাদী যবেহ করার দিন’।[5] অতএব এ চার দিনের যেকোনো সময় হাদী করতে পারে। আর সুন্নাত হচ্ছে কুরবানীদাতা নিজ হাতে কুরবানী করবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে কুরবানী করেন।[6] যদি না হয়, তাহলে অন্য কাউকে প্রতিনিধি বানাবে।[7] কেবলামুখী করে বাম কাতে ফেলে যবেহ করা সুন্নাত। কেবলামুখী ছাড়া যবেহ করলে আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা সেটা খাওয়া অপছন্দ করতেন।[8] আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ ‘আল্লাহর নামে যবেহ করছি। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে ও তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করো’।[9]
যদি কোনো ব্যক্তি অর্থের অভাবে কুরবানী দিতে না পারে, তাহলে হজ্জের সময় তিন দিন এবং বাড়িতে ফিরে সাত দিন মোট ১০ দিন ছিয়াম পালন করবেন। মহান আল্লাহ বলেন,فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ‘যে ব্যক্তি হজ্জের সাথে উমরাকে মিলিয়ে উপকার লাভ করতে চায়, সে যেমন সম্ভব কুরবানী দিবে। কিন্তু কেউ যদি তা না পায়, তাহলে সে হজ্জের দিনগুলোতে তিন দিন এবং বাড়ি ফেরার পর সাত দিন মোট ১০ দিন ছিয়াম থাকবে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৯৬)।
জরুরী কথা, হজ্জের দিনগুলোতে যারা ছিয়াম থাকবে, তারা ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে ছিয়াম রাখতে পারে- যদিও এ দিনগুলোতে ছিয়াম রাখা নিষেধ। হজ্জের দিনগুলোতে শুধু তারা ছিয়াম থাকবে, যারা কুরবানীর ব্যবস্থা করতে পারেনি (আল-বাক্বারা, ২/১৯৬)।
১০ তারিখের তৃতীয় কাজ হলো, মাথা ন্যাড়া করা বা চুল ছোট করা। ১০ তারিখের চতুর্থ কাজ হলো, তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে যিয়ারাহ করা। এটা মূলত হজ্জের রুকন। এ তাওয়াফে ইযত্বেবা এবং রমল নেই। শুধু কা‘বায় সাত চক্কর তাওয়াফ এবং দুই রাকআত ছালাত। অতঃপর যমযমের পানি পান করবে। এ তাওয়াফের মাধ্যমে ইহরামের সব নিষিদ্ধ বিষয় হালাল হয়ে যাবে। ১০ তারিখের ৫ম কাজ হলো ছাফা ও মারওয়ায় সাঈ করা। মূলত এটা তামাত্তু হজ্জের জন্য। আর যারা ক্বিরান বা ইফরাদ হজ্জ করবে, তারা তাওয়াফে কুদূমের সময় সাঈ করলে ১০ তারিখে সাঈ করতে হবে না। আর না করলে ১০ তারিখে তাওয়াফের পর সাঈ করতে হবে। কারণ তামাত্তু হজ্জের জন্য দুটি সাঈ এবং ক্বিরান ও ইফরাদের জন্য একটি সাঈ। আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, যারা শুধু উমরার ইহরাম বেধেছে, তামাত্তু হজ্জের জন্য তারা কা‘বায় তাওয়াফ এবং ছাফা-মারওয়ায় সাঈ করার পর হালাল হয়ে যাবে। অতঃপর মিনায় হজ্জের কাজ শেষ করে এসে পুনরায় তাওয়াফ এবং ছাফা-মারওয়া সাঈ করবে। আর যারা হজ্জ এবং উমরার এক সাথে ইহরাম বেঁধেছে, তারা শুধু একবার তাওয়াফ করবে এবং একবার ছাফা-মারওয়ায় সাঈ করবে।[10] এভাবেই ১০ তারিখের কাজ শেষ হবে।
যা বর্জনীয় :
(১) পাথর মারার জন্য বিশেষ কোনো গোসল করা।
(২) পাথর মারার জন্য হাত ধৌত করা।
(৩) পাথর মারার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ ছাড়া অন্য কোনো দু‘আ পড়া।
(৪) শয়তানকে গালিগালাজ করা এবং জুতা ছুড়ে মারা।
(৫) হাদী বা কুরবানী না করে মূল্য ছাদাক্বা করা।
(৬) ১০ তারিখের পূর্বে হাদী যবেহ করা।
(৭) মাথার চুল কিছু অংশ কাটা বা ন্যাড়া করা।
(৮) হজ্জের কাজ মনে করে মিনায় ঈদের ছালাত আদায় করা।
১১, ১২ও১৩তারিখমিনায় রাত্রিযাপন : ১০ তারিখ দিন পার হলে হবে ১১ তারিখের রাত। তারপর হবে ১২ ও ১৩ তারিখের রাত। এ তিন রাত মিনায় রাতযাপন করা উচিত। তবে এ তিন রাতের মধ্যে ১১ ও ১২ রাতযাপন করেও চলে আসতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ ‘আর নির্ধারিত দিনসমূহে আল্লাহকে স্মরণ করো। অতঃপর কেউ যদি দু’দিনের মধ্যে (মক্কায় ফিরে যেতে) তাড়াতাড়ি করে, তবে তার জন্য কোনো পাপ নেই। পক্ষান্তরে কেউ যদি বিলম্ব করে, তবে তার জন্যও পাপ নেই এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ও জেনে রেখো যে, অবশ্যই তোমাদের সকলকে তাঁরই নিকট সমবেত করা হবে’ (আল-বাক্বারা, ২/২০৩)। যদি কেউ ১২ তারিখে চলে আসতে চায়, তাকে ১২ তারিখ সূর্য ডুবার আগেই মিনা ত্যাগ করতে হবে। ১২ তারিখ সূর্য ডুবে গেলে ১৩ তারিখ বিকালে পাথর মেরেই আসতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,مَنْ غَرَبَتْ لَهُ الشَّمْسُ مِنْ أَوْسَطِ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ وَهُوَ بِمِنًى، لا يَنْفِرَنَّ حَتَّى يَرْمِيَ الْجِمَارَ مِنَ الْغَدِ ‘তাশরীকের মধ্যদিনে অর্থাৎ ১২ তারিখে যার মিনায় সূর্য ডুবে যাবে, সে যেন পরের দিন ১৩ তারিখে পাথর মারার পূর্বে মিনা ত্যাগ না করে’।[11] অতএব তিন রাত থাকা এবং তিন দিন পাথর মারা সবচেয়ে ভালো।
(চলবে)
[1]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৪৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৯৬; মিশকাত, হা/২৬২১।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৮৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩০৬; মিশকাত, হা/২৬৫৫, ২৬৫৬।
[3]. আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল উমরা, পৃ. ৩৫।
[4]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮।
[5]. আহমাদ, হা/১৬৭৫৭; সিলসিলা ছহীহা, হা/২৪৭৬।
[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৬৭; মিশকাত, হা/১৪৫৪।
[7]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৬৭; মিশকাত, হা/১৪৫৪।
[8]. মুছাননাফ আব্দুর রাযযাক, হা/৮৬১৬।
[9]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৪৯১; মিশকাত, হা/১৪৫৪।
[10]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৭২।
[11]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৫১১; আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল উমরা পৃ. ৩৮।