কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

শিশুকে মাতৃদুগ্ধ দান

আজকাল অনেক মা শিশুদের বুকের দুধপান করাতে নারাজ। তারা বাইরের খাবারে শিশুদের বড় করতে চান, এমনকি শুরুও করেছেন। যেমন ‘ল্যাকটোজেন’। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা শিশুর জন্য মায়ের বুকে বিরাট এক নেয়ামত দিয়েছেন।

শিশু সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মাতৃদুগ্ধের বিকল্প কিছু নেই। মায়ের দুধপান করে শিশু বড় হলে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় এবং নানা প্রকার রোগ থেকে বেঁচে যায়। মাতৃদুগ্ধ দান শিশুর জন্মগত অধিকার। তাতে মা এবং শিশুর মধ্যে অগাধ ভালোবাসার সৃষ্টি হয়, পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সাহায্য করে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে কারীমে মাতৃদুগ্ধ দানের নীতি উল্লেখ করে বলেন,﴿وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ﴾ ‘মাতাগণ তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু’বছর স্তন্যপান করাবে, যদি তারা দুধপানের সময়সীসা পূর্ণ করতে চায়’ (আল-বাক্বারা, ২/২৩৩)

শিশুকে স্বাভাবিক পন্থায় মাতৃদুগ্ধ দানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন,﴿وَأَوْحَيْنَا إِلَى أُمِّ مُوسَى أَنْ أَرْضِعِيهِ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ﴾ ‘আমি মূসার মায়ের অন্তরে এ ইলহাম করলাম যে, তুমি তাকে (মূসাকে) দুগ্ধ দান করো, তবে যদি তার নিরাপত্তা বিষয়ে তোমার ভয় হয় তাহলে তাকে নদীতে ভাসিয়ে দাও’ (আল-ক্বছাছ, ২৮/৭)

শিশুর জন্মের পর তার উপযোগী প্রথম খাবার হলো, মায়ের বুকের শালদুধ। যা মায়ের গর্ভকালীন সময়ে ৬/৭ মাস থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা রহমতস্বরূপ শিশুর প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী মায়ের স্তনে এ দুধ সৃষ্টি করে দেন। এ শালদুধে অধিক আমিষ, ভিটামিন ‘এ’ এবং শিশুর সুষম খাদ্য থাকে। ফলে শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন রোগ-জীবাণু থেকে শিশুকে রক্ষা করে। সুতরাং শালদুধ হচ্ছে শিশুর প্রথম টিকা।[1]

শালদুধ দেওয়ার আগে অন্য কোনো খাবার মধু, পানি, মিছরির শরবত, গরুর দুধ ইত্যাদি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শিশু যদি ঘনঘন এবং রাতেও দুধপান করে তাহলে প্রল্যাকটিন ও অন্যান্য হরমোন যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয়ে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। ফলে বুকের দুধপান করালে দু’সন্তানের জন্মের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি হয়।[2]

মা যখন শিশুকে স্তনের দুধপান করান, তখন মাকে উপযুক্ত বাড়তি খাবার খেতে দিলে স্বাভাবিকভাবে মায়ের স্তনে দুধ বেড়ে যায়। এটা সন্তানের জন্য মহান আল্লাহর নেয়ামতস্বরূপ।

বুকের দুধ দিয়ে শিশুকে যথাযথভাবে লালনপালনের মধ্য দিয়ে মা উপলব্ধি করতে পারেন আল্লাহর হুকুম মানার সুফল, নিজের ক্ষমতা ও মর্যাদা এবং মানব সভ্যতায় তার অবদান। এ অবদানের জন্যই ইসলাম মায়ের অধিকার ও মর্যাদাকে সবচেয়ে উঁচুতে স্থান দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে বহুবার মায়ের দুধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বুকের দুধপান করিয়ে মা পরকালীন জীবনকে সহজতর ও সমৃদ্ধ করতে পারে। মায়ের জন্য নির্ধারিত রয়েছে প্রতিটি ফোটা দুধের বিনিময়ে তার উপযুক্ত নেকী।[3]

পরিশেষে বলব যে, আল্লাহর এ নেয়ামত থেকে শিশুদের বঞ্চিত করবেন না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনাকে অনেক ছওয়াবের ভাগীদার করবেন। রোগমুক্ত, সুখী সমৃদ্ধ, শক্তিশালী সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র গঠনে মাতৃদুগ্ধ দানের মাধ্যমে ভূমিকা রাখুন- আমীন!

 মহিউদ্দিন বিন জুবায়েদ

মুহিমনগর, চৈতনখিলা, শেরপুর।


[1]. DR. F.SAVAGE KING, HELPING MOTHERS TO BREASTFEED (অনুবাদ: শামীম আহমেদ, ঢাকা-১৯৯৪), পৃ. ১৫।

[1]. প্রাগুক্ত, পৃ. ১১৪।

[1]. ত্রৈমাসিক ইসলামিক ফাউণ্ডেশন পত্রিকা, ৪৪ বর্ষ, ২য় সংখ্যা, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০০৪, পৃ. ১৬৩।

Magazine