‘বিদআত’ আরবী শব্দ, এর অর্থ নতুনভাবে সৃষ্টি করা। এ অর্থে শব্দটির প্রয়োগ কুরআন মাজীদে পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন, بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ‘তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা’ (আল-বাক্বারা, ২/১১৭)। শরীআতের দৃষ্টিতে বিদআত হচ্ছে ঐ সমস্ত বিশ্বাস, কথা ও আমল, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়; অথচ তার সমর্থনে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে কোনো বর্ণনা বা দলীল নেই। মহান আল্লাহ বলেন, أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ ‘তাদের কি এমন কোনো অংশীদার আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু উদ্ভাবন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ প্রদান করেননি’ (আশ-শূরা, ৪২/২১)।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ইসলামী শরীআত রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর আগেই আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এতে সংযোজন ও বিয়োজনের কোনো অধিকার আল্লাহ কাউকে দেননি। আল্লাহ তাআলা বলেন,اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম’ (আল-মায়েদা, ৫/৩)। ইরবায ইবনে সারিয়াহ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا، لَا يَزِيغُ عَنْهَا بَعْدِي إِلَّا هَالِكٌ ‘অবশ্যই আমি তোমাদেরকে স্পষ্ট দ্বীনের ওপর ছেড়ে যাচ্ছি, যার রাত্রিও দিনের মতোই। আমার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত ছাড়া তা হতে অন্য কেউ ভিন্নপথ অবলম্বন করবে না’।[1] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, اِتَّبِعُوْا وَلَا تَبْتَدِعُوْا؛ فَقَدْ كُفِيْتُمْ، عَلَيْكُمْ بِالْأَمْرِ الْعَتِيْقِ ‘তোমরা (কুরআন-সুন্নাহর) অনুসরণ করো, নতুন কিছু রচনা করো না। কারণ তোমাদের জন্য তাই যথেষ্ট। আর তোমরা পুরাতন পন্থাই অবলম্বন করো’।[2]
দ্বীনের মধ্যে নতুন চালুকৃত সকল বিশ্বাস, কথা ও কর্মই বিদআত। আর সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা। সকল বিদআতী আমল অগ্রহণযোগ্য এবং বিদআত সৃষ্টিকারী ও পালনকারীকে গোমরাহ বলা হয়েছে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ‘দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজনের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। কারণ এই জাতীয় প্রতিটি সংযোজনই বিদআত আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা’। নাসাঈর বর্ণনায় এসেছে, وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ ‘আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’।[3]
বিদআতীকে সাহায্য করা ও আশ্রয় দেওয়া ব্যক্তি লা‘নত পাওয়ার যোগ্য: রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا ‘যে ব্যক্তি কোনো বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, আল্লাহ তাকে লা‘নত করেন’।[4]
যেখানে বিদআত চালু হয়, সেখান থেকে সুন্নাত বিদায় নেয়: হাসান ইবনু আতিয়্যাহ আল-মুহারিবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,مَا ابْتَدَعَ قَوْمٌ بِدْعَةً فِي دِينِهِمْ إِلاَّ نَزَعَ اللهُ مِنْ سُنَّتِهِمْ مِثْلَهَا، ثُمَّ لَا يُعِيدُهَا إِلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‘কোনো সম্প্রদায় যখন তাদের দ্বীনের মধ্যে কোনো বিদআত আবিষ্কার করে, তখন আল্লাহ তাদের সুন্নাত থেকে সমপরিমাণ সুন্নাত উঠিয়ে নেন। অতঃপর ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে তিনি আর সেই সুন্নাত ফেরত দেন না’।[5]
বিদআতকারীর তওবা তার বিদআত করা অবস্থায় আল্লাহ কবুল করেন না: রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إِنَّ اللهَ حَجَبَ التَّوْبَةَ عَنْ صَاحِبِ كُلِّ بِدْعَةٍ ‘নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবাকে আটকিয়ে রাখেন (যতক্ষণ সে বিদআত পরিত্যাগ না করে)’।[6] এর কারণ হলো, বিদআতী যে বিদআত করে, তা ছওয়াবের কাজ ভেবেই করে। তাই সে যখন কোনো গুনাহ থেকে তওবা করে, তখন আল্লাহ তার দিকে কর্ণপাত করেন না।
বিদআত সৃষ্টির কারণসমূহ:
(১) ইসলামী জ্ঞানের মূল উৎস কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান না থাকার কারণে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা এবং ইলম বা জ্ঞান ছাড়া ফতওয়া দেওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا ‘আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। কান, চোখ আর অন্তর- এগুলোর সকল বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’ (আল-ইসরা, ১৭/৩৬)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ ‘একজন ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে (কোনো যাচাই ছাড়াই) তাই বলে বেড়াবে’।[7] আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,إِنَّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ العِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا ‘আল্লাহ তাআলা ইলম বা জ্ঞানকে তাঁর বান্দাদের অন্তর থেকে টেনে বের করে উঠিয়ে নিবেন না, বরং আলেমদেরকে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নিবেন। তারপর যখন কোনো আলেম অবশিষ্ট রাখবেন না, তখন লোকজন অজ্ঞ-মূর্খ লোকদেরকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। অতঃপর তাদের নিকট (মাসআলা, ফতওয়া) জিজ্ঞেস করা হবে। তখন তারা বিনা জ্ঞানেই ফতওয়া দিবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে ও অন্যদেরকেও বিপথগামী করবে’।[8] তাই কোনো কিছু বলা ও আমল করার পূর্বে ইলম বা জ্ঞান অর্জন করাকে ইসলাম ফরয করেছে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর দ্বীন শিক্ষা করা ফরয’।[9]
(২) নিজেদের ইমাম ও তথাকথিত ওলীদের অন্ধ অনুকরণ, তাক্বলীদ ও পক্ষপাতিত্ব করা: মহান আল্লাহ বলেন,وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ قَالُوا حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ ‘তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার দিকে ও রাসূলের দিকে এসো, তখন তারা বলে, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যা করতে দেখেছি, আমাদের জন্য তাই যথেষ্ট। যদিও তাদের পিতৃপুরুষেরা কিছুই জানত না এবং সঠিক পথপ্রাপ্ত ছিল না’ (আল-মায়েদা, ৫/১০৪)।
(৩) বিজাতীয়দের অনুকরণ করা: রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لَتَتَّبِعُنَّ سُنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে’।[10] যেমন— কবরে ফুল দেওয়া, নীরবতা পালন করা, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী, শোকদিবস, ঈদে মীলাদুন নবী দিবস পালন করা ইত্যাদি।
(৪) জাল-যঈফ ও দুর্বল হাদীছের ওপর ভিত্তি করে আমল করা: আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ তার কিতাবে বলেছেন, এই অভিমত ও বিশ্বাস রেখেই আমি আল্লাহর আনুগত্য করি এবং এই অভিমতের প্রতিই মানুষকে আহ্বান করি যে, যঈফ হাদীছের প্রতি কখনো আমল করা যাবে না, না ফাযায়েল ও মুস্তাহাব আমলে আর না অন্য কিছুতে। কারণ যঈফ হাদীছ কোনো বিষয়ে অনিশ্চিত ধারণা জন্মায় মাত্র, যা নিশ্চিতরূপে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী নাও হতে পারে।[11]
(৫) বিদআতী কর্মকাণ্ডের ওপর আলেমদের নীরব থাকা এবং উক্ত কাজে তাদের শরীক হওয়া: আলেমদের উচিত, যার যার সাধ্য অনুযায়ী সঠিকটা প্রচার করা এবং অসত্য ও মিথ্যাকে প্রতিহত করা। মহান আল্লাহ বলেন,وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম’ (আলে ইমরান, ৩/১০৪)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে। তাও যদি না করতে পারে, তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করবে। আর এ হচ্ছে (অন্তর দিয়ে প্রতিহত করা) দুর্বলতম ঈমান’।[12]
বিদআত প্রচলনকারী ও তার দিকে আহ্বানকারীর গুনাহের পরিমাণ: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً، كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ ‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো মন্দ রীতি (বিদআত কিংবা কুসংস্কার) চালু করল, তার জন্য তো এ কাজের গুনাহ আছেই; উপরন্তু যারা এ মন্দ রীতির ওপর আমল করবে, তাদের জন্য তার গুনাহও তার ভাগে আসবে, অথচ এতে আমলকারীর গুনাহ কোনো কম করবে না’।[13] আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ‘যে ব্যক্তি কাউকে কোনো ভ্রষ্টতার দিকে ডাকল, তার সে পরিমাণ গুনাহ হবে, যতটুকু গুনাহ তার অনুসারীদের জন্য হবে। অথচ এ কারণে অনুসারীদের গুনাহকে এতটুকুও কমাবে না’।[14]
বিদআতীদের অবস্থা ও তাদের আমলের ফলাফল:
আল্লাহ তাআলা বলেন,قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا - الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا ‘বলুন! আমরা কি তোমাদেরকে এমন লোকদের কথা জানাবো, যারা আমলের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ওরাই তারা, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকাজই করছে’ (আল-কাহফ, ১৮/১০৪-১০৫)। আল্লাহ আরও বলেন,وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا ‘আমি তাদের কৃতকর্মের দিকে (হিসাব নেওয়ার জন্য) অগ্রসর হব, অতঃপর (তাদের আমল শর্তানুযায়ী না হওয়ার দরুন) সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/২৩)। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের বিষয়ে এমন আমল বা কর্ম করে যা তাতে নেই, তা পরিত্যাজ্য হিসেবে বিবেচিত হবে’।[15]
পরকালে বিদআতীরা যা বলবে, আল্লাহ সে কথা উল্লেখ করে বলেন,يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا -وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا- رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا ‘তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসূলকে মানতাম। তারা আরও বলবে, হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নেতা-ইমামদের ও বড় বড় লোকদের (পীরদের) আনুগত্য করেছিলাম। সুতরাং ওরা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব! ওদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং মহা অভিশাপে অভিশাপ দাও’ (আল-আহযাব, ৩৩/৬৬-৬৮)।
বিদআতীদেরকে ক্বিয়ামতের দিন হাওযের পানি পান করা হতে বাধা দেওয়া হবে: ক্বিয়ামতের দিন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাওযের নিকট অবস্থান করবেন এবং তাঁর উম্মতকে পানি পান করাবেন। আর বিদআতীরা যখন পানি পান করতে আসবে, তখন ফেরেশতারা তাদেরকে বাধা দিবে আর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তারা জানিয়ে দিবেন যে, আপনি জানেন না, আপনার মৃত্যুর পর তারা কত বিদআত সৃষ্টি করেছে। অতঃপর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِي ‘যারা আমার মৃত্যুর পর শরীআতের মধ্যে পরিবর্তন করেছে, তারা দূর হোক! তারা দূর হোক!’।[16]
সমাজে প্রচলিত বিদআতীআমলের কিছু নমুনা:
(১) ঈদে মীলাদুন নবী উদযাপন করা ও মীলাদ-ক্বিয়াম করা।
(২) শবেবরাত ও শবে মি‘রাজের রাতে বিশেষ ইবাদত করা ও দিনে ছিয়াম রাখা।
(৩) শোক দিবস পালন করা।
(৪) মৃত ব্যক্তির জন্য হাফেযে কুরআন ডেকে কুরআন খতম, দু‘আ ইউনুস খতম ইত্যাদি করানো।
এছাড়াও আরও অনেক আমল আমাদের সমাজে চালু রয়েছে, যার দলীল কুরআন-সুন্নাহতে ও ছাহাবীদের আমলেও নেই; অথচ আমরা তা ছওয়াবের আশায় করে থাকি। অতএব, আমাদেরকে আমলের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথা অর্থ, সময় ও পরকাল সবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন!
শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
[1]. আহমাদ, হা/১৭১৪২; ইবনু মাজাহ, হা/৪৩, হাদীছ ছহীহ।
[2]. আলবানী, মানাসিকুল হজ্জ ওয়াল উমরা, পৃ. ৪২।
[3]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; নাসাঈ, হা/১৫৭৮; মিশকাত, হা/১৬৫, হাদীছ ছহীহ।
[4]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৮; মিশকাত, হা/৪০৭০।
[5]. দারেমী, হা/১০৫; মিশকাত, হা/১৮৮, হাদীছ ছহীহ।
[6]. ত্ববারানী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৪২০২, হাদীছ ছহীহ।
[7]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫; মিশকাত, হা/১৫৬।
[8]. ছহীহ বুখারী, হা/১০০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৩; মিশকাত, হা/২০৬।
[9]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৪; মিশকাত, হা/২১৮, হাদীছ ছহীহ।
[10]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৫৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৯; মিশকাত, হা/৫৩৬১।
[11]. আলবানী, ‘ছিফাতুছ ছালাত’-এর ভূমিকা দ্রষ্টব্য।
[12]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৯; মিশকাত, হা/৫১৩৭।
[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৭; মিশকাত, হা/২১০।
[14]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৪; মিশকাত, হা/১৫৮।
[15]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮।
[16]. ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬; মিশকাত, হা/৫৫৭১।