কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

পর্নোগ্রাফির আসক্তি : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

post title will place here

প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের সমাজে অশ্লীলতা বিভিন্ন রূপে বহুমাত্রিকভাবে প্রবেশ করেছে। তার মধ্যে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে মুসলিম যুবমানসে স্থান করে নিয়েছে পর্নোগ্রাফির মতো একটি ধ্বংসফাঁদ। এ পর্নোগ্রাফির নেশা সবচেয়ে ভয়ানক ও জঘন্য, যা মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়াবহ। বিগত কয়েক দশকে পর্নোগ্রাফি তৈরি তথা ভোগ্যপণ্য হিসেবে ভোগকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল শিল্প গড়ে উঠেছে। অতীতকাল থেকেই নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের প্রদর্শন বিভিন্ন সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্য বা মূর্তিতে বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়ে আসছে। আধুনিক যুগে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, প্যাড, আইপড, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ইন্টরনেটের ব্যাপক ও বহুমাত্রিক ব্যবহার (ক্ষেত্র বিশেষে অস্বাভাবিক ব্যবহার) বেড়েছে সীমাহীনভাবে। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে যৌন উদ্দীপক বস্তুর প্রদর্শন এ শিল্প বিকাশে মাত্রা যোগ করেছে লাগামহীনভাবে। সমাজের মানুষের অধিকতর উদার মনোভাব ও ইসলামী নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুতি, এ অশ্লীলতার বিকাশে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। মানুষের লজ্জাবোধ বা চেতনা এতো তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে, বর্তমান সমাজে পর্নোগ্রাফির অভিনেতাদের পর্নস্টার নামেও অভিহিত করা হয়। এসবের দ্বারা সংঘটিত পাপাচার তথা অশ্লীলতা যেন ক্রমেই মহামারি আকারে সমস্ত পৃথিবীকে গ্রাস করে চলেছে। মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতা ধ্বংসের ক্ষেত্রে এই ব্লু-ফিল্ম বা পর্নোগ্রাফির মতো বড় হাতিয়ার দ্বিতীয়টি নেই। আসক্ত লোকজন পাপকে আর পাপ মনে করছে না। পাপ করা অপরাধ; কিন্তু পাপকে পাপ মনে না করা আরো কঠিনতম অপরাধ। শিশু থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষ এ পর্নোগ্রাফির দর্শক এবং এতে দারুণভাবে আসক্ত। এর ফলে অনিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণের শিকার হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, একজন মানুষ যখন পর্নোগ্রাফি দেখে, তখন তার মস্তিষ্ক থেকে এক প্রকার হরমোন নিঃসরিত হয়। এ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যৌনাচারে উৎসাহিত হয়। এ ধরনের মানুষ তখন যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্য কুকুরের মতো হয়ে উঠে। রাতভর পর্নোগ্রাফি দেখে দিনভর ঐ চেতনাই খুঁজতে থাকে। আর এসবের ফলে মানুষ আজ তার চরমসীমা পেরিয়ে জড়িয়ে পড়ছে ব্যভিচারে। সমাজে বেড়ে চলছে পরকীয়া, ধর্ষণ, হত্যা, লুটতরাজ ইত্যাদি। ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানদের বাণিজ্য, বিভিন্ন অশ্লীল প্রতিযোগিতা, চালচলনের আগ্রাসী সূক্ষ্ম কৌশলের শিকার হয়ে আমরা আজ অধঃপতিত। আল্লাহ বলেন, وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ-إِنَّمَا يَأْمُرُكُمْ بِالسُّوءِ وَالْفَحْشَاءِ وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ ‘(আর তোমরা) শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না, বস্তুত সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তোমাদেরকে শুধু অসৎ এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়, আর তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কথা বলতে, যা তোমরা জানো না’ (আল-বাক্বারা, ২/১৬৮-১৬৯)

মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তানের পক্ষ থেকে বিস্তৃতি লাভ করে বর্তমানে মানবজাতির সর্বনাশের জন্য অন্যতম মারাত্মক অস্ত্র হচ্ছে যৌনসন্ত্রাস। সমাজের সামগ্রিক ক্ষেত্রে এর ফলাফল মারাত্মক নেতিবাচক। জ্ঞানে, বুদ্ধিতে, চরিত্রে যুবসমাজ তারুণ্যদীপ্ত মানসিকতায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের তৈরি করবে এটাই সমাজ, রাষ্ট্র ও অভিভাবকদের দাবি।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ও পবিত্র জীবন বিধান। প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম অত্যন্ত সুন্দরভাবে সুস্পষ্ট উপায়ে তার নীতিমালা পেশ করেছে। মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের সুষ্ঠু ব্যবহারবিধিও এতে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এটাই তাদের পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। ...এবং তাদের মুমিনা নারীদেরকেও বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে’ (আন-নূর, ২৪/৩০-৩১)

প্রিয় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لاَ يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ وَلاَ الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ ‘কোনো পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে যেন না তাকায়। কোনো নারী অন্য নারীর গুপ্তস্থানের দিকে যেন না তাকায়’।[1]

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তির ন্যায় এ তরুণ সমাজ যদি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন শুধু হুমকির সম্মুখীন হবে না, বরং সম্ভাবনাময় ইসলামী চেতনার অপমৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বহু স্থানে বিভিন্নভাবে অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা পরিহার করার জন্য অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। সূরা আল-মুমিনূনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ - إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ - فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ ‘(অবশ্যই সফলকাম হয়েছেন মুমিনগণ) যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না এবং কেউ তাদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করলে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৫-৭)। এখানে বলা হয়েছে, যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে, তারা সফলকাম হয়েছে। আমরা বর্তমান সময়ে বাস করছি চূড়ান্ত নির্লজ্জ এক পৃথিবীতে। এমন এক পৃথিবীতে, যেখানে নিজের হাতের মুঠোফোন দিয়েই যে কোনো ওয়েবসাইট থেকে যে কোনো ভিডিও দেখতে পারি অনায়াসেই। পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে একটি মাল্টি ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি। যার উদ্দেশ্য ও কাজই হলো কোনো না কোনোভাবে যেন প্রত্যেকেই এ নোংরামির ভোক্তা হয় এবং প্রতিটি নারী-পুরুষ ও শিশুর সামনে এগুলো যেন উন্মোচিত হয়। আপনি দেখবেন, আসক্ত হবেন এবং পরিণত হবেন একজন ভোক্তায়। এটাই হলো আমাদের সমাজকে দেওয়া পর্নোগ্রাফির উপহার। এটা তৈরি করেছে কিছু অমানুষ, যারা মানুষকে পরিণত করছে পশুস্বরূপ ও যৌন বিকারগ্রস্ত মানুষে। আর আমাদের তরুণ-যুবকদের মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে কারো কারো এ আসক্তি রয়েছে প্রবলভাবে। কারণ অনেকেই অনলাইনে এসব দেখে থাকে। শুধু দেখেই শেষ নয়; বরং পরবর্তীতে আবার দেখার জন্য বিভিন্ন মোবাইলে, মেমোরিতে সেভ করে রাখে। এ নিয়ে নিজেদের মাঝে কোনো খারাপ লাগাও কাজ করে না। কেননা নিজেরা নিজেদের মনে মনে এগুলোকে গ্রহণযোগ্য ধরে নেয়। মাঝে মাঝে এ নিয়ে হয়তো একটু অনুশোচনা হয়, আবার পরে নিজে নিজেই ফিরে যায় সেই দিকে। আপনি ভাবছেন, অন্তত আমি তো কারও ক্ষতি করছি না, কাউকে তো দেখাচ্ছি না। কিন্তু জানেন ভিতরে ভিতরে আপনার আত্মা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে? আপনার ছালাত হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে অন্তঃসারশূন্য; যার কারণে ছালাত আদায়ের সময় আপনি একটু চোখের পানিও ফেলতে পারেন না। কারণ আপনার মনে আল্লাহর ভয় কমে গেছে ঐ সমস্ত নোংরামি দেখার কারণে আর এটা তারই ফলাফল। এগুলো আপনাকে পরিণত করেছে একটা মানুষরূপী পশুতে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবে তাকাতেও পারেন না। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত এ সকল মানুষ যখন পাশ দিয়ে কোনো নারীকে হেঁটে যেতে দেখে, তখন তাদের ভাবনায় মানুষ মনে হয় না, তারা যেন দেখেন একটা মাংসপিণ্ড হেঁটে যাচ্ছে। তাদের দু’চোখ সর্বদা নিরীক্ষণ করে বেড়ায় প্রত্যেককে। সারাক্ষণ তারা চেয়ে থাকে, চোখ নামিয়ে নিতে রীতিমতো কষ্ট হয়। যখন ক্যাম্পাসে, কর্মক্ষেত্রে, বাসে, ট্রেনে অথবা রাস্তা দিয়ে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত কোনো লোক হেঁটে যান, তখন তিনি নিজেকে সংযত রাখতে পারেন না। হয়তো একটা বিলবোর্ডের দিকে তাকালো, একবার তাকালো, দ্বিতীয় বার তাকালো, এভাবে তৃতীয় বার তাকালো আর বিলবোর্ডের সেই নারীর ছবিটার দিকে তাকাতে কত কিছু মনে ভেসে উঠছে আর অজান্তেই পাপ করে চলছে। এভাবে এমন একটা সুযোগও তারা বাদ রাখে না। তারা পরিপূর্ণরূপে একজন আসক্ত ব্যক্তি। তারপর তাদের অনেকে মনে মনে ভাবে, ছালাতে মনোযোগ আসছে না কেন? ছালাতে মনোযোগ আনবো কীভাবে? আসলে তারা কোন দুনিয়ায় বাস করছে? কোন জগতে আছে? অনেক আগেই তো রূহকে তারা মেরে ফেলেছে। এ সমস্যা শুধু কেবল পুরুষের নয়, কিছু নারীরও এ সমস্যা রয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা। এটা একটা যুদ্ধ, এ যুদ্ধ যে কোনো সামরিক যুদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এটি সেই যুদ্ধ, যা কিনা ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের অন্তরকে। ফলে অনিশ্চিত পথে অগ্রসর হচ্ছে আমাদের যুবসমাজ। আমরা চাই আমাদের সন্তানদের এ সমস্ত কাজ থেকে যতদূর সম্ভব বাঁচাতে। কিন্তু যখন আমাদের সন্তান স্কুলে যায়, সেটা ইসলামিক স্কুল, মাদরাসা বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই হোক না কেনো? খুবই সম্ভাবনা রয়েছে যে, তারই কোনো বন্ধু আইপড বা মোবাইল ডিভাইস নিয়ে এসে বলবে, দেখো সবাই। এটা খুবই বাস্তব একটা চিত্র, মোটেই কাল্পনিক কিছু নয়। এজন্য আমাদের সন্তানদের প্রস্তুত করতে হবে।

ইউটিউবে দেখা যায় বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, উপরে বিভিন্ন স্থানে ফলোআপ লেখা থাকবে। এগুলো এমনি এমনি দেওয়া হয় না; সবকিছুর ডিজাইন কিন্তু পরিকল্পিত, সাজানো, গুছানোভাবে পরিবেশিত ও বিন্যস্ত করা। ফেসবুকেও দেখা যায় বিভিন্ন অশ্লীল ও বাজে ভিডিও এসে আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আপনি এটা-ওটা করে বিভিন্ন কাজের ফাঁকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় শেষ পর্যন্ত একটা বাজে জিনিস দেখে ফেললেন। লাইক বা জয়েন করে নিলেন। এরপর নিয়মিত ধেয়ে আসতে থাকবে ঐ লিংক থেকে স্রোতের মতো বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত যতসব বাজে জিনিস।

তাহলে এই পাপ থেকে বেঁচে থাকার সমাধান কী? আপনার সাহায্য দরকার। আপনার নিজেকে সংযত করতে হবে। আপনার নিজেকে এভাবে কষ্ট দেওয়া থামাতে হবে। না হলে আপনার ভিতরে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। অনেক টিনএজ ছেলে-মেয়ে নীরবে ভিতরে ভিতরে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। বাবা-মা কিছুই জানে না। তার জীবনীশক্তি, আধ্যাত্মিক প্রাণশক্তি শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। অসহিঞ্চু হয়ে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সে ভিন্ন এক জগতের বাসিন্দা। তার বাবা-মা কিছুই জানে না।

এ পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধের জন্য মুসলিমদের ট্রিলিয়ন ডলারের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা নেই। আর এটা বলাও বাস্তবসম্মত হবে না যে, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এসব সোশ্যাল মিডিয়া হারাম; সকলের তা বর্জন করতে হবে। এটাই এখন বাস্তবতা, এগুলো এখন অক্সিজেনের মতো। আপনি আমি তরুণদের সাথে খোলামেলা কথা বলতে পারি। তাদের শেখাতে হবে কীভাবে এসব মোকাবেলা করতে হয়, কীভাবে সেই ফাঁদ থেকে বাঁচতে হয়। বিভিন্ন সিরিয়াল ও মুভি দেখা বন্ধ করতে হবে। আপনি এসব দেখলে নিজেদের সংযম ধরে রাখতে পারবেন না। ছালাত নিয়ে কথা বললেও লাভ হবে না। মা, মেয়ে সবাই মিলে যা তা দেখলে হবে না। মহান আল্লাহর বাণী, ‘নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না এবং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করলে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৬-৭)

এখানে লজ্জাস্থানের হেফাযত বলতে শুধু যেনা-ব্যভিচার না করা; তা কিন্তু নয়। এর মানে সেসব জিনিস থেকে বিরত থাকা, যার মাধ্যমে এসব খারাপ কাজের প্রলোভনে পড়ে, লজ্জাবোধ হুমকির মুখে পড়ে। এ আয়াতের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে যে, এ বিষয়ের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ তাআলাই আমাদের মাঝে দিয়েছেন। আর সকলের এ চাহিদা আছে। এটা বলতে দলীলের প্রয়োজন নেই। পুরুষ-নারী সকল মানুষ আজকের আধুনিক যুগে এ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আসলে নিজেদের ভিতরে এ প্ররোচনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। কেউ না কেউ আছেন যারা এসব বন্ধ করার চেষ্টা করছে। চেষ্টা করতে গিয়ে বারবার ফেঁসে যাচ্ছে এ চক্রান্তে। অনেকেই যারা যুদ্ধ করছেন তারা হাল ছেড়ে দিবেন না, প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। নিজে কখনো একা থাকবেন না। ভালো বন্ধুর সাথে থাকুন। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করুন। এমন কোথাও চলে যান, যেখানে আপনার আশেপাশে আরও লোক থাকবে। কারণ আপনি যখন একা থাকবেন শয়তান আপনাকে একা পেয়ে বসবে। আর মহান আল্লাহর ভয় আপনার মনে যদি যথেষ্ট না থাকে, অন্তত মানুষের ভয় থাকে, তাহলে নাই মামার চেয়ে অন্তত কানা মামা ভালো। বাসায় ডেস্কটপ রাখুন, মনিটর যেন বড় হয়। এসব স্ক্রিন ড্রইংরুম বা টিভি দেখার কক্ষে রাখুন সবাই যেন দেখতে পায়। সবার চোখের সামনে থাকবে এভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ১২ বছরের ছেলে-মেয়েদের স্মার্টফোন দিয়ে পর্নোগ্রাফির সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিত নয়।

আল্লাহ তাআলার ঘোষণার মাধ্যমে আমাদের তীব্র আকর্ষণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আমরা এগুলোর সমাধান করতে পারব বৈধ স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে। যারা এ জগতে পড়ে থাকে তাদের দাম্পত্য জীবন হয় দুর্বিষহ। ভোগ ও সুখ নিয়ে তাদের মাঝে অলীক ধারণা সৃষ্টি হয়। ঐ সময় তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সে সুখ খুঁজে পায় না। ঘরে ঘরে, পরিবারে এসব নিয়ে খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়। মুসলিম পরিবার ধ্বংস হওয়ার মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে মুসলিমদের শক্তি ক্ষয় ও নষ্ট হয়। দুর্বল হয়ে পড়ে মুসলিম জাতিসত্তা। এসব বর্তমান সমাজে হচ্ছে। এসব কাজ এক ধরনের আগ্রাসন। মহান আল্লাহর বাণী, ‘আর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করলে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী’ আল-মুমিনূন, ২৩/৬-৭)

যারা কামনা-বাসনা চরিতার্থ করে হালাল পন্থার বাইরে, তারাই শক্ত আগ্রাসনে লিপ্ত। কার বিরুদ্ধে আগ্রাসন মহান আল্লাহ বলেননি সেটা। এর মানে নিজেরা নিজেদের শত্রু, নিজের পরিবারের শত্রু। আর নির্লজ্জতা আমাদের অন্তরকে ধ্বংস করে দেয়। সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হলো ঈমান, এটাকে সংরক্ষণ করতে হবে। পর্নোগ্রাফির মতো নোংরা জিনিস আমাদের অন্তরকে ধ্বংস করে দেয়, দুমড়ে-মুচড়ে ছিঁড়ে ফেলে। এমনটা ঘটতে দেবেন না নিজেরা নিজেদের সাথে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে, বন্ধ করতে হবে এসব দেখা। আমাদেরকে দেখতে হবে যে, আমার কাছে আমার ঈমান কতটুকু মূল্যবান? আমার ছালাত কি যথেষ্ট মূল্যবান আমার কাছে? নাকি আমি এভাবেই চলতে থাকব আর ভান করব, আমি তো মুসলিম! সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে না নিয়ে বা সংবেদনশীল না হয়ে মোকাবিলা করতে হবে বহুমাত্রিকভাবে। মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের ছালাতের সময়। অবশ্যই নিজেকে এ গর্হিত অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। আপনার সত্যিকারের প্রচেষ্টাই আপনাকে এ অশ্লীল, কদর্য ও ঘৃণিত অবস্থা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ ঘৃণিত কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

ড. মোহাম্মদ হেদায়াত উল্লাহ

সহকারী অধ্যাপক (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা), সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা।


[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৩৮; মিশকাত, হা/৩১০০।

Magazine