মহিলাদের জন্যমাহরামপুরুষ:
কোনো মহিলার জন্য যেসব পুরুষের সাথে বিয়ে করা চিরতরে হারাম, তাদেরকে তার মাহরাম পুরুষ হিসেবে অভিহিত করা হয়। মহান আল্লাহ এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বলেন,﴿وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلاَ يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلاَ يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَآئِهِنَّ أَوْ آبَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَآئِهِنَّ أَوْ أَبْنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَآئِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُواْ عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَآءِ﴾ ‘আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেনো তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায়, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেনো তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেনো তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজেদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেনো নিজেদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’ (আন-নূর, ২৪/৩১)।
মহিলাদের জন্য মাহরাম পুরুষগণ মোট ১৪ শ্রেণির, যাদের বেশিরভাগের ইঙ্গিত উপর্যুক্ত আয়াত থেকে পাওয়া যায়। বংশ, দুধপান ও বৈবাহিক এই ৩ কারণে একজন পুরুষ মাহরাম হয়। বংশীয় কারণে ৭ শ্রেণি, দুধপানের কারণে ৭ শ্রেণি এবং বৈবাহিক কারণে ৪ শ্রেণি।
বংশীয় কারণে: একজন মহিলার জন্য বংশীয় কারণে ৭ শ্রেণির পুরুষের সাথে বিয়ে করা চিরতরে হারাম, যাদেরকে তার বংশীয়সূত্রে মাহরাম বলা হয়। তারা হচ্ছে, (১) তার পিতা, (২) ছেলে, (৩) ভাই, (৪) চাচা, (৫) ভাতিজা, (৬) ভাগ্নে ও (৭) মামা।
দুধপানের কারণে: আমরা আগেই জেনেছি, বংশীয় কারণে বা রক্ত সম্পর্কীয় কারণে যেসব নারী মাহরাম হয়, দুধ সম্পর্কীয় কারণে তারাই মাহরাম হয়। দুধ সম্পর্কের কারণে মাহরাম নারীগণ বংশীয় কারণে মাহরাম নারীগণের মতোই। সেজন্য, একজন নারীর দুধপান সম্পর্কীয় মাহরাম পুরুষও বংশীয় কারণে মাহরাম পুরুষের মতো ৭ শ্রেণির। তারা হচ্ছে, (১) দুধবাপ, (২) দুধছেলে, (৩) দুধভাই, (৪) দুধচাচা, (৫) দুধমামা, (৬) দুধভাতিজা ও (৭) দুধভাগ্নে।
বৈবাহিক কারণে: বৈবাহিক কারণে ৪ শ্রেণির পুরুষকে বিয়ে করা একজন নারীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যায়। তারা হচ্ছে, (১) কোনো নারীর স্বামীর বাবা অর্থাৎ তার শ্বশুর, (২) স্বামীর (অন্য স্ত্রীর) ছেলে, (৩) কোনো নারীর মায়ের স্বামী (সৎবাবা) ও (৪) কোনো নারীর মেয়ের স্বামী অর্থাৎ মেয়ের জামাই। বৈবাহিক কারণে উপর্যুক্ত ৪ শ্রেণির মাহরাম পুরুষের প্রথম ৩ শ্রেণির মাহরাম পুরুষ বিয়ে সম্পন্ন হওয়া মাত্রই হারাম হয়ে যায়। আর শেষের শ্রেণি হারাম হওয়ার জন্য সহবাস শর্ত।[1]
নিচে মাহরাম পুরুষদের পরিচয় তুলে ধরা হলো—
বংশীয়কারণে: আমরা আগেই দেখেছি যে, বংশীয় কারণে ৭ শ্রেণির পুরুষের সাথে একজন নারীর বিয়ে করা চিরতরে হারাম। তারা হচ্ছে,
(১) পিতা: এখানে পিতা বলতে একজন মহিলার জন্মদাতা পিতা ও তার পিতা-মাতার ঊর্ধ্বতন পুরুষগণ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ পিতা, দাদা, নানা ও তাদের ঊর্ধ্বতন পুরুষগণ পিতার শ্রেণিভুক্ত।
উল্লেখ্য, একজন নারীর স্বামীর পিতা অর্থাৎ তার শ্বশুরও তার মাহরাম পুরুষ। কিন্তু তিনি বংশীয় কারণে মাহরাম নয়; বরং বৈবাহিক কারণে মাহরাম— যার বিবরণ পরে আসছে ইনশা-আল্লাহ।
(২) ছেলে: ছেলে বলতে কোনো মহিলার নিজের ছেলে, সন্তানদের ছেলে এবং তাদের অধস্তন পুরুষগণ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ নিজের ছেলে, ছেলের ছেলে (পৌত্র/নাতি), মেয়ের ছেলে (নাতি) এবং এভাবে যত নিচে যাবে, সবাই এ শ্রেণিভুক্ত।
উল্লেখ্য, স্বামীর অন্য ঘরের ছেলেও ছেলের মতো মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তারা বংশসূত্রে নয়; বরং বৈবাহিক সূত্রে মাহরাম।
(৩) ভাই: সহোদর ভাই, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈপিত্রেয় ভাই সবাই একজন নারীর মাহরাম পুরুষের অন্তর্ভুক্ত।
(৪) চাচা: বংশীয় কারণে চাচা তার ভাতিজির জন্য মাহরাম। কুরআনে তার কথা উল্লেখ না থাকলেও তিনি আসলে পিতার স্থলাভিষিক্ত।
(৫) ভাতিজা: ভাইয়ের ছেলে, তাদের ছেলে— এভাবে যত নিচে যাক, তারা সবাই ফুফুর জন্য মাহরাম পুরুষ।
(৬) ভাগ্নে: বোনের ছেলে, তাদের ছেলে— এভাবে যত নিচে যাক, তারা সবাই খালার জন্য মাহরাম পুরুষ।
(৭) মামা: মামা তার ভাগ্নীর জন্য মাহরাম। কুরআনে তার কথা উল্লেখ না থাকলেও তিনি আসলে পিতার স্থলাভিষিক্ত।[2]
দুধপানের কারণে: একজন নারীর দুধপান সম্পর্কীয় মাহরাম পুরুষও বংশীয় কারণে মাহরাম পুরুষের মতো ৭ শ্রেণির, যাদের বিবরণ একটু আগে গত হয়ে গেছে।
বৈবাহিক কারণে: বৈবাহিক কারণে ৪ শ্রেণির পুরুষকে বিয়ে করা একজন নারীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যায়, যাদের বিবরণ একটু আগে গত হয়ে গেছে।
আপনার সাথে সম্পর্ক |
মাহরাম/গায়ের মাহরাম |
দাদা |
মাহরাম |
বাবা |
মাহরাম |
ভাই |
মাহরাম |
শ্বশুর |
মাহরাম |
স্বামী |
মাহরাম |
ছেলে |
মাহরাম |
নাতি |
মাহরাম |
চাচা |
মাহরাম |
ভাইয়ের/বোনের
ছেলে |
মাহরাম |
নানা |
মাহরাম |
মামা |
মাহরাম |
মায়ের খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই |
গায়ের মাহরাম |
চাচাতো ভাই |
গায়ের মাহরাম |
দুলাভাই |
গায়ের মাহরাম |
বাবার খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই |
গায়ের মাহরাম |
ফুপুর স্বামী
(ফুপা) |
গায়ের মাহরাম |
ফুপাতো ভাই |
গায়ের মাহরাম |
খালাতো ভাই |
গায়ের মাহরাম |
মামাতো ভাই |
গায়ের মাহরাম |
ননদের ছেলে |
গায়ের মাহরাম |
শ্বশুর/শাশুড়ির ভাই |
গায়ের মাহরাম |
দেবর/ভাশুর |
গায়ের মাহরাম |
ননদের স্বামী |
গায়ের মাহরাম |
স্বামীর খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই |
গায়ের মাহরাম |
স্বামীর
দুলাভাই |
গায়ের মাহরাম |
ছেলের শ্যালক |
গায়ের মাহরাম |
ছেলে/মেয়ের শ্বশুর |
গায়ের মাহরাম |
খালার স্বামী
(খালু) |
গায়ের মাহরাম |
(চলবে)
* বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. দ্রষ্টব্য: মুহাম্মাদ আল-উছাইমীন, আশ-শারহুল মুমতে‘, ৭/৩৮।
[2]. দ্রষ্টব্য: তাফসীর আর-রাযী, ২৩/৩৬৪-৩৬৫; তাফসীর কুরতুবী, ১২/২৩২-২৩৩; ছিদ্দীক্ব হাসান খান, ফাতহুল বায়ান ফী মাক্বাছিদিল কুরআন, ৯/২০৮।
* তালিকাটি ‘বাংলা হাদিস’-এর এ্যাপ থেকে সংগৃহীত। সংক্ষিপ্ত এই তালিকায় একজন নারীর জন্য মাহরাম পুরুষদের বিবরণ পেশ করা হয়েছে। তালিকাটি আমার বেশ ভালো লেগেছে। আপনারা এই লিংক থেকে তালিকাটি দেখে নিতে পারেন:
https://www.hadithbd.com/mahram/