কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

জাহান্নাম থেকে মুক্তির কতিপয় নববী আমল

post title will place here

আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টির পর পৃথিবীতে প্রেরণ করে তাদের জন্য দুনিয়াতে জীবন পরিচালনার গাইডলাইন দিয়ে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে, তার জন্য রয়েছে অনন্ত সুখ ও শান্তির আবাসস্থল জান্নাত। পক্ষান্তরে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করলে তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তির হাজারো আয়োজনে সমৃদ্ধ জাহান্নাম। সেই জাহান্নামের আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচার জন্য কতিপয় আমলের সন্ধান আমরা হাদীছ থেকে চয়ন করেছি। সেইসব আমলের আলোচনা নিয়েই বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধের অবতারণা। নিচে জাহান্নাম থেকে মুক্তির কতিপয় আমল আলোচনা করা হলো—

১. নিজের দৃষ্টিকে পাপ থেকে রক্ষা করা: চোখ বা দৃষ্টি মানুষের এমন একটি অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, যার মাধ্যমে অনেক ভালো কাজ করা যায়, আবার প্রতিটি পাপের সূচনাও হয় এর মাধ্যমে। সেজন্য নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখতে হবে। আর এই কঠিন কাজটি করতে পারলে তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,ثَلَاثَةٌ لَا تَرَى أَعْيُنُهُمُ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ، وَعَيْنٌ حَرَسَتْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، وَعَيْنٌ غَضَّتْ عَنْ مَحَارِمِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ‘তিন শ্রেণির মানুষের চক্ষু ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নাম দেখবে না: ১. এমন চক্ষু, যে আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে, ২. এমন চক্ষু, যে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদে) পাহারা দিয়েছে এবং ৩. এমন চক্ষু, যে আল্লাহর হারামকৃত জিনিস থেকে অবনত থেকেছে’।[1]

২. কন্যা সন্তানের লালন পালন করা: কন্যা সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামতস্বরূপ। ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী মেয়ে সন্তান লালনপালন করলে, তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করলে তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنِ ابْتُلِىَ مِنْ هَذِهِ الْبَنَاتِ بِشَىْءٍ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنَ النَّارِ ‘যাকে এই কন্যা সন্তান দিয়ে পরীক্ষায় ফেলা হয়, তারপর যদি সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, তাহলে এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে অন্তরাল (পর্দা) হবে’।[2]

৩. অন্য মুসলিম ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করা: মুসলিম সমাজ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। তারা একে অপরের জন্য সহোদর ভাইস্বরূপ। একজন আরেকজনের বিপদে এগিয়ে আসবে। পরস্পরের মানসম্মানের প্রতি খেয়াল রাখবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে তার ভাই অপমানিত হয়। এজন্য মুসলিম ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করলে তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হাদীছে এসেছে, আসমা বিনতু ইয়াযীদ রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,مَنْ ذَبَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ فِي الْغَيْبَةِ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يُعْتِقَهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সম্ভ্রম রক্ষা করে, আল্লাহর জন্য এটা হক্ব হয়ে যায় যে, তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিবেন’।[3]

৪. কল্যাণকর কাজকরা: কল্যাণকর কাজ করলে আল্লাহ তাআলা খুশি হন। তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করলে, তাঁর সৃষ্টিজীবের সেবা করলে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করলে তার জন্য আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুসংবাদ দিয়েছেন। হাদীছে এসেছে, আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় ছাদাক্বা রয়েছে)। সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষের চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় অপসারণ করল কিংবা ভালো কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল (এবং সবমিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে সেদিন এমনভাবে চলাফেরা করল যে, সে নিজকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখল’।[4] আবূ যার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,لَا تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلِيقٍ ‘কোনো ভালো কাজকেই তুমি তুচ্ছজ্ঞান করবে না, যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা’।[5]

৫. তাসবীহ পাঠ করা: আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করলে তিনি অত্যন্ত খুশি হন। আল্লাহ মানুষকে বেশুমার নেয়ামত দান করেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত এসব নেয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ তাঁর তাসবীহ পাঠ করলে তিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,مَنْ سَبَّحَ اللَّهَ فِى دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ وَحَمِدَ اللَّهَ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ وَكَبَّرَ اللَّهَ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ فَتِلْكَ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ وَقَالَ تَمَامَ الْمِائَةِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ ‘কেউ যদি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আল্লাহু আকবার’ ৩৩ বার পাঠ করে, এই হলো ৯৯; তারপর সে ১০০ পূর্ণ করে এই বলে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’, ওই ব্যক্তির সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনার সমতুল্য হয়’।[6]

৬. প্রতি ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করা: প্রতি ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ কাজ। বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ এই আয়াত পাঠ করলে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতি ফরয ছালাত শেষে অনায়াসেই এই আয়াতটি পাঠ করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। আবূ উমামা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ مَكْتُوبَةٍ ، لَمْ يَمْنَعْهُِ مِنْ دُخُولِ الْجَنَّةِ إِلاَّ أَنْ يَمُوتَ ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছুই তাকে জান্নাতে প্রবেশে বাধা দিতে পারবে না’।[7]

৭. বেশি বেশি দান-ছাদাক্বা করা: ছাদাক্বা এমন একটি আমল, যা আল্লাহ তাআলার ক্রোধকে প্রশমিত করে। ছাদাক্বার মাধ্যমে বিপদাপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, صَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِيُ غَضَبَ الرَّبِّ ‘গোপন দান প্রতিপালকের ক্রোধকে মিটিয়ে দেয়’।[8] হাদীছে এসেছে, আদী ইবনু হাতেম রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের আলোচনা করলেন। অতঃপর তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরপর বললেন, ‘তোমরা আগুন থেকে বাঁচো’। এবারও তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন, এমনকি আমাদের ধারণা হলো তিনি যেন আগুন দেখতে পাচ্ছেন। এরপর বললেন, ‘এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও তোমরা আগুন থেকে বাঁচো। যদি সে তা-ও না পায়, তবে একটি উত্তম কথার বিনিময়ে হলেও’।[9]

৮. আল্লাহর কাছে মনেপ্রাণে জান্নাত প্রার্থনা ও জাহান্নাম হতে পানাহ চাওয়া: আল্লাহর কোনো বান্দা যদি মনেপ্রাণে আল্লাহর কাছে জান্নাত চায় ও জাহান্নাম হতে মুক্তি চায়, তাহলে জান্নাত ও জাহান্নাম তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। অর্থাৎ জান্নাত প্রার্থনাকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ জান্নাত দিবেন আর জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ চাওয়া ব্যক্তিকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। আনাস ইবনু মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ سَأَلَ اللهَ الْجَنَّةَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ الْجَنَّةُ اللهُمَّ اَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ. وَمَنِ اسْتَجَارَ مِنَ النَّارِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ النَّارُ اللهُمَّ اجِرْهُ مِنَ النَّارِ ‘কোনো ব্যক্তি যদি জান্নাতের জন্য আল্লাহর কাছে তিনবার প্রার্থনা করে, তাহলে জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর কোনো ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইলে জাহান্নাম তখন আল্লাহর কাছে বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন’।[10]

৯. নফল ছালাত আদায় করা: পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের সাথে ১২ রাকআত নফল ছালাত আদায় করলে এর বিনিময়ে জান্নাতে তার জন্য প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। উম্মু হাবীবা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ صَلَّى فِى يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِىَ لَهُ بَيْتٌ فِى الْجَنَّةِ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ ‘যে ব্যক্তি দিন-রাতে ১২ রাকআত নফল ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। চার রাকআত যোহরের পূর্বে, দুই রাকআত যোহরের পরে, দুই রাকআত মাগরিবের পরে, দুই রাকআত এশার পরে এবং দুই রাকআত ফজরের পূর্বে’।[11]

অন্য বর্ণনায় জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা এসেছে এভাবে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,مَنْ حَافَظَ عَلَى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ وَأَرْبَعٍ بَعْدَهَا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ ‘যে ব্যক্তি ধারাবাহিকভাবে যোহরের আগে চার রাকআত ও পরে চার রাকআত ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিবেন’।[12] আবূ যুহাইর উমারা ইবনু রুআইবা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আছরের) ছালাত আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না’।[13]

১০. একনিষ্ঠভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা: যে ব্যক্তি মনেপ্রাণে সর্বান্তকরণে আল্লাহকে একমাত্র প্রভু ও মা‘বূদ জেনে তাঁর রবূবিয়্যাত ও উলূহিয়্যাতের সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ . يَبْتَغِى بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন’।[14]

১১. সদাচারী হওয়া: সদাচরণ একটি মহৎ গুণ। এটা এমন একটি গুণ, যা একটি বৈরী পরিবেশকে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে পরিণত করতে পারে। নম্রভাষী, সদাচারী মানুষকে সবাই ভালোবাসে। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,إِنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ فِى شَىْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَىْءٍ إِلاَّ شَانَهُ ‘কোনো জিনিসের মধ্যে নম্রতা থাকলে, সেটি তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলে। আর কোনো জিনিস থেকে নম্রতাকে উঠিয়ে নেওয়া হলে সেটা তাকে ত্রুটিপূর্ণ (শ্রীহীন) করে তুলে’।[15] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং অথবা (রাবীর সন্দেহ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন) জাহান্নাম তার জন্য হারাম? সে হলো যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্র ও সদাচারী (তার জন্য জাহান্নাম হারাম)’।[16]

১২. ৪০ দিন তাকবীরে তাহরীমার সাথে ছালাত আদায় করা: যে ব্যক্তি ৪০ দিন তাকবীরে তাহরীমার সাথে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। আনাস ইবনু মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِى جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে ৪০ দিন তাকবীরে উলার (প্রথম তাকবীরের) সাথে জামাআতে ছালাত আদায় করবে, তাকে দুটি জিনিস থেকে মুক্তি লিপিবদ্ধ করা হয়— একটি হলো জাহান্নাম হতে মুক্তি এবং আরেকটি হলো মুনাফেক্বী হতে মুক্তি’।[17]

১৩. অসুস্থতারমুহূর্তেদুপড়া: অসুস্থতা প্রত্যেকের জন্যই একটি জটিল অবস্থা। এই কঠিন মুহূর্তে মহান প্রতিপালককে স্মরণ করা তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের শামিল। এই রকম অসুস্থতার সময়ে আল্লাহকে স্মরণ করে তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিখিয়ে দেওয়া দু‘আ পড়লে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ وَأَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّهُمَا شَهِدَا عَلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ « مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ. صَدَّقَهُ رَبُّهُ فَقَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا وَأَنَا أَكْبَرُ. وَإِذَا قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ. قَالَ يَقُولُ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا وَأَنَا وَحْدِى. وَإِذَا قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ. قَالَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا وَحْدِى لاَ شَرِيكَ لِى. وَإِذَا قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ. قَالَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا لِىَ الْمُلْكُ وَلِىَ الْحَمْدُ. وَإِذَا قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ. قَالَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِى. وَكَانَ يَقُولُ مَنْ قَالَهَا فِى مَرَضِهِ ثُمَّ مَاتَ لَمْ تَطْعَمْهُ النَّارُ».

আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ বললে সে সময় তাঁর প্রভু তার কথাটি সত্যায়ন করেন এবং বলেন, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমিই মহান। আর যখন বান্দা বলে, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু’ তখন বলেন, আমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি এক। যখন বান্দা বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি ব্যতীত কোনো মা‘বূদ নেই, আমি এক, আমার কোনো অংশীদার নেই। যখন বান্দা বলে, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি ব্যতীত কোনো মা‘বূদ নেই, রাজত্ব আমারই এবং সকল প্রশংসা আমার জন্যই। যখন বান্দা বলে, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি ব্যতীত কোনো মা‘বূদ নেই, আমি ছাড়া (আমার সহযোগিতা ব্যতীত) অকল্যাণ দূর করা ও মঙ্গল লাভ করার সামর্থ্য কারো নেই’। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলতেন, ‘যে লোক রোগাক্রান্ত অবস্থায় এই বাক্যগুলো পাঠ করে, তারপর মৃত্যুবরণ করে, তবে জাহান্নামের আগুন তাকে ভক্ষণ করবে না’।[18] অর্থাৎ সে জাহান্নামে যাবে না।

সুধী পাঠক! এতক্ষণ আমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচার কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করলাম। আল্লাহ আমাদেরকে উপরিউক্ত আমলগুলোসহ সকল সৎ আমল করে এবং অসৎ আমল পরিহার করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

আব্দুল্লাহ আল-আমিন

সহকারী শিক্ষক (ধর্ম), মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, তানোর, রাজশাহী।


[1]. সিলসিলা ছাহীহা, হা/১৪৭৭।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪১৮।

[3]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৮৪৭।

[4]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০০৭।

[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬২৬।

[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৯৭।

[7]. সিলসিলা ছহীহা, হা/৯৭২।

[8]. সিলসিলা ছহীহা, হা/১৯০৮; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান, হা/৩১৬৮।

[9]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৪০।

[10]. তিরমিযী, হা/২৫৭২, হাদীছ ছহীহ।

[11]. তিরমিযী, হা/৪১৫, হাদীছ ছহীহ।

[12]. তিরমিযী, হা/৪২৮, হাদীছ ছহীহ।

[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৩৪।

[14]. ছহীহ বুখারী, হা/৪২৫।

[15].ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯৪।

[16]. তিরমিযী, হা/২৪৮৮, হাদীছ ছহীহ।

[17]. তিরমিযী, হা/২৪১, হাসান।

[18]. তিরমিযী, হা/৩৪৩০, হাদীছ ছহীহ।

Magazine