কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

সূরা আল-মুনাফিকূন থেকে পাঁচটি শিক্ষা

‘সূরা আল-মুনাফিকূন’ থেকে মোটাদাগে আমরা পাঁচটি শিক্ষা পাই। যথা— 

১. ঈমানের তাৎপর্য:

ঈমান অনেক বেশি দামি একটি বিষয়। ঈমানের ক্ষেত্রে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। এ সূরার প্রথমাংশ ও সিংহভাগ অংশ নিয়ে মুনাফিকদের আলোচনা আমাদেরকে শেখায়, আমাদের মধ্যে যেন কোনোভাবেই নেফাকী না থাকে, আমরা যেন কুফরী থেকে বেঁচে থাকি। সর্বোপরি, আমরা যেন আমাদের আসল সম্পদ ঈমান নিয়ে সচেতন থাকি। ঈমানের মতো অমূল্য সম্পদে কুফরীর ছিটেফোঁটাও যেন লাগতে না দেই।

২. নেয়ামতের তাৎপর্য:

আল্লাহর নেয়ামতের কদরের মাধ্যমে নেয়ামতের শুকরিয়া যেমন আরও নেয়ামত নিয়ে আসে, তেমনি আল্লাহর নেয়ামতের কদর না করার মাধ্যমে নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা নেয়ামত কেড়ে নেয়। নেয়ামত পেয়ে নেয়ামতের মালিককে আমরা বেশি বেশি স্মরণ করব। এই সূরার দ্বিতীয় ভাগের আলোচনা আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর নেয়ামত পেয়ে আমরা যেন আল্লাহকে ভুলে না যাই, আল্লাহর হক্ব আদায়ে কোনো ত্রুটি না করি। বিশেষ করে আমাদের সন্তানদের পিছনে ও সম্পদ অর্জনের পিছনে সময় দিতে গিয়ে এমন যেন না হয় যে, আমি সময়মতো ও ঠিকমতো ছালাত আদায় করছি না, হালাল হারামের বাছবিচার করছি না, মৃত্যুর প্রস্তুতি তথা আখেরাতের ফিকির করছি না। তা না হলে এসবের প্রতি উদাসীনতাই আমাকে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

৩. জীবনের তাৎপর্য:

যেকোনো মুহূর্তে মালাকুল মাউত তথা মৃত্যু চলে আসলেই এ জীবনটা থেমে যাবে। এ ব্যাপারটি যদি আমরা অন্তরে ধারণ করতে পারি, তবে কোনোভাবেই আমরা জীবনটাকে হেলাফেলায় কাটাতে পারব না। এ সূরার তৃতীয়ভাগের আলোচনা আমাদের শেখায়, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতির মাধ্যমে যেন আমরা এ অস্থায়ী জীবনের কদর করি। এছাড়া, মৃত্যুর সময় যাতে আফসোস না হয়, সেজন্য জীবদ্দশায় যেন ইবাদাতে মনোযোগী হই, নেক কাজে সবসময় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখি।

৪. সময়ের তাৎপর্য:

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ সূরার উপসংহারে এসে জানাচ্ছেন যে, মৃত্যু এসে গেলে আর এক মুহূর্তও সময় দেওয়া হবে না। এখান থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই বার্তা দিচ্ছেন যে, আমরা যেন সময় নষ্ট না করি, সময়ের ব্যাপারে উদাসীন না থাকি। সময় ফুরিয়ে গেলে আফসোস করেও কোনো কাজ হবে না।

যারা পরীক্ষার হলে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে গুরুত্বের সাথে পরীক্ষা দেয় না, এদিক-সেদিক তাকিয়ে বা হেলাফেলায় সময় নষ্ট করে, তারা শেষ মুহূর্তে এসে যখন কর্তব্যরত শিক্ষক খাতা নিয়ে নিবেন, তখন কাকুতিমিনতি করে বলে উঠে, স্যার! স্যার! আর একটু। তখন কিন্তু শিক্ষক তাকে অতিরিক্ত সময় দেন না।

দুনিয়া নামক এই পরীক্ষার হলে আমরা যারা গুরুত্বের সাথে পরীক্ষা দিচ্ছি না অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছি না, যখন আল্লাহর নির্দেশে নির্ধারিত সময়ে মালাকুল মাউত এসে হাযির হবেন, তখন কিন্তু তাদেরকে আর এক মুহূর্তও সময় দেওয়া হবে না। তখন বোঝা যাবে সময়ের কত মূল্য, তখন বোঝা যাবে সময়টাকে কত নিদারুণভাবে অপচয় করা হয়েছে। দুনিয়ার কোনো পরীক্ষার হলে ঐসব পরীক্ষার্থীরা যেরকম আফসোস করে, তার চেয়ে বেশি আফসোস হবে যারা দুনিয়া নামক পরীক্ষার হলে আল্লাহর অবাধ্যতায় সময়টা নষ্ট করে যাচ্ছে। 

এজন্য মৃত্যুর সময় ‘সময়’-এর ব্যাপারে আফসোস করতে না চাইলে আজকের দিনগুলোর সময়ের কদর করতে যেন আমরা ভুল না করি, আজকের দিনগুলোর সময়ের অপচয় যেন না করি।

৫. তাক্বওয়ার তাৎপর্য:

‘সূরা আল-মুনাফিকূন’-এর সর্বশেষ আয়াতের একদম শেষ অংশে আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, ‘তোমরা যা করো, সে বিষয়ে আল্লাহ পুরোপুরি খবর রাখেন বা অবহিত’। আয়াতের এই অংশের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ‘তাক্বওয়ার’ কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহ যেহেতু আমাদের পুরোপুরি খবর রাখেন, সেহেতু আল্লাহর কাছ থেকে কোনোকিছু লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। এজন্য আমরা প্রতিটি কাজ করার ক্ষেত্রে চিন্তা করব যে, আমার এই কাজ আর কেউ দেখুক বা না দেখুক আমার মালিক কিন্তু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখছেন। আর এটাই তাক্বওয়া। এই তাক্বওয়া অন্তরে এসে গেলে কখনোই আল্লাহর অবাধ্য কোনো কাজ করা সম্ভব হবে না। আবার, কোনো কাজ করার সময় নিজেকে প্রশ্ন করব যে, আমার এই কাজটি কি আল্লাহকে খুশি করবে নাকি নারাজ করবে। এই কাজটি কি আমাকে আল্লাহর সামনে লজ্জিত করবে নাকি সম্মানিত করবে। যদি ইতিবাচক হয় তবে করব, না হলে করব না। মহান আল্লাহর কাছে তাওফীক্ব কামনা করছি।

আম্বরখানা, সিলেট।

Magazine