ছালাতুল আউয়াবীন পড়া ভাল :
একই ছালাতকে হাদীছে তিনটি নামে উল্লেখ করা হয়েছে। সূর্য উঠার সাথে সাথে পড়লে তাকে ছালাতুল ইশরাক বলে। সূর্য একটু উপরে উঠার পর পড়লে তাকে ছালাতুয যোহা বলে এবং আরো একটু বেশী উঠার পর পড়লে তাকে ছালাতুল আউয়াবীন বলে। যে কোন একটি পড়লেই হবে।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى الْفَجْرَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ» .
আনাস ইবনে মালিক বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করবে। অতঃপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে যিকির করবে তারপর দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ এবং পূর্ণ একটি ওমরার নেকী রয়েছে’।[1] এই হাদীছে যে ছালাতের বিবরণ রয়েছে তার নাম হচ্ছে ইশরাক।
عَنْ أَبِى ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- أَنَّهُ قَالَ يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى.
আবু যার গিফারী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সকাল হওয়া মাত্রই তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি গ্রন্থির জন্য একটি ছাদাক্বাহ করা আবশ্যক। তবে (মনে রেখো) তোমাদের প্রত্যেক তাসবীহ একটি ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাহমীদ একটি ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাহলীল একটি ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাকবীর একটি ছাদাক্বাহ এবং সৎকাজের আদেশ একটি ছাদাক্বাহ ও অসৎ কাজে নিষেধ একটি ছাদাক্বাহ। অবশ্য ইশরাক বা চাশতের দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা এসবের পরিবর্তে যথেষ্ট’।[2]
عَن أَبِي الدَّرْدَاءِ وَأَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " عَنِ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ: يَا ابْن آدم اركع لي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ: أَكْفِكَ آخِرَهُ ".
আবু দারদা ও আবু যার গিফারী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার জন্য দিনের প্রথমাংশে চার রাক‘আত ছালাত আদায় কর। আমি দিনের শেষাংশে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে’। অর্থাৎ আমি দিনের শেষাংশে তোমার উদ্দেশ্য পূর্ণ করব।[3]
عَن بُرَيْدَة قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «فِي الْإِنْسَانِ ثَلَاثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ مَفْصِلًا فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهُ بِصَدَقَةٍ» قَالُوا: وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ؟ قَالَ: «النُّخَاعَةُ فِي الْمَسْجِدِ تَدْفِنُهَا وَالشَّيْءُ تُنَحِّيهِ عَنِ الطَّرِيقِ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ» .
বুরায়দা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের তিনশত ষাটটি গ্রন্থি রয়েছে। সুতরাং তার পক্ষে প্রত্যেক গ্রন্থির পরিবর্তে একটি ছাদাক্বাহ করা আবশ্যক’। ছাহাবীগণ বললেন, মসজিদে থুথু দেখলে তা পরিষ্কার করা তোমার জন্য ছাদাক্বাহ। যদি এই কাজগুলো করার সুযোগ না পাও, তবে চাশতের দু’রাক‘আত ছালাত আদায় তোমার জন্য যথেষ্ট হবে’।[4]
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ أَنَّهُ رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَ مِنَ الضُّحَى فَقَالَ: لَقَدْ عَلِمُوا أَنَّ الصَّلَاةَ فِي غَيْرِ هَذِهِ السَّاعَةِ أَفْضَلُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ حِينَ تَرْمَضُ الْفِصَالُ»
যায়েদ ইবনে আরকাম রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি কিছু লোককে চাশতের ছালাত আদায় করতে দেখেন। অতঃপর বলেন, তারা অবগত আছে যে, এই সময়ের চেয়ে অন্য সময়ে পড়া অধিক উত্তম। নিশ্চয় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ছালাতুল আউয়াবীন তখন পড়বে যখন উটের বাচ্চা রোদের তাপ অনুভব করে’।[5] এ হাদীছ প্রমাণ করে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে যে ছালাত আদায় করা হয় তার নাম আউয়াবীন।
মাগরিবের পর চার রাক‘আত সুন্নাত পড়া যাবে না :
عَنْ مَكْحُولٍ يَبْلُغُ بِهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ قَبْلَ أَنْ يَتَكَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ وَفِي رِوَايَةٍ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ رُفِعَتْ صَلَاتُهُ فِي عِلِّيِّينَ»
মাকহূল রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিব ছালাতের পর কোন কথা বলার পূর্বেই দুই রাক‘আত, অন্য বর্ণনায় এসেছে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করবে তার ছালাতকে ইল্লিয়ীনে উঠানো হবে’।[6] এই হাদীছটি যঈফ হওয়ার কারণে আমল করা যাবে না।
মাগরিবের পর দুই রাক‘আত সুন্নাত পড়তে হবে :
عَن أُمِّ حَبِيبَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ: أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمغرب وَرَكْعَتَيْنِ بعد الْعشَاء وَرَكْعَتَيْنِ قبل صَلَاة الْفَجْرِ ".
উম্মে হাবীবা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাত-দিন ১২ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে। যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত, যোহরের পরে দুই রাক‘আত, মাগরিবের পরে দুই রাক‘আত, এশার পরে দুই রাক‘আত এবং ফজরের পূর্বে দুই রাক‘আত’।[7] এ হাদীছ প্রমাণ করে মাগরিবের পরে দুই রাক‘আত সুন্নাত পড়তে হবে। চার রাক‘আত বা ছয় রাক‘আত কোনটাই ঠিক নয়।
ফরয ছালাতের স্থানে সুন্নাত না পড়া সুন্নাত :
সুন্নাত ছালাত আদায় করার সময় ও স্থান পরিবর্তন করা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত। অনেক মুছল্লী ফরয ছালাতের স্থানে সুন্নাত পড়েন, স্থান পরিবর্তন করেন না। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কি সক্ষম হবে যখন সে ছালাত আদায় করবে তখন সামনে বা পিছনে কিংবা ডানে বা বামে সরে যাবে?[8] এই হাদীছ প্রমাণ করে ফরয ছালাতের স্থান থেকে সরে গিয়ে সুন্নাত পড়তে হবে।
এক রাক‘আত বিতর পড়া যাবে না মর্মে হাদীছগুলো যঈফ :
একাধিক ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিতর এক রাক‘আত। কারণ যত ছালাতই আদায় করা হোক এক রাক‘আত আদায় না করলে বিতর হবে না। এক রাক‘আত কোন ছালাতই নেই এ কথা মিথ্যা এবং এক রাক‘আত পড়া যাবে না মর্মে হাদীছগুলো জাল। আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাক‘আত বিতর পড়তে নিষেধ করেছেন। তাই কোন ব্যক্তি যেন এক রাক‘আত ছালাত আদায় করে বিজোড় না করে।[9] হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে যখন এ কথা পৌঁছল যে, সা‘দ রাযিয়াল্লাহু আনহু এক রাক‘আত বিতর পড়েন, তখন তিনি বললেন, আমি এক রাক‘আতকে কখনো যথেষ্ট মনে করিনি।[10] আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এক রাক‘আত বিরত পড়া ঠিক নয়। তাছাড়া এক রাক‘আত কখনো ছালাত হয় না।[11] এই জাল হাদীছগুলোর মাধ্যমে মানুষ মনে করে এক রাক‘আত বিতর পড়া যাবে না। অথচ এক রাক‘আত বিতর পড়াই উত্তম।
এক রাক‘আত বিতর পড়ার ছহীহ হাদীছ সমূহ :
ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,كَانَ النَّبِىُّ - صلى الله عليه وسلم - يُصَلِّى مِنَ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى، وَيُوتِرُ بِرَكْعَةٍ ‘রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে দুই দুই রাক‘আত করে ছালাত আদায় করতেন এবং এক রাক‘আত বিতর পড়তেন।[12] এই হাদীছ প্রমাণ করে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত এক রাক‘আত বিতর পড়তেন। ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, শেষ রাতে এক রাক‘আত বিতর পড়তে হবে।[13] এই হাদীছ প্রমাণ করে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাক‘আত বিতর পড়ার আদেশ করেন।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - عَنْ صَلاَةِ اللَّيْلِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - « صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى، فَإِذَا خَشِىَ أَحَدُكُمُ الصُّبْحَ صَلَّى رَكْعَةً وَاحِدَةً، تُوتِرُ لَهُ مَا قَدْ صَلَّى » .
ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিতরের ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রাতের ছালাত দুই দুই রাক‘আত করে। অতএব তোমাদের কেউ যখন সকাল হওয়ার আশঙ্কা করবে তখন সে যেন এক রাক‘আত পড়ে নেয়। তাহলে সে এতক্ষণ যা ছালাত পড়েছে তার জন্য সেটা বিতর হয়ে যাবে’।[14] এই হাদীছ প্রমাণ করে বিতর ছালাত এক রাক‘আত।
ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের ছালাত দুই দুই রাক‘আত। আর বিতর ছালাত এক রাক‘আত’।[15] এই হাদীছ দিনের মত প্রমাণ করে যে, বিতর ছালাত এক রাক‘আত। আবু আইয়ূব আনছারী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বিতর পড়া প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি উপর বিশেষ কর্তব্য। অতএব যে ব্যক্তি পাঁচ রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে। আর যে তিন রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে এবং যে এক রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তা পড়ে’।[16] এই হাদীছ প্রমাণ করে বিতর এক রাক‘আত পড়া যায়।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ বিজোড়, তিনি বিজোড়কে পসন্দ করেন। অতএব হে কুরআনের অনুসারীরা! তোমরা বিতর পড়’।[17] এই হাদীছ সমূহ প্রমাণ করে বিতর এক রাক‘আত পড়া উত্তম। কারণ এক রাক‘আতের হাদীছের সংখ্যা অনেক বেশী। এত হাদীছ থাকার পরেও এক শ্রেণীর মানুষ বলে এক রাক‘আত বিতর নেই। এটা তাদের অজ্ঞতা নয়, বরং হঠকারিতা কিংবা ছহীহ হাদীছ না মানার শামিল।
তিন রাক‘আত বিতর একটানা পড়তে হবে :
তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সময় একটানা পড়তে হবে। মাঝখানে কোন বৈঠক করা যাবে না। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি শেষ রাক‘আত ছাড়া বসতেন না।[18] এই হাদীছ প্রমাণ করে তিন রাক‘আত পড়লে একটানা পড়তে হবে, মধ্যে বসা যাবে না। ইবনে ত্বাঊস রাযিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন, মাঝে বসতেন না।[19] এই হাদীছ প্রমাণ করে তিন রাক‘আত বিতর একটানা পড়তে হবে। মাঝে বসা যাবে না। ক্বাতাদাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন শেষ রাক‘আত ছাড়া তিনি বসতেন না।[20] এই হাদীছ প্রমাণ করে তিন রাক‘আত বিতর একটানা পড়তে হবে। আত্বা রাযিয়াল্লাহু আনহু তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন কিন্তু মাঝে বসতেন না আর একবারে শেষে তাশাহহুদ পড়তেন। এমনকি পাঁচ রাক‘আত পড়লেও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটানা এক বৈঠকে পড়তেন।[21] এই হাদীছ প্রমাণ করে একটানা তিন রাক‘আত বিতর পড়তে হবে। মধ্যে বসা যাবে না। পাঁচ রাক‘আত পড়লেও একটানা পড়তে হবে, মধ্যে বসা যাবে না। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ রাক‘আত বিতর পড়তেন আর একমাত্র শেষ রাক‘আতে বসতেন।[22] এই হাদীছ প্রমাণ করে বিতর পাঁচ রাক‘আত পড়লে একটানা পড়তে হবে। মোটকথা হল, তিন রাক‘আত বিতর পড়লে একটানা পড়তে হবে, মধ্যে তাশাহহুদ পড়া যাবে না।
তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সময় দুই রাক‘আতে বসার হাদীছ জাল ও যঈফ :
ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মাগরিবের ছালাতের ন্যায় বিতরের ছালাত তিন রাক‘আত।[23] হাদীছ যঈফ।[24] ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের তিন রাক‘আত বিতর দিনের বিতরের ন্যায়। যেমন, মাগরিবের ছালাত’।[25] ‘মাগরিবের ছালাত হচ্ছে দিনের বিতর ছালাত’।[26]
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা মাগরিবের ছালাতের ন্যায় তিন রাক‘আত বিতর পড় না। পাঁচ রাক‘আত বিতর পড় আর মাগরিবের ছালাতের মত করে আদায় কর না’।[27] এই হাদীছটি ছহীহ। এই হাদীছে বলা হয়েছে, তোমরা বিতরকে মাগরিবের মত করে আদায় কর না। হাদীছে প্রমাণ হয় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক‘আত বিতর একটানা পড়তে বলেছেন। মাগরিবের মত দুই রাক‘আত পড়ে তাশাহহুদ পড়তে নিষেধ করেছেন। সকল মুমিন পুরুষ-নারীর জন্য যরূরী যে, তিনি রাক‘আত বিতর পড়লে একটানা পড়বেন এবং ছহীহ হাদীছের প্রতি আমল করার চেষ্টা করবেন।
(চলবে)
[1]. তিরমিযী, হা/৫৮৬; মিশকাত, হা/৯৭১।
[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭০৪; মিশকাত, হা/১৩১১।
[3]. তিরমিযী, হা/৪৭৫; মিশকাত, হা/১৩১৩।
[4]. আবুদাঊদ, হা/৫২৪২; মিশকাত, হা/১৩১৫।
[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৭০, ১৭৮৯; মিশকাত, হা/১৩১২।
[6]. মিশকাত, হা/১১৮৪; হাদীছটি যঈফ, তারগীব, হা/৩৩৫।
[7]. তিরমিযী, মিশকাত, হা/১১৫৯।
[8]. ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৭; আবুদাঊদ, হা/১০০৬।
[9]. হেদায়া, ২/১৮৪ পৃ:।
[10]. তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/ ৮৪২২।
[11]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৫১ নং হাদীছের আলোচনা।
[12]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৯৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৭।
[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৩।
[14]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৯০; মিশকাত, হা/১১৯৫।
[15]. নাসাঈ, হা/১৬৯৩।
[16]. আবুদাঊদ, হা/১৪২২।
[17]. আবুদাঊদ, হা/১৪১৬; ইবনে মাজাহ, হা/১২৬৬।
[18]. মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১৪০; বায়হাক্বী, হা/৪৮০৩।
[19]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হা/৪৬৬৯।
[20]. মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হা/১৪৭১।
[21]. মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১৪২।
[22]. নাসাঈ, হা/১৭১৭।
[23]. তাবারানী, আল মুজামুল কাবাঈর, হা/৯৩০৯, ৯৩১০, ৩১১।
[24]. তানকীহ, পৃঃ ৪৪৭ ।
[25]. দারাকুৎনী, হা/১৬৩৭ হাদীছটি যঈফ, হাদীছ নং ঐ।
[26]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৫৪৯। হাদীছটি যঈফ, হা/ঐ।
[27]. দারাকুৎনী, হা/১৬৩৪-১৬৩৫।