কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

সালাফী মানহাজ ও তার প্রয়োজনীয়তা (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

post title will place here

সালাফগণ কি সাধারণ দলের মতোই একটি দল?

এ ভ্রষ্টদের কেউ কেউ বলে, সালাফ আবার কারা? সালাফগণ তো অন্যান্য দলের মতোই একটি দল। অন্যান্য ফেরক্বাগুলোর মতোই একটি ফেরক্বা, অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতোই একটি সম্প্রদায়। তাদের আবার কি এমন বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা শ্রেষ্ঠত্ব আছে যে তাদের অনুসরণ করতে হবে? 

এরূপ কথা তাদের কেউ কেউ বলে। সালাফদের কোনো বিশেষত্ব নেই, তারা কেবল একটি দল, অন্যান্য ফেরক্বার মতোই একটি ফেরক্বা। সে এরূপ কথা বলে এ জন্য যে, যেন আমরা সালাফদের মানহাজ থেকে সরে যায়।

আমরা কি সালাফদের বুঝ গ্রহণ করতে বাধ্য?

আবার এ ভ্রষ্টদের কেউ কেউ বলে, আমরা সালাফদের বুঝ ও তাদের ইলম গ্রহণ করতে বাধ্য নই। আমরা নতুন করে হুকুম-আহকাম ইসতেমবাত করব। আমরা পুরাতন ফিক্বহ বাদ দিয়ে নতুন এক ফিক্বহশাস্ত্রের জন্ম দিব। সালাফদের ফিক্বহ পুরাতন মডেল ফিক্বহ। তারা আরো বলে, সালাফদের বুঝ তাদের সময়ের জন্য যথাযথ ছিল। আমাদের যুগ পরিবর্তন হয়েছে। তাই তা বর্তমান যুগের জন্য যথাযথ নয়।

এ প্রেক্ষিতে অনেক লেখকও ভ্রষ্টদের নিকট থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে সালাফদের ফিক্বহ পরিত্যাগ ও নতুন এক ফিক্বহ তৈরি করার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। তারা আমাদেরকে সালাফদের মানহাজ থেকে সরিয়ে নিতে চায়। কেননা আমরা যখন সালাফদের মানহাজ জানব না, তা থেকে বিমুখ হয়ে যাব, তা অধ্যয়ন না করব তখন সালাফদের মানহাজ সম্পর্কে না জেনেই নিজেদেরকে সালাফী দাবি করব আর তা সালাফী নাম ধারণ করার জন্য যথেষ্ট নয় এবং এটাই তারা চায়। তারা চায় আমরা যেন তাদের কথা অনুযায়ী সালাফদের মতাদর্শ, তাদের বুঝ ও ইলম পরিত্যাগ করি এবং যুগোপযোগী এক নতুন ফিক্বহের জন্ম দিই। অথচ এটি একটি স্পষ্ট মিথ্যা কথা। কেননা ক্বিয়ামত পর্যন্ত ইসলামী শরীআত সকল সময় ও সকল স্থানের জন্য যথাযথ ও উপযুক্ত। 

সুতরাং সালাফদের মানহাজ সবসময় ও সকল স্থানের জন্য উপযুক্ত। তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নূর। কাজেই এ লাঞ্ছিত ও ভ্রষ্টদের কথা আপনাকে যেন মানহাজুস সালাফ থেকে বিমুখ না করে দেয়, অনাগ্রহী না করে তোলে। 

ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, لَا يُصْلِحُ آخِرُ هَذِهِ الْأُمَّةِ إلَّا مَا أَصْلَحَ أَوَّلَهَا অর্থাৎ ‘যা এ উম্মতের প্রথম প্রজন্মকে সংশোধন করেছিল, তা শেষ প্রজন্মকেও সংশোধন করতে সক্ষম’।

যে জিনিস এ উম্মতের প্রথম প্রজন্মকে সংশোধন করেছিল তা কী? তা হলো কিতাব, সুন্নাহ ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ। কুরআনের প্রতি আমল, হাদীছের প্রতি আমলই এ উম্মতের প্রথম প্রজন্মকে সংশোধন করেছিল। তাই শেষ প্রজন্মকেও শুধু তা-ই সংশোধন করতে পারে যা প্রথম প্রজন্মকে সংশোধন করেছিল।

অতএব, কেউ নাজাত চাইলে তার উপর আবশ্যক হলো সালাফদের মানহাজ সম্পর্কে জানা, তা আঁকড়ে থাকা এবং তার প্রতি মানুষকে আহ্বান করা। কেননা তা হলো একমাত্র মুক্তির পথ। তা হলো নূহ আলাইহিস সালাম-এর নৌকার মতো। যে তাতে আরোহণ করবে সে মুক্তি পাবে আর যে আরোহণ করবে না সে ভ্রষ্টতার মধ্যে হাবুডুবু খেয়ে মারা যাবে।

কাজেই সালাফদের মানহাজ ছাড়া আমাদের কোনো মুক্তির পথ নেই। আর জ্ঞানার্জন করা ছাড়া সালাফদের মানহাজ সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। তাই জ্ঞানার্জন করতে হবে, মানহাজুস সালাফ পাঠ ও পঠন করতে হবে পাশাপাশি আল্লাহর কাছে এ দু‘আ করতে হবে, اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ‘আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন ও তার প্রতি অটুট থাকার তাওফীক্ব দান করুন; তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন’ (আল-ফাতেহা, ১/৬-৭)

আমরা আল্লাহর কাছে দু‘আ করব তিনি যেন আমাদেরকে ছিরাতে মুস্তাক্বীমে অটল থাকার তাওফীক্ব দান করেন এবং আমাদেরকে সে পথে অটল রাখেন যার কোনো বিকল্প নেই। আর ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি কোনোভাবেই সালাফদের মতাদর্শের যথাযথ অনুসরণ করতে পারবেন না, যতক্ষণ না সে সম্পর্কে জানবেন, জ্ঞানার্জন করবেন এবং আপনি কিছুতেই তাতে অবিচল থাকতে পারবেন না, যতক্ষণ না ধৈর্যধারণ করবেন ও সালাফদের মানহাজ সম্পর্কে অনাগ্রহ সৃষ্টিকারী, হক্ব থেকে বিচ্যুত ভ্রান্ত অপপ্রচার থেকে মুখ ফিরিয়ে না রাখবেন।

এটাই হলো সত্য সঠিক পথ, মুক্তির পথ। ৭৩ দলের সব দল জাহান্নামে যাবে একটি ব্যতীত। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে দলটি কারা? উত্তরে তিনি বললেন, ‘বর্তমানে যার উপর আমি ও আমার ছাহাবীগণ প্রতিষ্ঠিত আছি, যারা তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে’।[1]

এটাই হলো সালাফদের পথ। মুক্তির পথ, যা জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এছাড়া মুক্তির অন্য কোনো পথ নেই, অন্যান্য সকল পথ গোমরাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ‘আর বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে’ (আল-আনআম, ৬/১৫৩)

এটাই হলো আল্লাহর পথ এবং তাছাড়া অন্যগুলো ভ্রষ্ট পথ, বিচ্যুত পথ। সেগুলোর প্রত্যেকটির উপর শয়তান বসে আছে এবং সেদিকে মানুষকে ডাকছে, আহ্বান করছে। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ভ্রষ্ট দাঈ বা আহ্বানকারীদের আশঙ্কা করেছিলেন। যারা সালাফদের মানহাজ থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে চাইবে, তিনি সংবাদ দিয়েছেন যে,دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا ‘জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী এক সম্প্রদায় হবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে’।[2]

কাজেই এদের থেকে সতর্ক থাকা খুবই প্রয়োজন। আর দিন যতই যাচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা তীব্র আকার ধারণ করছে। ফেতনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মানহাজুস সালাফের প্রতি মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।

সব মানুষই কি মুসলিম?

এ বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের কেউ কেউ বলে সকল মানুষই মুসলিম। তারা যে পথের মুসলিম হোক না কেন? তারা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর ছাহাবীদের পথের উপর অবিচল থাকুক বা না থাকুক তারা মুসলিম। 

হ্যাঁ, তারা মুসলিম; তবে তারা প্রকৃত মুসলিম, না-কি বিচ্যুত পথে অবিচল, অমুক তমুকের মানহাজের অনুসারী নামে মাত্র মুসলিম? তারা তো ভ্রষ্ট হয়ে এমন পথে চলে যা তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে ছাড়বে। এটা তো শুধু মুসলিম নাম ধারণ করা ব্যতীত আর কিছু নয়। অথচ উপকারী ইলম (কুরআন-সুন্নাহর ইলম) ও সালাফদের মানহাজ পাঠ-পঠনে গুরুত্ব দেওয়া ব্যতীত নিজেকে মুসলিম দাবি করা সম্ভব নয়। এ জন্য আপনারা দেখতে পাবেন যে, সালাফী আলেমগণ আক্বীদা ও তার বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়েলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেন এবং তারা সালাফদের মতাদর্শ পাঠ-পঠন ও আঁকড়ে থেকে পথ চলার অভিপ্রায়ে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত অনেক কিতাবাদি রচনা করেছেন। 

সুতরাং এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বের দাবিদার। বিশেষ করে তিমির আঁধার ও বিভ্রান্তির এ সময়ে মুসলিমের প্রয়োজন এমন এক প্রদীপের যা ভ্রষ্টতা ও অজ্ঞতার অন্ধকারে আলোর পথ দেখাবে।

কিছু নছীহ:

বর্তমানে এমন লোকের সংখ্যা খুব বৃদ্ধি পেয়েছে যারা তাদের মতো ব্যক্তিদের থেকে বা বিভিন্ন কিতাবাদি থেকে, বিভিন্ন কৃষ্টি-কালচার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং ইলমের মূল উৎস কুরআন-সুন্নাহ থেকে জ্ঞানার্জন না করেই নিজেদের জ্ঞানী ও পণ্ডিত দাবি করছে, জ্ঞানী হওয়ার ভান করছে। তাদের এ পন্থা কখনো কল্যাণ বয়ে আনবে না এবং সঠিক পথের দিশাও দেখাতে পারবে না। সালাফী মানহাজ আঁকড়ে ধরা ও তাতে চলার জন্য সঠিক ইলম অর্জনের কোনো বিকল্প নেই এবং এ পথে চলার কারণে আপনাকে যে নিন্দা করা হবে, সেকেলে মনে করা হবে তাতে ধৈর্যধারণেরও কোনো বিকল্প নেই।

যারা সালাফদের মানহাজ আঁকড়ে থাকে, সে অনুযায়ী চলে, জীবন পরিচালনা করে বর্তমান সময়ে আপনারা তাদের বিভিন্ন নিন্দা, তিরস্কার ও সমালোচনা শুনতে পাবেন। তারা বলে সালাফীরা রেজঈ (প্রত্যাহারযোগ্য), তারা এরূপ তারা সেরূপ... (তখন আপনারা সতর্ক থাকবেন)। তাদের এ মিথ্যা ও বাতিল কথাগুলো যেন আপনাদেরকে সত্যবিমুখ করতে না পারে। আপনারা শক্তভাবে এ নিরাপদ, ফেতনামুক্ত মানহাজ আঁকড়ে থাকুন। কারণ এটিই হলো একমাত্র মুক্তির পথ। এ জন্য নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ‘তোমাদের মধ্যে যে আমার পরে জীবিত থাকবে সে অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নাত অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে। সাবধান! (ধর্মে) প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদআত এবং প্রতিটি বিদআত হলো ভ্রষ্টতা’।[3]

মানুষের মাঝে মতানৈক্যের সময় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত তাঁর খলীফাদের সুন্নাত আঁকড়ে ধরা ব্যতীত অন্য কিছু তাদেরকে মুক্তি দিতে পারবে না। এটিই হলো একমাত্র মুক্তির পথ, নিরাপত্তার পথ, জান্নাতের পথ।

কাজেই আমাদের উচিত হলো, সালাফদের মানহাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করা এবং যারা সালাফদের মর্যাদাকে ছোট করে দেখে অথবা মন্দ গুণে গুণান্বিত করে তাদের কথা যেন আমাদেরকে সালাফদের থেকে বিমুখ না করে দেয় সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা। যদিও তাদের এ অপপ্রচার আমাদের অন্তরে সালাফদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে না; বরং আরো বৃদ্ধি করে। কেননা তারা তো শুধু এ জন্যই বিরোধিতা করছে যে, তা হলো সত্য পথ। আর তারা চায় ভ্রষ্ট পথ।

সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ! তাদের থেকে সতর্ক থাকুন। শুধু সালাফী দাবি করাকেই যথেষ্ট মনে করবেন না। প্রকৃত জ্ঞান অর্জন না করে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াতেই তুষ্ট হবেন না, ইলম গ্রহণ করুন সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিকট থেকে এবং সৎ পথে অবিচল আলেমদের থেকে। আল্লাহ তাআলা যে পথগুলো সম্পর্কে সতর্ক করেছেন সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ‘আর বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে’ (আল-আনআম, ৬/১৫৩)। এই আয়াতে سَبِيلِهِ তথা ‘তাঁর পথ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর তাআলার পথ।

সুতরাং বর্তমান সময়ে আমরা সালাফদের মানহাজ আঁকড়ে ধরা ও বিভ্রান্তি প্রসারকারীদের থেকে সতর্কতা অবলম্বনের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। কেননা ফেতনা প্রকাণ্ড আকার ধারণ করেছে। ভ্রষ্ট দাঈদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিনিটেই মন্দ জিনিসগুলো মানুষের নিকট ও তাদের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। তাদের বিছানায় পৌঁছে যাচ্ছে। যেগুলো ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করছে, স্বেচ্ছাচারিতার দিকে আহ্বান করছে, হারাম কামনা-বাসনার দিকে ডাকছে, বিকৃত চিন্তা-ভাবনার দিকে ডাকছে। তারা এগুলোকে মনে করছে উপযুক্ত বুঝ ও সংস্কৃতির স্বাধীনতা। তাদের এ চিন্তা-চেতনা সর্বদা কঠিন আকার ধারণ করে চলছে। এসব কিছু যেন মুসলিমদেরকে সালাফদের মানহাজ, তাদের মতাদর্শ ও ইলম থেকে উদাসীন না করে দেয় সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি থাকতে হবে।

সুতরাং খালাফদের পথের চেয়ে সালাফদের পথ অধিক নিরাপদ, অধিকতর জ্ঞানসমৃদ্ধ এবং অধিক প্রজ্ঞাপূর্ণ। সালাফদের জ্ঞান হলো কুরআন-সুন্নাহর স্বচ্ছ জ্ঞান। আর খালাফদের জ্ঞানের মাঝে বাতিল অনেক কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাতে ভেজালযুক্ত অনেক কিছু প্রবেশ করেছে।

পক্ষান্তরে সালাফদের ইলম ছিল নিরেট খাঁটি। এজন্য আপনারা যখন সালাফদের কিতাব পড়বেন তখন দেখতে পাবেন যে, তাতে সবচেয়ে কম কৃত্রিমতা রয়েছে এবং তা একদম নিরেট স্বচ্ছ। তা যতই পূর্বের কিতাব হোক না কেন।

এ জন্য আল্লামা ইবনু রজব রাহিমাহুল্লাহ ‘খালাফদের ইলমের উপর সালাফদের ইলমের মর্যাদা’ শীর্ষক কিতাবে বলেছেন, السلف كلامهم قليل و علمهم غزير و الخلف كلامهم كثير و علمهم قليل অর্থাৎ ‘সালাফদের কথা ছিল কম কিন্তু ইলম ছিল প্রচুর। পক্ষান্তরে খালাফদের কথা বেশি কিন্তু তাতে ইলম সামান্য’।

কাজেই এ বিষয়টি আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। এটাই হলো সালাফদের মানহাজ। যে মানহাজে চলা ও ধৈর্যধারণ করা ছাড়া আমাদের কোনো মুক্তি নেই আর আমরা তাদের মানহাজ শিখব সঠিক পথে অবিচল থেকে। সে পথে থেকে নয় যে পথ মিথ্যা ও সন্দেহপূর্ণ। এক্ষেত্রে কখনো যদি সালাফদের দিকে এমন কিছু নিসবাত করা হয় যা বাতিল, আদৌ সালাফদের মতাদর্শ নয় সেগুলো আমরা পরিত্যাগ করব। সেগুলো থেকে বেঁচে থাকব।

পরিশিষ্ট :

মানহাজুস সালাফ সম্পর্কে স্বল্প কিছু আলোচনা করলাম। সময়ের অভাবে তার সকল বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِينَ ‘আর আপনি উপদেশ দিতে থাকুন। কারণ নিশ্চয় উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে’ (আয-যারিয়াত, ৫১/৫৫)। তিনি আরো বলেন, فَذَكِّرْ إِنْ نَفَعَتِ الذِّكْرَى-سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَخْشَى ‘অতঃপর উপদেশ যদি ফলপ্রসূ হয় তবে উপদেশ দিন; যে ভয় করে সেই উপদেশ গ্ৰহণ করবে’ (আল-আ‘লা, ৮৭/৯-১০)

পরিশেষে আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করি তিনি যেন আমাদেরকে ও আপনাদেরকে বেশি বেশি সৎ আমল করার ও সত্য কথা বলার তাওফীক্ব দান করেন। তিনি যেন আমাদেরকে ও আপনাদেরকে সত্যের উপর অটল ও অবিচল রাখেন এবং কষ্টে ধৈর্যধারণ করার তাওফীক্ব দান করেন- আমীন!

মূল : ড. ছালেহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান

-অনুবাদ : মাহফুজুর রহমান বিন আ. সাত্তার মাহমূদ

 শিক্ষার্থী, মাদরাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবীয়া, উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

[1]. তিরমিযী, হা/২৬৪১; সিলসিলা ছহীহা, হা/১০৪৮।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৭০৮৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৭।

[3]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭, হাদীছ ছহীহ।

Magazine